বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক স্থায়ীভাবে দেশের বাইরে বসবাস করছেন। তারা যেই দেশে বসবাস করছেন সেখানে নাগরিকত্ব পেয়ে হয়তো সেখানকার ড্রাইভিং লাইসেন্স করে ফেলেছেন, তবে দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স তাদের কাছে নেই। এমতাবস্থায় আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে দেশে আসলে ড্রাইভিং লাইসেন্সজনীত জটিলতায় পরতে হচ্ছে।
আবার বিশ্বায়নের ফলে অনেক বিদেশী নাগরিক নিয়মিত বাংলাদেশে আসছেন। লম্বা সময়ের জন্য বাংলাদেশে অবস্থান করতে হলে স্বভাবতই তাদের একটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। তবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকায় তারা ভাবেন যে এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স করা যাবে না। বিষয়টি সত্য নয়।
তাই আজ আমরা দুটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো –
১। দেশের বাইরের ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে দেশে ব্যবহার করা যাবে?
২। কিভাবে বিদেশি নাগরিক আমাদের দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করবে?
তার আগে চলুন দেখে আসি বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮’তে বিদেশি নাগরিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে আসলে কি বলা আছে। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা কিছুটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ – (২০১৮ সনের ৪৭ নং আইন)
বিদেশি নাগরিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স
৯। (১) যে কোনো বিদেশি নাগরিক তাহার নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন ও পৃষ্ঠাঙ্কন করাইয়া উক্ত লাইসেন্সের মেয়াদকালে সমগ্র বাংলাদেশে মোটরযান চালনা করিতে পারিবেন।
ব্যাখ্যা – অর্থাৎ, আপনার কাছে যদি অন্য কোনো দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে, তাহলে বিআরটিএ থেকে উক্ত লাইসেন্সটি আপনি পৃষ্ঠাঙ্কন করিয়ে নিয়ে সারা বাংলাদেশে সেই লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আর বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার কোনো প্রয়োজন পরবে না। তবে আপনি বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্সটি মেয়াদ থাকা পর্যন্ত’ই ব্যবহার করতে পারবেন।
(২) যে কোনো বিদেশি নাগরিক ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য, নির্ধারিত ফিস প্রদান সাপেক্ষে, নির্ধারিত ফরমে ও পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে পারিবেন এবং উক্তরূপ কোনো আবেদন করা হইলে, তাহাকে এই আইনের অধীন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে।
ব্যাখ্যা – অর্থাৎ, আপনি যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিক হয়ে এবং উক্ত দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চান, তবে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পরতে হবে।
(৩) কোনো বিদেশি নাগরিক এই আইন, বিধি বা প্রবিধানের কোনো বিধান বা লাইসেন্সে প্রদত্ত কোনো শর্ত লঙ্ঘন করিলে, কর্তৃপক্ষ তাহার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, রহিত বা বাতিল করিতে পারিবে বা পৃষ্ঠাঙ্কিত বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স অকার্যকর করিতে পারিবে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনো মোটরযান চালনা করিতে পারিবেন না।
ব্যাখ্যা – অর্থাৎ, বাংলাদেশী বা বিদেশি নাগরিক, আঈন সকলের জন্যে সমান। বিদেশি নাগরিক হয়ে যদি আপনার নিরাপদ সড়ক আঈনের অধীনে কোনো অপরাধ করেন তাহলে আপনার লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা বিআরটিএ’র আছে।
কিভাবে বিদেশি নাগরিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিবেন?
নিম্নে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১। আপনার বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি নোটারি পাবলিক থেকে সত্যায়িত করিয়ে নিতে হবে।
২। চার কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে।
৩। আপনার পাসপোর্ট অথবা আইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
প্রথমেই, সকল কাগজপত্র নিয়ে ঢাকার উত্তরার ডিয়াবাড়ি বিআরটিএ অফিসে যেতে হবে। সেখানে বিদেশি লাইসেন্সধারীদের জন্য আলাদা ফরম (সবুজ রঙের) আছে। সেটি পূরণ করে সব কাগজপত্র একসাথে জমা দিতে হবে। তারা স্ট্যাম্প দিয়ে কাগজপত্র আপনাকে ফেরত দিবে এবং পরিক্ষার তারিখ বলে দিবে।
তারপর, নির্দিষ্ট দিনে এসে আপনাকে শুধু লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষা দিতে হবে। আপনাকে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে না।
পরীক্ষার দুই সপ্তাহের মাঝে আপনাকে ম্যাসেজের মাধ্যমে কেন্দ্রে ডাকা হবে। সেখানে গেলে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হবে এবং ছবি তোলা হবে।
এরপর, আপনাকে একটি অস্থায়ী গাড়ি চালোনার অনুমতিপত্র দেওয়া হবে। এটা দিয়েই গাড়ি চালাতে পারবেন। তার দুই মাস পর আপনাকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে।
পরিসংহার
মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করার মতোই আপডেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স রাখাটা’ও বেশ জরুরি। বাইকের অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স আপডেটেড না থাকলে চলার পথে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তবে আশা করি বিদেশি নাগরিকদের জন্য দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বিষয়টি আজ আপনাদের কাছে ক্লিয়ার করতে পেরেছি।