মোটরসাইকেলের যত্নে পাঁচটি সহজ কাজ

29 Mar, 2023   
মোটরসাইকেলের যত্নে পাঁচটি সহজ কাজ

আমাদের মোটরসাইকেল আমাদের পথ চলার সাথী, ভালোবাসার আরেক রূপ। এই মোটরসাইকেলের যত্ন সঠিকভাবে করতে পারলে এই বন্ধুই আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাবে বছরের পর বছর। সাধারণ ভাবে বাইক মেইন্টেইনেন্স করার জন্য আপনার কিন্তু সব সময় অনেক অভিজ্ঞতা বা বিশেষ স্কিল জানার দরকার নেই। কিন্তু প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে বাইকটির হাল হকিকত দেখে শুনে নিলে আপনার নিজেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

মোটরসাইকেল মেইন্টেইনেন্সের খুঁটিনাটি আর জটিল বিষয়গুলো নাহয় আরেক দিন আলোচনার জন্য রাখলাম। আপাতত আজকের জন্য আমরা দেখব পাঁচটি এমন সহজ আর দ্রুত স্টেপস, যেগুলো আপনারা প্রতিবার বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে চেক করে নিতে পারবেন। কিন্তু দিনশেষে এই ১০ মিনিটের প্রি-চেকআপ স্টেপস আপনার অনেকগুলো সময় আর অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ বাঁচিয়ে দিবে।

মোটরসাইকেলের যত্নে পাঁচটি সহজ কাজ

স্টেপ ১: টায়ার এবং টায়ার প্রেশার

আপনার সর্বপ্রথম যেই জিনিসটা চেক করতে হবে তা হচ্ছে টায়ার। কোনো রকম কাটা, ফাটা, কোনোো কিছু টায়ারের গায়ে আটকে আছে কি না, কোনো ফুটো হয়েছে কি না এইরকম যেকোনো সমস্যা রাস্তায় নামার আগেই চেক করে নেয়া ভালো। তা না হলে পথে ঘাটে টায়ার পাংচার হয়ে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও টায়ার কতটা ক্ষয় হয়েছে সেটাও মাঝে মাঝে চেক করে নেয়া ভালো। এটা চেক করার সহজ একটা টিপস হচ্ছে, দেশি ২ টাকা বা ৫ টাকার কয়েনের বঙ্গবন্ধুর মাথার দিকটা নিচে দিয়ে টায়ারের খাঁজে ঢুকিয়ে দেখা। যদি ‘বাংলাদেশ’ লিখাটা ভালোমতন দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার মোটরসাইকেলের টায়ার বদলানোর সময় এসে গেছে।

এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় না বললেই নয়। তা হলো আপনি যদি শহরের পিচঢালা রাস্তায় লম্বা সময় ধরে বাইক চালিয়ে থাকেন আর খুব একটা কর্নারিং করা না হয়ে থাকে, তাহলে আপনার টায়ারের মাঝখানের অংশ সাইডের চেয়ে বেশি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাবে। তাই টায়ারের ক্ষয় কতটা, তার সঠিক আন্দাজ পেতে হলে আপনাকে টায়ারের মাঝ বরাবর কোনো এক খাঁজে কয়েন দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, সাইডে নয়।

মোটরসাইকেলের যত্নের ক্ষেত্রে টায়ার প্রেশার ব্যাপারটা কেন যেন প্রায়ই মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু পথে ঘাটে হাই স্পিডে চালানো কিংবা কর্নারিং করার ক্ষেত্রে এই জিনিসটা আপনার বাইকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাইকে ওঠার আগে টায়ারের গায়ে বেশ জোরে একটা ছোট কিক মেরে দেখলে এতে কতটা বাতাস আছে তার আন্দাজ পাওয়া যায়। ছোট সাইজের টায়ারের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে চেপে দেখলেও বুঝা যায় যে টায়ারে হাওয়া দিতে হবে কি না। আরও সহজ হয় যদি আরেকটু সময় হাতে নিয়ে মাঝে মাঝে একটা টায়ার প্রেশার গেইজ দিয়ে চেক করে নেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় তাপমাত্রা যখন বার বার উঠা নামা করতে থাকে তখন টায়ার প্রেশারও কমবেশি হয়ে থাকে। তাই এই সময়গুলোতে আরও গুরুত্ব দিয়ে টায়ার প্রেশার চেক করুন।

স্টেপ ২: ইঞ্জিন অয়েল সহ সব ধরণের ফ্লুইড

এর পরেই আপনার কাজ হচ্ছে বাইকে যত ধরণের ফ্লুইড আছে সেগুলো ভালো ভাবে চেক করে নেয়া। অনেকেই মোটরসাইকেলের ফ্লুইড, ইঞ্জিন অয়েল এই সমস্ত জিনিসকে গাড়ির সাথে তুলনা করেন। তাদের ধারণা বাইকের ফ্লুইডগুলো গাড়ির মতো অনেক দিন ধরে চালানো যাবে। কিন্তু মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এই ফ্লুইডের অবস্থা আপনার পরিবেশ, রাইডিং -এর ধরণ সহ আপনার ব্যবহারের পদ্ধতির কারণেও অনেক হেরফের হতে পারে।

বাইকের ইঞ্জিনে কতটুকু ইঞ্জিন অয়েল আছে তা দেখার জন্য একেক বাইকে এক এক রকম সিস্টেম করে দেয়া থাকে। সরাসরি দেখার জন্য স্বচ্ছ কোনো অংশ থাকলে এক নজর দেখে নিন আপনার বাইকে কতটুকু অয়েল রয়েছে। যদি আপনার মোটরসাইকেলে ডুবিয়ে দেখার জন্য ডিপস্টিক তাহলে সেটা ব্যবহার করে দেখে নিন। যেই পদ্ধতিই ব্যবহার করেন না কেন খেয়াল রাখবেন ইঞ্জিন অয়েল চেক করার সময় বাইক যেন সোজা অবস্থায় থাকে। হয় বাইকের স্ট্যান্ড ব্যবহার করে একে সোজা করে নিন, নয়তো কারো সাহায্য নিয়ে অথবা নিজেই বাইকটি ধরে সোজা করে তারপর তেল চেক করুন। 

এছাড়াও আপনার মোটরসাইকেলের ব্রেক সিস্টেমে থাকা ফ্লুইডও নিয়মিত চেক করা প্রয়োজন। সেইক্ষেত্রেও বাইকটিকে একটি সমতল জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখতে হবে ফ্লুইড ঠিক পরিমাণে আছে কি না। ব্রেক মাস্টার সিলিন্ডারে যেই ছোট্ট জানালার মতো স্বচ্ছ অংশ থাকে সেখানে খেয়াল করলে ফ্লুইডের পরিমাণ আর অবস্থা দেখা যাবে। যদি দেখেন ফ্লুইডের রঙ বেশি গাঢ় বা কালচে হয়ে আসছে, তাহলে সেটাও পালটে ফেলতে হবে।

আপনার মোটরসাইকেলে যদি তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য রেডিয়েটর থাকে, তাহলে সেটাতে কুল্যান্ট ফ্লুইডের পরিমাণও চেক করে নেবেন।

সবশেষে আপনার বাইকের আশেপাশে মাটিতে লক্ষ্য করে দেখুন লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকা অবস্থায় এর থেকে কোনো রকম তরল লীক করে বাইরে পড়েছে কি না। এই জিনিসটা একটু সতর্ক হয়ে খেয়াল করলে পরে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।

স্টেপ ৩: মেকানিক্যাল যতকিছু

এরপরের ধাপ হচ্ছে আপনার মোটরসাইকেলের যাবতীয় মেকানিক্যাল অটো পার্টস চেক করে নেওয়া। আপনার বাইকের ব্রেক প্যাডগুলো কতখানি পুরু রয়েছে সেটা ভালোভাবে খেয়াল করে দেখুন। এর রোটর গুলো যেন ফাটা না থাকে, আর সবকিছু ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। যদি আপনার মোটরসাইকেলের পেছনে ব্রেক ড্রাম থাকে, তাহলে চোখে সরাসরি দেখার কোনো উপায় নেই। আপনি বড়জোর ব্রেক প্যাডেলে পা রেখে প্রেশার কতটুকু ভালো আছে তার একটা ধারণা নিতে পারেন।

নিচের দিকে যেহেতু নজর দিচ্ছেনই, তখন আপনার চেইন কিংবা শ্যাফট ড্রাইভের অবস্থাও পরখ করে দেখুন। ঝটপট দেখে নিন আপনার চেইনের মধ্যয়ে কোনো রকম ময়লা, ইট পাথরের গুড়া বা এ ধরণের কোনো সমস্যা সৃষ্টিকারী জিনিস আটকে আছে কি না। চেইনে ভালো রকম লুব্রিকেশন বা তেল দেয়া আছে কি না দেখে নিন। একই সাথে সামনের ও পেছনের থ্রটলের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় কিছুটা টেনে ধরে দেখুন যথেষ্ট ফ্রি-প্লের সুযোগ আছে কি না।

সবশেষে আপনার বাইকের আয়নাগুলো নেড়ে চেড়ে ঠিকমত এডজাস্ট করে নিন আর সেগুলো চাপ নিতে পারছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

স্টেপ ৪: নিরাপত্তা ইন্ডিকেটর

রাস্তায় বের হওয়ার আগে আপনার বাইকটি চালু করে এর সব রকম ইন্ডিকেটরগুলো পরীক্ষা করে নিন। হেডলাইট, হাই বীম এগুলো ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না, টার্ন সিগন্যাল গুলো ঠিকমত জ্বলছে কি না, বিশেষ করে ব্রেক লাইট কাজ করছে কি না, এসব ভালো ভাবে পরখ করে নিন।

এক্ষেত্রে বেশ ভালো একটা টিপস হচ্ছে, এসব পরীক্ষা আপনার গ্যারেজের ভেতরে অল্প আলোয় বা অন্ধকারে করে দেখতে পারেন। যদি আপনাকে সাহায্য করার মত কেউ নাও থাকে, তবুও অন্ধকার পরিবেশে এই লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেখলে আপনি একাই বেশ ভালোভাবে আলোর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে সব গুলো ইন্ডিকেটর ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না। এছাড়াও আপনার প্লেট নাম্বার আপ টু ডেট আছে কি না সেটাও সবসময় খেয়াল রাখবেন, যাতে রাস্তায় এই সামান্য কারণে পুলিশের হাতে হেনস্থা না হতে হয়, আর সময়ও বাঁচে।

স্টেপ ৫: ইলেকট্রিকাল সামগ্রী

এরপর বাকি রইলো আপনার মোটরসাইকেলের সব রকম ইলেকট্রিকাল সামগ্রী চেক করা। আপনার বাইকের সব রকম তার, ব্যাটারি, হার্নেস, এই সবকিছু চেক করার কোনো সহজ উপায় নেই। কেননা এগুলোর বেশিরভাগই ভালোভাবে চেক করতে গেলে বাইকের বিভিন্ন পার্টস খুলতে হবে। অতএব সরাসরি চোখে যতটুক দেখা যায় সেটুকুই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নিন কোনো তার বের হয়ে আছে কি না, অথবা ঘষা লেগে ভেতরের তার উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে কি না ইত্যাদি।

এছাড়াও আপনি যখন বাইক স্টার্ট দিবেন তখন ভালো মতো খেয়াল করলে আপনি আপনার ব্যাটারির আওয়াজ শুনতে পারবেন। শব্দের ধরণ থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন যে ব্যাটারিতে চার্জ দিতে হবে কি না, অথবা ব্যাটারিই পালটে ফেলার সময় হয়েছে কি না ইত্যাদি। 

উপসংহার

এই সামান্য সময় আর যত্ন নিয়ে বাইকের সব যন্ত্রপাতি একটু চেক করার অভ্যাস করলে যেকোনো ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার হাত থেকে বেঁচে যাবেন নিশ্চিত! এই প্রি-চেকআপ স্টেপ গুলো নিয়মিত করার অভ্যাস তৈরি হলে আপনি বিপদ ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল সার্ভিসিং করিয়ে রাখতে পারবেন। ফলে আপনার বাইকটি লম্বা সময় পর্যন্ত থাকবে নতুনের মতো, আর আপনার প্রত্যেকটি রাইড হবে আনন্দময়।

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

মোটরসাইকেল কি প্রতিদিন চালু করতে হয়?

প্রতিদিন নিয়ম করে চালু না করলেও চলে। কিন্তু সপ্তাহে অন্তত একদিন বাইকারদের উচিত তাদের মোটরসাইকেল কমপক্ষে ১০-১৫ মাইল চালিয়ে আনা। এতে করে জ্বালানী ট্যাংকে জলীয় বাষ্প জমা থাকলে শুকিয়ে যাবে, ইঞ্জিনে ভালোভাবে লুব্রিকেশন পৌঁছে মরিচা ও ক্ষয় প্রতিরোধ হবে, বদ্ধ ফিল্টার, টায়ার ও ব্যাটারির অবক্ষয় ইত্যাদি রোধ করবে।

কতদিন পরপর মোটরবাইক মেইন্টেনেন্স করাবো?

এটা নির্ভর করে আপনার বাইকের মডেল এবং কীভাবে ব্যবহার করছেন তার উপর। তবে, সাধারণভাবে আপনার বাইকের রুটিন চেক-আপ ও সার্ভিসিং প্রতি ৫০০-৬০০ মাইল, অথবা ৬মাস পরপর করানোর প্রয়োজন হয়।

চালানোর আগে ইঞ্জিন গরম হওয়া প্রয়োজন কেন?

ইঞ্জিন গরম হওয়ার পর চালানো হলে মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা ও পারফর্মেন্সের উপর বেশ ভালো প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের মধ্যে অনেক রকম রিং, সীল ইত্যাদি রয়েছে, যেগুলো সঠিক তাপমাত্রায় লুব্রিকেশনের সাহায্য নিয়ে মসৃণভাবে কাজ করতে পারে। মোটরবাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার পর তাই কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ইঞ্জিন গরম হতে দেয়া উচিত, তাহলে এই পার্টসগুলো সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে।

আমার মোটরসাইকেলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

মোটরবাইকে যতরকম পার্টস আছে, সবই কোনো না কোনো সময় পালটানো লাগে। তবে সবার কিছু কমন সমস্যা হচ্ছেঃ

  • পুরনো বাইকের জ্বালানি ট্যাংকে জং ধরা
  • নানা রকম বাইক ফ্লুইড লীক করা, বিশেষ করে ইঞ্জিন অয়েল ও ফোর্ক অয়েল
  • কার্বুরেটর নষ্ট হওয়া
  • টায়ার পাংচার অথবা ক্ষয়
  • ব্রেক লাইন ছুটে যাওয়া
  • হেডলাইট বা আয়না ভেঙে যাওয়া, ইত্যাদি

মোটরসাইকেল সারাতে কেমন খরচ পড়ে?

একেক বাইকের ক্ষেত্রে খরচ একেক রকম। আপনার বাইকের মডেল, কোন কোন পার্টস নষ্ট বা পুরনো হয়েছে, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে এই খরচ কম বা বেশিও হতে পারে। যেই পার্টসগুলো বদলাতে হবে, তার দাম, নিকটস্থ সার্ভিসিং সেন্টারে সার্ভিস চার্জ কত, এই সবকিছু মিলিয়ে খরচ হিসাব করতে পারেন। অনলাইনে সার্ভিসিং সেবার খরচ জানতে ও তুলনা করে দেখতে চাইলে ভিসিট করুন Bikroy -এর অটো সার্ভিস পোর্টালে।

আমাদের মোটরসাইকেল আমাদের পথ চলার সাথী, ভালোবাসার আরেক রূপ। এই মোটরসাইকেলের যত্ন সঠিকভাবে করতে পারলে এই বন্ধুই আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাবে বছরের পর বছর। সাধারণ ভাবে বাইক মেইন্টেইনেন্স করার জন্য আপনার কিন্তু সব সময় অনেক অভিজ্ঞতা বা বিশেষ স্কিল জানার দরকার নেই। কিন্তু প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে বাইকটির হাল হকিকত দেখে শুনে নিলে আপনার নিজেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 

মোটরসাইকেল মেইন্টেইনেন্সের খুঁটিনাটি আর জটিল বিষয়গুলো নাহয় আরেক দিন আলোচনার জন্য রাখলাম। আপাতত আজকের জন্য আমরা দেখব পাঁচটি এমন সহজ আর দ্রুত স্টেপস, যেগুলো আপনারা প্রতিবার বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে চেক করে নিতে পারবেন। কিন্তু দিনশেষে এই ১০ মিনিটের প্রি-চেকআপ স্টেপস আপনার অনেকগুলো সময় আর অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ বাঁচিয়ে দিবে।

মোটরসাইকেলের যত্নে পাঁচটি সহজ কাজ

স্টেপ ১: টায়ার এবং টায়ার প্রেশার

আপনার সর্বপ্রথম যেই জিনিসটা চেক করতে হবে তা হচ্ছে টায়ার। কোনো রকম কাটা, ফাটা, কোনোো কিছু টায়ারের গায়ে আটকে আছে কি না, কোনো ফুটো হয়েছে কি না এইরকম যেকোনো সমস্যা রাস্তায় নামার আগেই চেক করে নেয়া ভালো। তা না হলে পথে ঘাটে টায়ার পাংচার হয়ে বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও টায়ার কতটা ক্ষয় হয়েছে সেটাও মাঝে মাঝে চেক করে নেয়া ভালো। এটা চেক করার সহজ একটা টিপস হচ্ছে, দেশি ২ টাকা বা ৫ টাকার কয়েনের বঙ্গবন্ধুর মাথার দিকটা নিচে দিয়ে টায়ারের খাঁজে ঢুকিয়ে দেখা। যদি ‘বাংলাদেশ’ লিখাটা ভালোমতন দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার মোটরসাইকেলের টায়ার বদলানোর সময় এসে গেছে।

এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় না বললেই নয়। তা হলো আপনি যদি শহরের পিচঢালা রাস্তায় লম্বা সময় ধরে বাইক চালিয়ে থাকেন আর খুব একটা কর্নারিং করা না হয়ে থাকে, তাহলে আপনার টায়ারের মাঝখানের অংশ সাইডের চেয়ে বেশি দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাবে। তাই টায়ারের ক্ষয় কতটা, তার সঠিক আন্দাজ পেতে হলে আপনাকে টায়ারের মাঝ বরাবর কোনো এক খাঁজে কয়েন দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, সাইডে নয়।

মোটরসাইকেলের যত্নের ক্ষেত্রে টায়ার প্রেশার ব্যাপারটা কেন যেন প্রায়ই মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু পথে ঘাটে হাই স্পিডে চালানো কিংবা কর্নারিং করার ক্ষেত্রে এই জিনিসটা আপনার বাইকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাইকে ওঠার আগে টায়ারের গায়ে বেশ জোরে একটা ছোট কিক মেরে দেখলে এতে কতটা বাতাস আছে তার আন্দাজ পাওয়া যায়। ছোট সাইজের টায়ারের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে চেপে দেখলেও বুঝা যায় যে টায়ারে হাওয়া দিতে হবে কি না। আরও সহজ হয় যদি আরেকটু সময় হাতে নিয়ে মাঝে মাঝে একটা টায়ার প্রেশার গেইজ দিয়ে চেক করে নেন। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় তাপমাত্রা যখন বার বার উঠা নামা করতে থাকে তখন টায়ার প্রেশারও কমবেশি হয়ে থাকে। তাই এই সময়গুলোতে আরও গুরুত্ব দিয়ে টায়ার প্রেশার চেক করুন।

স্টেপ ২: ইঞ্জিন অয়েল সহ সব ধরণের ফ্লুইড

এর পরেই আপনার কাজ হচ্ছে বাইকে যত ধরণের ফ্লুইড আছে সেগুলো ভালো ভাবে চেক করে নেয়া। অনেকেই মোটরসাইকেলের ফ্লুইড, ইঞ্জিন অয়েল এই সমস্ত জিনিসকে গাড়ির সাথে তুলনা করেন। তাদের ধারণা বাইকের ফ্লুইডগুলো গাড়ির মতো অনেক দিন ধরে চালানো যাবে। কিন্তু মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এই ফ্লুইডের অবস্থা আপনার পরিবেশ, রাইডিং -এর ধরণ সহ আপনার ব্যবহারের পদ্ধতির কারণেও অনেক হেরফের হতে পারে।

বাইকের ইঞ্জিনে কতটুকু ইঞ্জিন অয়েল আছে তা দেখার জন্য একেক বাইকে এক এক রকম সিস্টেম করে দেয়া থাকে। সরাসরি দেখার জন্য স্বচ্ছ কোনো অংশ থাকলে এক নজর দেখে নিন আপনার বাইকে কতটুকু অয়েল রয়েছে। যদি আপনার মোটরসাইকেলে ডুবিয়ে দেখার জন্য ডিপস্টিক তাহলে সেটা ব্যবহার করে দেখে নিন। যেই পদ্ধতিই ব্যবহার করেন না কেন খেয়াল রাখবেন ইঞ্জিন অয়েল চেক করার সময় বাইক যেন সোজা অবস্থায় থাকে। হয় বাইকের স্ট্যান্ড ব্যবহার করে একে সোজা করে নিন, নয়তো কারো সাহায্য নিয়ে অথবা নিজেই বাইকটি ধরে সোজা করে তারপর তেল চেক করুন। 

এছাড়াও আপনার মোটরসাইকেলের ব্রেক সিস্টেমে থাকা ফ্লুইডও নিয়মিত চেক করা প্রয়োজন। সেইক্ষেত্রেও বাইকটিকে একটি সমতল জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখতে হবে ফ্লুইড ঠিক পরিমাণে আছে কি না। ব্রেক মাস্টার সিলিন্ডারে যেই ছোট্ট জানালার মতো স্বচ্ছ অংশ থাকে সেখানে খেয়াল করলে ফ্লুইডের পরিমাণ আর অবস্থা দেখা যাবে। যদি দেখেন ফ্লুইডের রঙ বেশি গাঢ় বা কালচে হয়ে আসছে, তাহলে সেটাও পালটে ফেলতে হবে।

আপনার মোটরসাইকেলে যদি তাপমাত্রার ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য রেডিয়েটর থাকে, তাহলে সেটাতে কুল্যান্ট ফ্লুইডের পরিমাণও চেক করে নেবেন।

সবশেষে আপনার বাইকের আশেপাশে মাটিতে লক্ষ্য করে দেখুন লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকা অবস্থায় এর থেকে কোনো রকম তরল লীক করে বাইরে পড়েছে কি না। এই জিনিসটা একটু সতর্ক হয়ে খেয়াল করলে পরে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে যাবেন।

স্টেপ ৩: মেকানিক্যাল যতকিছু

এরপরের ধাপ হচ্ছে আপনার মোটরসাইকেলের যাবতীয় মেকানিক্যাল অটো পার্টস চেক করে নেওয়া। আপনার বাইকের ব্রেক প্যাডগুলো কতখানি পুরু রয়েছে সেটা ভালোভাবে খেয়াল করে দেখুন। এর রোটর গুলো যেন ফাটা না থাকে, আর সবকিছু ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। যদি আপনার মোটরসাইকেলের পেছনে ব্রেক ড্রাম থাকে, তাহলে চোখে সরাসরি দেখার কোনো উপায় নেই। আপনি বড়জোর ব্রেক প্যাডেলে পা রেখে প্রেশার কতটুকু ভালো আছে তার একটা ধারণা নিতে পারেন।

নিচের দিকে যেহেতু নজর দিচ্ছেনই, তখন আপনার চেইন কিংবা শ্যাফট ড্রাইভের অবস্থাও পরখ করে দেখুন। ঝটপট দেখে নিন আপনার চেইনের মধ্যয়ে কোনো রকম ময়লা, ইট পাথরের গুড়া বা এ ধরণের কোনো সমস্যা সৃষ্টিকারী জিনিস আটকে আছে কি না। চেইনে ভালো রকম লুব্রিকেশন বা তেল দেয়া আছে কি না দেখে নিন। একই সাথে সামনের ও পেছনের থ্রটলের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় কিছুটা টেনে ধরে দেখুন যথেষ্ট ফ্রি-প্লের সুযোগ আছে কি না।

সবশেষে আপনার বাইকের আয়নাগুলো নেড়ে চেড়ে ঠিকমত এডজাস্ট করে নিন আর সেগুলো চাপ নিতে পারছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

স্টেপ ৪: নিরাপত্তা ইন্ডিকেটর

রাস্তায় বের হওয়ার আগে আপনার বাইকটি চালু করে এর সব রকম ইন্ডিকেটরগুলো পরীক্ষা করে নিন। হেডলাইট, হাই বীম এগুলো ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না, টার্ন সিগন্যাল গুলো ঠিকমত জ্বলছে কি না, বিশেষ করে ব্রেক লাইট কাজ করছে কি না, এসব ভালো ভাবে পরখ করে নিন।

এক্ষেত্রে বেশ ভালো একটা টিপস হচ্ছে, এসব পরীক্ষা আপনার গ্যারেজের ভেতরে অল্প আলোয় বা অন্ধকারে করে দেখতে পারেন। যদি আপনাকে সাহায্য করার মত কেউ নাও থাকে, তবুও অন্ধকার পরিবেশে এই লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেখলে আপনি একাই বেশ ভালোভাবে আলোর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে সব গুলো ইন্ডিকেটর ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না। এছাড়াও আপনার প্লেট নাম্বার আপ টু ডেট আছে কি না সেটাও সবসময় খেয়াল রাখবেন, যাতে রাস্তায় এই সামান্য কারণে পুলিশের হাতে হেনস্থা না হতে হয়, আর সময়ও বাঁচে।

স্টেপ ৫: ইলেকট্রিকাল সামগ্রী

এরপর বাকি রইলো আপনার মোটরসাইকেলের সব রকম ইলেকট্রিকাল সামগ্রী চেক করা। আপনার বাইকের সব রকম তার, ব্যাটারি, হার্নেস, এই সবকিছু চেক করার কোনো সহজ উপায় নেই। কেননা এগুলোর বেশিরভাগই ভালোভাবে চেক করতে গেলে বাইকের বিভিন্ন পার্টস খুলতে হবে। অতএব সরাসরি চোখে যতটুক দেখা যায় সেটুকুই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নিন কোনো তার বের হয়ে আছে কি না, অথবা ঘষা লেগে ভেতরের তার উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে কি না ইত্যাদি।

এছাড়াও আপনি যখন বাইক স্টার্ট দিবেন তখন ভালো মতো খেয়াল করলে আপনি আপনার ব্যাটারির আওয়াজ শুনতে পারবেন। শব্দের ধরণ থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন যে ব্যাটারিতে চার্জ দিতে হবে কি না, অথবা ব্যাটারিই পালটে ফেলার সময় হয়েছে কি না ইত্যাদি। 

উপসংহার

এই সামান্য সময় আর যত্ন নিয়ে বাইকের সব যন্ত্রপাতি একটু চেক করার অভ্যাস করলে যেকোনো ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার হাত থেকে বেঁচে যাবেন নিশ্চিত! এই প্রি-চেকআপ স্টেপ গুলো নিয়মিত করার অভ্যাস তৈরি হলে আপনি বিপদ ঘটার আগেই প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল সার্ভিসিং করিয়ে রাখতে পারবেন। ফলে আপনার বাইকটি লম্বা সময় পর্যন্ত থাকবে নতুনের মতো, আর আপনার প্রত্যেকটি রাইড হবে আনন্দময়।

গ্রাহকদের নিয়মিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

মোটরসাইকেল কি প্রতিদিন চালু করতে হয়?

প্রতিদিন নিয়ম করে চালু না করলেও চলে। কিন্তু সপ্তাহে অন্তত একদিন বাইকারদের উচিত তাদের মোটরসাইকেল কমপক্ষে ১০-১৫ মাইল চালিয়ে আনা। এতে করে জ্বালানী ট্যাংকে জলীয় বাষ্প জমা থাকলে শুকিয়ে যাবে, ইঞ্জিনে ভালোভাবে লুব্রিকেশন পৌঁছে মরিচা ও ক্ষয় প্রতিরোধ হবে, বদ্ধ ফিল্টার, টায়ার ও ব্যাটারির অবক্ষয় ইত্যাদি রোধ করবে।

কতদিন পরপর মোটরবাইক মেইন্টেনেন্স করাবো?

এটা নির্ভর করে আপনার বাইকের মডেল এবং কীভাবে ব্যবহার করছেন তার উপর। তবে, সাধারণভাবে আপনার বাইকের রুটিন চেক-আপ ও সার্ভিসিং প্রতি ৫০০-৬০০ মাইল, অথবা ৬মাস পরপর করানোর প্রয়োজন হয়।

চালানোর আগে ইঞ্জিন গরম হওয়া প্রয়োজন কেন?

ইঞ্জিন গরম হওয়ার পর চালানো হলে মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা ও পারফর্মেন্সের উপর বেশ ভালো প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের মধ্যে অনেক রকম রিং, সীল ইত্যাদি রয়েছে, যেগুলো সঠিক তাপমাত্রায় লুব্রিকেশনের সাহায্য নিয়ে মসৃণভাবে কাজ করতে পারে। মোটরবাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার পর তাই কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ইঞ্জিন গরম হতে দেয়া উচিত, তাহলে এই পার্টসগুলো সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে।

আমার মোটরসাইকেলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

মোটরবাইকে যতরকম পার্টস আছে, সবই কোনো না কোনো সময় পালটানো লাগে। তবে সবার কিছু কমন সমস্যা হচ্ছেঃ

  • পুরনো বাইকের জ্বালানি ট্যাংকে জং ধরা
  • নানা রকম বাইক ফ্লুইড লীক করা, বিশেষ করে ইঞ্জিন অয়েল ও ফোর্ক অয়েল
  • কার্বুরেটর নষ্ট হওয়া
  • টায়ার পাংচার অথবা ক্ষয়
  • ব্রেক লাইন ছুটে যাওয়া
  • হেডলাইট বা আয়না ভেঙে যাওয়া, ইত্যাদি

মোটরসাইকেল সারাতে কেমন খরচ পড়ে?

একেক বাইকের ক্ষেত্রে খরচ একেক রকম। আপনার বাইকের মডেল, কোন কোন পার্টস নষ্ট বা পুরনো হয়েছে, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে এই খরচ কম বা বেশিও হতে পারে। যেই পার্টসগুলো বদলাতে হবে, তার দাম, নিকটস্থ সার্ভিসিং সেন্টারে সার্ভিস চার্জ কত, এই সবকিছু মিলিয়ে খরচ হিসাব করতে পারেন। অনলাইনে সার্ভিসিং সেবার খরচ জানতে ও তুলনা করে দেখতে চাইলে ভিসিট করুন Bikroy -এর অটো সার্ভিস পোর্টালে।

Similar Advices

New Auto partsbikroy
360 Adjustable Looking Glass For Bike/cycle for Sale

360 Adjustable Looking Glass For Bike/cycle

MEMBER
Tk 120
11 hours ago
W9 Led bulb (BS Lightings) for Sale

W9 Led bulb (BS Lightings)

MEMBER
Tk 2,500
11 hours ago
Bike Hydrolic Lock for Sale

Bike Hydrolic Lock

MEMBER
Tk 650
11 hours ago
Portable mini foot pump for Sale

Portable mini foot pump

MEMBER
Tk 600
15 hours ago
APEX Lubricant for Sale

APEX Lubricant

MEMBER
Tk 1,850
15 hours ago
Used Auto partsbikroy
Full Black Helmate- AXOR for Sale

Full Black Helmate- AXOR

MEMBER
Tk 5,500
6 days ago
Halmet for sell for Sale

Halmet for sell

MEMBER
Tk 6,900
11 minutes ago
Studds helmet visor for Sale

Studds helmet visor

MEMBER
Tk 200
19 minutes ago
Cycle back sit sell. for Sale

Cycle back sit sell.

MEMBER
Tk 350
38 minutes ago
honda wash meshin for Sale

honda wash meshin

MEMBER
Tk 10,000
1 hour ago
+ Post an ad on Bikroy