নিরাপত্তা টিপসঃ রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সঠিক উপায়

29 Mar, 2023   
নিরাপত্তা টিপসঃ রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সঠিক উপায়

মোটরসাইকেল চালানোর মত দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সড়কপথে আর কোন বাহন আপনাকে দিতে পারবে না। তবে রোমাঞ্চের সাথেই জড়িয়ে আছে ঝুঁকি। দেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় গাড়ির তুলনায় বাইকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৩০ গুন বেশি। চালক ও যাত্রীদের মৃত্যু এবং গুরুতর আহত হওয়ার সংবাদ এখন আর আমাদের ততটা অবাক করে না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দুর্ঘটনাটিই ছিলো মোটরসাইকেল সংক্রান্ত। এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয় ও যাত্রী হিসেবে বাইকে চড়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সতর্কতার অভাব। তাছাড়াও গাড়ির তুলনায় বাইকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৩০ গুন বেশি। তবুও, সঙ্গত কারণেই দেশের বাজারে মোটরসাইকেল-এর চাহিদা কিন্তু সবসময়ই শীর্ষে আছে। 

আজ আমরা জানব এমন কিছু বেসিক নিরাপত্তা টিপস, যেগুলো আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয় সে ব্যাপারে ধারণা দিবে এবং সবসময় নিরাপদ রাখবে।

রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সঠিক উপায়

১। রাইড উপযোগী পোশাক

মোটরসাইকেল চালানোর সময় শুধুমাত্র দেখতে স্টাইলিশ লাগাটাই আসল ব্যাপার না। আবহাওয়া যতই কঠিন হোক না কেন, আপনার পোশাক এমন হতে হবে যাতে যেকোনো রকম দুর্ঘটনায় শরীরে আঘাত সবচেয়ে কম লাগে। উইন্ডব্রেকার জ্যাকেট, রাইডিং প্যান্ট, মজবুত পা-ঢাকা জুতা, গ্লাভস, ইত্যাদি বেসিক জিনিস তো আপনাকে পড়তেই হবে; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেটা কোনওভাবেই বাদ দেয়া যাবে না, তা হলো হেলমেট। একজন বাইকারের জন্য হেলমেট তার পোশাকেরই একটা অংশ। তাই একটু দাম দিয়ে হলেও ভালো মানের হেলমেট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

আজকাল গরম অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই জ্যাকেট বা ভারী জুতা পড়তে চান না। কিন্তু মার্কেটে তীব্র গরমে পড়ার মত স্বস্তিদায়ক রাইডিং পোশাকও পাওয়া যায়। চেষ্টা করুন সেগুলোর পিছনে বিনিয়োগ করতে।

২। নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলুন

কোন মালবাহী বা যাত্রীবাহী গাড়ির পেছন পেছন লম্বা সময় ধরে চলা কখনও কখনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। পেছনে থাকা অবস্থায় সব সময় কমপক্ষে ৪ সেকেন্ডের দুরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত; যাতে করে হঠাৎ সামনের গাড়ি ব্রেক করলে আপনিও ব্রেক করার কিছুটা সময় পান।

আবার, যেকোনো বড় গাড়ির বেশ কিছু ব্লাইন্ড স্পট থাকে, যেখানে কোনও বাইক, সাইকেল, পথচারী, রিকশা, ছোট গাড়ি ইত্যাদি যাই থাকুক না কেন, ড্রাইভারের সিট থেকে তা কোনওভাবেই দেখা সম্ভব নয়। মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ গ্রহনের সময় এই ব্লাইন্ড স্পটগুলো নিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে হবে এবং রাস্তায় চলাচলের সময় এই জায়গাগুলো বুঝে বাইক চালাতে হবে।

৩। বের হওয়ার আগে বাইক পরীক্ষা করুন

প্রত্যেকবার মোটরবাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে সেটাকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। প্রতিদিন চেক করার মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো হচ্ছে- টায়ার প্রেশার, সবগুলো আয়না এবং লাইট ইত্যাদি। প্রতিদিন বের হওয়ার আগে অন্তত ৫-১০ মিনিট আইকের চারপাশ ঘুরে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখুন কোথাও কোনো নাট-বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে ই না, কোনও কানেকশন খুলে যাচ্ছে কি না, টায়ারে কোন ক্ষতিকর কণা বা ছিদ্র আছে কি না, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না।

এছাড়াও নিয়মিত বাইকের মেইন্টেনেন্স করানো ও যত্ন নেয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত। যেকোনো সমস্যা পরে সাড়ানোর আশায় রেখে না দিয়ে তৎক্ষণাৎ ঠিক করানো হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের হাত থেকে বেঁচে থাকা যায়।

৪। শান্ত থাকুন ও মনোযোগ দিন

আপনার বাইকে আয়না থাকুক বা যতই উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর থাকুক না কেনো, রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় চোখ কান খোলা রাখা এবং ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনও বিকল্প নেই। একজন দক্ষ বাইকার রাস্তার প্রতিটা বাঁক এবং লেনে সতর্কতার সাথে কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয়, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন এবং নিরাপত্তার দিক থেকে কখনও কোনও আপোষ করেন না।

রাস্তার প্রতিটা কণা ও খানাখন্দ খেয়াল করে বাইক চালান। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন। লেন পরিবর্তনের সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করুন এবং শুধুমাত্র নিরাপদ হলেই পদক্ষেপ নিন। রাস্তার অন্যান্য ড্রাইভার ও রাইডাররা আপনাকে লক্ষ্য করছেন কি না এটাও খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।

৫। ট্রাফিক নিয়ম ও সংকেত জানুন

মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় ট্রাফিক নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলো নিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিন। আমাদের সুবিধার্থে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংকেত, ট্র্যাফিক লাইট ও ট্র্যাফিক পুলিশ সবসময় নিযুক্ত থাকেন। প্রতিটা সংকেত ও সিগন্যাল মেনে চলুন, ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার দিকে মন দিন, বিপদ ও ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে।

৬। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং জরুরি কাগজপত্র সাথে রাখুন

সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার পরও অনেক সময় বিপদ চলে আসতে পারে। ছোট-খাটো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাইকের সাথে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

এছাড়াও সবসময় বাইকের ও আপনার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সাথেই রাখুন। পুলিশ চেক-পোস্ট কিংবা যেকোনো জরুরি অবস্থায় এই কাগজপত্রগুলো আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে।

৭। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন

নিরাপদ ড্রাইভিং-এর জন্য আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে সব সময় ওয়াকিবহাল থাকাটা খুবই জরুরি। গাড়ির তুলনায় মোটরবাইক ওজনে হালকা, ভারসাম্য অর্ধেক এবং পুরোটাই খোলামেলা। তাই ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা, গরম, কুয়াশা এবং বন্যা পরিস্থিতি, দুর্যোগের সংকেত ইত্যাদির পূর্বাভাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে সবসময়। সেই অনুযায়ী আপনার প্রত্যেকটা রাইড পরিকল্পনা করে নিন। নিরাপদ বাইকিং-এর ক্ষেত্রে এটা একটা বিশেষ চাবিকাঠির মত আপনাকে সাপোর্ট দিয়ে যাবে।

৮। আপনার সহযাত্রীকে প্রস্তুত করে নিন

রাইড শেয়ারিং হোক, কিংবা প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বাইক চালানো, যেকোনো ক্ষেত্রেই আপনার পিলিয়নকে যাত্রার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন। তার জন্য আবশ্যকীয় হেলমেট, নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত করুন। মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ হিসেবে তাকে আপনার যাত্রাপথ এবং পথের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত করে নিন। মোটরবাইকে আপনার পেছনে বসে যাত্রা করার সময় তাহলে তিনিও আপনাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারবেন। সে মোটরবাইকে চড়ার ক্ষেত্রে নতুন হলে তাকে নিয়ে কিছুটা পথ নিরাপদ রাস্তায় চালিয়ে অভ্যাস করে নিলে নিজেকে ও তাকে ভালোভাবে পথের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া যায়।

৯। মোটরসাইকেলের ব্রেক আপগ্রেড করে রাখুন

যেকোনো রকম পরিস্থিতিতে সঠিক পদ্ধতিতে নিরাপদভাবে ব্রেক করার চর্চা করা উচিত। লেন পরিবর্তন, রাস্তার বাঁক ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত মানের ও ভালো কন্ডিশনে থাকা ব্রেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দ্রুতগতিতে ব্রেক করার প্রয়োজন হলে, আশেপাশের সমস্ত যানবাহনকে আপনার পাশ কাটিয়ে নিরাপদভাবে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে দিন, এবং সামনের বাহনের সাথেও পর্যাপ্ত দুরত্ব বজায় রাখুন। এছাড়াও মূহুর্তের মধ্যে ব্রেক করার প্রয়োজনে হঠাৎ যেন ব্রেক লক না হয়ে যায়, সেজন্য আপনার মোটরসাইকেলে উন্নতমানের এন্টি-লক ব্রেক  সংযোগ করে নিন। মোটরবাইকে এবিএস ব্রেক থাকলে সেটা যেকোনো মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সক্ষম, আর এতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার হারও ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে।

১০। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে বাইক চালান

অ্যাগ্রেসিভ বাইকিং অনেকের নেশা হলেও রাস্তায় নিরাপদ চলাচলের জন্য রক্ষণাত্মক বাইকিং-এর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতা ময়দানের জন্য, নিত্যদিনের রাস্তার জন্য নয়। সমস্ত নিয়ম মেনে চলে যত্নের সাথে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে মোটরসাইকেল চালান, বিপদ আপনার থেকে ৫০ হাত দূরে থাকবে।

১১। মোটরবাইক নিরাপত্তা কোর্স করুন

প্রায় সব দেশেই মোটরবাইক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একটি পরীক্ষা দিতে হয়। আবার, কিছু দেশে পরীক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তা কোর্সও করতে হয়। আমাদের দেশে লাইসেন্সের জন্য নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেয়ার বাধ্যকতা না থাকলেও, নিজের নিরাপত্তার খাতিরে একটি কোর্স করেই ফেলুন।

এই কোর্স আপনাকে দেশের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে যেমন শেখাবে, তেমনি শেখাবে জরুরি অবস্থায় কোন ধরণের পদক্ষেপ নিতে হয়। একই সাথে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আপনার মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণকে ব্যবহারিক কাজে লাগানোর ব্যাপারে কিছুটা ট্রেনিং-ও হয়ে যাবে।

উপসংহার

মনে রাখবেন, আমরা প্রত্যেকটি রাইডারই দেশের মানুষের নজরে সমস্ত বাইকারদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বিনয় ও দক্ষতার পরিচয় দিলে দেশের মানুষও আমাদেরকে একই ভাবে সম্মান দেবে। চলুন, সমস্যা নয়, আদর্শ হই। দুই-একজন অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ রাইডারের ভুল যেন আমাদের একাগ্রতাকে দমিয়ে না দিতে পারে।

আসুন, সড়কপথে নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হই। দেশের ও মানুষের সম্মান রক্ষা করে চলি। নিরাপদ হোক আমাদের সকলের পথচলা। হ্যাপি রাইডিং!

 

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে রাস্তায় কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

বাংলাদেশের রাস্তায় মোটরবাইক চালানোর সময় খুব প্রচলিত কিছু সমস্যা হচ্ছেঃ

  • বৃষ্টি ভেজা রাস্তা ও পানি ওঠা
  • ভাঙ্গা রাস্তা
  • রাস্তা খুঁড়ে চলমান নির্মাণকাজ
  • ট্র্যাফিক জ্যাম
  • রাস্তার পাশে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ি
  • রং-সাইড অর্থাৎ উলটা দিক থেকে আসা গাড়ি বা বাইক
  • পাবলিক বাসের বেপরোয়া চালনা ইত্যাদি।

মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্টগুলো কেন হয়?

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণগুলো হচ্ছেঃ

  • ওভারটেকিং
  • অন্য ড্রাইভারদের নজরে না পড়া
  • মাত্রাতিরিক্ত স্পিড তোলা
  • বাস, ট্রাক, গাড়ি অথবা লরির ব্লাইন্ড স্পট সম্পর্কে না জানা
  • হেলমেট ব্যবহার না করা
  • বারবার লেনের বাইরে যেয়ে চালানো
  • রং সাইডে চালানোর চেষ্টা
  • অন্যমনষ্ক রাইডার বা ড্রাইভার; বিশেষ করে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার।

মোটরসাইকেল চালানোর মত দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সড়কপথে আর কোন বাহন আপনাকে দিতে পারবে না। তবে রোমাঞ্চের সাথেই জড়িয়ে আছে ঝুঁকি। দেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় গাড়ির তুলনায় বাইকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৩০ গুন বেশি। চালক ও যাত্রীদের মৃত্যু এবং গুরুতর আহত হওয়ার সংবাদ এখন আর আমাদের ততটা অবাক করে না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম দুর্ঘটনাটিই ছিলো মোটরসাইকেল সংক্রান্ত। এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয় ও যাত্রী হিসেবে বাইকে চড়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সতর্কতার অভাব। তাছাড়াও গাড়ির তুলনায় বাইকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৩০ গুন বেশি। তবুও, সঙ্গত কারণেই দেশের বাজারে মোটরসাইকেল-এর চাহিদা কিন্তু সবসময়ই শীর্ষে আছে। 

আজ আমরা জানব এমন কিছু বেসিক নিরাপত্তা টিপস, যেগুলো আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয় সে ব্যাপারে ধারণা দিবে এবং সবসময় নিরাপদ রাখবে।

রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সঠিক উপায়

১। রাইড উপযোগী পোশাক

মোটরসাইকেল চালানোর সময় শুধুমাত্র দেখতে স্টাইলিশ লাগাটাই আসল ব্যাপার না। আবহাওয়া যতই কঠিন হোক না কেন, আপনার পোশাক এমন হতে হবে যাতে যেকোনো রকম দুর্ঘটনায় শরীরে আঘাত সবচেয়ে কম লাগে। উইন্ডব্রেকার জ্যাকেট, রাইডিং প্যান্ট, মজবুত পা-ঢাকা জুতা, গ্লাভস, ইত্যাদি বেসিক জিনিস তো আপনাকে পড়তেই হবে; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেটা কোনওভাবেই বাদ দেয়া যাবে না, তা হলো হেলমেট। একজন বাইকারের জন্য হেলমেট তার পোশাকেরই একটা অংশ। তাই একটু দাম দিয়ে হলেও ভালো মানের হেলমেট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

আজকাল গরম অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই জ্যাকেট বা ভারী জুতা পড়তে চান না। কিন্তু মার্কেটে তীব্র গরমে পড়ার মত স্বস্তিদায়ক রাইডিং পোশাকও পাওয়া যায়। চেষ্টা করুন সেগুলোর পিছনে বিনিয়োগ করতে।

২। নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলুন

কোন মালবাহী বা যাত্রীবাহী গাড়ির পেছন পেছন লম্বা সময় ধরে চলা কখনও কখনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। পেছনে থাকা অবস্থায় সব সময় কমপক্ষে ৪ সেকেন্ডের দুরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত; যাতে করে হঠাৎ সামনের গাড়ি ব্রেক করলে আপনিও ব্রেক করার কিছুটা সময় পান।

আবার, যেকোনো বড় গাড়ির বেশ কিছু ব্লাইন্ড স্পট থাকে, যেখানে কোনও বাইক, সাইকেল, পথচারী, রিকশা, ছোট গাড়ি ইত্যাদি যাই থাকুক না কেন, ড্রাইভারের সিট থেকে তা কোনওভাবেই দেখা সম্ভব নয়। মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ গ্রহনের সময় এই ব্লাইন্ড স্পটগুলো নিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে হবে এবং রাস্তায় চলাচলের সময় এই জায়গাগুলো বুঝে বাইক চালাতে হবে।

৩। বের হওয়ার আগে বাইক পরীক্ষা করুন

প্রত্যেকবার মোটরবাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে সেটাকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। প্রতিদিন চেক করার মত গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো হচ্ছে- টায়ার প্রেশার, সবগুলো আয়না এবং লাইট ইত্যাদি। প্রতিদিন বের হওয়ার আগে অন্তত ৫-১০ মিনিট আইকের চারপাশ ঘুরে ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখুন কোথাও কোনো নাট-বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে ই না, কোনও কানেকশন খুলে যাচ্ছে কি না, টায়ারে কোন ক্ষতিকর কণা বা ছিদ্র আছে কি না, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কোনও সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না।

এছাড়াও নিয়মিত বাইকের মেইন্টেনেন্স করানো ও যত্ন নেয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত। যেকোনো সমস্যা পরে সাড়ানোর আশায় রেখে না দিয়ে তৎক্ষণাৎ ঠিক করানো হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের হাত থেকে বেঁচে থাকা যায়।

৪। শান্ত থাকুন ও মনোযোগ দিন

আপনার বাইকে আয়না থাকুক বা যতই উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর থাকুক না কেনো, রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় চোখ কান খোলা রাখা এবং ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনও বিকল্প নেই। একজন দক্ষ বাইকার রাস্তার প্রতিটা বাঁক এবং লেনে সতর্কতার সাথে কিভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হয়, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন এবং নিরাপত্তার দিক থেকে কখনও কোনও আপোষ করেন না।

রাস্তার প্রতিটা কণা ও খানাখন্দ খেয়াল করে বাইক চালান। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন। লেন পরিবর্তনের সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করুন এবং শুধুমাত্র নিরাপদ হলেই পদক্ষেপ নিন। রাস্তার অন্যান্য ড্রাইভার ও রাইডাররা আপনাকে লক্ষ্য করছেন কি না এটাও খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।

৫। ট্রাফিক নিয়ম ও সংকেত জানুন

মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় ট্রাফিক নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলো নিয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিন। আমাদের সুবিধার্থে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংকেত, ট্র্যাফিক লাইট ও ট্র্যাফিক পুলিশ সবসময় নিযুক্ত থাকেন। প্রতিটা সংকেত ও সিগন্যাল মেনে চলুন, ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার দিকে মন দিন, বিপদ ও ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে।

৬। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং জরুরি কাগজপত্র সাথে রাখুন

সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার পরও অনেক সময় বিপদ চলে আসতে পারে। ছোট-খাটো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাইকের সাথে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

এছাড়াও সবসময় বাইকের ও আপনার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সাথেই রাখুন। পুলিশ চেক-পোস্ট কিংবা যেকোনো জরুরি অবস্থায় এই কাগজপত্রগুলো আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হতে পারে।

৭। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন

নিরাপদ ড্রাইভিং-এর জন্য আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে সব সময় ওয়াকিবহাল থাকাটা খুবই জরুরি। গাড়ির তুলনায় মোটরবাইক ওজনে হালকা, ভারসাম্য অর্ধেক এবং পুরোটাই খোলামেলা। তাই ঝড়-বৃষ্টি, ঠান্ডা, গরম, কুয়াশা এবং বন্যা পরিস্থিতি, দুর্যোগের সংকেত ইত্যাদির পূর্বাভাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে সবসময়। সেই অনুযায়ী আপনার প্রত্যেকটা রাইড পরিকল্পনা করে নিন। নিরাপদ বাইকিং-এর ক্ষেত্রে এটা একটা বিশেষ চাবিকাঠির মত আপনাকে সাপোর্ট দিয়ে যাবে।

৮। আপনার সহযাত্রীকে প্রস্তুত করে নিন

রাইড শেয়ারিং হোক, কিংবা প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বাইক চালানো, যেকোনো ক্ষেত্রেই আপনার পিলিয়নকে যাত্রার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন। তার জন্য আবশ্যকীয় হেলমেট, নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত করুন। মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ হিসেবে তাকে আপনার যাত্রাপথ এবং পথের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত করে নিন। মোটরবাইকে আপনার পেছনে বসে যাত্রা করার সময় তাহলে তিনিও আপনাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিতে পারবেন। সে মোটরবাইকে চড়ার ক্ষেত্রে নতুন হলে তাকে নিয়ে কিছুটা পথ নিরাপদ রাস্তায় চালিয়ে অভ্যাস করে নিলে নিজেকে ও তাকে ভালোভাবে পথের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া যায়।

৯। মোটরসাইকেলের ব্রেক আপগ্রেড করে রাখুন

যেকোনো রকম পরিস্থিতিতে সঠিক পদ্ধতিতে নিরাপদভাবে ব্রেক করার চর্চা করা উচিত। লেন পরিবর্তন, রাস্তার বাঁক ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত মানের ও ভালো কন্ডিশনে থাকা ব্রেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দ্রুতগতিতে ব্রেক করার প্রয়োজন হলে, আশেপাশের সমস্ত যানবাহনকে আপনার পাশ কাটিয়ে নিরাপদভাবে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছেড়ে দিন, এবং সামনের বাহনের সাথেও পর্যাপ্ত দুরত্ব বজায় রাখুন। এছাড়াও মূহুর্তের মধ্যে ব্রেক করার প্রয়োজনে হঠাৎ যেন ব্রেক লক না হয়ে যায়, সেজন্য আপনার মোটরসাইকেলে উন্নতমানের এন্টি-লক ব্রেক  সংযোগ করে নিন। মোটরবাইকে এবিএস ব্রেক থাকলে সেটা যেকোনো মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সক্ষম, আর এতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার হারও ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে।

১০। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে বাইক চালান

অ্যাগ্রেসিভ বাইকিং অনেকের নেশা হলেও রাস্তায় নিরাপদ চলাচলের জন্য রক্ষণাত্মক বাইকিং-এর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতা ময়দানের জন্য, নিত্যদিনের রাস্তার জন্য নয়। সমস্ত নিয়ম মেনে চলে যত্নের সাথে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে মোটরসাইকেল চালান, বিপদ আপনার থেকে ৫০ হাত দূরে থাকবে।

১১। মোটরবাইক নিরাপত্তা কোর্স করুন

প্রায় সব দেশেই মোটরবাইক ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একটি পরীক্ষা দিতে হয়। আবার, কিছু দেশে পরীক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তা কোর্সও করতে হয়। আমাদের দেশে লাইসেন্সের জন্য নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেয়ার বাধ্যকতা না থাকলেও, নিজের নিরাপত্তার খাতিরে একটি কোর্স করেই ফেলুন।

এই কোর্স আপনাকে দেশের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে যেমন শেখাবে, তেমনি শেখাবে জরুরি অবস্থায় কোন ধরণের পদক্ষেপ নিতে হয়। একই সাথে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আপনার মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণকে ব্যবহারিক কাজে লাগানোর ব্যাপারে কিছুটা ট্রেনিং-ও হয়ে যাবে।

উপসংহার

মনে রাখবেন, আমরা প্রত্যেকটি রাইডারই দেশের মানুষের নজরে সমস্ত বাইকারদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বিনয় ও দক্ষতার পরিচয় দিলে দেশের মানুষও আমাদেরকে একই ভাবে সম্মান দেবে। চলুন, সমস্যা নয়, আদর্শ হই। দুই-একজন অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ রাইডারের ভুল যেন আমাদের একাগ্রতাকে দমিয়ে না দিতে পারে।

আসুন, সড়কপথে নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হই। দেশের ও মানুষের সম্মান রক্ষা করে চলি। নিরাপদ হোক আমাদের সকলের পথচলা। হ্যাপি রাইডিং!

 

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে রাস্তায় কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

বাংলাদেশের রাস্তায় মোটরবাইক চালানোর সময় খুব প্রচলিত কিছু সমস্যা হচ্ছেঃ

  • বৃষ্টি ভেজা রাস্তা ও পানি ওঠা
  • ভাঙ্গা রাস্তা
  • রাস্তা খুঁড়ে চলমান নির্মাণকাজ
  • ট্র্যাফিক জ্যাম
  • রাস্তার পাশে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ি
  • রং-সাইড অর্থাৎ উলটা দিক থেকে আসা গাড়ি বা বাইক
  • পাবলিক বাসের বেপরোয়া চালনা ইত্যাদি।

মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্টগুলো কেন হয়?

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণগুলো হচ্ছেঃ

  • ওভারটেকিং
  • অন্য ড্রাইভারদের নজরে না পড়া
  • মাত্রাতিরিক্ত স্পিড তোলা
  • বাস, ট্রাক, গাড়ি অথবা লরির ব্লাইন্ড স্পট সম্পর্কে না জানা
  • হেলমেট ব্যবহার না করা
  • বারবার লেনের বাইরে যেয়ে চালানো
  • রং সাইডে চালানোর চেষ্টা
  • অন্যমনষ্ক রাইডার বা ড্রাইভার; বিশেষ করে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার।

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Bikesbikroy
atv bike 200cc 2024 for Sale

atv bike 200cc 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 330,000
8 hours ago
quad bike 2024 for Sale

quad bike 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 365,000
8 hours ago
atv bike 2024 for Sale

atv bike 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 365,000
9 hours ago
Yamaha FZ 2022 for Sale

Yamaha FZ 2022

3,500 km
MEMBER
Tk 250,000
14 hours ago
TVS Apache RTR 4V DD xconnect 2022 for Sale

TVS Apache RTR 4V DD xconnect 2022

9,000 km
verified MEMBER
verified
Tk 160,000
17 hours ago
Buy Used Bikesbikroy
Yamaha FZS V3 ABS 2020 for Sale

Yamaha FZS V3 ABS 2020

27,000 km
MEMBER
Tk 174,500
18 minutes ago
Dayang AD-80s 15 2013 for Sale

Dayang AD-80s 15 2013

70,000 km
MEMBER
Tk 25,000
26 minutes ago
Hero Glamour . 2014 for Sale

Hero Glamour . 2014

80,000 km
MEMBER
Tk 80,000
31 minutes ago
Runner Turbo 125 125CC 2021 for Sale

Runner Turbo 125 125CC 2021

35,500 km
MEMBER
Tk 58,000
44 minutes ago
Hero Hunk DD 2018 for Sale

Hero Hunk DD 2018

31,000 km
MEMBER
Tk 89,000
46 minutes ago
+ Post an ad on Bikroy