মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে

29 Mar, 2023   
মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে

যেকোনো মোটরবাইকের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে জ্বালানী তেল। আর তেলের খরচ আমাদের দেশে অন্যতম বড় একটা সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ২০২২ সালে পৃথিবীব্যাপী দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে, জ্বালানী তেলের দাম তাই আকাশছোঁয়া, লিটার প্রতি ১১৪ টাকা! মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানো তাই এখন সময়ের দাবী।

তেলের খরচ নিয়ে ভেবে ভেবে অস্থির ভাইদের জন্য বাইকস গাইডে আমরা আজকে তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে সেই সম্পর্কিত কিছু টিপস শেয়ার করবো।

মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে

যেকোনো ব্র্যান্ডেরই এমন কিছু মোটরসাইকেল থাকে যেগুলো জ্বলানী সাশ্রয় করে, বা বেশি মাইলেজ দিতে সক্ষম। তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, সেটার প্রথম ধাপই হচ্ছে ভালো মাইলেজের অথবা জ্বালানী দক্ষতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল কেনা। বাজারে এমন বেশি কিছু মডেল রয়েছে যেগুলো মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। যেমন- বাজাজ ডিসকভার ১০০, টিভিএস মেট্রো ইত্যাদি। নতুন কিংবা ব্যবহৃত জ্বালানী সাশ্রয়ী বাইকের দরদাম ২০২২ সালে কেমন তা দেখতে চোখ রাখুন Bikroy.com-এ।

মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানোর জন্য আপনি যেসব কাজ করতে পারেন, সেগুলোকে বাইকস গাইড দুই ভাগে ভাগ করেছেঃ

  • মোটরসাইকেলের মেইনটেনেন্স
  • রাইডিং-এর অভ্যাসে পরিবর্তন

তেলের খরচ কমানোর জন্য মোটরসাইকেলের মেইনটেনেন্স

যেকোনো বাহনের মতই মোটরসাইকেল মেইনটেনেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। ভালো পারফরম্যান্স এবং মাইলেজ পাওয়ার জন্য নিয়মিত মোটরসাইকেলের মেইনটেনেন্স করানোর জুড়ি নেই। মেইন্টেনেন্সের জন্য যেসব জিনিস আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো নিম্নরূপঃ

তেলের খরচ কমাতে বিশুদ্ধ জ্বালানী ব্যবহার করুন

তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, সেখানে ঘোলা কিংবা নোংরা জ্বালানীর কোনও স্থান নেই। খারাপ মানের অপরিষ্কার জ্বালানী ইঞ্জিনের ভেতরে জ্বলতে সমস্যা করে। ফলে ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং তেল অপচয় হয়। এভাবেই খরচ বেড়ে যায় অনেক।

কার্বুরেটর পরিষ্কার ও টিউন করে রাখুন

ইঞ্জিনে তেল প্রবেশের আগে কার্বুরেটরেই প্রথম সেটা বাতাসের সাথে মিশে। বাতাস ও তেলের এই বিশেষ মিশ্রণ ইঞ্জিনে গিয়ে কাজ করে এবং বাইক চালানোর মত শক্তি উৎপন্ন হয়। তেল কতটুকু ব্যবহার হবে এটা এই কার্বুরেটরেই নির্ধারণ হয়; আর তাই কার্বুরেটর পরিচ্ছন্ন ও সচল থাকাটা খুবই জরুরি।

এখন এই কার্বুরেটরে যদি ময়লা জমে, তাহলে ইঞ্জিনে তেলের মিশ্রণের সাথে বেশ কিছু বর্জ্য প্রবেশ করে। ফলে দহন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। আবার একে ঠিকভাবে টিউন করানো না হলে ইঞ্জিনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জ্বালানী প্রবেশ করে। কিন্তু ইঞ্জিন ব্যবহারের সময় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণেই জ্বালানী পোড়ায়। এভাবে বার বার জ্বালানীর অপচয় হতে থাকলে প্লাগে সমস্যা হয় এবং তেলের খরচও অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়।

এয়ার ফিল্টার পরিচ্ছন্ন রাখুন

একটি ইঞ্জিন সচল থাকার জন্য এয়ার ফিল্টারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কার্বুরেটরে সঠিক পরিমাণে বাতাস সরবরাহ করার জন্য এয়ার ফিল্টার কাজ করে। আর কার্বুরেটরের মতই এতে ময়লা জমলে বাতাসের পরিমাণে গন্ডগোল হয় ও ইঞ্জিন ঠিকভাবে জ্বালানী পোড়াতে পারে না। তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, সেখানে এই সমস্যাও অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানোর জন্য চেইনের যত্ন নিন

আমরা সবাই জানি যে মোটরসাইকেলের চেইন একটা বাইকের স্পিড ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চেইন আপনার বাইকের স্পিড ভালো রাখার পাশাপাশি তেলের খরচও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসে।

নিয়মিত টায়ারের যত্ন তেলের খরচ কমাতে পারে

চেইনের মতই বাইকের টায়ারেরও সঠিক যত্ন প্রয়োজন। ম্যানুফেকচারিং কোম্পানির বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে টায়ারের প্রেশার সব সময় সর্বোচ্চ রাখার চেষ্টা করুন এবং চাকাগুলো সঠিকভাবে সমন্বয় করিয়ে নিন। এতে করে তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, একই সাথে টায়ারের আয়ুও অনেক ভালো হয়।

স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করুন

ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার জন্য স্পার্ক প্লাগ থেকেই মূল স্পার্কটা সৃষ্টি হয়। প্লাগের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাঁকা জায়গা থাকলে তবেই সেখান থেকে ভালো স্পার্ক পাওয়া যায়। এই ফাঁক বিভিন্ন কারণে ছোট হয়ে আসতে পারে, যেমন- কার্বনের উচ্ছিষ্ট জমা, তেল আটকে থাকা, প্রি-ইগনিশন ইত্যাদি।

আর তাই নিয়মিত আপনার মোটরসাইকেলের স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করানো ও সময়মত এটা বদলানো খুবই জরুরি। একটি পরিচ্ছন্ন স্পার্ক প্লাগ আপনার মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানো সহজ করবে। দেখা গেছে স্পার্ক প্লাগ ও অয়েল ফিল্টার পরিষ্কার রাখলে তেলের খরচ প্রায় ২০% কমে যায়।

তেলের খরচ কমাতে পারে বাইক সার্ভিসিং

একটি মোটরবাইক দেখতে ছোট মনে হলেও এতে ছোট বড় বিভিন্ন রকম অটো পার্টস রয়েছে। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন পার্টসের পাশাপাশি এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নষ্ট হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জ্বালানী খরচ হওয়ার পাশাপাশি আরও নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই ভালো কোনো বাইক সার্ভিসিং সেন্টার থেকে নিয়ম করে আপনার মোটরসাইকেলটি চেক-আপ ও সার্ভিসিং করান। এতে যেমন বাইক ভালো থাকবে, তেমনি কমবে তেলের খরচ

তেলের খরচ কমাবেন যেভাবেঃ রাইডিং-এর অভ্যাসে পরিবর্তন

মোটরসাইকেল রাইডিং-এর সময় বাইকস গাইডের বেশ কিছু জিনিস মেনে চললে আপনার মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানো সহজ হয়। সেগুলো নিচে উল্লেখ করছিঃ

সঠিক গতিতে রাইডিং করুন

তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, সেটা উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই আসে রাইডিং স্পিড অর্থাৎ গতির কথা। কেননা জ্বালানী খরচের সাথে রাইডিং স্পিডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। খুব দ্রুত বারবার বাইকের গতি বাড়ানো হলে অনেক বেশি পরিমাণে জ্বালানী অপচয় ঘটে। দেখা গেছে, ৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে বাইক চালালে ৭০ কিলো প্রতি ঘন্টার তুলনায় প্রায় ২৫% বেশি জ্বালানী খরচ হয়।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া চেষ্টা করুন হাই স্পিডে বাইক না চালাতে। বাইকস গাইডের মতে ৬০-৭০ কিলোমিটারপ্রতি ঘন্টা গতিতে বাইক চালানোই সবচেয়ে ভালো। এতে করে তেলের খরচ যেমন কমবে, তেমনি বাইকের নিয়ন্ত্রণও বেশ ভালো পাওয়া যায়।

তেলের খরচ কমাতে ইঞ্জিন সময়মত বন্ধ করুন

ট্র্যাফিক জ্যাম আমাদের দেশে বেশ সাধারণ একটা ঘটনা। তার চেয়েও বেশি সাধারণ ঘটনা হচ্ছে এই জ্যামে আটকে থাকা ইঞ্জিনগুলো সচল থাকার শব্দ। এক থেকে দুই মিনিটের বেশি সময় যদি কোথাও থেমে থাকতে হয়, সেখানে সবার আগে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন। জ্বালানীর অপচয় এবং তেলের খরচ দু’টোই অনেক কমে যাবে। তাছাড়া এখনকার সময়ে বেশিরভাগ আধুনিক বাইকেই রি-স্টার্ট নেয়ার সময় কোনও বাড়তি জ্বালানীর প্রয়োজন পড়ে না।

অতিরিক্ত ওজন বাইকে নেয়া এড়িয়ে চলুন

তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, সেখানে ডাবলিং করাই আসলে ভুল। কিন্তু আমাদের রাইড শেয়ারিং বাইকার ভাইদের তো ডাবলিং করতেই হয়। এক্ষেত্রে অন্তত অতিরিক্ত ওজন যেন বাইকে না তুলতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। অনেকে ছোট বাচ্চা সহ ৩-৪ জন পিলিয়ন নিয়ে বাইক চালান, এটা একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে বাইকের ইঞ্জিনে ও টায়ারের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানোর জন্য একজনের বেশি পিলিয়ন এবং ভারী মালামাল কখনওই সমর্থন করা যাবে না।

সঠিক গিয়ারে বাইক চালান

প্রয়োজনের তুলনায় কম গিয়ারে বাইক চালালে জ্বালানী অপচয় হয়। আবার পাহাড়ি রাস্তায়, ফ্লাইওভারে ওঠার সময়, কিংবা কর্নারিং করার সময় সারাক্ষণ সর্বোচ্চ গিয়ারে রেখে বাইকএর ইঞ্জিনে চাপ সৃষ্টি করাটাও অপচয়। মোটরসাইকেলের তেলের খরচ কমানোর জন্য উচ্চতর গিয়ারে বাইক অভ্যস্ত হয়ে আসলে সাথে সাথেই গিয়ার পরিবর্তন করুন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, যেনো প্রয়োজনের তুলনায় গতি বেশি বেড়ে না যায়।

তেলের খরচ কমাতে মাঝে মাঝে বাইকের বিকল্প ব্যবহার করুন

যেকোনো ট্রিপের শুরুর দিকে বাইকের ইঞ্জিন যথেষ্ট গরম হওয়ার সময় পায় না। আর এই সময়ে বায়ু-দূষণ প্রতিরোধকারী ক্যাটালিটিক কনভার্টারগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। আবার ৫ কিলোমিটারের কম ছোট ট্রিপে ইঞ্জিন তার সর্বোচ্চ অপারেটিং তাপমাত্রায় পৌছাতে পারে না। আর সেজন্যই ছোট ট্রিপে এবং ট্রিপের শুরুর দিকে বাইকের জ্বালানী দক্ষতা সবচেয়ে কম থাকে এবং তেলের খরচ বেশি হয়।

এক্ষেত্রে তেলের খরচ কমাবেন যেভাবে, তা হলো একই ট্রিপে যত বেশি পরিমাণে কাজ সেরে ফেলা যায়, সেই চেষ্টা করুন। অল্প দুরত্বের ছোট ট্রিপ এড়িয়ে চলুন, এবং এইসব ক্ষেত্রে হেঁটে কিংবা সাইকেলে ভ্রমণ করুন। প্রতি কিলোমিটারে বাতাসে ২৫০ গ্রামের বেশি গ্রিন-হাউজ গ্যাস নির্গমন করা থেকে যেমন বেঁচে যাবেন, তেমনি ভালো থাকবে আপনার স্বাস্থ্যও।

নিরাপদ ও আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি রাইড!

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy Engine Oilsbikroy
Bajaj dtsi engine oil 10w40 for Sale

Bajaj dtsi engine oil 10w40

MEMBER
Tk 1,100
1 hour ago
Motul Mobile for Sale

Motul Mobile

MEMBER
Tk 600
4 days ago
Liqui Moly 10-30 semi synthetic engine oil for Sale

Liqui Moly 10-30 semi synthetic engine oil

MEMBER
Tk 1,000
2 weeks ago
Benzol 4T 10W40 Semi Synthetic 1L for Sale

Benzol 4T 10W40 Semi Synthetic 1L

MEMBER
Tk 650
2 weeks ago
Buy Other Auto partsbikroy
+ Post an ad on Bikroy