ড্রাইভিং এর জন্য লাইসেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু একটি কাগজই নয় বরং সরকারের পক্ষ থেকে গাড়ি চালানোর অনুমোদন। পৃথিবীর যেকোনো স্থানে গাড়ি চালাতে হলে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়বে। চলুন তাহলে এই লেখায় আমরা জেনে নিই ড্রাইভিং লাইসেন্স কি, এর গুরুত্ব, কিভাবে পাওয়া যাবে এবং এর নবায়ন প্রক্রিয়া কিরুপ।
ড্রাইভিং লাইসেন্স কি ?
ড্রাইভিং লাইসেন্স হল সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি অনুমতি পত্র। সাধারণত, ড্রাইভিং টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে এটি দেয়া হয়। এক কথায় লাইসেন্স সরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু হয় এবং এর বাহককে মোটর যান চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সটি সাধারণত প্ল্যাস্টিকের তৈরি হয় এবং ক্রেডিট কার্ডের সাইজের সমান হয়ে থাকে। এখন আমরা আলোচনা করব ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে তার উপর।
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) কর্তৃক ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়। ৬৪ টি প্রশাসনিক সার্কেলের মধ্যে ৩২ টি জেলায় BRTA’র কার্যালয় রয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ড্রাইভারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি শুধুই একটি কাগজ নয়। এটি হল সড়কে মোটর যান চালানোর জন্য সরকারী অনুমতি পত্র। আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে তাহল আপনি কোন মোটর যান চালাতে পারবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিরেকে গাড়ি চালানো অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে বাংলাদেশ পুলিশ সেক্ষেত্রে আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে।
লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে?
প্রথমে আপনাকে BRTA কর্তৃপক্ষ বরাবরে লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর আপনি মূল লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য যেসব ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে-
১। ছবিঃ ছবির সাইজ হতে হবে ৩০০*৩০০ পিক্সেল এবং সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইট।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক স্বাক্ষরিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি। স্ক্যান কপির সাইজ অনধিক ৬০০ কিলোবাইট হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অথবা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি। স্ক্যান কপির সাইজ ৬০০ কিলোবাইটের বেশি হওয়া যাবে না।
৪। বর্তমানে যে ঠিকানায় অবস্থান করছেন সেখানকার গ্যাস, বিদ্যুৎ অথবা পানির বিলের কপি ( অনধিক ৬০০ কিলোবাইট )।
৫। মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ৩৪৫ টাকা এবং হালকা মোটর যান ও মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য ৫১৮ টাকা ফিস লাগবে।
সাধারণ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পর আপনি চাইলে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি আপনি স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চান সেক্ষেত্রেও আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
- প্রথমে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বি আর টি এ কার্যালয়ে যেতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অথবা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি।
- রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক স্বাক্ষরিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি।
- সদ্য তোলা ৫ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
তাছাড়া, ৫ বছর মেয়াদী পেশাদার স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১৬৮০ টাকা এবং ৩ বছর মেয়াদী অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২৫৪২ টাকা লাগবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন (রিনিউ) প্রক্রিয়া
দুই ধরণের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। একটি হল পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং অপরটি হল অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স। পেশাদার ড্রাইভিং তাদের জন্য প্রয়োজন যারা গাড়ি চালনাকে পেশা হিসেবে নিতে চান এবং অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেস্ন সৌখিন ড্রাইভার অথবা যারা নিজের গাড়ি নিজে চালাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য।
শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য
শিক্ষানবিশদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের ১৫ দিন আগে আবেদন করলে ২১৮৫ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে আবেদন করলে ২৩৮৫ টাকা জমা দিতে হবে। নির্ধারিত কাগজ পত্র জমা দেবার পর তা বি আর টি এ কর্তৃক মঞ্জুর করা হলে সাথে সাথেই আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। আপনার লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত হওয়ামাত্রই এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
পেশাদার লাইসেন্সের জন্য
পেশাদার লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে একটি ব্যবহারিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্ধারিত কাগজপত্র সহ আপনাকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের ১৫ দিন আগে আবেদন করলে ১৩২৩ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে আবেদন করলে ১৫২৩ টাকা জমা দিতে হবে। আপনার সকল কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে সাথে সাথেই আপনার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। আপনার লাইসেন্স কার্ডটি প্রস্তুত হওয়ামাত্রই একটি এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজ
১। আপনার নিকটস্থ আরটিও অফিস থেকে কিংবা অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৯ নম্বর ফর্মটি সংগ্রহ করে পূরণ করে নিন।
২। ফর্ম ১ এবং ১(ক) এ উল্লেখ থাকে যে আপনি শারীরিকভাবে সক্ষম। এই ফর্মটি আপনি আর টি ও অফিস অথবা অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
৩। মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্সটি জমা দিতে হবে।
৪। বয়স এবং ঠিকানার প্রমান স্বরূপ জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্ট প্রদান করতে হবে।
৫। সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন
বি আর টি এ’র পূর্ণরূপ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি। আপনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিতে ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোডের জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-
এই আর্টিকেলটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তৈরি করা। এতে আমি চেষ্টা করেছি এ বিষয়ক যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এবং তথ্য প্রদানে। এই আর্টিকেল প্রস্তুতের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইন্টারনেট থেকে নেয়া হয়েছে। যদি কোন তথ্যে ভুল থেকে তাহকে দয়া করে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। পরবর্তী আপডেটের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।