আপনার মোটরসাইকেল চালানোর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ১০ টি টিপস
সড়কে নিয়মিত চলাফেরার জন্য মোটরসাইকেল বর্তমানে চাহিদার অন্যতম শীর্ষে। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো মোটরসাইকেল। কখনও রাইডার হিসেবে, বাইক চালানো শেখার উপায় জানা ছাড়া বর্তমানে যেন কোনো গতিই নেই! তবে এইক্ষেত্রে চলে আসে মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ। সড়কে নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য জানতে হবে বাইক রাইডিং টিপস।
সড়কে নিয়ম মেনে সতর্কতার সাথে মোটরসাইকেল চালানো না হলে, যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা। তাই নতুন হোক কিংবা পুরাতন, বাইক চালানো শেখার উপায় থেকে শুরু করে মহা সড়কে মোটরসাইকেল চালানো, সব সময় খেয়াল রাখতে হবে কিছু বাইক রাইডিং টিপস। আজকের লেখায় আমরা এমনই কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথমে কিছু সতর্কতা
১. মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ শুরু আগে ঠিক করতে হবে আপনি কোন বাইক নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো শিখতে চাচ্ছেন। বন্ধুবান্ধব বা অপরিচিত কারো বাইকে নিয়ে না শেখাই ভালো। কারণ আপনি যদি কোনো দুর্ঘটনার মাঝে পড়েন, সেক্ষেত্রে সেই বাইক মেরামতের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ বহন করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। তাই বাইক চালানো শেখার জন্য পরিবারের কারো বাইক ব্যবহার করাই ভালো।
২. প্রথমবার মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ শেখার সময় অল্প সিসির বাইক (১০০-১২৫ সিসি) ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ এসকল বাইকের গতি কম হয় এবং নতুনদের জন্য নিয়ন্ত্রণ করাও সহজ হয়। যা নতুনদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাইক রাইডিং টিপস।
৩. বাইক চালানো শেখার উপায় জানার আগে বাইকের সকল ফিচার সম্পর্কে জেনে নিন। এটি আপনাকে বাইক চালানো আয়ত্ত করতে অনেক সাহায্য করবে।
৪. প্রথমবার মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ শিখতে গেলে পিচের রাস্তা ব্যবহার না করে, নরম মাটির রাস্তা বা কোনো মাঠে বাইক চালানো শেখা ভালো। এতে বাইক নিয়ে পড়ে গেলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কম হয়।
মোটরসাইকেল চালানো এর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বাইক রাইডিং টিপস
১. বাইকে বসুন ঠিকভাবে
মোটরসাইকেল চালানো শেখার প্রাথমিক ধাপ হলো ঠিকভাবে বসতে পারা। বাইকের সিটে সাবলীলভাবে বসার অভ্যাস করুন। খেয়াল রাখবেন, বাইকের সিটে বসার পর আপনার দুই পা-ই যেন মাটি স্পর্শ করে। এটি আপনাকে স্ট্যাবিলিটি দিবে। পা উপরে তোলার পর আপনার হাঁটু মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্ক স্পর্শ করে গ্রিপ নিবে এবং আপনি দুই হাত দিয়ে সহজেই বাইকের হ্যান্ডেল ধরতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার সামনের দিকে ঝুঁকে আসার প্রয়োজন পড়বে না। অর্থাৎ আপনার পিঠ থাকবে সোজা। এভাবে আপনি বাইক চালানো শেখার উপায় অভ্যাস করতে পারেন।
২. দৃষ্টি থাকবে সামনের দিকে
মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ জানার সময় দৃষ্টি সবসময় সামনের দিকে রাখতে হবে। সর্বোচ্চ যতদূর দৃষ্টি যায় এবং যেইদিকে যেতে চান সেদিকে নজর রাখুন। অবশ্য একই দিকে সার্বক্ষণিক চোখ স্থির রাখবেন না। আশেপাশে অন্য কোনো বাহন থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কিনা সেদিকেও নজর রাখবেন। আর অবশ্যই সড়কের উপর কোনো নির্দিষ্ট বস্তু যেমন গাড়ি বা গাছের উপর বেশিক্ষণ নজর স্থির করে রাখবেন না। এতে আপনার মোটরসাইকেল চালানো এর মনসংযোগে বিঘ্ন ঘটবে।
৩. গিয়ার কমিয়ে ব্রেক করুন
বাইকের আরপিএম যত কম হবে, বাইকের গতি তত কম থাকবে। তাই ব্রেক করার আগে যদি গিয়ার কমিয়ে ফেলেন, তাহলে অটোমেটিক একটি ব্রেকিং সিস্টেম কাজ করবে। আপনি ব্রেকটি আস্তে করে ধরে অন্য হাতে ক্লাচ ধরে গিয়ার কমিয়ে ফেলুন। এই সময় আপনি থ্রোটলটা এই গিয়ারে যেমন থাকা উচিৎ, অর্থাৎ যেমন থাকলে বাইকটি অতিরিক্ত শব্দ করবে না সে রকমভাবে ধরুন এবং ক্লাচ ছেড়ে দিন। এর ফলে দেখবেন আপনার বাইকের স্পীড অটোমেটিকলি কমে গেছে।
৪. ট্রাফিকের ভেতর ভালো ব্যালেন্স পেতে পেছনের ব্রেক ব্যবহার করুন
শহরের ট্রাফিকের ভেতর মোটরসাইকেল চালানো এর সময় খুব ঘন ঘন ব্রেক চাপতে হয় রাইডারদের। এটি একদিকে যেমন বিরক্তিকর, অপরদিকে ব্যালেন্স ধরে রাখাও বেশ কষ্ট সাধ্য একটি কাজ। আর এজন্য ভালো ব্যালেন্স রাখতে পিছনের ব্রেক ব্যবহার করা অধিক কার্যকর। সামনের ব্রেকে শক্তি বেশি থাকলেও, ঘন ট্রাফিকের ভেতর যেহেতু বাইকের গতি বেশ ধীর থাকে, তাই পিছনের ব্রেকে ব্যালেন্স বেশি পাওয়া যায়।
৫. ফাস্ট রাইডিং বনাম রাশ রাইডিং
কোনো স্থানে দ্রুত পৌঁছাতে আমরা অনেক সময়ই দ্রুত রাইড করে থাকি। তবে এক্ষেত্রে রাশ রাইডিং কখনওই করবেন না। রাশ রাইডিং হলো সড়কের উপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাইড করা। এতে রাইডারের নিজের ব্যালেন্স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না। সেই সাথে তার আশেপাশের বাহনগুলোকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। অপরদিকে, মোটরসাইকেল চালানো এর সময় ফাস্ট রাইডিং হলো নিজের ব্যালেন্স রক্ষা করে সময় বুঝে এক্সেলারেট করা। তাই এর জন্য মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ জেনে বাইকের প্রতিটি বিষয় রাইডারের সুনজরে রাখতে হয় এবং দৃষ্টি সবসময় সামনের দিকে রাখতে হয়। আর বডি পজিশনিং বেশ নামিয়ে আনতে হয়, যাতে বাতাসের মাঝে ভালো অ্যারোডাইনামিক মুভমেন্ট পাওয়া যায়। আর তাই এইজন্য নিয়মিত বাইক রাইডিং টিপস নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করতে হয়।
৬. হার্ড ব্রেকিং প্র্যাক্টিস করুন
বাইক চালানো শেখার উপায় হিসেবে আপনার জানতে হবে আপনি বাইক কত দ্রুত সময়ের মাঝে গতি শূণ্যতে নামিয়ে আনতে পারেন। মূলত স্বল্প সময়ের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে বাইকের দুই ব্রেক একসাথে কাজে লাগাতে হয়। এতে বাইকের গতি মুহূর্তেই ৭০-৯০ শতাংশ কমে যায়, তাই ব্যালেন্স ধরে রাখাও বেশ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। এজন্য নিজে থেকে মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ জানতে নিয়মিত এই হার্ড ব্রেকিং চর্চা করুন।
৭. ট্যাঙ্কের সাথে লাগিয়ে বসুন
মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ হিসেবে ব্যালেন্স ধরে রাখার জন্য আপনি যত ট্যাঙ্কের দিকে এগিয়ে বসতে পারবেন, ততোই আপনার ব্যালেন্সিং এ সুবিধা হবে। বিশেষ করে স্পোর্টস বাইকগুলোর জন্য এই কথা বেশ সত্য। এজন্য বিশেষজ্ঞরা ট্যাঙ্কের সাথে লাগিয়ে বসার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলে মোটরসাইকেল চালানো এর সময় হঠাৎ ব্রেক করলে আপনার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
৮. ডানে ও বামে টার্ন নেয়া শিখুন
শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও, মোটরসাইকেল চালানো এর সময় ডানে ও বামে বাইক টার্ন নেয়া বেশ কষ্টকর একটি কাজ। বামে টার্ন নেয়া তুলনামূলক সহজ, কারণ আমরা অধিকাংশই ডানহাতি রাইডার। আর পিছনের ব্রেক যেহেতু ডান হাতে থাকে, তাই বামদিকে টার্ন নেয়ার সময় ব্যালেন্স রাখা বেশ সহজ হয়। তবে মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ হিসেবে ডানদিকে টার্ন নিতে গেলে বেশ সময় নিয়ে চর্চা করতে হয়। কারণ তখন ডান হাতে ব্রেক চেপে বাইক টার্ন করাতে ব্যালেন্স রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
৯. রোড পজিশনিং
মোটরসাইকেল চালানোর ধাপ হিসেবে সড়কে চলার সময় কোন দিক দিয়ে বাইক চালাবেন সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আপনার নিশ্চিত করতে হবে সড়কের কোন দিকে থাকলে আপনি রোডের পুরো ভিউটা পাচ্ছেন। সাধারণত বামপাশ থেকে রোডের পুরো ভিউ পাওয়া যায়। তাছাড়া বাইক চালানো শেখার উপায় জানতে চেষ্টা করবেন বড় কোনো গাড়ি যেমন বাস বা ট্রাক এগুলোর ঠিক পিছনে না থাকতে। কারণ মোটরসাইকেল চালানো এর সময় বড় গাড়ির পিছনে থাকলে অ্যারোডাইনামিক ভিন্নভাবে কাজ করে এবং সামনের বাহন হঠাৎ করে ব্রেক চাপলে রাইডারের সামাল দিতেও বেশ সমস্যা হয়।
১০. ওভারটেকিং
মোটরসাইকেল চালানো এর সময় সড়কে যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার ওভারটেকিং করা লাগতে পারে। এতে অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলেও বাইক চালানো শেখার উপায় হিসেবে সড়কের নিয়ম মেনে ওভারটেকিং করলে তেমন ঝুঁকি থাকে না। এর জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে পারেন –
- যেই গাড়িকে ওভারটেক করতে চাচ্ছেন, তাকে পিছন থেকে সংকেত দিয়ে আপনার উদ্দেশ্য জানান।
- সামনের গাড়ির মাঝামাঝি বা ডানদিকে আপনাকে পজিশনিং করুন। কখনও বামদিক থেকে ওভারটেক করবেন না। (সড়কে বামদিকে দিয়ে গাড়ি চালানোর নিয়ম হলে ডানদিক থেকে ওভারটেক করবেন। আর ডানদিকে গাড়ি চালানোর নিয়ম হলে বামদিক দিয়ে করবেন।)
- ওভারটেক করার পর পিছনের গাড়ি আপনার লুকিং গ্লাসে না আসা পর্যন্ত আগের পজিশনে যাবেন না।
- আগের পজিশনে যাওয়ার আগে পিছনের গাড়িকে সিগন্যাল দিন।
বাইক চালানো শেখার উপায় বুঝতে সবচেয়ে বেশি সজাগ রাখতে হবে আপনার সেন্সকে। আশেপাশের সকল গাড়ির দিকে খেয়াল রাখুন আর নিজের ব্যালেন্সের দিকে নজর রাখুন। আর নিয়মিত চর্চা করুন আপনার অভিজ্ঞতা এবং স্কিলকে ঝালিয়ে নেয়ার জন্য।
মোটরবাইকের বাজার সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে চোখ রাখুন বাইকস গাইড– এ। এছাড়া ২০২৩ সালের মোটরবাইকের বাজার জানতে ভিজিট করুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।
সাধারণ প্রশ্ন উত্তর
বাইক চালানো শেখার জন্য কোন ধরণের বাইক ভালো?
অল্প সিসির বাইক যেমন- ১০০/১২৫ সিসি।
কোথায় বাইক চালানো প্র্যাক্টিস করা উচিৎ?
খোলা মাঠ বা নরম মাটির উপর।
হার্ড ব্রেক কীভাবে করতে হয়?
হার্ড ব্রেক করার সময় দুই দিকের ব্রেকই একসাথে চেপে ধরবেন এবং বাইকের সামনের দিকে এগিয়ে বসবেন যাতে ব্যালেন্স রাখতে পারেন।
লো স্পিডে কোন ব্রেক ব্যবহার করা উচিৎ?
লো স্পিডে ব্যালেন্স ধরে রাখতে পিছনের ব্রেক ব্যবহার করা উচিৎ।
বাইক রাইড করার সময় বডি পজিশনিং কেমন হবে?
শরীর রিলাক্স এবং দৃষ্টি সামনের দিকে রাখতে হবে। দুই হাত অল্প ভাজ করে হ্যান্ডেল বার ধরতে হবে এবং বাইক স্থির থাকা অবস্থায় দুই পা যাতে মাটিতে স্পর্শ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।