বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাঃ কারণ এবং প্রতিকার

29 Mar, 2023   
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাঃ কারণ এবং প্রতিকার

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান মতে গতবছর ২০২১ এই প্রায় ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে যাতে মারা গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৮৬৮ জন। গুরুতর চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৩৫% দুর্ঘটনাই ঘটেছে মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্টের কারণে। তাই বাইক চালকদের জন্য দুর্ঘটনার কারণ এবং প্রতিকারের জন্য লক্ষণীয় এবং করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেওয়া বিশেষভাবে জরুরী। 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার কারণ 

মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্টের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে বাইকারদের চালানোর ধরণ, সার্ভিসিং, ট্রাফিক রুল জানা, ট্রাফিক সাইন এবং রোড সাইন বুঝা এবং মেনে চলা, সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় বিষয়গুলো জানতে দুর্ঘটনার কারণগুলো বোঝাই প্রাথমিকভাবে মুখ্য। সেই কারণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

স্পিডিং এবং ওভারটেকিং

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত স্পিডে টার্‌নিং এবং ওভারটেকিঙের চেষ্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাইকাররা স্পিডের কারণে সেফটির কথা ভুলে যান এবং যথাসম্ভব দ্রুত স্পিডিং করে অন্যান্য গাড়ির মাঝ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে রোমাঞ্চ অনুভব করার চেষ্টা করেন। এরকম বিপজ্জনক চর্চা মোটরসাইকেল চালকদের বাদ দেওয়া উচিত। তা না হলে শখের বাইকটির ক্ষতির ঝুঁকির সাথে সাথে জীবনেরও ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।

হুটহাট লেইন পরিবর্তন

শুধু যে চালকের বেপরোয়া মনোভাব বা অদক্ষতার জন্য দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে সেটা কিন্তু নয়। আশেপাশের বাস, ট্রাক, গাড়ি, কিংবা অন্যান্য অযান্ত্রিক যানবাহন, যেমন রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, এগুলো যখন হুটহাট লেইন পরিবর্তন করে ফেলে কিংবা মোড় ঘোরায়, সে সময়েও অনেক ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ঠিকঠাকভাবে ইন্ডিকেটর দেওয়া এজন্য খুবই জরুরী। 

ক্লান্তি নিয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে বাইক চালানো

ক্লান্তি নিয়ে বাইক চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। ক্লান্তির কারণে অনেকসময়েই চালক বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেন না বা সামনের গাড়ি বা ট্রাফিক ইন্ডিকেটর সাইন ঠিকমতো দেখতে পারেন না। একই ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চালক নেশাগ্রস্ত হলে। এমন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারানো, দেখতে না পারা, কিংবা এলোমেলোভাবে গাড়ি চালানো খুবই স্বাভাবিক। এ কারণে দুর্ঘটনা হওয়াও কিন্তু মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ট্রাফিক আইন না জানা

আরেকটি বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে ট্রাফিক আইন না জানা বা না মানা। ট্রাফিক সাইন এবং রোড সাইন যা আছে, সবগুলোর সাথে বাইক রাইডারদের খুব ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মোটরবাইক চালনা প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। 

নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার 

হেলমেট ব্যবহার না করা কিংবা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করাও আরেকটি বড় সমস্যা বলা যায়। এক্ষেত্রে আরও সমস্যাজনক বিষয় হল বাংলাদেশে বিএসটিআই-এ হেলমেটের মান পরীক্ষানিরীক্ষা করার মতো সুযোগ সুবিধা আপাতত নেই। যদিও বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুযায়ী হেলমেট উৎপাদন কিংবা আমদানি হয়ে বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু বিএসটিআইয়ের নজরদারি না থাকায় মোটরসাইকেলের বাজার ঘুরলেই দেখা যায় নিম্নমানের হেলমেট অহরহ বেচাকেনা হচ্ছে যেগুলো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটেই তেমন সুরক্ষা দিচ্ছে না।   

রাস্তার দুরবস্থা

রাস্তার খারাপ অবস্থা, অপ্রশস্ত রাস্তা, অথবা গতিরোধকে চিহ্ন না থাকাও অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। রাস্তায় কোনো গর্ত থাকলে বা ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে, এবং সেখানে কোনো চিহ্ন না থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। 

প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব

অনেকসময়ই দেখা যায় রাস্তায় দুটি বাইক কিংবা একটি গাড়ি ও একটি বাইকের মধ্যে হুটহাট অসম প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে চালকরা চালানো শুরু করে। এতে কিন্তু ঝুঁকি আরও বেশি। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার একটি অন্যতম কারণ চালকদের এমন বেপরোয়া ভাব এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব নিয়ে রাস্তায় গাড়ি বা বাইক চালানো। এর থেকে বেরিয়ে আসা খুবই দরকারি। 

অন্যমনস্কতা

শহুরে রাস্তায় আরেকটি জিনিস যা বেশি হয় সেটি হচ্ছে অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালানো। অনেক বাইক রাইডার স্পিডিং করতে করতেই ফোনে কথা বলেন কিংবা হাই-স্পিডে থেকেই হোল্ডারে রাখা মোবাইলে জিপিএস ব্যবহার করতে থাকেন। স্পিডে থেকে এই নিচে তাকানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সামনে কোনো বাঁধা এসে গেলে বা সামনের কোনো গাড়ি হুট করে ব্রেক নিলে সেটি বুঝতে বেশ দেরি হয়ে যায়। মোবাইল বা জিপিএস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এজন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। 

গ্রামীণ রাস্তায় হুটহাট গবাদি পশু বা রাস্তায় খাঁদ এসে যাওয়া

গ্রামের রাস্তায় অনেকসময়ই রাস্তার মাঝখানে গবাদি পশু চলে আসতে পারে। সেটিও অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। এছাড়া গ্রামীণ রাস্তায় অনেকসময় বেশ খাঁদ এবং খানাখন্দ দেখা যায়। এগুলোতে ব্যালেন্স ঠিক না রাখলে বা বেশি স্পিড রেখে বাইক চালালে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অনুমোদিত সার্ভিসিং

এছাড়া বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও অনেকসময় কিন্তু দুর্ঘটনা হতে দেখা যায়। বাইক প্রয়োজনমত সার্ভিসিং করানো না হলে, অবৈধ পার্টস ব্যবহার করা হলে, বা অনুমোদিত অদক্ষ মেকানিকের কাছে সার্ভিসিং করালে এরকম সমস্যা দেখা যায়। 

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়/ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকারের উপায়

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে উপরে উল্লেখ করা সবগুলো কারণই কোনো না কোনোভাবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ অবস্থার থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাই দুর্ঘটনার এই কারণগুলো নির্মূল করা প্রয়োজন। 

  • অবশ্যই সবার আগে দরকার চালক এবং পথচারী সবার সচেতনা ও সতর্কতা। স্পিডিং, ওভারটেকিং, এবং টার্নিং এর ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব বাদ দেওয়ার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। ট্রাফিক আইনের যথার্থ প্রয়োগ বেপরোয়া রাইডারদের পর্যবেক্ষণে রাখবে আশা করা যায়। 

 

  • বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই বাইক নিয়ম করে সার্ভিসিং করাতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ইলিগাল বা অবৈধ পার্টস যেনো বাইকে ব্যবহার না করা হয় এবং অবৈধ বা অদক্ষ/আনাড়ি হাতে যেনো বাইক সার্ভিসিং না করানো হয়।

 

  • বাইকের হেডলাইট, ডিআরএল, এবং ইন্ডিকেটর লাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্ধকার পথে অবশ্যই হেডলাইট সুব্যবহার করতে হবে এবং টার্ন নেওয়ার সময় ইন্ডিকেটর লাইটের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আর শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইটের ব্যবহার করা যায়, তবে অন্য সময় ফগ লাইট অফ রাখতে হবে, তা না হলে অপরদিক থেকে আসা গাড়ি বা যে কোনো যানবাহন চালকের দৃষ্টিতে সমস্যা সৃষ্টি করে সেটি ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

 

  • আরেকটি খেয়াল রাখার মতো বিষয় হচ্ছে বাইক চালানোর সময় রাইডারের ফিট থাকা। ঘুম ঘুম বা ক্লান্ত চোখে কিংবা কোনরূপ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অবশ্যই বাইক চালানো যাবে না। বাইকারকেও অবশ্যই সড়ক মহাসড়কে বাইক চালানোর জন্য অভিজ্ঞ হতে হবে। অনভিজ্ঞ হয়েই গতি নিয়ে বাইক চালিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় পরা মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।

 

  • বাইকের হেলমেট কেনার ক্ষেত্রেও যত্নবান হতে হবে। বাজারে অনেকরকমের, ভিন্ন দামের, এবং বিভিন্ন কোয়ালিটির বা মানের বাইক পার্টস এবং হেলমেট দিয়ে ভরা। অল্প দামে কেনা যে সে হেলমেট কিন্তু গুরুতর দুর্ঘটনায় তেমন সুরক্ষা দেবে না। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) ২০০৬ সালের গবেষণামতে একটি ভালো মানের হেলমেট পরলে তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হবার সম্ভাবনা ৭০% কমিয়ে দেয়, আর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ৪০%। তাই যে কোনো রাইডে বাইক চালক এবং যাত্রী দুইজনের জন্যেই ভালো হেলমেটের কোনো বিকল্প নেই।

সব মিলিয়ে দেখে শুনে বাইক চালানোর কোনো বিকল্প নেই। বাইকের সার্ভিসিং ঠিক রেখে, হেলমেট পরে, রাস্তার অবস্থা ভেজা নাকি বালু ছড়ানো, বা খাঁদ আছে কিনা, এগুলো নিশ্চিত রেখে পর্যাপ্ত আলো নিয়ে বাইক চালালে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তা অবশ্যই ভূমিকা রাখবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

১.বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কি দুর্ঘটনা ঘটে?

-জ্বি, বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

২.ভালো মানের হেলমেট কি মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়?

-২০০৬ সালের গবেষণামতে একটি ভালো মানের হেলমেট পরলে তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হবার সম্ভাবনা ৭০% কমিয়ে দেয়, আর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ৪০%

৩. গ্রামীণ রাস্তায় কি ধরনের এক্সিডেন্ট এর ঝুঁকি আছে?

-গ্রামীণ রাস্তায় হুটহাট গবাদি পশু কারণে এক্সিডেন্ট এর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাই ।

৪.স্পিডিং এবং ওভারটেকিং এর কারণে কি এক্সিডেন্ট হয় ?

-বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত স্পিডে টার্‌নিং এবং ওভারটেকিঙের চেষ্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাইকাররা স্পিডের কারণে সেফটির কথা ভুলে যান এবং যথাসম্ভব দ্রুত স্পিডিং করে অন্যান্য গাড়ির মাঝ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে রোমাঞ্চ অনুভব করার চেষ্টা করেন।

৫.ক্লান্তি নিয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে বাইক চালানো যায়?

-ক্লান্তি নিয়ে বাইক চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। ক্লান্তির কারণে অনেকসময়েই চালক বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেন না বা সামনের গাড়ি বা ট্রাফিক ইন্ডিকেটর সাইন ঠিকমতো দেখতে পারেন না। একই ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চালক নেশাগ্রস্ত হলে।

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান মতে গতবছর ২০২১ এই প্রায় ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে যাতে মারা গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার ৮৬৮ জন। গুরুতর চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৩৫% দুর্ঘটনাই ঘটেছে মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্টের কারণে। তাই বাইক চালকদের জন্য দুর্ঘটনার কারণ এবং প্রতিকারের জন্য লক্ষণীয় এবং করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেওয়া বিশেষভাবে জরুরী। 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার কারণ 

মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্টের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে বাইকারদের চালানোর ধরণ, সার্ভিসিং, ট্রাফিক রুল জানা, ট্রাফিক সাইন এবং রোড সাইন বুঝা এবং মেনে চলা, সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় বিষয়গুলো জানতে দুর্ঘটনার কারণগুলো বোঝাই প্রাথমিকভাবে মুখ্য। সেই কারণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

স্পিডিং এবং ওভারটেকিং

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত স্পিডে টার্‌নিং এবং ওভারটেকিঙের চেষ্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাইকাররা স্পিডের কারণে সেফটির কথা ভুলে যান এবং যথাসম্ভব দ্রুত স্পিডিং করে অন্যান্য গাড়ির মাঝ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে রোমাঞ্চ অনুভব করার চেষ্টা করেন। এরকম বিপজ্জনক চর্চা মোটরসাইকেল চালকদের বাদ দেওয়া উচিত। তা না হলে শখের বাইকটির ক্ষতির ঝুঁকির সাথে সাথে জীবনেরও ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।

হুটহাট লেইন পরিবর্তন

শুধু যে চালকের বেপরোয়া মনোভাব বা অদক্ষতার জন্য দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে সেটা কিন্তু নয়। আশেপাশের বাস, ট্রাক, গাড়ি, কিংবা অন্যান্য অযান্ত্রিক যানবাহন, যেমন রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, এগুলো যখন হুটহাট লেইন পরিবর্তন করে ফেলে কিংবা মোড় ঘোরায়, সে সময়েও অনেক ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ঠিকঠাকভাবে ইন্ডিকেটর দেওয়া এজন্য খুবই জরুরী। 

ক্লান্তি নিয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে বাইক চালানো

ক্লান্তি নিয়ে বাইক চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। ক্লান্তির কারণে অনেকসময়েই চালক বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেন না বা সামনের গাড়ি বা ট্রাফিক ইন্ডিকেটর সাইন ঠিকমতো দেখতে পারেন না। একই ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চালক নেশাগ্রস্ত হলে। এমন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারানো, দেখতে না পারা, কিংবা এলোমেলোভাবে গাড়ি চালানো খুবই স্বাভাবিক। এ কারণে দুর্ঘটনা হওয়াও কিন্তু মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ট্রাফিক আইন না জানা

আরেকটি বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে ট্রাফিক আইন না জানা বা না মানা। ট্রাফিক সাইন এবং রোড সাইন যা আছে, সবগুলোর সাথে বাইক রাইডারদের খুব ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মোটরবাইক চালনা প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। 

নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার 

হেলমেট ব্যবহার না করা কিংবা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করাও আরেকটি বড় সমস্যা বলা যায়। এক্ষেত্রে আরও সমস্যাজনক বিষয় হল বাংলাদেশে বিএসটিআই-এ হেলমেটের মান পরীক্ষানিরীক্ষা করার মতো সুযোগ সুবিধা আপাতত নেই। যদিও বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুযায়ী হেলমেট উৎপাদন কিংবা আমদানি হয়ে বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু বিএসটিআইয়ের নজরদারি না থাকায় মোটরসাইকেলের বাজার ঘুরলেই দেখা যায় নিম্নমানের হেলমেট অহরহ বেচাকেনা হচ্ছে যেগুলো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মোটেই তেমন সুরক্ষা দিচ্ছে না।   

রাস্তার দুরবস্থা

রাস্তার খারাপ অবস্থা, অপ্রশস্ত রাস্তা, অথবা গতিরোধকে চিহ্ন না থাকাও অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। রাস্তায় কোনো গর্ত থাকলে বা ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে, এবং সেখানে কোনো চিহ্ন না থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। 

প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব

অনেকসময়ই দেখা যায় রাস্তায় দুটি বাইক কিংবা একটি গাড়ি ও একটি বাইকের মধ্যে হুটহাট অসম প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে চালকরা চালানো শুরু করে। এতে কিন্তু ঝুঁকি আরও বেশি। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার একটি অন্যতম কারণ চালকদের এমন বেপরোয়া ভাব এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব নিয়ে রাস্তায় গাড়ি বা বাইক চালানো। এর থেকে বেরিয়ে আসা খুবই দরকারি। 

অন্যমনস্কতা

শহুরে রাস্তায় আরেকটি জিনিস যা বেশি হয় সেটি হচ্ছে অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালানো। অনেক বাইক রাইডার স্পিডিং করতে করতেই ফোনে কথা বলেন কিংবা হাই-স্পিডে থেকেই হোল্ডারে রাখা মোবাইলে জিপিএস ব্যবহার করতে থাকেন। স্পিডে থেকে এই নিচে তাকানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সামনে কোনো বাঁধা এসে গেলে বা সামনের কোনো গাড়ি হুট করে ব্রেক নিলে সেটি বুঝতে বেশ দেরি হয়ে যায়। মোবাইল বা জিপিএস ব্যবহারের ক্ষেত্রে এজন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। 

গ্রামীণ রাস্তায় হুটহাট গবাদি পশু বা রাস্তায় খাঁদ এসে যাওয়া

গ্রামের রাস্তায় অনেকসময়ই রাস্তার মাঝখানে গবাদি পশু চলে আসতে পারে। সেটিও অনেকসময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। এছাড়া গ্রামীণ রাস্তায় অনেকসময় বেশ খাঁদ এবং খানাখন্দ দেখা যায়। এগুলোতে ব্যালেন্স ঠিক না রাখলে বা বেশি স্পিড রেখে বাইক চালালে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অনুমোদিত সার্ভিসিং

এছাড়া বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও অনেকসময় কিন্তু দুর্ঘটনা হতে দেখা যায়। বাইক প্রয়োজনমত সার্ভিসিং করানো না হলে, অবৈধ পার্টস ব্যবহার করা হলে, বা অনুমোদিত অদক্ষ মেকানিকের কাছে সার্ভিসিং করালে এরকম সমস্যা দেখা যায়। 

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়/ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকারের উপায়

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে উপরে উল্লেখ করা সবগুলো কারণই কোনো না কোনোভাবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ অবস্থার থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাই দুর্ঘটনার এই কারণগুলো নির্মূল করা প্রয়োজন। 

  • অবশ্যই সবার আগে দরকার চালক এবং পথচারী সবার সচেতনা ও সতর্কতা। স্পিডিং, ওভারটেকিং, এবং টার্নিং এর ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব বাদ দেওয়ার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। ট্রাফিক আইনের যথার্থ প্রয়োগ বেপরোয়া রাইডারদের পর্যবেক্ষণে রাখবে আশা করা যায়। 

 

  • বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই বাইক নিয়ম করে সার্ভিসিং করাতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ইলিগাল বা অবৈধ পার্টস যেনো বাইকে ব্যবহার না করা হয় এবং অবৈধ বা অদক্ষ/আনাড়ি হাতে যেনো বাইক সার্ভিসিং না করানো হয়।

 

  • বাইকের হেডলাইট, ডিআরএল, এবং ইন্ডিকেটর লাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্ধকার পথে অবশ্যই হেডলাইট সুব্যবহার করতে হবে এবং টার্ন নেওয়ার সময় ইন্ডিকেটর লাইটের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আর শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইটের ব্যবহার করা যায়, তবে অন্য সময় ফগ লাইট অফ রাখতে হবে, তা না হলে অপরদিক থেকে আসা গাড়ি বা যে কোনো যানবাহন চালকের দৃষ্টিতে সমস্যা সৃষ্টি করে সেটি ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

 

  • আরেকটি খেয়াল রাখার মতো বিষয় হচ্ছে বাইক চালানোর সময় রাইডারের ফিট থাকা। ঘুম ঘুম বা ক্লান্ত চোখে কিংবা কোনরূপ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অবশ্যই বাইক চালানো যাবে না। বাইকারকেও অবশ্যই সড়ক মহাসড়কে বাইক চালানোর জন্য অভিজ্ঞ হতে হবে। অনভিজ্ঞ হয়েই গতি নিয়ে বাইক চালিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় পরা মোটেই অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।

 

  • বাইকের হেলমেট কেনার ক্ষেত্রেও যত্নবান হতে হবে। বাজারে অনেকরকমের, ভিন্ন দামের, এবং বিভিন্ন কোয়ালিটির বা মানের বাইক পার্টস এবং হেলমেট দিয়ে ভরা। অল্প দামে কেনা যে সে হেলমেট কিন্তু গুরুতর দুর্ঘটনায় তেমন সুরক্ষা দেবে না। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) ২০০৬ সালের গবেষণামতে একটি ভালো মানের হেলমেট পরলে তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হবার সম্ভাবনা ৭০% কমিয়ে দেয়, আর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ৪০%। তাই যে কোনো রাইডে বাইক চালক এবং যাত্রী দুইজনের জন্যেই ভালো হেলমেটের কোনো বিকল্প নেই।

সব মিলিয়ে দেখে শুনে বাইক চালানোর কোনো বিকল্প নেই। বাইকের সার্ভিসিং ঠিক রেখে, হেলমেট পরে, রাস্তার অবস্থা ভেজা নাকি বালু ছড়ানো, বা খাঁদ আছে কিনা, এগুলো নিশ্চিত রেখে পর্যাপ্ত আলো নিয়ে বাইক চালালে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তা অবশ্যই ভূমিকা রাখবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

১.বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কি দুর্ঘটনা ঘটে?

-জ্বি, বাইক ম্যালফাংশন বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

২.ভালো মানের হেলমেট কি মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়?

-২০০৬ সালের গবেষণামতে একটি ভালো মানের হেলমেট পরলে তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হবার সম্ভাবনা ৭০% কমিয়ে দেয়, আর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ৪০%

৩. গ্রামীণ রাস্তায় কি ধরনের এক্সিডেন্ট এর ঝুঁকি আছে?

-গ্রামীণ রাস্তায় হুটহাট গবাদি পশু কারণে এক্সিডেন্ট এর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাই ।

৪.স্পিডিং এবং ওভারটেকিং এর কারণে কি এক্সিডেন্ট হয় ?

-বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত স্পিডে টার্‌নিং এবং ওভারটেকিঙের চেষ্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাইকাররা স্পিডের কারণে সেফটির কথা ভুলে যান এবং যথাসম্ভব দ্রুত স্পিডিং করে অন্যান্য গাড়ির মাঝ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে রোমাঞ্চ অনুভব করার চেষ্টা করেন।

৫.ক্লান্তি নিয়ে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে বাইক চালানো যায়?

-ক্লান্তি নিয়ে বাইক চালানো দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। ক্লান্তির কারণে অনেকসময়েই চালক বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেন না বা সামনের গাড়ি বা ট্রাফিক ইন্ডিকেটর সাইন ঠিকমতো দেখতে পারেন না। একই ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চালক নেশাগ্রস্ত হলে।

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Bikesbikroy
Suzuki Gixxer Monoton 2024 Model for Sale

Suzuki Gixxer Monoton 2024 Model

3,000 km
verified MEMBER
verified
Tk 187,000
23 hours ago
Yamaha FZS V3 DD Fi Abs BS4 2023 for Sale

Yamaha FZS V3 DD Fi Abs BS4 2023

4,400 km
verified MEMBER
verified
Tk 230,000
23 hours ago
Bajaj CT 100 ২০১২ 2007 for Sale

Bajaj CT 100 ২০১২ 2007

40,000 km
MEMBER
Tk 56,000
23 hours ago
Hero Ignitor 2022 for Sale

Hero Ignitor 2022

8,000 km
verified MEMBER
verified
Tk 100,000
1 day ago
Buy Used Bikesbikroy
Suzuki Gixxer . 2018 for Sale

Suzuki Gixxer . 2018

27,000 km
MEMBER
Tk 135,000
16 seconds ago
Dayang Runner Other Model 2022 for Sale

Dayang Runner Other Model 2022

10,000 km
MEMBER
Tk 46,000
20 seconds ago
TVS Apache RTR . 2018 for Sale

TVS Apache RTR . 2018

39,000 km
MEMBER
Tk 104,999
4 minutes ago
Suzuki Gixxer GIXER S F.F.I. A.B.S 2023 for Sale

Suzuki Gixxer GIXER S F.F.I. A.B.S 2023

6,231 km
verified MEMBER
verified
Tk 288,999
4 minutes ago
Hero Splendor all ok 2010 for Sale

Hero Splendor all ok 2010

50,000 km
MEMBER
Tk 33,000
8 minutes ago
+ Post an ad on Bikroy