বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন

29 Mar, 2023   [wppr_avg_rating]
বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন

ফুয়েল ট্যাংক বাইকের মূল চালিকাশক্তি ফুয়েলকে ধারণ করে। তাই বলাই বাহুল্য, ফুয়েল ট্যাংক আপনার বাইকের খুব প্রয়োজনীয় একটি অংশ।

ধাতুর তৈরি হওয়ায় অনেকদিন ব্যবহার হতে থাকার পর বিভিন্ন কারণে ফুয়েল ট্যাংকের ভেতরে মরিচা ধরতে পারে, বা অবশিষ্ট ময়লা আবর্জনা ট্যাংকের ভেতরে থেকে গিয়ে বাইকের কর্মদক্ষতা হ্রাস করতে পারে। আর বাংলাদেশে সব ফুয়েল স্টেশনে ভালো মানের ফুয়েল থাকে না। ফুয়েলে অনেকসময়ই অনেক আবর্জনা বা মাইক্রোপার্‌টিকেলস মিশে থাকে যা ফুয়েল ট্যাংকের তলানিতে জমা হয়। তাই আমাদের প্রেক্ষাপটে ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন নেওয়া আরও প্রয়োজনীয়।

অনেকেই বাইকের চেইন স্পক, ইঞ্জিন, ক্লাচ, ইত্যাদির মেইন্টেনেন্স করতে করতে ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন নেওয়ার কথা ভুলেই যান। কিন্তু বাইকের মূল জ্বালানি ধারণের কাজটিই করে থাকে বাইকের জ্বালানি ট্যাংক বা ফুয়েল ট্যাংক। সুতরাং এটি ওয়েল মেইনটেইন্ড না থাকলে অপরিষ্কার ফুয়েল ট্যাংকের ডার্ট বা মাইক্রোপার্‌টিকেলস কার্বুরেটরেও ঢুকে গিয়ে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি এবং ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বেশ কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া বৃষ্টির সময় বাইক চালানোর কারণে পানির ফোটা ট্যাংকে গিয়ে বা বাইক ওয়াশ করার সময় ট্যাংকে পানি থেকে গিয়েও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এসব কারণে পুরো ফুয়েল ট্যাংক পরিবর্তন করে মোটা টাকা গুনতে হতে পারে। আর তা না করতে চাইলে বাইকের ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার এবং মেইনটেইন্ড রাখাই ভালো।

বাইকের ফুয়েল ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে বাইকের ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি, মাইলেজ, এমনকি ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। তাই অন্তত ৬ মাস বা এক বছর পরপর বা বাইক অন্তত ২০,০০০ কিলোমিটার চলার পর ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার আছে কিনা দেখে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।

ভালো সার্ভিসিং সেন্টারগুলো বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনি নিজে বাইকের ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করতে না পারলে প্রফেশনাল সার্ভিস সেন্টারের সাহায্য নেওয়াই ভালো। তবে নিজে ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করা এবং যত্ন নেওয়ার প্রক্রিয়া জেনে নিলে আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে ফুয়েল ট্যাংক ক্লিন করে নিতে পারবেন।

ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করারও বিভিন্ন উপায় আছে। এখানে সবচেয়ে সহজ উপায়টি তিনটি সহজ ধাপে আমরা তুলে ধরছি।

ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করার উপায়

প্রথম ধাপ- ট্যাংক রিমুভ করা

বাইকের জ্বালানি ট্যাংক বা ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য প্রথমত ফুয়েল ট্যাংক রিমুভ করতে জানতে হবে। ফুয়েল ট্যাংক বাইকের বেশ বড় একটা অংশ হওয়ায় বাইকের সাথে লাগিয়ে রেখে এটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার বা মেইন্টেন্যান্স করা সম্ভব নয়। যদিও আপনি পেট্রল নব এবং কারবুরেটরের মাঝখানে একটি টিউব দিয়ে একটি ফুয়েল ফিল্টার কানেক্ট করে নিতে পারেন, যা অনেকাংশে ট্যাংকের ময়লা পরিষ্কার করে এবং কারবুরেটরে আবর্জনা প্রবেশ করতে বাধা দেয়। কিন্তু ট্যাংকের ভেতরটা ভালোভাবে পরিষ্কার করার জন্য ট্যাংক রিমুভ করা জরুরী।

তাই আপনার বাইকের ধরণ বুঝে সিট এবং ট্যাংকের নিচের ফুয়েল পাইপ খুলে নিতে হবে। ফুয়েল পাইপ রিমুভ করার আগে ফুয়েল পাইপ সংলগ্ন চাবিটি ঘুরিয়ে বন্ধ করে নিতে হবে। এরপর ফুয়েল পাইপের ভেতরে অবশিষ্ট ফুয়েল ঝাঁকিয়ে বের করে নিতে হবে। ট্যাংকের সংলগ্ন অন্যান্য কানেকশন থাকলে সেগুলো সাবধানে খুলে ফেলে ফুয়েল ট্যাংকটি রিমুভ করে নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ- ট্যাংক পরিষ্কার করা

ফুয়েল ট্যাংক রিমুভ করা হয়ে গেলে ট্যাংকের নিচের ধাতব লকের পিনগুলো সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে। ফুয়েল ট্যাংকের নিচে একটি পরিষ্কার খালি পাত্র বা কন্টেইনার নিয়ে রাখতে হবে। ফুয়েল ট্যাংকের নিচের অন-অফ কানেকটরটি খুলে ফেলতে হবে। এতে ফুয়েল ট্যাংকের নিচ দিয়ে ভেতরের তেল বের হয়ে আসবে। অনেকসময় এর সাথেই বিভিন্ন ময়লা মাইক্রোপার্‌টিকেলস বের হয়ে আসে।

খেয়াল রাখতে হবে, এর সাথেই ভেতরের ফুয়েল সেন্সর কানেক্টেড থাকে, তাই সেন্সর সহ লক প্যাডটি পিন খোলার পরে খুব সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে। ফুয়েল সেন্সরের ক্ষতি হলে বাইকের ফুয়েল ইন্ডিকেটর কাজ করবেনা, বা ঠিকভাবে ফুয়েলের মাত্রা দেখাতে পারবেনা। কাজেই ফুয়েল সেন্সর সাবধানে খুলে আনতে হবে।

এরপরে ফুয়েল ট্যাংকের ভেতরের গায়ে লেগে থাকা গাম বা রাস্ট পরিষ্কারের পালা, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ফুয়েল ট্যাংকের ভেতরের পার্টে একটি ও-রিং এর উপরে সাধারণত ফুয়েল সেন্সরটি বসানো থাকে, আর এর নিচের অংশে অনেকসময় রাস্ট বা জঙ ধরতে পারে। তাই সাবধানে ও-রিংটি সরিয়ে তারপরে এর নিচের রাস্ট পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। ও-রিংটি যেনো কেটে বা ভেঙে না যায় এবং আবার লাগানোর সময় খুব বেশি টাইট করেও যাতে লাগানো না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ফুয়েল ট্যাংকের ভেতরে ভালো পেট্রল বা অকটেন প্রবেশ করিয়ে ট্যাংকের মুখ বন্ধ করে নিতে হবে। এর পরে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে ট্যাংকের নিচের থেকে লিকুইড বের করে আনলে ট্যাংকের অধিকাংশ আবর্জনা সরানো হয়ে যাবে। ট্যাংকের নিচের ওপেনিং এর আশেপাশেও জঙ ধরতে পারে, সেগুলোও ভালোভাবে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে।

অনেকেই খরচ বাঁচানোর জন্য কেরোসিন বা ডিজেল ব্যবহার করেন বাইকের জ্বালানি ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য, কিন্তু সেটি একদমই উচিত নয়। বরংচ ট্যাংকের ভেতরে পাইপ দিয়ে স্পিডে পানি এবং ডিটারজেন্ট প্রবাহ করে ফ্লাশ করলেও ট্যাংক অনেকখানি পরিষ্কার হয়।

এক্ষেত্রে ট্যাংকের নিচের মুখ বন্ধ রেখে উপরের দিক থেকে পানি প্রবাহ করে হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে দিতে হবে। পাইপে ভালো স্পিডে পানি প্রবাহ করলে ট্যাংকের ভেতরটা আরও ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। এরপরে ট্যাংকের উপরের মুখ আটকিয়ে ট্যাংকটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এরপর নিচের মুখ খুলে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে পানি বের করে নিলেই ট্যাংকের ভেতরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই পুনরায় ব্যবহার করার আগে ট্যাংক ভালোভাবে শুষ্ক করে নিতে হবে।

পানি পেট্রল বা অকটেনের চেয়ে হালকা। তাই ট্যাংকে পানি রয়ে গেলে পরবর্তীতে ফুয়েল ঢোকানো হলেও পানি নিচে জমে থাকবে এবং এর থেকে ট্যাংকে মরিচা ধরা শুরু করবে। এই সম্ভাবনা এড়াতে অবশ্যই ট্যাংক ভালোভাবে শুষ্ক করে নিতে হবে। ভালো মানের ড্রায়ার ব্যবহার করে ১০-১৫ মিনিট ট্যাংকটিকে শুকাতে দিলেও পরে আপনি নিশ্চিন্তে ট্যাংকটি বাইকে লাগিয়ে নিতে পারবেন।

তৃতীয় ধাপ- ট্যাংক আবার জায়গামতো বসানো

ট্যাংকের ভেতরটা ভালোমতো পরিষ্কার হয়ে গেলে এরপরে ট্যাংকটি আবার যথাস্থানে বসিয়ে সব কানেকশন আগের মতো লাগিয়ে নিতে হবে। ট্যাংকের সাথের সংযুক্ত প্যাড, লক, এবং স্ক্রু গুলো যথাস্থানে বসিয়ে নিতে হবে। ট্যাংকের বাইরে বা ফুয়েল প্রবেশের জায়গার আশেপাশে অকটেন বা পেট্রল লেগে থাকলে তা শুকনো কাপড় বা টিস্যু দিয়ে সরিয়ে নিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, অনেকসময়েই বারবার তেল ভরার সময় বাইকের ফুয়েল প্রবেশের জায়গা দিয়ে ধুলাবালি বা আবর্জনা ঢুকে যেতে পারে। তাই বারবার ফুয়েল নেওয়ার ঝুঁকিতে না যেতে চাইলে প্রতিবার ট্যাংক পূর্ণ করে তেল নিলে এই সমস্যা বেশ কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়।

পরিশেষে

বাইকের জ্বালানি ট্যাংক বা ফুয়েল ট্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। নিয়মমাফিক এটি পরিষ্কার রাখলে এবং যত্ন নিলে আপনার বাইকের পারফরম্যান্স এবং ফুয়েল ইফিসিয়েন্সি দুটিই বজায় থাকবে এবং আপনি নিশ্চিন্তে অনেকদিন বাইক চালাতে পারবেন। বাইকের সবচেয়ে বড় পার্টসগুলোর একটি হওয়ায় ফুয়েল ট্যাংকের ক্ষতি বাইকের পারফরম্যান্সের জন্য মারাত্মক। তাই অবশ্যই আপনার বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন নিন।

দেশের বাজারে মোটরসাইকেল কেনাকাটা এবং মেইন্টেন্যান্স সম্পর্কিত সব খবরাখবর জানতে ভিজিট করুন Bikroy.com এর ব্লগ সাইটে

বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের যত্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা

১. বাইকের ফুয়েল ট্যাংক কি দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত?

বাইকের ফুয়েল ট্যাংক পেট্রল বা অকটেন দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

ডিটারজেন্ট পানি দিয়ে কি ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার করা যায়?

হ্যাঁ, তবে ট্যাংক অবশ্যই শুষ্ক করে তারপরে ব্যবহার করতে হবে।

ফুয়েল ট্যাংক বাইক থেকে না সরিয়ে বাইরে থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা যায়?

ফুয়েল ট্যাংক ফিল্টার ব্যবহার করে আপনি অনেকাংশে কার্বুরেটরে আবর্জনা ঢোকা বন্ধ করতে পারবেন। তবে ট্যাংকের ভেতরে পরিষ্কার করতে চাইলে ট্যাংক রিমুভ করতে হবে।

কত সময় পরপর ফুয়েল ট্যাংক পরিষ্কার আছে কিনা দেখা উচিত?

অন্তত ছয় মাস বা এক বছর পরপর।

ফুয়েল ট্যাংকে আবর্জনা ঢোকা কমাতে কি করতে পারি?

সবসময় ট্যাংক পূর্ণ করে তেল নেওয়ার চেষ্টা করুন। ফুয়েল ট্যাংকের ঢাকনা ভালোমতো আটকে রাখুন। ট্যাংকের মুখের আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।

Similar Advices



Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Auto Partsbikroy
Gps Tracker St-901 for Sale

Gps Tracker St-901

MEMBER
Tk 6,000
5 days ago
Bajaj Discover 125 bettary 12 volt 2024 for Sale

Bajaj Discover 125 bettary 12 volt 2024

MEMBER
Tk 750
4 hours ago
Car Parts for Sale

Car Parts

MEMBER
Tk 3,500
13 hours ago
Battery Booster Charger FY1000 for Sale

Battery Booster Charger FY1000

verified MEMBER
Tk 50,000
1 month ago
Buy Used Auto partsbikroy
100% Recondition Japani Dual class for Sale

100% Recondition Japani Dual class

verified MEMBER
Tk 115,000
1 week ago
100% recondition Japani MR20 Engine for Sale

100% recondition Japani MR20 Engine

verified MEMBER
Tk 120,000
2 weeks ago
R15 V3 Stock Mirror for Sale

R15 V3 Stock Mirror

MEMBER
Tk 800
37 minutes ago
Xtreme 125r Parts for Sale

Xtreme 125r Parts

MEMBER
Tk 2,200
1 hour ago
+ Post an ad on Bikroy