বাইক রাইডিং করার সময় কয়েকটি লাইফ সেভিং টিপস

29 Mar, 2023   
বাইক রাইডিং করার সময় কয়েকটি লাইফ সেভিং টিপস

গাড়ি কিংবা অন্য যেকোনো বাহনের তুলনায় বাইক রাইডিং নিঃসন্দেহে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য যেকোনো বাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল রাইডাররা দুর্ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন সবচেয়ে বেশি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্বের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে মোটরসাইকেলের বাজার এখনও বেশ রমরমা। তাছাড়া লং রাইডের নেশা আর গ্রুপ ট্যুরিং-এর চাহিদা তো আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। আর তাই বাইক রাইডিং-এ নিরাপত্তা ও সঠিক ট্রেনিং নিয়ে পড়াশুনা করার কোনও বিকল্প নেই।

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে থাকছে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো কিংবা কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বাইক রাইডিংলং রাইডের নিরাপত্তা টিপস। সবশেষে আমরা উল্লেখ করবো জীবন রক্ষাকারী এমন কিছু অভ্যাস ও টিপস, যেগুলো একজন মোটরসাইকেল প্রেমীর সবসময় অনুসরণ করা চলা উচিত।

বাইক রাইডিং-এর জন্য নিরাপত্তা টিপস

একজন মোটরসাইকেল রাইডারকে সবসময় সতর্কভাবে বাইক রাইডিং করতে হয়, বিশেষ করে যখন রাস্তায় ট্রাফিক বেশি থাকে। যেহেতু মোটরসাইকেল একটি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত বাহন, তাই এতে কোনও রকম বাহ্যিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। আর এজন্যই একজন রাইডারকে রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগেই বিশেষ কিছু প্রস্তুতি ও সেফটি গিয়ারের সুরক্ষা নিতে হয়। লং রাইডের ক্ষেত্রেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিচের এই মোটরসাইকেল নিরাপত্তা টিপসগুলো রাইডারদের কাজে আসবেঃ

যথাযথ সেফটি গিয়ার ব্যবহার করা

বাইক রাইডিং এর সময় যত অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন, হেলমেট জিনিসটাকে কখনোই ভুললে চলবে না। আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে হেলমেট ব্যবহারের উপর কঠোরভাবে জোর দেয়া হয়েছে এবং এই নিয়ম ভাঙলে মোটরসাইকেল জরিমানাও গুনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হেলমেট ব্যবহার না করা হলে খুব ছোট একটি দুর্ঘটনা থেকেও মাথায় ভয়াবহ জখম, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

বাধ্যতামূলক হেলমেট ছাড়াও আরো বেশ কিছু সেফটি গিয়ার একজন রাইডারের সুরক্ষার জন্য জরুরি। যেমনঃ

  • লেদার অথবা ডেনিমের তৈরি ভারী পোশাক, বিশেষ করে প্যান্ট ও জ্যাকেট।
  • ভারী ও শক্তিশালী বুট জুতা।
  • হেলমেটে ভাইজর না থাকলে চোখের সুরক্ষার জন্য ভালো গগলস।
  • হাত ও পায়ের জন্য সেফটি গিয়ার, যেমন- গ্লাভস ও নী-প্যাড।

বৈধ ও সচল মোটরসাইকেল লাইসেন্স

আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল লাইসেন্সের উপরও বেশ জোর দেয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কোনো ধরণের বাহন রাস্তায় চালাতে পারবে না, আর চালানো উচিতও না। তাছাড়া লাইসেন্স অর্জনের জন্য একজন রাইডারকে যেসব পড়াশোনা, ট্রেনিং ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেগুলো একজন চালককে বাইক রাইডিং-এর ব্যাপারে আরো আত্মবিশ্বাসী ও অভিজ্ঞ করে তোলে। লং রাইডে বাইক চালানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ পারদর্শীতার প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনের শেষের দিকে আমরা বাইক রাইডিং-এর জীবন রক্ষাকারী কিছু অভ্যাস নিয়েও জানবো। সঠিক পড়াশুনা ও ট্রেনিং নিতে পারলে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আমাদের দেশে মোটরসাইকেল লাইসেন্স অর্জন করা যেমন খুব সহজ, তেমনি দুর্ঘটনার হাত থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব।

নেশাগ্রস্ত বা ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাইক রাইডিং না করা

গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এই পয়েন্টটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মোটরসাইকেলের বেলায় এটা বাধ্যতামূলক পর্যায়ে এসে পড়ে। আমাদের দেশে নেশা-জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা প্রায়ই গোপনে ড্রিংকস ও মাদকের চর্চা করে থাকেন। কিন্তু যে কারণেই সেটা করা হোক না কেন, ভারসাম্যহীন অবস্থায় কোনওভাবেই রাস্তায় বাইক রাইডিং করা যাবে না। আমাদের দেশে এরকম প্রচুর উদাহরণ দেখা যায়, যেখানে শুধুমাত্র নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু ঘটে। সেজন্য নেশা করে বাইক চালানো আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মোটরসাইকেল চালানোর জন্য সতর্ক দৃষ্টি ও সুস্থ মস্তিষ্কের পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শরীরের উপরও কারো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না, গতি কতটা কম বা বেশি হচ্ছে সেদিকেও পুরোপুরি খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। ফলে লং রাইড অথবা প্রতিদিনের বাইক রাইডিং-এর ক্ষেত্রে যে দক্ষতার প্রয়োজন, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। একই ব্যাপার শরীর ও মনের অসুস্থতা বা ক্লান্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই নিজের ও আশেপাশের সমস্ত মানুষের নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আগে নিজেকে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সজাগ করে নিন।

নিয়মিত মোটরসাইকেল মেইন্টেনেন্স করানো

মোটরসাইকেলের নিয়মিত যত্ন নেয়া ও সেটার ফিটনেস ভালো রাখা নিরাপত্তার জন্য আবশ্যক। বাইকের কোনও অটো পার্টসে যেন সমস্যা না থাকে, ইঞ্জিন অয়েল ও জ্বালানী তেল যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, লং রাইডে যাওয়ার আগে এগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। সেফটি গিয়ার, টায়ার, চেইন ও বিভিন্ন অটো পার্টস যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে নিজেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। রাস্তায় বাইক রাইডিং করার আগে যদি এই জিনিসগুলো খেয়াল না করা হয়, তাহলে পথে বাইক নষ্ট হয়ে অথবা ইঞ্জিন ফেইল করে বিপদ ঘটতে পারে। আবার চাকা বা চেইনঘটিত সমস্যা থেকে হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

ট্রাফিক আইন মেনে চলা

নির্দিষ্ট লেনের মধ্যে থেকে বাইক রাইডিং করুন। বার বার লেন বদলালে অন্য গাড়ি বা বড় বাহনের সাথে সংঘর্ষ হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি থাকে। ধীরগতির ট্রাফিকের মধ্যে ধৈর্য্য রাখুন, ছোট ছোট জায়গা দেখলেই হুট করে সেখানে বাইক চালিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির গতি অল্প থাকলেও আপনার সাথে যদি বড় বাস অথবা ট্রাকের সংঘর্ষ হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি আপনারই হবে।

তাছাড়া বারবার লেন বদল করলে আপনি শুধু নিজেকেই না, আশেপাশের পথচারীদেরও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। ট্রাফিক আইনের প্রতি যত্নশীল হোন। রোড সাইনগুলো ভালোভাবে মেনে চলুন। লং রাইডে জীবন বাঁচার পাশাপাশি মোটরসাইকেল জেল জরিমানার হাত থেকেও বেঁচে যাবেন।

খারাপ রাস্তা ও আবহাওয়া এড়িয়ে চলা

আমাদের দেশে খারাপ রাস্তা এড়িয়ে চলা খুব একটা সহজ কাজ না। কেননা বেশিরভাগ এলাকাতেই ভাঙ্গা, গর্তবিশিষ্ট, অথবা কাঁচা রাস্তা রয়েছে। একজন বাংলাদেশি রাইডার হিসেবে আপনার করণীয় হচ্ছে যেকোনো রাস্তায় বাইক রাইডিং করার আগে সেই রাস্তা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেয়া এবং কোন ধরণের রাস্তায় কীভাবে বাইক চালাতে হবে সেটা নিয়ে পড়াশুনা ও চর্চা করা।

আবহাওয়ার ব্যাপারেও এই দেশে কোন গ্যারান্টি নেই। তাই বৃষ্টিতে বাইক চালানো হোক বা কুয়াশায়, সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রাখতে হবে। পূর্বাভাস দেখে কোনওদিন আবহাওয়া বেশি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সেইদিন মোটরসাইকেল নিয়ে বের না হওয়াই ভালো। পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ার সাথে না থাকলে লং রাইডে যাওয়াও ঠিক না।

সর্বোপরি নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঝুলি কতটুকু ভারী, সেই অনুযায়ী প্ল্যান করুন সবগুলো রাইড। বিপদ কখনও বলে কয়ে আসে না, তাই নিজেকে আগে থেকেই বিপদ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

বাইক রাইডিং-এর সময় ৫টি লাইফ সেভিং টিপস

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু বাইক রাইডিং অভ্যাস আছে, যেগুলো চর্চা করলে আপনি আগে থেকেই বিপদ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন। নিচে আমরা সংক্ষেপে সেই অভ্যাসগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিঃ

ধীরগতির ট্রাফিকে ফ্রন্ট ব্রেকের লিভার প্রি-লোড করে রাখুন

ধীরগতির ট্রাফিক পরিস্থিতিতে আমাদের বার বার বাইক ব্রেক করতে হয়। কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে, হঠাৎ করে সামনের গাড়ি ব্রেক করলে বা গতি কমিয়ে আনলে রাইডারকে আচমকা ব্রেক কষতে হয়। ঘাবড়ে গিয়ে এরকম আচমকা ব্রেক কষলে আপনার হাত যদি আগে থেকে ব্রেক লিভারে না থাকে, তাহলে চাকা হুট করে থেমে গেলেও গতি জড়তার কারণে সমস্ত বাইকের ও আপনার ওজন সামনের চাকার উপর এসে পড়ে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে চাকার ক্ষতি তো হয়ই, লং রাইডে বাইক ছিটকে গিয়ে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে। 

এইসব ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে সামনের ব্রেক প্রি-লোড করে রাখা শিখতে পারলে হুট করে বাইকের চাকা পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। প্রি-লোড মানে হচ্ছে ব্রেকের লিভারটি হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা টেনে ধরে রাখা। কিন্তু সেটা এত বেশি টানা যাবে না যাতে ব্রেক শ্যু ডিস্কের গায়ে লেগে থাকে। তাহলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।

রাস্তার মোড়ে বাম-ডান-বাম পদ্ধতি অবলম্বন করুন

ছোটবেলা থেকেই আমরা রাস্তা পার হওয়ার সময় ডানে বামে তাকানোর পরামর্শ শুনে আসছি। দুই পাশ থেকে আসা যানবাহন লক্ষ্য করার এই পদ্ধতিতেও কিছুটা কৌশল খাটাতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিপদ এড়িয়ে চলা যায়।

রাস্তায় বাইক রাইডিং করার সময়, বিশেষ করে মোড়ের কাছাকাছি দুই দিক থেকেই গাড়ি বা অন্য বাইক আসতে পারে। যেহেতু আমরা রাস্তার কিছুটা বাম পাশের লেনে বাইক চালাই, সেহেতু ডান দিক থেকেও যেকোনো গাড়ি ওভারটেক করে যাওয়ার সময়ও বিপদ হতে পারে। আবার লং রাইডে ডানে বামে তাকানোর সময় কয়েক সেকেন্ডের ভুল দেখার জন্য আচমকা কোনো বাহন বা পথচারীর সাথে সংঘর্ষ হতে পারে।

এক্ষেত্রে আমাদের উচিত যেকোনো মোড়ে এসে দুই দিকেই ভালোভাবে দেখে নেয়া। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন বাম-ডান-বাম পদ্ধতিতে দেখার জন্য। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বাম-সোজা-ডান এরপর ডান-সোজা-বাম, এভাবে রাস্তা দেখার অভ্যাস করুন। লং রাইডেও এই পদ্ধতি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। 

প্রতিকূল পরিবেশে বাইক রাইডিং-এ নিজেকে সোজা রাখুন

বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় বাইক রাইডিং-এর সময় ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় শরীর কুঁকড়ে আসতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু আরামের জন্য শরীর কুঁকড়ে বাঁকা হয়ে বাইক চালালে হাত পায়ের স্বাধীন নাড়াচাড়ায় ব্যাঘাত ঘটে।

এরকম পরিস্থিতিতে একটু কষ্ট হলেও নিজেকে সোজা ও স্বাভাবিক রেখে বাইক চালানো উচিত। শীতে বাইক চালানোর সময় হাত পা জমে আসতে চাইলেও সোজা থাকুন। প্রয়োজনে লং রাইডে গরম চা পানি খাওয়ার জন্য ঘন ঘন ব্রেক নিন। এজন্যই ভালো সেফটি গিয়ার এবং রাইডিং পোশাকের কোনো বিকল্প নেই।

থামার জন্য বাম পা নামান

বাইক রাইডিং-এর সময় থামার জন্য বাম পা নামিয়ে দিন। এতে করে ডান পা সর্বক্ষণ রিয়ার ব্রেকের উপর চেপে থাকে। এতে করে ব্রেক লাইট অন থাকে, আর রাস্তার অন্য চালকরা বুঝতে পারেন আপনি কী করতে যাচ্ছেন।

রিয়ার ব্রেকে পা রাখার ফলে ফ্রন্ট ব্রেক করার চেয়ে বেশ ভিন্ন ফলাফল পাওয়া যাবে। যদি সামনের চাকা লক হয়ে যায়, তাহলে পেছনের ধাক্কার পুরোটাই সামনের চাকা ও হ্যান্ডেলবারে এসে লাগবে। ফলে বাইক একদিকে ছিটকে গিয়ে রাইডার পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেছনের চাকায় ব্রেক করলে পুরো এনার্জিটা সামনের দিকে প্রতিফলিত হবে, আর বাইককে সামনে ঠেলে দিবে। ফলে আপনার শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হবে না।

লং রাইডে গ্রুপ ট্যুরের সময় পজিশন পরিকল্পনা

লং রাইডে গ্রুপ নিয়ে জাওয়ার সময় প্রায়ই দেখা যায় রাইডাররা গতি কমানো বাড়ানোর সময় একে অপরের থেকে দুরত্ব কমে আর বাড়ে। কারণ সামনের রাইডার কি করছে সেটা বুঝে উঠা আর একই তালে গতি কম বা বেশি করতে কয়েক সেকেন্ড সময় চলে যায়। তাই একজন রাইডার গতি কমিয়ে আনার পর পিছনের জন গতি বাড়াতে বাড়াতে আবার সামনের জনের গতি বাড়ানোর সময় হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাইডারদের মধ্যে দুরত্ব কম বেশি হয়ে ঢেউয়ের মত একটা প্যাটার্ন তৈরি হয়, যাকে একটি বাদ্যযন্ত্রের সাথে মিলিয়ে ‘অ্যাকর্ডিয়ন ইফেক্ট’ নাম দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই ইফেক্টের মধ্যে যেই ঝুঁকি রয়েছে তা হলো, যখন আচমকা হার্ড ব্রেক করার মত পরিস্থিতি আসে, তখন পেছনের রাইডাররা সময়ের ব্যবধানের কারণে সেটা বুঝতে দেরি করে ফেলেন। আর এতে করেই ঘটে বিপত্তি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অভিজ্ঞ এবং দ্রুতগামী রাইডারদের সামনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাছাই করা।

হয়ত অভিজ্ঞ রাইডারদের শুনে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু এইখানে যুক্তিপূর্ণ সমাধান হচ্ছে দলের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ আর ধীরগতির রাইডারকে সামনে দেয়া এবং তার পেছনে একজন অভিজ্ঞ রাইডারকে বসানো। যাতে করে সে আচমকা কোন ব্রেক কষলেও পেছনের অভিজ্ঞ রাইডাররা সেই পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দিতে পারেন।

এই স্টাইলে গ্রুপের সদস্যদের পজিশন করে দিলে সবাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বাইক রাইডিং উপভোগ করতে পারবেন এবং নিরাপদ থাকতে পারবেন। এছাড়াও গ্রুপ ট্যুরে লং রাইডের জন্য পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ারের পাশাপাশি ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন ও স্পিকারের মত ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করলে ভুল বুঝাবুঝির কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। আর যদি মনের মত গতিতে বাইক রাইডিং করার চাহিদা দুর্বল রাইডারের পেছনে চালিয়ে না মেটানো সম্ভব হয়, তাহলে একা একাই লং রাইডে বেরিয়ে পড়া উত্তম। হ্যাপী রাইডিং!

গাড়ি কিংবা অন্য যেকোনো বাহনের তুলনায় বাইক রাইডিং নিঃসন্দেহে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য যেকোনো বাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল রাইডাররা দুর্ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন সবচেয়ে বেশি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্বের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে মোটরসাইকেলের বাজার এখনও বেশ রমরমা। তাছাড়া লং রাইডের নেশা আর গ্রুপ ট্যুরিং-এর চাহিদা তো আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। আর তাই বাইক রাইডিং-এ নিরাপত্তা ও সঠিক ট্রেনিং নিয়ে পড়াশুনা করার কোনও বিকল্প নেই।

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে থাকছে দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো কিংবা কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বাইক রাইডিংলং রাইডের নিরাপত্তা টিপস। সবশেষে আমরা উল্লেখ করবো জীবন রক্ষাকারী এমন কিছু অভ্যাস ও টিপস, যেগুলো একজন মোটরসাইকেল প্রেমীর সবসময় অনুসরণ করা চলা উচিত।

বাইক রাইডিং-এর জন্য নিরাপত্তা টিপস

একজন মোটরসাইকেল রাইডারকে সবসময় সতর্কভাবে বাইক রাইডিং করতে হয়, বিশেষ করে যখন রাস্তায় ট্রাফিক বেশি থাকে। যেহেতু মোটরসাইকেল একটি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত বাহন, তাই এতে কোনও রকম বাহ্যিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। আর এজন্যই একজন রাইডারকে রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগেই বিশেষ কিছু প্রস্তুতি ও সেফটি গিয়ারের সুরক্ষা নিতে হয়। লং রাইডের ক্ষেত্রেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিচের এই মোটরসাইকেল নিরাপত্তা টিপসগুলো রাইডারদের কাজে আসবেঃ

যথাযথ সেফটি গিয়ার ব্যবহার করা

বাইক রাইডিং এর সময় যত অল্প সময়ের জন্যই হোক না কেন, হেলমেট জিনিসটাকে কখনোই ভুললে চলবে না। আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে হেলমেট ব্যবহারের উপর কঠোরভাবে জোর দেয়া হয়েছে এবং এই নিয়ম ভাঙলে মোটরসাইকেল জরিমানাও গুনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হেলমেট ব্যবহার না করা হলে খুব ছোট একটি দুর্ঘটনা থেকেও মাথায় ভয়াবহ জখম, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

বাধ্যতামূলক হেলমেট ছাড়াও আরো বেশ কিছু সেফটি গিয়ার একজন রাইডারের সুরক্ষার জন্য জরুরি। যেমনঃ

  • লেদার অথবা ডেনিমের তৈরি ভারী পোশাক, বিশেষ করে প্যান্ট ও জ্যাকেট।
  • ভারী ও শক্তিশালী বুট জুতা।
  • হেলমেটে ভাইজর না থাকলে চোখের সুরক্ষার জন্য ভালো গগলস।
  • হাত ও পায়ের জন্য সেফটি গিয়ার, যেমন- গ্লাভস ও নী-প্যাড।

বৈধ ও সচল মোটরসাইকেল লাইসেন্স

আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে মোটরসাইকেল লাইসেন্সের উপরও বেশ জোর দেয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কোনো ধরণের বাহন রাস্তায় চালাতে পারবে না, আর চালানো উচিতও না। তাছাড়া লাইসেন্স অর্জনের জন্য একজন রাইডারকে যেসব পড়াশোনা, ট্রেনিং ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেগুলো একজন চালককে বাইক রাইডিং-এর ব্যাপারে আরো আত্মবিশ্বাসী ও অভিজ্ঞ করে তোলে। লং রাইডে বাইক চালানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ পারদর্শীতার প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনের শেষের দিকে আমরা বাইক রাইডিং-এর জীবন রক্ষাকারী কিছু অভ্যাস নিয়েও জানবো। সঠিক পড়াশুনা ও ট্রেনিং নিতে পারলে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আমাদের দেশে মোটরসাইকেল লাইসেন্স অর্জন করা যেমন খুব সহজ, তেমনি দুর্ঘটনার হাত থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব।

নেশাগ্রস্ত বা ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাইক রাইডিং না করা

গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে এই পয়েন্টটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মোটরসাইকেলের বেলায় এটা বাধ্যতামূলক পর্যায়ে এসে পড়ে। আমাদের দেশে নেশা-জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা প্রায়ই গোপনে ড্রিংকস ও মাদকের চর্চা করে থাকেন। কিন্তু যে কারণেই সেটা করা হোক না কেন, ভারসাম্যহীন অবস্থায় কোনওভাবেই রাস্তায় বাইক রাইডিং করা যাবে না। আমাদের দেশে এরকম প্রচুর উদাহরণ দেখা যায়, যেখানে শুধুমাত্র নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু ঘটে। সেজন্য নেশা করে বাইক চালানো আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মোটরসাইকেল চালানোর জন্য সতর্ক দৃষ্টি ও সুস্থ মস্তিষ্কের পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শরীরের উপরও কারো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না, গতি কতটা কম বা বেশি হচ্ছে সেদিকেও পুরোপুরি খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। ফলে লং রাইড অথবা প্রতিদিনের বাইক রাইডিং-এর ক্ষেত্রে যে দক্ষতার প্রয়োজন, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। একই ব্যাপার শরীর ও মনের অসুস্থতা বা ক্লান্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই নিজের ও আশেপাশের সমস্ত মানুষের নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আগে নিজেকে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সজাগ করে নিন।

নিয়মিত মোটরসাইকেল মেইন্টেনেন্স করানো

মোটরসাইকেলের নিয়মিত যত্ন নেয়া ও সেটার ফিটনেস ভালো রাখা নিরাপত্তার জন্য আবশ্যক। বাইকের কোনও অটো পার্টসে যেন সমস্যা না থাকে, ইঞ্জিন অয়েল ও জ্বালানী তেল যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, লং রাইডে যাওয়ার আগে এগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। সেফটি গিয়ার, টায়ার, চেইন ও বিভিন্ন অটো পার্টস যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে নিজেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। রাস্তায় বাইক রাইডিং করার আগে যদি এই জিনিসগুলো খেয়াল না করা হয়, তাহলে পথে বাইক নষ্ট হয়ে অথবা ইঞ্জিন ফেইল করে বিপদ ঘটতে পারে। আবার চাকা বা চেইনঘটিত সমস্যা থেকে হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

ট্রাফিক আইন মেনে চলা

নির্দিষ্ট লেনের মধ্যে থেকে বাইক রাইডিং করুন। বার বার লেন বদলালে অন্য গাড়ি বা বড় বাহনের সাথে সংঘর্ষ হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি থাকে। ধীরগতির ট্রাফিকের মধ্যে ধৈর্য্য রাখুন, ছোট ছোট জায়গা দেখলেই হুট করে সেখানে বাইক চালিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির গতি অল্প থাকলেও আপনার সাথে যদি বড় বাস অথবা ট্রাকের সংঘর্ষ হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি আপনারই হবে।

তাছাড়া বারবার লেন বদল করলে আপনি শুধু নিজেকেই না, আশেপাশের পথচারীদেরও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। ট্রাফিক আইনের প্রতি যত্নশীল হোন। রোড সাইনগুলো ভালোভাবে মেনে চলুন। লং রাইডে জীবন বাঁচার পাশাপাশি মোটরসাইকেল জেল জরিমানার হাত থেকেও বেঁচে যাবেন।

খারাপ রাস্তা ও আবহাওয়া এড়িয়ে চলা

আমাদের দেশে খারাপ রাস্তা এড়িয়ে চলা খুব একটা সহজ কাজ না। কেননা বেশিরভাগ এলাকাতেই ভাঙ্গা, গর্তবিশিষ্ট, অথবা কাঁচা রাস্তা রয়েছে। একজন বাংলাদেশি রাইডার হিসেবে আপনার করণীয় হচ্ছে যেকোনো রাস্তায় বাইক রাইডিং করার আগে সেই রাস্তা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেয়া এবং কোন ধরণের রাস্তায় কীভাবে বাইক চালাতে হবে সেটা নিয়ে পড়াশুনা ও চর্চা করা।

আবহাওয়ার ব্যাপারেও এই দেশে কোন গ্যারান্টি নেই। তাই বৃষ্টিতে বাইক চালানো হোক বা কুয়াশায়, সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রাখতে হবে। পূর্বাভাস দেখে কোনওদিন আবহাওয়া বেশি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সেইদিন মোটরসাইকেল নিয়ে বের না হওয়াই ভালো। পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ার সাথে না থাকলে লং রাইডে যাওয়াও ঠিক না।

সর্বোপরি নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঝুলি কতটুকু ভারী, সেই অনুযায়ী প্ল্যান করুন সবগুলো রাইড। বিপদ কখনও বলে কয়ে আসে না, তাই নিজেকে আগে থেকেই বিপদ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

বাইক রাইডিং-এর সময় ৫টি লাইফ সেভিং টিপস

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু বাইক রাইডিং অভ্যাস আছে, যেগুলো চর্চা করলে আপনি আগে থেকেই বিপদ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন। নিচে আমরা সংক্ষেপে সেই অভ্যাসগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিঃ

ধীরগতির ট্রাফিকে ফ্রন্ট ব্রেকের লিভার প্রি-লোড করে রাখুন

ধীরগতির ট্রাফিক পরিস্থিতিতে আমাদের বার বার বাইক ব্রেক করতে হয়। কখনও কখনও এমন পরিস্থিতি আসে, হঠাৎ করে সামনের গাড়ি ব্রেক করলে বা গতি কমিয়ে আনলে রাইডারকে আচমকা ব্রেক কষতে হয়। ঘাবড়ে গিয়ে এরকম আচমকা ব্রেক কষলে আপনার হাত যদি আগে থেকে ব্রেক লিভারে না থাকে, তাহলে চাকা হুট করে থেমে গেলেও গতি জড়তার কারণে সমস্ত বাইকের ও আপনার ওজন সামনের চাকার উপর এসে পড়ে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে চাকার ক্ষতি তো হয়ই, লং রাইডে বাইক ছিটকে গিয়ে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে। 

এইসব ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে সামনের ব্রেক প্রি-লোড করে রাখা শিখতে পারলে হুট করে বাইকের চাকা পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। প্রি-লোড মানে হচ্ছে ব্রেকের লিভারটি হাতের আঙ্গুল দিয়ে হালকা টেনে ধরে রাখা। কিন্তু সেটা এত বেশি টানা যাবে না যাতে ব্রেক শ্যু ডিস্কের গায়ে লেগে থাকে। তাহলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।

রাস্তার মোড়ে বাম-ডান-বাম পদ্ধতি অবলম্বন করুন

ছোটবেলা থেকেই আমরা রাস্তা পার হওয়ার সময় ডানে বামে তাকানোর পরামর্শ শুনে আসছি। দুই পাশ থেকে আসা যানবাহন লক্ষ্য করার এই পদ্ধতিতেও কিছুটা কৌশল খাটাতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিপদ এড়িয়ে চলা যায়।

রাস্তায় বাইক রাইডিং করার সময়, বিশেষ করে মোড়ের কাছাকাছি দুই দিক থেকেই গাড়ি বা অন্য বাইক আসতে পারে। যেহেতু আমরা রাস্তার কিছুটা বাম পাশের লেনে বাইক চালাই, সেহেতু ডান দিক থেকেও যেকোনো গাড়ি ওভারটেক করে যাওয়ার সময়ও বিপদ হতে পারে। আবার লং রাইডে ডানে বামে তাকানোর সময় কয়েক সেকেন্ডের ভুল দেখার জন্য আচমকা কোনো বাহন বা পথচারীর সাথে সংঘর্ষ হতে পারে।

এক্ষেত্রে আমাদের উচিত যেকোনো মোড়ে এসে দুই দিকেই ভালোভাবে দেখে নেয়া। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন বাম-ডান-বাম পদ্ধতিতে দেখার জন্য। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বাম-সোজা-ডান এরপর ডান-সোজা-বাম, এভাবে রাস্তা দেখার অভ্যাস করুন। লং রাইডেও এই পদ্ধতি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। 

প্রতিকূল পরিবেশে বাইক রাইডিং-এ নিজেকে সোজা রাখুন

বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় বাইক রাইডিং-এর সময় ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় শরীর কুঁকড়ে আসতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটু আরামের জন্য শরীর কুঁকড়ে বাঁকা হয়ে বাইক চালালে হাত পায়ের স্বাধীন নাড়াচাড়ায় ব্যাঘাত ঘটে।

এরকম পরিস্থিতিতে একটু কষ্ট হলেও নিজেকে সোজা ও স্বাভাবিক রেখে বাইক চালানো উচিত। শীতে বাইক চালানোর সময় হাত পা জমে আসতে চাইলেও সোজা থাকুন। প্রয়োজনে লং রাইডে গরম চা পানি খাওয়ার জন্য ঘন ঘন ব্রেক নিন। এজন্যই ভালো সেফটি গিয়ার এবং রাইডিং পোশাকের কোনো বিকল্প নেই।

থামার জন্য বাম পা নামান

বাইক রাইডিং-এর সময় থামার জন্য বাম পা নামিয়ে দিন। এতে করে ডান পা সর্বক্ষণ রিয়ার ব্রেকের উপর চেপে থাকে। এতে করে ব্রেক লাইট অন থাকে, আর রাস্তার অন্য চালকরা বুঝতে পারেন আপনি কী করতে যাচ্ছেন।

রিয়ার ব্রেকে পা রাখার ফলে ফ্রন্ট ব্রেক করার চেয়ে বেশ ভিন্ন ফলাফল পাওয়া যাবে। যদি সামনের চাকা লক হয়ে যায়, তাহলে পেছনের ধাক্কার পুরোটাই সামনের চাকা ও হ্যান্ডেলবারে এসে লাগবে। ফলে বাইক একদিকে ছিটকে গিয়ে রাইডার পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেছনের চাকায় ব্রেক করলে পুরো এনার্জিটা সামনের দিকে প্রতিফলিত হবে, আর বাইককে সামনে ঠেলে দিবে। ফলে আপনার শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হবে না।

লং রাইডে গ্রুপ ট্যুরের সময় পজিশন পরিকল্পনা

লং রাইডে গ্রুপ নিয়ে জাওয়ার সময় প্রায়ই দেখা যায় রাইডাররা গতি কমানো বাড়ানোর সময় একে অপরের থেকে দুরত্ব কমে আর বাড়ে। কারণ সামনের রাইডার কি করছে সেটা বুঝে উঠা আর একই তালে গতি কম বা বেশি করতে কয়েক সেকেন্ড সময় চলে যায়। তাই একজন রাইডার গতি কমিয়ে আনার পর পিছনের জন গতি বাড়াতে বাড়াতে আবার সামনের জনের গতি বাড়ানোর সময় হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাইডারদের মধ্যে দুরত্ব কম বেশি হয়ে ঢেউয়ের মত একটা প্যাটার্ন তৈরি হয়, যাকে একটি বাদ্যযন্ত্রের সাথে মিলিয়ে ‘অ্যাকর্ডিয়ন ইফেক্ট’ নাম দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই ইফেক্টের মধ্যে যেই ঝুঁকি রয়েছে তা হলো, যখন আচমকা হার্ড ব্রেক করার মত পরিস্থিতি আসে, তখন পেছনের রাইডাররা সময়ের ব্যবধানের কারণে সেটা বুঝতে দেরি করে ফেলেন। আর এতে করেই ঘটে বিপত্তি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অভিজ্ঞ এবং দ্রুতগামী রাইডারদের সামনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাছাই করা।

হয়ত অভিজ্ঞ রাইডারদের শুনে খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু এইখানে যুক্তিপূর্ণ সমাধান হচ্ছে দলের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ আর ধীরগতির রাইডারকে সামনে দেয়া এবং তার পেছনে একজন অভিজ্ঞ রাইডারকে বসানো। যাতে করে সে আচমকা কোন ব্রেক কষলেও পেছনের অভিজ্ঞ রাইডাররা সেই পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে সামাল দিতে পারেন।

এই স্টাইলে গ্রুপের সদস্যদের পজিশন করে দিলে সবাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বাইক রাইডিং উপভোগ করতে পারবেন এবং নিরাপদ থাকতে পারবেন। এছাড়াও গ্রুপ ট্যুরে লং রাইডের জন্য পর্যাপ্ত সেফটি গিয়ারের পাশাপাশি ভালো মানের ব্লুটুথ হেডফোন ও স্পিকারের মত ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করলে ভুল বুঝাবুঝির কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। আর যদি মনের মত গতিতে বাইক রাইডিং করার চাহিদা দুর্বল রাইডারের পেছনে চালিয়ে না মেটানো সম্ভব হয়, তাহলে একা একাই লং রাইডে বেরিয়ে পড়া উত্তম। হ্যাপী রাইডিং!

Similar Advices



2 comments

  1. মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়া,,কি ভাবে করব আমি শু রুম থেকে বাইকটি কিনেছি,, তাহলে কি তারা রেজিষ্ট্রেশন করে দিবেনা।

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Auto Partsbikroy
bake light,helmet for sell for Sale

bake light,helmet for sell

MEMBER
Tk 1,400
1 hour ago
Bike sticker honeycomb for Sale

Bike sticker honeycomb

MEMBER
7 hours ago
New condisone original garir shate for Sale

New condisone original garir shate

MEMBER
Tk 500
16 hours ago
Filters for Sale

Filters

MEMBER
Tk 99
18 hours ago
Buy Used Auto partsbikroy
Headlight Lipkit allion 02 for Sale

Headlight Lipkit allion 02

MEMBER
Tk 1,950
3 minutes ago
Helmet for sell for Sale

Helmet for sell

MEMBER
Tk 500
4 minutes ago
engine starting switch and head deeper for Sale

engine starting switch and head deeper

MEMBER
Tk 2,500
8 minutes ago
100% Recondition parts for Sale

100% Recondition parts

MEMBER
Tk 35,000
12 minutes ago
Frame sell hobe for Sale

Frame sell hobe

MEMBER
Tk 4,500
20 minutes ago
+ Post an ad on Bikroy