TVS Apache RTR 160 4V vs Bajaj Pulsar 150: দাম, বৈশিষ্ট, এবং পার্থক্য
বর্তমানে বাংলাদেশে বাজাজ পালসার 150 ডিডি ও টিভিএস এপাচি আর টিআর 160 4ভি এই দুটি বাইক ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা এবং বিস্তার লাভ করছে । এই রিভিউতে এই বাইক দুটো নিয়ে আলোচনা করবো। আলোচনায় থাকছে বাইক গুলোর বৈশিষ্ট ,দাম ও সব শেষে থাকছে পার্থক্য,এবং আমি নিশ্চিত যে আপনারা এই রিভিউটি পড়ার পর বাইক কেনার জন্য যা যা জানা দরকার সেই সব ইনফরমেশন পেয়ে যাবেন।
বাজাজ পালসার 150
বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় বাইক হিসেবে পরিচিত বাজাজ পালসার 150 ডিডি এই বাইকটি । বাজাজ পালসার 150 ডিডি এই ধরণের একটি বাইক কেনার ইচ্ছা কার না হবে । আমারও অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এই বাইকটি কেনার । অনেক সাধনার পর এক দিন কিনেই ফেললাম বাজাজ পালসার 150 ডিডি বাইকটি । আমার বাইকটি এই পর্যন্ত ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলেছে । আমি এখন এই বাইকটির ভালো এবং খারাপ দিক নিয়ে কিছু আলোচনা করবো । আরও জানাবো এই বাইকটির দাম ,ও বৈশিষ্ট সম্পর্কে ।
নিজের একটা বাইক থাকবে এই ইচ্ছাটা আমার অনেক দিনের কেননা বাইকে করে যদি কোথাও ঘুরতে যাই তখন আশেপাশের প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অনুভব করা যায় । এছাড়া অন্নান্ন যানবাহন থেকে বাইকে করে যেকোনো প্রয়োজনে যাওয়া আশা আমার কাছে অনেক সুবিধা বলে মনে হয় । আজকে আমি বাইক নিয়ে যা যা জানাতে চলেছি তা দেখে আশা করছি আপনাদের কাজে আসবে।
বাজাজ পালসার 150 দাম ও বৈশিষ্ট
এই বাইকের স্টাইল এবং সবকিছুই আমাকে অনেক আকর্ষিত করে । তাই শোরুম থেকে অন্নান্ন বাইক গুলো থেকে আমি এই একটি বেছে নিয়েছি । আমি এই বাইকটি কিনেছিলাম ১,৮২,৯০০ টাকা দিয়ে।
এই বাইকটির প্রধান প্রনাণ বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলোঃ
আমার বাজাজ পালসার 150 ডিডি বাইকটি ডুয়েল ডিস্ক 150 সিসি একটি বাইক ।এই বাইকের সামনে ও পেছনে ডিস্ক ব্রেক আছে আরো আছে শক্তিশালী 150 সিসি ডিটিএস আই ইঞ্জিন। এই বাইকের ইঞ্জিন 13.25 নিউটন মিটার tork উৎপন্ন করে থাকে । এটি হলো 4-stroke .2 valve এর একটি ইঞ্জিন। 5 থেকে 38 কিলোমিটার মাইলেজ পাচ্ছি প্রতি লিটার অক্টেনে। আমার বাইকটি মাত্র 1500 কিলোমিটার পর্যন্ত চলেছে তাই হয়তো মাইলেজ কিছুটা কম কিন্তু আশা করছি ব্রেক-ইন পিরিয়ড শেষ হলে মাইলেজ আরো বেশি পাবো।
আমার বাইকের তেমন কোনো মোডিফিকেশন করার ইচ্ছা নেই । তবে আমার বাইকটির হেডলাইটের এল আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি । তাই বাইকে ফগ লাইট লাগানোর ইচ্ছা আছে। কেননা রাতে আলোর স্বল্পতার জন্য রাতে বাইক রাইড করতে একটি সমস্যা হয় ।
প্রতি সপ্তাহে আমি আমার বাইকটি নিজেই ওয়াশ করি । বাইক ওয়াশ করতে আমি শ্যাম্পু ইউস করি।
আমি আমার বাইকে মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছি । কেননা আমার বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইন্টেন করছি । বাজাজ অনুমোদিত বাজাজ ডিটিএসই ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করছি যার মূল্য 490 টাকা । সব মিলিয়ে বাইকটি অসাধারণ ।
বাজাজ পালসার 150 ডিডি বাইকটির ভালো দিক –
- এর সিটিং পজিশন বেশ সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক বলে মনে হয়েছে ।
- সাস্পেনশন অফরোডেও বেশ ভালো পারফর্মেন্স দেয় ।
- এই বাইকের সব থেকে ভালো দিক হলো আর ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক ।
- আর এর সামনে ও পেছনে রয়েছে 90 সেকশন এবং 120 সেকশনের টায়ার ।
বাজাজ পালসার 150 ডিডি বাইকের খারাপ দিক –
- এই বাইকে কিক স্টার্চ এর ব্যবস্তা নেই ।
- পূর্বের পালসার এর চেয়ে ইঞ্জিনের শক্তি কিছুটা কম মনে হয়েছে ।
- এই বাইকে সিবিএস বা এবিএস নেই ।
আমার বাইকটি নিয়ে আমি এখনো দূরে কোথাও যায়নি । তবে এতদিন যেভাবে যতটুকু চালিয়েছি এতে আমার মনে হয়েছে এটি লংট্যুরেও ভালো পারফর্মেন্স দিবে । এই বাইকের দামতো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে । তাই আপনাদেরকে বলতে চাই যে আপনারা যদি এই বাজেটে ভালো একটি বইও কিনতে চান তাহলে বাজাজ পালসার 150 ডিডি এর বাইকটি কিনতে পারেন । কেননা এই বাইকটির কন্ট্রোলিং সিষ্টেম ,লুক্স ,মাইলেজ খুবই ভালো আমি আমার বাইকটি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট ।
টিভিএস এপাচি আর টিআর 160 4ভি মোটর সাইকেল
আমি এই পর্যন্ত অনেক গুলো ব্রেন্ডের বাইক চালিয়েছি । এপাচি আর টি আর ভি 4 160সিসি বাইকটি টিভিএস আর শোরুমে দেখে আমার খুব ভালো লাগে । আর আমি এই বাইকটি কিনে নিলাম।
বাইকটি আমি 2 মাস হলো চালাচ্ছি । 800 কিলোমিটার পর্যন্ত এই বাইকটি চালানো হয়েছে । এই বাইকটি ব্যবহার করে আমার এর উপর হয়ে কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদেরকে জানাবো । আমার আজকের রিভিউটি পরে আশা করছি আপনার বাইক কেনার ক্ষেত্রে কাজে আসবে ।
এই বাইকটির স্টাইল ,ও আউট লুক যথেষ্ট আকর্ষণীয় । এই বাইকের ব্রেন্ডের ওপর আস্থা রেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। তবে বাইকটির ইঞ্জিনের শব্দ টি স্মুথ না হওয়ায় আমি একটু অসন্তুষ্ট ।এছাড়া বাইকের অন্যান্য সব দিক আমার জন্য একদম ওকে।
ডাবল ডিস্ক যুক্ত বাইক কেনার শখটা আমার অনেক দিনের ছিল । কেননা এই বাইকের কন্ট্রোল সিষ্টেম খুবই ভালো । তাই এই বাইকটি যে কোনো গতিতেই চালানো যায় । টিভিএস এপাচি আর,টি,আর ভি৪ টুইন ডিস্ক বাইকটি কিনতে পেরে আমি নিজেকে খুব লাকি বলে মনে করি । এই বাইকটি যারা চালিয়েছে তাদের মধ্যে এমন অনেক জনকেই আমি জানি যারা বলেছেন এই বাইকটি অনেক ভালো মানের একটি বাইক । এবং এই বাইকটি চালিয়ে আমার নিজের কাছেও খুব ভালো লেগেছে । আমার মতে এই বাইকের আউটসাইড ও ইনসাইড সব দিক মিলিয়ে এর পারফর্মেন্স অসাধারণ ।
টিভিএস এপাচি আর টিআর 160 4ভি দাম ও বৈশিষ্ট
বাইকটি পছন্দ করার অন্যতম কারণ হচ্ছে ,এপাচি ভি৪ টুইন ডিস্ক বাইকটির স্টাইল ,আউটলুক ,কন্ট্রোল সিষ্টেম ,এমনকি অধিকাংশ কাস্টমারদের ফিডব্যাক ভালো থাকার কারণে আমি ই একটি কেনার জন্য আগ্রহী হয়েছি । সম্পূর্ণ নতুন রূপে তৈরী করা এর গ্রাফিক্স ডিজাইন গুলো । এই বাইকটির সকল বৈশিষ্ট বিবেচনা করে আমি এই বাইকটি কিনেছি । বাংলাদেশ বাজারে এর মূল্য ২,০৪,০০০ টাকা।
মাইলেজ সিটি :35কিলোমিটার ,মাইলেজ হাইওয়ে :45 কিলোমিটার । মোট কথা আমার বাইকে একদিনে 100 কিলোমিটার রাইড করেছি .100কিলোমিটার রাইড করেও কোনো রোকোম অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়নি আমাকে । বাইকটি থেকে এ পর্যন্ত আমি ভালোই সাপোর্ট পেয়েছি । আর বাইকের ব্রেকিং সিষ্টেমও খুব ভালো । সিবিকের সামনে ও পেছনের চাকা গুলোতে ডিস্ক ব্রেক দেওয়া আছে । এই বাইকের চাকা গুলো একটু মোটা থাকার জন্য জোরে ব্রেক করার পরেও স্কিড্ করেন না । এই বাইকটির লাস্টিং অনেক ভালো হবে বলে মি মনে করি । টিভিএস এপাচি আর,টি,আর ভি৪ ১৬০ সিসি একটি টেকসই মানের বাইক এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
টিভিএস এপাচি আর,টি,আর ভি৪ টুইন ডিস্ক বাইকের ভালো দিক –
- এই বাইকের ডাবল ডিস্ক ব্রেক সিষ্টেম খুব ভালো মানের ।
- এর কন্ট্রোল সিষ্টেম সহজেই যে কেউ হ্যান্ডেল করতে পারবে ।
- ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী হওয়ার কারণে এই বাইক এর স্প্রিট বেশি।
- আধুনিক সব গ্রাফিক্স থাকার কারণে এর লুক সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় অনেকাংশেই ।
টিভিএস এপাচি আর,টি,আর ভি৪ টুইন ডিস্ক বাইকের খারাপ দিক –
- এই বাইকের ইঞ্জিনের শব্দটা অনেকটা স্মুথ না ।
TVS Apache RTR 160 4V vs Bajaj Pulsar 150ঃ পার্থক্য
গুডলুকিং : লুকিংয়ের দিক থেকে বাজাজ পালসার 150 বাইকটি এগিয়ে থাকবে কেননা এর গ্রাফিক্স ডিসাইন ও স্টিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করে । অনেকেই বাইক কেনার পর গ্রাফিক্স অথবা স্টিকার করে থাকে । কিন্তু আমার মনে হয় বাজাজ পালসার বাইকে কোনো রকমের মোডিফিকেশন করার প্রয়জন নেই । কারণ এই বাইকের নিজস্ব গুড লুকিংস তো আছেই আরো আছে এই বাইকের এক্সট্রা এগ্রেসিভ ।অন্য দিকে টিভিএস অ্যাপাচি আর টি আর একটু নরমাল টাইপের ,তাই বলে একেবারে চলেনা যে তা নয় ।
ইঞ্জিন পারফর্মেন্স :ইঞ্জিন পারফর্মেন্স এর দিক থেকে আর টি আর 4ভি অনেকটাই এগিয়ে আছে কেননা এই বাইক এতটাই রিফাইন্ড ইঞ্জিন প্রথম বার চালিয়ে বুঝার উপায় নেই যে এইবাইক 0 কিলোমিটার রানিং । বাজাজ পালসার সেই দিক থেকে একটু পেছনে পরে আছে । এই বাইকটি অনেক জোরে সাউন্ড করে স্পিড উঠে এবং প্রথম বার স্টার্ট করার সময় ইঞ্জিনে শক্ত একটা বা থাকে আমি এখন পর্যন্ত 126 কিলোমিটার ঘন্টা প্রতি স্পিড পেয়েছি পালসার এনএস এ আর ১৬০ ৪ভি তে পাইসি ১৩৫ কিলোমিটার পালসার এনএস এ আর ১৬০ ৪ভি তে পেয়েছি ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ।
ব্যালেন্স :যেকোন বাইকের চেসিস ডিজাইন এর উপর বাইকের ব্যালেন্স ডিপেন্ট করে । এখানে অনেকের একটা ভুল ধারণা আছে চাকা চিকন হলে ব্যালেন্স খারাপ আর চাকা মোটা হলে ব্যালেন্স ভালো । বাজাজ পালসার এর প্যারামিটার ফ্রেম (চেসিস ) সেই জন্য এর ব্যালেন্স পজিশন ভালো পড়ে আছে । 4ভি বাইক এর আছে জিক্সার আর এই কারণে যারা জিক্সার চালিয়ে অভভস্থ উনাদের কাছে 4ভি এর ব্যালেন্স খুব ভালো লাগবে । দুইটি বাইকের সিস্টেম ওনুসারে বাইক গুলোর দাম একেবারেই পারফেক্ট বলা যায় ।
মাইলেজ :যেহেতু উটি বাইকের বৈশিষ্ট আমরা আগেই আলোচনা করেছি তাই নতুন করে বলার আর কিছু নেই এক কোথায় বলা চলে 4ভি একটু বেশি তেল খায় বাজাজ পালসার এর তুলনায় ।
স্ট্যাবিলিটি: স্ট্যাবিলিটি কথার মিনিংটা বলতে বুঝানো হয়েছে আমি অন গ্রাউন্ড স্ট্যাবিলিটি। অনেকটা এরকম যে কোনো গাড়ি আপনার পাশ দিয়ে গেলে যে বাতাসের কাপুনি বা কড়া ব্রেক ধরলে বাইকের এক ধরণের হু-হুতাস কোমড় দোলানি অথবা মনে হতে পারে যে গ্রাইন্ড থেকে গাড়ি উঠে যাচ্ছে।এই ধরণের সমস্যা কোনোটাই বাজাজ পালসার এ নেই তবে ৪ভি এর আছে।
মেইটেন্সের খরচ :আমি বলবো মেইটেনসের খরচ অবসসই বাজাজ পালসার এর বেশি । আর টি আর এরবাইক আর তেমন একটা ভালো লাগতোনা কিন্তু নতুন মডেলের এই 4ভি আমার কাছে বেশ ভালো লাগে । বাজেট ও এর যাবতীয় দিক গুলো বিবেচনা করে বলা চলে যে যে কেউ এই বাইকটি কিনে ঠকবেন না ।
শেষ কথা
সব শেষে আমি বলতে চাই TVS Apache RTR 4V vs Bajaj Pulsar NS160 এ দুটি বাইক নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে আপনাদেরকে এই বাইকের সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি .আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন ।