বিআরটিএ ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে?
বিআরটিএ(বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে? এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য এবং খরচ
ড্রাইভিং লাইসেন্স হল এক ধরণের পরিচয়পত্র যেখানে চালকের পরিচিতি বর্ণিত থাকে। বিভিন্ন ধরণের মোটরযান চালনার জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক গাড়ি চালকদের জন্য এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বাংলাদেশ মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে যে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত কোন ব্যক্তিই সড়কে যান চালাতে পারবেন না। কাজেই আপনি যদি নিজে গাড়ি চালিয়ে যেকোনো স্থানে যেতে চান আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবেই। চলুন জেনে নিই কিভাবে আপনি বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করাতে পারবেন সে প্রক্রিয়া সম্পর্কে-
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ন্যূন তম যোগ্যতা
শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। যদিও এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে। যেমন-
- ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে ন্যূন তম অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে। কিন্তু অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূন তম শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে এস.এস.সি।
- লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রথম এবং প্রয়োজনীয় শর্ত হল একটি শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ফেলা।
- আবেদনের ক্ষেত্রে অপেশাদার চালকদের জন্য ন্যূন তম বয়স ১৮ এবং পেশাদার চালকদের জন্য ন্যূন তম বয়স ২০ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
তিন ধরণের পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়-
১। হালকা মোটর যানের জন্য ( ২৫০০ কিলোগ্রামের নিচে ) ঃ হালকা মোটর যান যেগুলোর ওজন ২৫০০ কিলোগ্রামের কম সে ধরণের গাড়ি ( মোটর সাইকেল, সি এন জি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি )চালনার জন্য এই লাইসেন্সটি প্রয়োজন। এই লাইসেন্স প্রাপ্তির ন্যূন তম বয়স সীমা ২০ বছর।
২। মাঝারি আকারের মোটর যানের জন্য ( ২৫০০ কেজি-৬০০০ কেজির মধ্যে)ঃ এই লাইসেন্সটি পাওয়ার ন্যূন তম বয়স সীমা ২৩ বছর তবে শর্ত থাকে যে, প্রার্থীকে অবশ্যই হালকা মোটর যান চালনার ন্যূন তম ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
৩। ভারি মোটর যানের জন্য ( ৬০০০ কেজি বা ততোধিক)ঃ ভারি মোটর যান চালনা কিংবা হেভি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য ন্যূন তম বয়স সীমা ২৬ বছর তবে এখেত্রেও শর্ত থাকে যে, আবেদনকারীকে এর আগে অবশ্যই মাঝারি বা মিডিয়াম ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্যঃ
আবেদন করার আগেই নিচের ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে রাখতে পারলে ভাল হয়। সেক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
১। ছবিঃ ছবির সাইজ হতে হবে ৩০০*৩০০ পিক্সেল এবং সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোবাইট।
২। রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক স্বাক্ষরিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি। স্ক্যান কপির সাইজ অনধিক ৬০০ কিলোবাইট হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অথবা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি। স্ক্যান কপির সাইজ ৬০০ কিলোবাইটের বেশি হওয়া যাবে না।
৪। বর্তমানে যে ঠিকানায় অবস্থান করছেন সেখানকার গ্যাস, বিদ্যুৎ অথবা পানির বিলের কপি ( অনধিক ৬০০ কিলোবাইট )
বি আর টি এ’র স্মার্ট কার্ড মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াঃ
এক্ষেত্রেও একই কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে এখানে আপনার শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সটির নাম্বারটি দিতে হবে যেটা আপনাকে শিক্ষানবিশদের ড্রাইভিং পরিক্ষায় পাস করার পর দেয়া হবে।
বি আর টি এ’র বাংলাদেশ মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদনের পদ্ধতিঃ
প্রথমে প্রার্থীকে বি আর টি এ’র উইন্ডো সার্ভিসে গিয়ে এনআইডি সহকারে রেজিস্টার করতে হবে। এন আই ডিতে প্রদত্ত তথ্যের অনুরুপ তথ্য আবেদন ফরমে পূরণ করতে হবে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী পরীক্ষার কেন্দ্র, তারিখ এবং সময় নির্বাচন করবেন। এরপর আসে লাইসেন্সের জন্য ফি প্রদানের পালা। আপনি ফি প্রদানের সাথে সাথে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সময় পর্যন্ত আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
বি আর টি এ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে করণীয়ঃ
লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার পরে আপনাকে লার্নার’স ড্রাইভিং লাইসেন্সের নাম্বার প্রদান করা হবে। এই নাম্বারটি দিয়ে আপনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং ফিস প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপরে প্রার্থী তার পছন্দমত সময় নির্বাচন করে ছবি, স্বাক্ষর এবং আঙুলের ছাপ প্রদানের জন্য বি আর টি এ কার্যালয়ে যাবেন। বায়োমেট্রিক সিস্টেমে নিবন্ধন হয়ে গেলে আপনি একটি এস এম এস পাবেন যেখানে আপনাকে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কি করতে হবে?
দেশের বাইরেও গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার জন্য আপনাকে অটো মোবাইল এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ( AAB) এর কাছ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হল-
- প্রথমেই আপনাকে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে।
- এরপরে বি আর টি এ’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে স্মার্ট কার্ডে প্রদত্ত তথ্যের অনুরুপ তথ্য দিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে। এর সাথে যে ডকুমেন্টগুলো লাগবে সেগুলো হল-
১। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি।
২।এক কপি পাসপোর্ট এবং ৪ কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি।
৩। পাসপোর্টের প্রথম চার পৃষ্ঠার ফটোকপি।
প্রয়োজনীয় তথ্যসমুহ এবং ডকুমেন্ট প্রদানের পর আবেদনপত্রটি AAB‘র অফিসে দাখিল করতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রদেয় ফিসঃ
শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য ফি
১। মোটর সাইকেল অথবা হালকা যান যেকোনো একটির জন্য লাইসেন্স করাতে চাইলে খরচ পড়বে ৩৪৫ টাকা।
২। মোটর সাইকেল এবং হালকা যান দুইটির জন্য একত্রে লাইসেন্সের জন্য গুণতে হবে ৫১৮ টাকা।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি
১। ৫ বছর মেয়াদী পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি ১৬৮০ টাকা।
২।১০ বছর মেয়াদী অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি ২৫৪২ টাকা।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২৫০০ টাকা ফি লাগবে।
পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে জনগণের জীবনের নিরাপত্তার ভার ড্রাইভারের উপর থাকে। বাংলাদেশের মত ঘনবসতি পূর্ণ দেশে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত যোগ্য চালকের প্রয়োজন সর্বাধিক । গাড়ির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি গাড়ি চালানো ভালভাবে শিখে নেয়া উচিত প্রতিটি চালকের জন্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে অবশ্যই নিয়ম নীতি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।