নতুন মোটরবাইক চালকদের জন্য নিরাপত্তামূলক পরামর্শ
শহরের রাস্তায় চলাচলের জন্য মোটরবাইক একটি দারুন মাধ্যম, পাশাপাশি এর মাধ্যমে জ্বালানি খরচও বাঁচে। আবার যেহেতু গাড়ির চেয়ে মোটরবাইকের দামও কম, তাই যারা নিজেদের জন্য পরিবহনের বিকল্প কোন মাধ্যম খুঁজছেন তাঁদের জন্য মোটরবাইক একটি সুচিন্তিত বিনিয়োগ হতে পারে। অপরদিকে, আপনি যদি মোটরবাইক চালাতে না জেনেই ক্রয় করেন তবে এটি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ মোটরবাইক চালানো যতটা রোমাঞ্চকর, ঠিক ততটাই বিপদজনক। তাই, রাস্তায় চালানোর সময় চালককে কিছু নিরাপত্তামূলক পরামর্শ মেনে চলা জরুরী। তাই আমাদের আজকের লেখায় নতুন মোটরবাইক চালকদের জন্য সঠিক উপায়ে সেফটি গিয়ার ও কিটস এর ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু পরামর্শ দেয়া হলো যা আপনাদের নিরাপদে বাইক রাইড করতে সহায়তা করবে।
মোটরবাইক চালানোর আগে যথাযথ নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম পরিধান করুন
রাইড ছোট হোক কিনবা বড়, প্রতিবার রাইডে বের হবার আগেই, আপনাকে যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরে নিতে হবে যা আপনাকে রাস্তায় নিরাপদ রাখবে। একেবারে প্রাথমিক একটি সেফটি গিয়ার হল বাইকের হেলমেট। নতুন বাইক কিনেই তা নিয়ে রাস্তায় নামার আগে হেলমেট পরে নিতে ভুলবেন না। হেলমেট শুধু আপনাকে শারীরিক নিরাপত্তাই দেবে না, এর পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের অনাকাঙ্খিত ফাইনের হাত থেকেও রক্ষা করবে। হেলমেটের পাশাপাশি আপনি লম্বা হাতার জামা ও প্যান্ট পরে বাইক চালানোর কথা ভাবতে পারেন, বিশেষ করে লেদার বা চামড়ার জামা। এতে করে আপনি রাস্তায় কোন কারণে পরে গেলে সেটা আপনাকে বাড়তি সুরক্ষা দিবে। হেলমেট ও সঠিক জামাকাপড় পরার মতই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাইডিং শু ব্যবহার করা। যদি কখনও এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে আপানার বাইকটিকে ফেলে দিতে হচ্ছে বা পরে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আপনার পা যদি অরক্ষিত থাকে তবে আঘাতের ঝুকি থেকে যায়। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে, মোটরসাইকেল চালানোর সময় জুতা বা বুট পড়ে নিন।
এমন একটি মোটরবাইক কিনুন যা আপনার উচ্চতা এবং ওজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
যদি এটা আপনার প্রথম বাইক চালানো হয়, তাহলে রেসিং বাইক বা ক্রুজার বাইক না নেওয়াই উত্তম। মোটরবাইক চালাতে অনেক ধৈর্য ও দক্ষতার প্রয়োজন যা দীর্ঘদিনের অনুশীলনের মাধ্যমে রপ্ত হয়। তাই, যখন আপনি কেনার জন্য মোটরবাইক দেখছেন, এটা নিশ্চিত করুন যে সেটি আপনার দক্ষতার সীমার মধ্যে আছে। নতুন হিসেবে, ১২৫ সিসি বা ১৫০ সিসি মডেলের কথা বিবেচনা পারেন। বাইকের ওজনের কথাও মাথায় রাখতে হবে, যেন তা আপনার শক্তির তুলনায় বেশি না হয়ে যায়। আপনার বাইক চালনার দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে, কেবল তখনি আপনি নতুন বাইক কেনার কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু নতুন হিসেবে আপনার সেটাই কেনা উচিত যেটি আপনি সহজেই চালাতে পারবেন।
মোটরবাইক চালানোর সঠিক কলাকৌশলগুলো অনুশীলন করুন
একজন মোটরবাইক চালক হিসেবে, আপনাকে সবসময় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য খোলা রাস্তা ও খালি পার্কিং এর জায়গায় প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। আপনি যত অনুশীলন করবেন ততই রাস্তার বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারবেন। ন্যাশনাল মোটরসাইকেল ইনস্টিটিউট এর এক গবেষণা অনুযায়ী, মোটরসাইকেল চালানো গাড়ি চালানোর তুলনায় প্রায় ২৭ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকার জন্য আপনাকে অনুশীলন করতে হবে।
আপনার মোটরবাইকটিকে জানুন
আপনি একজন মেকানিক্যাল গুরু না হলেও, মোটরসাইকেলের নিরাপত্তার জন্য কিছু মেকানিজম শেখা যেমন দরকারি তেমনি সহজ। অধিকাংশ মোটরবাইকেরই গঠন এক, শুধুমাত্র বড় বাইকগুলোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী এবং বড় ইঞ্জিন রয়েছে। আপনার বাইকটিকে জানলে আপানার দুইটি লাভ আছে। প্রথমত, আপনি বাইকটির সাথে আরও সম্পৃক্ত হবেন এবং আরও ভালভাবে যত্ন নিতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, আপনি আরও জানতে পারবেন কিভাবে বাইকটি কাজ করে এবং কিভাবে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আপনার বাইকটি আপনি নিজে রক্ষনাবেক্ষণ করতে পারলে মেকানিক্স খরচ বেচে যাবে, কেননা আপনি নিজেই মোটরবাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনতে পারবেন এবং যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
অন্যান্য চালকদের ব্যাপারে সতর্ক হোন
রাস্তায় অন্যান্য গাড়ি/বাস/বাইকের চালকেরা কি করবে তা কোনভাবেই আন্দাজ করা সম্ভব না। তারপরও, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, মোটরবাইক চালানোর সময় রাস্তায় নিরাপদ থাকতে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যারা প্রাইভেট গাড়ি চালায় দেখা যায় তারা প্রায়ই আক্রমণাত্মকভাবে চালায়, তাই মোটরসাইকেল চালানোর সময় সতর্কতা হিসেবে আপনাকে রক্ষণাত্মক হতে হবে, অর্থাৎ, আপনার চারপাশ সম্পর্কে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে রাস্তার সব চালকই খারাপ, কিন্তু রাস্তায় যেই থাকুক না কেন তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং প্রয়োজনীয় রাইডিং গিয়ার পরিধান করে থাকলে আপনি নিরাপদ থাকতে সক্ষম হবেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিজেকে প্রস্তুত রাখুন
বাইক চালানোর সময় আপনাকে যেকোনো আবহাওয়ার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্কার আকাশ ও চমৎকার তাপমাত্রা ঝড়-বৃষ্টিতে রূপ নিতে পারে। যদি তাই হয়, তবে আপনার মোটরবাইক চালানোর ধরণে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেক্ষত্রে প্রস্তুতির জন্য, আপনাকে বিভিন্ন আবহাওয়ায় ছোট ছোট ট্রিপ দিতে হবে। এবং আপনি যদি কখনও কোন নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় চালাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন তবে থেমে যান এবং সেই সময়টি অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
প্রতিবার রাইড করার পূর্বে আপনার মোটরবাইকটি নিরীক্ষণ করুন
শেষবার আপনি যখন চালিয়েছেন তখন যদিও আপনার বাইকটি ঠিকঠাক সার্ভিস দিয়েছে, তবুও প্রতিবার আপনি যখন বাইকটি নিয়ে বাইরে বের হবেন তখন বাইকটি ভালোভাবে নিরীক্ষা করে নেওয়া জরুরী। সবকিছু ঠিকঠাক মত কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেইন, বেল্ট, ব্রেক ও শ্যাফটের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। এই কাজটি করতে মাত্র কয়েক মুহূর্ত সময় লাগবে, কিন্তু এর অনেক সুফল রয়েছে। অপরদিকে, আপনি যদি আপনার বাইকটি ঠিকমত নিরীক্ষা না করেন তবে আপনি হয়ত জানতেও পারবেন না আপনার বাইকটিতে সমস্যা রয়ে গেছে যার ফলে ঘটতে পারে মারাত্মক কোন দূর্ঘটনা।
শেষকথা
রাস্তায় মোটরবাইক রাইডিং আপনাকে দেয় এক নতুন রুপ। আপানার পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে বয়ে যাওয়া বাতাস, আশেপাশে অন্যান্য গাড়ী-ঘোড়ার মাঝখান দিয়ে দ্রুত চালিয়ে যাওয়া এবং আরও অনেক সুবিধার কারণে, অনেকেই মোটরবাইক চালাতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি যদি প্রথম বাইক চালানো শিখে থাকেন বা শুরু করে থাকেন তবে রাস্তায় আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই টিপসগুলো মনে রাখা জরুরী।