প্রথম দিককার ট্র্যাফিক সাইন ছিল প্রস্তর নির্মিত। রোমানরা এগুলো ব্যবহার করতেন পর্যটকরা অথবা পরিব্রাজকরা শহরের কতটা কাছে আছেন তা নির্দেশ করার জন্য। অনেকেই জানেন, বাইসাইকেল আবিষ্কারের পর ট্র্যাফিক সাইনের ব্যবহার সর্বত্র শুরু হয়। কারণ, সাইক্লিস্টদের সামনে বাঁধা আছে কিনা তা বোঝার জন্য এই চিহ্নগুলো তাদের প্রয়োজন পড়ত। দিনে দিনে আরও নতুন নতুন মোটর যানের ব্যবহার বেরে যাওয়ায় নতুন ট্র্যাফিক সাইনের প্রয়োজন পরে এবং ব্যবহার শুরু হয়। আজকের দিনে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ট্র্যাফিক সাইন সম্পর্কে তেমন একটা জানি না। কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ?
১। এর মাধ্যমে চালকদের জন্য আইন নির্দিষ্ট হয়
একটি দেশের সব স্থানে ট্র্যাফিক সাইন নির্দিষ্ট থাকে। আমেরিকার সব স্টেটে একই ধরণের ট্র্যাফিক সাইন ব্যবহৃত হয়। সব স্থানে সাইন বা চিহ্ন যদি একই রকম না হট তাহলে সবার জন্য তা মেনে চলা হয়ে যেত কষ্টকর। রোড সাইন স স্থানে একই না হলে রাস্তাগুলো মানুষের চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেত। স্থানভেদে ট্র্যাফিক সাইন পরিবর্তিত হলে তা চালকদের জন্যও সমস্যার সৃষ্টি করত।
২। যে কেউ তা বুঝতে সক্ষম
সাইন বা চিহ্নের ডিজাইন নির্দিষ্ট। শুধুমাত্র শব্দের উপর নির্ভর না করে সাধারণত এতে ছবি ব্যবহার করা হয়। যেমন- কোন প্রাণী রাস্তা পার হচ্ছে কিংবা বাচ্চারা খেলছে। এর ফলে যেকোনো দেশের যেকোনো ভাষাভাষী মানুষ তা সহজে বুঝতে পারে। রং ও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন লাল রং এর ব্যবহারের মাধ্যমে থামতে নির্দেশ করা হয় এবং হলুদ রং এর ব্যবহারের মাধ্যমে সতর্ক হতে অনুরোধ করা হয়।
৩। এর মাধ্যমে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করা হয়
ট্র্যাফিক সাইনের মাধ্যমে আপনাকে শুধুমাত্র গতি কমাতে কিংবা থামাতে নির্দেশ দেয়া হয়না। সামনে হয়ত কোন নির্মাণাধীন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকতে পারে। এসব নির্মাণাধীন প্রকল্পের সামনে সাময়িক কিছু সাইন ব্যবহার করা হয়। যেমন- সামনে কাজ চলছে অথবা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন। সামনে তীক্ষ্ণ বাঁক যুক্ত রাস্তা অথবা উঁচুনিচু রাস্তা আছে এমন নির্দেশনা দিতেও ট্র্যাফিক সাইন ব্যবহার হয়। নির্দিষ্ট ট্র্যাফিক সাইন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যবাহার নাআ হলে আপনি হয়ত ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীনও হতে পারেন।
৪। ট্র্যাফিক সাইন চালকদের নিরাপত্তা প্রদান করে
চালকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ট্র্যাফিক সাইন ব্যবহার হয়। এই চিহ্নগুলো ছাড়া রাস্তা হয়ে যাবে বিপদজনক। চালকের কোন ধারণাই থাকবে না কথায় থামতে হবে, সতর্ক হতে হবে অথবা কত স্পিডে যেতে পারবে। সম্মুখে কোন বাঁধা থাকলে তার ব্যাপারেও অজ্ঞাত থেকে যাবেন ট্র্যাফিক সাইন না থাকলে। ট্র্যাফিক সাইন না থাকলে বেপরোয়া চালকরা ইচ্ছেমত গাড়ি চালাবেন যা তার নিজের এবং রাস্তায় অন্যান্যদের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। ট্র্যাফিক সাইন আইন নির্দিষ্ট করে দেয় এবং চালকদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করে।
৫। পথচারী এবং সাইকেল চালকদের নিরাপত্তা প্রদান করে
ট্র্যাফিক সাইন শুধুমাত্র যারা মোটর যান চালান তাদের নিরাপত্তাই প্রদান করে না। পথচারী এবং সাইকেল চালকরাও রাস্তা ব্যবহার করেন। সাইন বা চিহ্নগুলো মানুষকে নির্দেশ করে কখন এবং কোথায় রাস্তা পার হতে পারবেন এবং একই সাথে চালকদেরকেও তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে নির্দেশ করে। সাইকেল চালকরাও বুঝতে পারেন কোথায় তারা চালাতে পারবেন এবং কোথায় জন্য পথচারীদের থামতে হবে। এই নিয়মগুলো পালনের মাধ্যমে সবাই নিরাপদে পথ চলতে পারবেন।
৬। ট্র্যাফিক সাইনের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়
যানজট পৃথিবীর অনেক দেশেই অন্যতম সমস্যার নাম। শহরের রাস্তায় প্রচুর মোটর গাড়ি চলাচলে করে রাস্তায় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করে। ট্র্যাফিক সাইন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যাতে করে যান চলাচল নির্বিঘ্ন হয়। চৌ রাস্তার মোড়, সতর্কীকরণ চিহ্ন,লাল রঙের স্টপ সাইনসহ এরকম আরও অনেক চিহ্নের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়।
৭। ট্র্যাফিক সাইন আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছাতে সহায়তা করে
আপনি আপনার গন্তব্যস্থল হতে কত দূরে আছেন, কোথায় বাঁক নিতে হবে কিংবা রাস্তার নাম এরুপ নানা বিষয় সম্পর্কে ট্র্যাফিক সাইন আপনাকে অবহিত করে। এই চিহ্নগুলো ছাড়া নতুন রাস্তায় আপনার পথ চলতে অসুবিধা হত। গন্তব্যে পৌছাতে সময় লাগত অনেক বেশি। ট্র্যাফিক সাইন আপনার ভ্রমণকে সহজ ও নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৮। নতুন চালকদের জন্য এই চিহ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ
অভিজ্ঞ চালকদের জন্য গাড়ি চালানো কোন ব্যাপারই না। কিন্তু নতুন চালকদের জন্য গাড়ি চালনা প্রথম প্রথম একটু কষ্টকর হয়। আমরা সাধারণত নির্দিষ্ট রুতেই প্রতিদিন চলাচল করি তাই আমাদের ট্র্যাফিক সাইন নিয়ে তেমন একটা ভাবতে হয় না। কিন্তু যারা নতুন ড্রাইভার তাদের জন্য ব্যাপারটা সেরকম নয়। তারা এখনও রাস্তা চিঞ্ছে। তাদেরকে ড্রাইভিং ক্লাসের সময় প্রশিক্ষকগণ বিভিন্ন সাইনের মানে বুঝিয়ে দেন যাতে করে তারা যখন রাস্তায় গাড়ি চালানো আরম্ভ করবে তখন যেন বিভ্রান্ত না হয়ে যায়।
৯। নিত্যনতুন ট্র্যাফিক সাইন এখনও উদ্ভাবন হচ্ছে
অনেক বছর ধরেই ট্র্যাফিক সাইনের বিবরতন হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটা বিতর্ক ওঠে ট্র্যাফিক সাইনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে। কোন পরিবর্তন আনলে রাস্তা আরও নিরাপদ হবে তা নিয়ে গবেষকগণ নিত্যনতুন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরণের এলইডি লাইট, সোলার পাওয়ার এবং আরও ডায়নামিক ডিজাইন নিয়ে গবেষণা চলমান। দশ বছর আগে একটি জার্মান শহরে সব ট্র্যাফিক সাইন, লাইট এবং স্পিড লিমিট উঠিয়ে দেয়া হয় যাতে করে ড্রাইভাররা আরও সতর্ক হয়ে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিতে পারেন। এই ব্যবস্থা কাজে আসেনি। তারপরও ট্র্যাফিক সাইনের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন উদ্ভাবন এখনও হয়ে চলেছে।
১০। আপনার করের টাকায় ট্র্যাফিক সাইন তৈরি হয়
সর্বশেষ কারণটি হচ্ছে আপনার করের টাকায় এই সাইনগুলো তৈরি হয়। প্রতিবছর কোটি টাকা খরচ হয় হাইওয়ে এবং অন্যান্য রাস্তা এগুলো তৈরিতে। আপনার অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত কারণ আপনার টাকাতে আপনার ভালোর জন্যই এগুলো তৈরি।
রাস্তায় নিরাপদে চলতে গেলে ট্র্যাফিক সাইনের বিকল্প নেই। নির্ঝঞ্ঝাট রাস্তা পেতে চাইলে ট্র্যাফিক আইন মানে চলা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য। আমাদের সবারই উচিত ট্র্যাফিক আইন মেনে চলা এবং সম্ভব হলে অন্যকেও সতর্ক করা।