মোটরসাইকেলের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিবেন কীভাবে?
ইঞ্জিন অয়েল এমন একটি তরল লুব্রিকেন্ট যা ইঞ্জিনের ভেতরে থাকা সকল পার্টসকে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে। বাইক চলাকালীন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মধ্যে যেন অতিরিক্ত ঘর্ষণ সৃষ্টি না হয় এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা। ইঞ্জিন অয়েলের কার্যকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।
ইঞ্জিন অয়েল যেমন ইঞ্জিনকে বিভিন্ন অক্সিডেশনের হাত থেকে রক্ষা করে, তেমনি ইঞ্জিনকে ক্ষতিকারক কেমিক্যালসের হাত থেকেও সুরক্ষিত রাখে। উন্নতমানের ইঞ্জিন অয়েল বাইকের ইঞ্জিন থেকে ওভারহিটিং সমস্যা দূর করে। তাই ইঞ্জিন ভালো রাখতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত।
সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল তিন ধরনের হয়ে থাকে —- মিনারেল, সেমি-সিনথেটিক এবং সিনথেটিক অয়েল। আপনার বাইকের জন্য কোন ধরণের অয়েল উপযুক্ত তা অবশ্যই যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন। আপনার বাইক যদি এয়ার কুল্ড ধরণের হয়ে থাকে তাহলে মিনারেল বা সেমি-সিনথেটিক ব্যবহার করাই ভালো।
এয়ার কুল্ড বাইকে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করলে ইঞ্জিনে ওভারহিটের সমস্যা দেখা দেয়। লিকুইড কুল্ড ইঞ্জিনে সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোম্পানি যে গ্রেডের অয়েল আপনার বাইকের জন্য নির্ধারণ করেছে সেটাই ব্যবহার করা উত্তম।
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল যদি ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রতি ৯০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার চালানোর পর বদলে ফেলা উত্তম। সেমি সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করে সহজেই ১৫০০ থেকে ১৬০০ কিলোমিটার চালানো যায়। সিনথেটিক অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো আপনার জন্য নিরাপদ। যেই অয়েল ব্যবহার করেন না কেন, ভালো ব্র্যান্ডের ও সঠিক গ্রেডের অয়েল ব্যবহার করতে হবে।
ইঞ্জিন হলো বাইকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সঠিক অয়েল ব্যবহারে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পায়। আজকের আলোচনায় আমরা জানাবো কিভাবে মোটরসাইকেলের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিতে হবে।
সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বাছাইয়ের আগে যা যা লক্ষ্য রাখতে হবে
-
ইঞ্জিন অয়েলের ভিন্নতা ও কার্যকারিতা
বাজারে Shell, Mobil, Motul, Castrol, Total, Liqui Moly সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। আপনার বাইকের ইঞ্জিনের জন্য নির্ধারিত গ্রেড অনুযায়ী যেকোনো ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল কিনে ব্যবহার করতে পারেন। ইঞ্জিন ওয়েল বিভিন্ন গ্রেডের হয়ে থাকে যেমন — ৫ W-৪০, ১০ W-৪০, ১০ W-৩০, ২০ W-৫০ ইত্যাদি।
তবে কোম্পানি দ্বারা উল্লেখিত গ্রেড অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো আপনার বাইকের জন্য। আপনার মোটরসাইকেল কতটা ভালো পারফর্ম করবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে অয়েল গ্রেডের ওপর। ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে আপনার বাইক চলবে ঠিকই তবে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবে। এর পাশাপাশি ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতাও কমে যাবে।
সাধারণত অন্যান্য গ্রেডের অয়েলের তুলনায় মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের দাম কম হয়ে থাকে এবং কাজ করে অল্প সময়ের জন্য। যদি মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রতি ৮০০-১০০০ কিলোমিটার বাইক চালানোর পর এই তেল পাল্টে ফেলা উত্তম। মিনারেল অয়েলের চেয়ে সেমি-সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েলের দাম কিছুটা বেশি, এবং এটি মিনারেল অয়েলের চেয়েও বেশি ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে থাকে।
মিনারেল ও সিনথেটিক অয়েলের মিশ্রনে তৈরি হয় সেমি-সিনথেটিক অয়েল এবং এটি মূলত ভালো কোয়ালিটির হয়ে থাকে। সেমি-সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে আপনি ভালো মাইলেজ পাবেন।
অন্যদিকে, সবচেয়ে দামি হলো সিনথেটিক অয়েল এবং এই অয়েল ভালো মাইলেজ পেতে সাহায্য করে। কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার জন্য উপযুক্ত তা অভিজ্ঞ মেকানিকের পরামর্শে যাচাই করা উত্তম। অবশ্যই, নির্দিষ্ট সময়ের পর এবং নিয়ম মেনে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করলে আপনার বাইকের পারফরম্যান্স ঠিক থাকবে।
-
ইঞ্জিন অয়েলের তাপ শোষণের ক্ষমতা
বাইকের জন্য ইঞ্জিন অয়েল বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্যই চেক করে নিতে হবে অয়েলটিতে উচ্চ তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে কি না। চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, আর ভুল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ফলে ওভারহিটিং সমস্যা বেড়ে যায়।
অয়েলের সঠিক পরীক্ষা করার পর যদি লক্ষ্য করেন এতে তাপ শোষণ করার ক্ষমতা নেই সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করা আবশ্যক। সুতরাং, বাইকের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বেছে নেওয়ার আগে পরীক্ষা করে দেখুন এতে তাপ শোষণ করার ক্ষমতা আছে কি না। অয়েল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে নানান তথ্য পেয়ে যাবেন। অথবা, অভিজ্ঞ মেকানিকের পরামর্শ নিন।
-
ইঞ্জিন অয়েলের লুব্রিকেশন চেক করা প্রয়োজন
আপনার বাইকের জন্য উপযুক্ত ইঞ্জিন অয়েলের মধ্যে লুব্রিকেশন পাওয়ার থাকতে হবে। ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্তে থাকা সিস্টেমগুলোর মধ্যে ঘর্ষণের সমস্যা অনেক ভাবেই দেখা দেয়। কখনো ভুল গ্রেডের অয়েল ব্যবহার করার ফলে, কখনো বা পুরানো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন না করার ফলে।
ইঞ্জিন অয়েলের লুব্রিকেশন পাওয়ার ভালো থাকলে ইঞ্জিনের ওভারহিটিং সমস্যা খুব একটা হয় না। যন্ত্রাংশের মধ্যে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত তাপকে নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে ইঞ্জিন অয়েলের লুব্রিকেশন। যেই ইঞ্জিন অয়েলের লুব্রিকেশন পাওয়ার বেশি থাকবে সেই ইঞ্জিন অয়েল আপনাকে ভালো ফলাফল দিবে। অতএব, সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বাছাই করার সময় চেক করে নিন অয়েলের লুব্রিকেশন পাওয়ার কতটুকু রয়েছে।
-
ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন
সাধারণত বাইকের ইউজার ম্যানুয়ালে লিখা থাকে কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য উপযুক্ত। ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে সঠিক গ্রেডের অয়েল ব্যবহার করা আবশ্যক। সাধারণত দুই গ্রেডের অয়েল বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। একটি হলো মাল্টিগ্রেড অয়েল এবং অপরটি হলো সিঙেলগ্রেড অয়েল।
গাড়ি বা বাইক যেটাই ব্যবহার করেন না কেনো অবশ্যই আপনাকে সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল বাছাই করতে হবে। ইঞ্জিন অয়েলের ভিসকোসিটি অনুযায়ী অয়েলের গ্রেডিং নির্ধারণ হয়ে থাকে। আপনার বাইকের ইঞ্জিনের জন্য কোন অয়েলটি উপযুক্ত তা ইউজার ম্যানুয়েল থেকে জেনে নিন। অথবা, বিস্তারিত জানতে ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন।
মিনারেল এবং সিনথেটিক অয়েল দুটি মিলিয়ে তৈরি হয় সেমি-সিনথেটিক অয়েল। এই অয়েলের কোয়ালিটি বেশ ভালো হয় এবং আমাদের দেশে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেকোনো মোটরসাইকেল যার ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ২০০সিসি এর উপর হয়ে থাকে সেসব বাইকের জন্য সিনথেটিক অয়েল সবচেয়ে উপযুক্ত। এছাড়া, নতুন বাইক যারা কিনে তারা বেশিরভাগই সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করে থাকে। এই উন্নতমানের অয়েলটি মিনারেল ও সেমি-সিনথেটিক অয়েলগুলোর চেয়েও বেশ কার্যকরী।
-
সঠিক ইঞ্জিন অয়েল যাচাই করা প্রয়োজন
কখন ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করবেন এটা জানা আপনার বাইকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিক সেইভাবে, কোন ধরণের ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের পারফরম্যান্স বাড়াবে সেটাও জানা অত্যন্ত জরুরি।
সকল গ্রেডের অয়েল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। ব্রেক অয়েল, গিয়ার অয়েল, ডিজেল ইত্যাদি কোন গ্রেডের অয়েল কোন বাইকের জন্য মানানসই তা বুঝতে পারা জরুরি। এতে আপনার বাইকের সম্পর্কে ভালো ধারণা হবে।
বিভিন্ন ইঞ্জিন অয়েলের বিভিন্ন কার্যকারিতা রয়েছে। এক এক ধরণের ইঞ্জিন অয়েলে ভিন্ন রকম ভিসকোসিটি থাকে। বাজারে বিভিন্ন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়। কোনটা আপনার বাইকের মডেলের সাথে মানানসই তা জানতে সাহায্য নিতে পারেন নিকটস্থ বাইক সার্ভিস সেন্টারের। অথবা, অভিজ্ঞ ইঞ্জিন অয়েল প্রস্তুতকারকের পরামর্শে আপনার বাইকের জন্য সঠিক তেল বেছে নেওয়া যেতে পারে।
আপনার বাইকের জন্য মানানসই এমন সব গ্রেডের অয়েল সম্পর্কে শিক্ষা নিলে আপনার বাইকের প্রতি বেড়ে যাবে। এবং পরবর্তীতে, আপনার বাইকের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
পরিশেষে
শুধুমাত্র ভালো ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলেই বাইকের মাইলেজ ভালো পাওয়া সম্ভব নয়। আপনার বাইকের মডেল এবং ইঞ্জিনের ধরণের উপর নির্ভর করে ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিতে হবে।
কোম্পানি নির্ধারিত গ্রেড অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে বাইকের ইঞ্জিন যেমন সচল থাকবে তেমনি বাইকের মাইলেজও ভালো পাবেন।
শুধুমাত্র ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের ইঞ্জিন দীর্ঘ সময় ভালো রাখবে। সার্টিফাইড ব্র্যান্ডগুলো ছাড়া অন্যান্য ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা আপনার বাইকের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করলে আপনার বাইক ও ইঞ্জিনের সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে পারবেন।
আমাদের আলোচিত সকল তথ্য আপনাদের সঠিক ইঞ্জিন অয়েল বেছে নিতে সাহায্য করবে আশা করা যায়। মোটরসাইকেলের দরদাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন বাইকস গাইড সাইটে।
এই ব্লগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
বাইকের ইঞ্জিন অয়েল কিভাবে চিনবেন?
বেশিরভাগ ইঞ্জিন অয়েলের বোতলের গায়ে 4T লেখাটি উল্লেখ থাকে। এটি দেখে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন ইঞ্জিন অয়েলটি বাইকের জন্য উপযুক্ত।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছেন?
আপনার বাইকের ক্লাচ এডজাস্টমেন্ট ঠিক থাকার পরও যদি বাইকের গিয়ার শিফটিং হার্ড হয়ে যায় তাহলে আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েলে ভেজাল আছে। অথবা আপনি ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছেন।
কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে তা কোথা থেকে জানবেন?
সাধারণত বাইকের ইউজার ম্যানুয়েলে লিখা থাকে কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য উপযুক্ত।
ইঞ্জিন অয়েল বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে?
বাইকের জন্য ইঞ্জিন অয়েল বাছাই করার সময় অবশ্যই চেক করে নিতে হবে অয়েলটিতে উচ্চ তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে কি না।
সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল কত প্রকার হয়ে থাকে?
সাধারণত ইঞ্জিন অয়েল তিন ধরণের হয়ে থাকে —- মিনারেল, সেমি-সিনথেটিক এবং সিনথেটিক।
Black