লং ট্যুরে বাইক রাইডিং? জেনে নি কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে

29 Mar, 2023   
লং ট্যুরে বাইক রাইডিং? জেনে নি কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে

মোটরসাইকেল রাইডিং-এর নেশা পুরো পৃথিবীর রাইডারদের সর্বজনীন এক ভালোবাসার নাম। হাইওয়ে দিয়ে, শহর ছাড়িয়ে, দূর দূরান্তে বাইক নিয়ে ছুটে চলার আনন্দই অন্যরকম। অনেক দিন পর বন্ধুদের নিয়ে প্ল্যান করে, অথবা অনেকে একাই মোটরসাইকেল নিয়ে লং ট্যুরে রওনা হয়ে পড়েন। প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার এমন সুযোগ নিশ্চয়ই আপনারও উপভোগ করতে ইচ্ছা করে! প্রথমবারের মত বাইক নিয়ে লং ট্যুর কীভাবে সামাল দিবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন? 

বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও লং ট্যুরে অভ্যস্ত বাইকারদের সাথে কথা বলার পর আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মোটরবাইকে লং ট্যুর দেয়ার একটা সহজ গাইডলাইন। আশা করি, আপনার জীবনের প্রথম মোটরবাইক লং ট্যুর স্মৃতিময় হয়ে থাকবে।

বাস্তবসম্মত ট্যুর প্ল্যান

বাইকে করে লম্বা ট্যুর দেয়ার জন্য প্রস্তুতিও সেই পরিমাণই লাগে। শুরুতেই আপনার কাজ হচ্ছে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুযায়ী দিনে কতটুকু পথ পাড়ি দিতে হবে, মাইলেজের হিসাব, কতবার, কোথায় থামতে হবে, কোথায় রাত কাটাবেন, খাবেন, গ্যাস ভরবেন এ সবকিছুর একটা বিস্তারিত প্ল্যান রেডি করে ফেলা।

আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে আপনার প্ল্যানমতো সবকিছু একই রকম হবে না। আবহাওয়া, ট্র্যাফিক সমস্যা কিংবা কোনো জরুরি অবস্থার কারণে অনেক পাকা রাইডারদের নির্ভুল প্ল্যানেও কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে। তাই কোন পরিস্থিতে কীভাবে আপনার প্ল্যান বদলাতে হবে, সেটা জানাও জরুরি। রেস্টুরেন্ট, হোটেল, গ্যাস স্টেশন ইত্যাদির কাছাকাছি কি বিকল্প আছে, তা জেনে রাখুন।

অন্য রাইডারদের সাথে বের হলে তাদের সাথে যেকোন জরুরী অবস্থায় পরামর্শ করে চলতে হবে। দিনশেষে বিশ্রাম নেয়ার সময় পরের দিনের মাইলেজ ও গ্যাস স্টেশন ইত্যাদি বিস্তারিত প্ল্যান তৈরি করে নেয়া উচিত।

বাইক নির্বাচন বা মডিফিকেশন 

আপনার নিজস্ব বাইক না থাকলে, বা ট্যুর-উপযোগী না হলে; এমন একটি বাইক বাছাই করে নিন, যেটাতে আপনি সবসময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, আবার সেটা লম্বা দূরত্ব পারি দেয়ার মত শক্তিশালীও হতে হবে। নিজের বাইক থাকলে, সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজের সুবিধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বাইক মডিফিকেশন করিয়ে নেন।

সাধারণত বাইকাররা লং ট্যুরের আগে যেসব মডিফিকেশন করিয়ে থাকেন, তা হলোঃ হ্যান্ডেল-বার বদল, আরো আরামদায়ক সীট, গার্ডস, ভালো হেডলাইট, নতুন এক্সহস্ট পাইপ ইত্যাদি। শুধুমাত্র স্টাইলিশ দেখালেই চলবে না, বাইক ভালোমতো চালানোটাও জরুরি।

সঠিক পোশাক ও এক্সেসরিজ

দূরপথে রাইডিং এর জন্য সবসময় চেষ্টা করুন রাইডিং প্যান্ট, গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা বুট জুতা, রাইডিং জ্যাকেট এবং অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা হেলমেট পরতে। অথবা সাধারণ পোশাকের সাথে কনুই ও হাটুর গার্ড, বডি আর্মর বা বর্ম পড়েও চালানো যায়। অনলাইনে কিংবা মোটরবাইক এক্সেসরিজের দোকানে এগুলো পেয়ে যাবেন। বাইক চালানোর জন্য কিছুটা আঁটসাঁট বা ফিটিং পোশাক হলে সুবিধা হয়। এইসব পোশাক ও এক্সেসরিজ আপনাকে যেমন নিরাপদ রাখবে, তেমনি একজন আত্মবিশ্বাসী বাইকারের মতো ফীল নিতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় জিনিসসহ হালকা প্যাকিং করুন

মোটরসাইকেলের জন্য বিশেষ ধরণের লাগেজ, বা ব্যাগ পাওয়া যায়, সেগুলো অনলাইনে বা এক্সেসরিজ শপ থেকে কিনে নিতে পারেন। তবে প্যাকিং করার সময় যেটা মাথায় রাখবেন, তা হলো যত অল্প জিনিস নেয়া যায়। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস ও অল্প কাপড় সাথে নিন। এছাড়াও মিনিপ্যাক জাতীয় ছোট প্যাকেজিং এর জিনিস ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, যাতে সেগুলো ব্যবহার শেষে ফেলে দিয়ে ব্যাগ হালকা করা যায়। কাপড় ভাঁজ না করে রোল করে নিন; এতে জায়গা কম লাগে আবার সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় ও বেসিক কিছু ঔষধ নিতে ভুলবেন না।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

লম্বা ট্যুরের সময় পানিশূন্যতা অনেক ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্যাকিং করার সময় সাথে ভালো পানির বোতল বা ফ্লাস্ক নিতে ভুলবেন না যেনো। ২ লিটারের বোতল একদিনের রাইডের জন্য যথেষ্ট। কোথাও থামলে সেই বোতল মনে করে রিফিল করে নিতে হবে। ওয়াশরুম ব্যবহারের ভয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে পানি না খেয়ে বাইক চালাতে থাকলে পানিশূন্যতায় আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই যেকোন জায়গায় থামলে ওয়াশরুম ব্যবহারের পর বেশি করে পানি পান করুন, পিপাসা লাগুক আর না লাগুক। পানির সাথে গ্লুকোজ মিশিয়ে নিলে আরো ভালো ফল পাবেন।

যাত্রাপথ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন

ট্যুর প্ল্যান করার সময় কোন পথে যাওয়া ভালো হবে ও সময় বাঁচবে, সেসব নিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিন। নেটওয়ার্ক সব জায়গায় একই রকম থাকে না; তাই গুগল ম্যাপসে আপনার যাত্রাপথ অফলাইনে সেভ করে রাখুন। পথে কোথাও থামলে, স্থানীয়দের কাছ থেকে সামনের পথ সম্পর্কে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করে নিন। তারা আরো ভালো ও নিরাপদ পথ চিনিয়ে দিতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষ এই ব্যাপারে অনেক আন্তরিক, তাই লজ্জার কোন কারণ নেই।

মাঝে মাঝে বিরতি নিন

আপনার বাইক এবং শরীর দু’টোরই বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ভালো জায়গা থেকে বিরতি নেয়ার চেষ্টা করুন। মোটরসাইকেলের চাকা ও ইঞ্জিন অয়েল এসব টুকিটাকি অটো পার্টস চেক করে নিন। পানি ও হালকা নাস্তা খেয়ে নিন। তবে বারবার থামতে গেলে যাত্রাপথে অনেক সময় নষ্ট হবে, আর গন্ত্যবে সময়মত পৌঁছাতে কষ্ট হবে। তাই চিন্তা ভাবনা করে পদক্ষেপ নিন; গ্রুপের সাথে থাকলে এই ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

খাওয়াদাওয়া সীমিত ও পর্যাপ্ত করুন

নাস্তা, দুপুরের খাবার, এইসব পরিমিত পরিমাণে খান। বেশি খাবার খেয়ে ফেললে, সেগুলো হজম করতে অনেক এনার্জি খরচ হয়ে যায়, আর ক্লান্তি এসে ভর করে। তাই যতক্ষণ না গন্তব্যে পৌঁছাবেন, খাওয়াদাওয়া সীমিত রাখুন; স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এতে করে বারবার ওয়াশরুম ব্যবহার করার ঝামেলা, আর ফুড পয়েজনিং-এর ভয় থাকবে না।

যেকোন ধরণের আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন

মোটরসাইকেলে লম্বা ট্যুর দেয়ার সময়, আবহাওয়া একেক জায়গায় একেক রকম হতে পারে। এই মৌসুমে যেকোনো সময় বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত থাকুন; বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায়। বৃষ্টির সময় মোটরসাইকেল চালানোর ব্যাপারে পড়াশুনা করে নিন। রওনা হওয়ার আগেই রেইনকোট ও এক্সেসরিজ পরীক্ষা করে নিন।

উৎসাহ হারাবেন না

মোটরসাইকেল চালানোর দারুণ একটা দিক হচ্ছে- একবার এটা উপভোগ করা শুরু করলে, আপনি আর বোর হবেন না। পথে ছোট, বড় বিভিন্ন সমস্যা আসতে পারে; যেকোনো পরিস্থিতিতে মোটিভেশন ধরে রাখুন। ভয় পেলে বা বেশি দুশ্চিন্তা করলে, সমস্যা সমাধান তো হবেই না, বরং আরো সময় নষ্ট হবে। মোটরসাইকেল ট্যুরে সবাই কম বেশি ভুল করেন, তাই হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই। এর থেকে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো বড় হবে, ও পরবর্তীতে নতুন রাইডারদের আপনিই সাহায্য করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও বাড়তি পার্টস সাথে রাখুন

ট্যুরে যাওয়ার আগে একজন দক্ষ মেকানিক দিয়ে আপনার বাইক সার্ভিসিং করানোর সময় তার কাছ থেকে জেনে নিন কী কী সরঞ্জাম ট্যুরে আপনার সাথে নেয়া দরকার হবে। সেই অনুযায়ী প্যাকিং করুন। প্রত্যেকটি বাইকের চাহিদা আলাদা। তবে সাধারণভাবে যেইসব জিনিস সবারই লাগে, সেগুলো হচ্ছেঃ বাড়তি টিউব, স্পার্ক প্লাগ, ব্রেক ও এক্সেলেটরের তার, ইঞ্জিন অয়েল ইত্যাদি।

শেষকথাঃ

মোটরসাইকেলে লং ট্যুর আপনার জীবনের অন্যতম সেরা ও স্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা। টানা ২-৩ দিন ধরে প্রকৃতির মাঝে ছুটে চলবেন আপনি ও আপনার বাইক। আর সাথে যেই রাইডার ভাই/বোনেরা থাকবেন, তাদের সাথেও অনন্য এক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। স্মার্ট হোন; আপনার জীবনের  অন্যতম সেরা ট্যুরের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করুন। আমাদের সহজ গাইডলাইন আর যেকোন সেবার জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস Bikroy আছে আপনার পাশেই। হ্যাপী রাইডিং!

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

একটা মোটরসাইকেল দিনে কতটা পথ যেতে পারে?

একজন অভিজ্ঞ রাইডার এক দিনে বাইকে করে গড়ে প্রায় ৩০০ মাইল পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারেন।

এর মধ্যে অবশ্য বেশ কয়েকবার থামা, বিশ্রাম নেয়া, খাওয়া দাওয়া, রিফিল করা ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে।

আপনার মোটরসাইকেলের স্বাস্থ্য বুঝে আপনার টার্গেট নির্ধারণ করুন।

ট্যুরের উপযোগী মোটরবাইক কীভাবে চিনবো?

বেশিরভাগ ট্যুরিং মোটরসাইকেলে বড় সাইজের ডিসপ্লেসমেন্ট ফেয়ারিং এবং উইন্ডশীল্ড থাকে। রুক্ষ আবহাওয়া ও তীব্র বাতাসের ঝাপটা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এগুলো বেশ কার্যকর। জ্বালানী ট্যাংক বেশ বড় হয়, ফলে দুই রিফিলের মাঝে আরো লম্বা পথ পাড়ি দেয়া যায়। এদের ইঞ্জিনে থাকে বেশ ভালো মানের লো-এন্ড হর্সপাওয়ার। আর ট্যুরিং বাইকের সিটগুলো বেশ আরামদায়ক হয়, এবং তাতে পিঠ ও কোমর সোজা রেখে বসার ব্যবস্থা থাকে।

লং ট্যুরের জন্য কোন মোটরবাইকটি ভালো?

বাংলাদেশে লং ট্যুরের উপযোগী ৫টি অন্যতম সেরা বাইক হচ্ছেঃ

  • ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ভি৩
  • লিফান কেপিটি ১৫০
  • সুজুকি ইনট্রুডার এবিএস
  • বাজাজ পালসার এনএস ১৬০
  • হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০আর

লং ট্যুরে যাওয়ার আগে বাইকের কী কী চেক করবো?

আমেরিকার ‘মোটরসাইকেল সেফটি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠানটির মতে, যেকোন লং ট্যুরের আগে মোটরবাইকের ৬টি জিনিস খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরিঃ 

  • টায়ার
  • কন্ট্রোল সিস্টেম
  • যাবতীয় লাইট ও ইলেকট্রিকাল সামগ্রী
  • ইঞ্জিন অয়েল ও সকল বাইক ফ্লুইড
  • চ্যাসিস, অর্থাৎ মোটরসাইকেলের কাঠামো
  • স্ট্যান্ড

ট্যুরিং মোটরসাইকেলগুলো ভারী হয় কেন?

একটি ভালো মানের ট্যুরিং মোটরসাইকেলের ওজন গড়ে প্রায় ৪০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বড় উইন্ডশীল্ড, জ্বালানী ট্যাংক, বাইকারের লাগেজ, মেইন্টেইনেন্সের সরঞ্জাম এই সবকিছুর জন্যই ট্যুরিং মোটরসাইকেলের ওজন এত বেশি হয়। এই কারণে বাইকের উপর চাপ কমানোর জন্য আমরা রাইডারদের হালকা প্যাকিং করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

Similar Advices

Buy New Bikesbikroy
Royal Enfield Classic 350 . 2025 for Sale

Royal Enfield Classic 350 . 2025

0 km
MEMBER
Tk 475,000
14 hours ago
Bajaj Discover 125 . 2025 for Sale

Bajaj Discover 125 . 2025

0 km
MEMBER
Tk 150,999
1 month ago
Lifan KPR Full fresh 2025 for Sale

Lifan KPR Full fresh 2025

6,800 km
MEMBER
Tk 200,000
3 days ago
Suzuki Gixxer SF . 2021 for Sale

Suzuki Gixxer SF . 2021

17,080 km
MEMBER
Tk 272,000
2 days ago
Bajaj Pulsar 150 2016 for Sale

Bajaj Pulsar 150 2016

30,000 km
MEMBER
Tk 100,000
20 minutes ago
Buy Used Bikesbikroy
Royal Enfield Hunter 350 . 2025 for Sale

Royal Enfield Hunter 350 . 2025

210 km
MEMBER
Tk 370,000
1 day ago
Yamaha R15 M 2022 for Sale

Yamaha R15 M 2022

14,000 km
MEMBER
Tk 445,000
16 hours ago
Lifan KPR Full fresh 2025 for Sale

Lifan KPR Full fresh 2025

6,800 km
MEMBER
Tk 200,000
3 days ago
Suzuki Gixxer SF Matt Blue 2024 for Sale

Suzuki Gixxer SF Matt Blue 2024

8,900 km
MEMBER
Tk 325,000
4 days ago
Yamaha R15 M BS7 2023 for Sale

Yamaha R15 M BS7 2023

13,000 km
MEMBER
Tk 510,000
2 weeks ago
+ Post an ad on Bikroy