বাংলাদেশে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট কীভাবে পাবেন?
আমাদের দেশে ২০২৩ সালের শুরুতে সরকারি ঘোষণার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়ীতে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাইক চুরি ঠেকানো এবং সহজে ট্র্যাকিং করার জন্য আমাদের সরকার এবং বিআরটিএ-এর এই নতুন পদক্ষেপ বেশ কার্যকরি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নতুন কিংবা পুরনো সবরকম বাইকেই এই ইলেক্ট্রনিক নাম্বার প্লেট লাগানো সম্ভব। আর সেজন্য কিছু সহজ ধাপ আপনাদের অতিক্রম করতে হবে। আমাদের আজকের প্রতিবেদনে বাইকের ডিজিটাল নাম্বার প্লেট এবং কীভাবে সেটা আপনার বাইকের জন্য সংগ্রহ করবেন সেই ব্যাপারে জানবো।
ডিজিটাল নাম্বার প্লেট কী এবং এতে কি থাকে?
বাইকের নাম্বার প্লেট দিয়ে মূলত রাস্তায় চলমান সব বাইককে সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে বৈধতা দেয়া এবং বাইক সম্পর্কিত জরুরি সব তথ্য সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আসার পর থেকে এই পুরো ব্যাপারটার সাথে আরো অনেক রকম বাড়তি সুবিধা আর সম্ভাবনা যুক্ত হয়েছে। এই নাম্বার প্লেটের সাহায্যে গাড়ি কিংবা মোটরবাইকগুলো ট্র্যাক করা যায় এবং ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করাও আগের চেয়ে সহজ হয়ে যায়।
এই প্লেটগুলোতে নানা রকম দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন), ক্যামেরা এবং ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিভাইস, যাতে প্রত্যেকটি যানবাহন সনাক্ত করার পাশাপাশি ডাটাবেইজ থেকে উক্ত বাহন সম্পর্কে পুরো তথ্য একসাথে পাওয়া যায়। এই নতুন ধরনের বাইক নাম্বার প্লেটকে ইন্টেলিজেন্ট নাম্বার প্লেট কিংবা ইলেক্ট্রনিক নাম্বার প্লেট নামেও অনেকে চেনেন।
ডিজিটাল নাম্বার প্লেট একজন বাইকারকে তার বাইক নিরাপদ রাখতে এবং বিভিন্ন সময়ে বাইকের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সাহায্য করে। রাস্তার ট্র্যাফিক পরিস্থিতিতে সমস্ত যানবাহনের রিয়েল-টাইম লোকেশন জানা থাকলে ট্র্যাফিক সনাক্ত করা,পর্যবেক্ষণ করা এবং সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এই উপায়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আরো ভালোভাবে রাস্তার পরিস্থিতি সামলাতে, জ্যাম বা জটলা কমাতে ও নিরাপত্তা জোরদার করতে পারেন।
ইলেকট্রনিক নাম্বারপ্লেটে একধরণের এনক্রিপ্ট করা কোড থাকে, যাতে প্রত্যেকটি যানবাহনের জন্য একটি করে অনন্য আইডি থাকে। এই আইডির সাহায্যে ডাটাবেইজ থেকে ঐ বাহনের সমস্ত জরুরি তথ্য বের করা যায়, যেমন- রেজিস্ট্রেশনের বৃত্তান্ত, মালিকের তথ্য, এমনকি ঐ বাহনের আগের আইনভঙ্গের ইতিহাসও। তারপর এই এনক্রিপ্টেড কোডের সাথে অন্যান্য আইডির তথ্য,যেমন- লাইসেন্স প্লেট নাম্বার, ভিআইএন (ভেহিক্যল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার), কিংবা ভেরিফিকেশনের জন্য আরএফআইডি ট্যাগ ইত্যাদি। এই সব ডাটাই আসলে কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করা থাকে, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেকোনো অপরাধী বাহন সনাক্ত ও ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।
যানবাহনের নিরাপদ আইডি দেয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল নাম্বার প্লেটগুলো রাইডারদেরও অনেক রকম সুযোগ সুবিধা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন টোল বুথগুলোতে না থেমেই ডিজিটালভাবে হাইওয়ে টোল, ব্রিজ টোল ইত্যাদি পরিশোধ করা সম্ভব হবে। ইনস্যুরেন্স কার্ডের মতো বিভিন্ন কাগজী ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে রাইড করার আর প্রয়োজন হবেনা, পার্কিং ফি গুলোও অটোম্যাটিক পেমেন্ট সিস্টেমে নিয়ে আসা হবে। আর কর্তৃপক্ষরা যেকোনো ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন হওার সাথে সাথেই সেটা সনাক্ত করতে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন।
ডিজিটাল নাম্বার প্লেট আবেদনের পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার রসিদ।
- সত্যায়িত করা মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর ফটোকপি।
- ফিটনেস সার্টিফিকেটের সত্যায়িত করা ফটোকপি।
- ট্যাক্স টোকেন কাগজপত্রের সত্যায়িত করা ফটোকপি।
যেভাবে আবেদন করবেনঃ
- প্রথমে বিআরটিএ থেকে একটি ডিপোজিট স্লিপ বা এসেসমেন্ট স্লিপ সংগ্রহ করে সেটি ব্লু-বুক অনুযায়ী পূরণ করুন।
- বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ফি ও চার্জের পরিমাণ জেনে নিয়ে এসেসমেন্ট স্লিপটি সাইন ও সীল করিয়ে নিন।
- নির্ধারিত ব্যাংকে সেই টাকা জমা দিন এবং একটি চালু থাকা মোবাইল নাম্বার দিন। টাকা ডিপোজিট হওয়ার পর ব্যাংক থেকে আপনাকে ২ কপি প্রিন্ট করা টাকার রসিদ দেয়া হবে।
- টাকা জমা দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বারে নাম্বার প্লেট রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বায়োমেট্রিকস দেয়ার জন্য একটি এসএমএস পাঠানো হবে।
- এসএমএস-এ উল্লেখিত তারিখে আপনাকে বিআরটিএ অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আপনার বায়োমেট্রিকস প্রদান করুন।
- বায়োমেট্রিকস দেয়ার পর ডিজিটাল নাম্বার প্লেট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আরেকটি এসএমএস পাঠিয়ে জানাবেন।
- সাধারণত এক মাসের মধ্যেই এই এসএমএস চলে আসে। তবে যদি আপনি কোনো এসএমএস না পান, তাহলে নিজেই এসএমএস পাঠিয়ে নাম্বার প্লেট নেয়ার জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।
একজন রাইডার তার বাইকে ইলেকট্রনিক নাম্বার প্লেট লাগানোর জন্য এপয়েন্টমেন্ট নিতে চাইলে তার ফোন থেকে নিচের ফরম্যাটে এসএমএস পাঠাতে হবে-
NP<space>A<space>Date এবং পাঠিয়ে দিন 6969 নাম্বারে।
উদাহরণস্বরুপ চলতি মাসের ১৫ তারিখে এপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য এসএমএস-এ লিখুন NP A 15 এবং 6969 নাম্বারে Send করুন।
ফিরতি এসএমএস-এ ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগানোর জন্য এপয়েন্টমেন্টের তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর এসএমএস-এ উল্লেখিত দিন ও সময়ে টাকার রসিদ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ রাইডারকে অবশ্যই তার বাইক নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে।
বাইক রেজিস্ট্রেশন ও ডিজিটাল নাম্বার প্লেট লাগানোর খরচ
বাইকের সিসি এবং ওজনের উপর নির্ভর করে রেজিস্ট্রেশন ও নাম্বার প্লেটের মোট খরচ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। বেসিকভাবে যেকোনো বাইকের জন্য ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট,আরএফআইডি ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট এবং ইনস্পেকশন ফি একই থাকে। শুধুমাত্র সিসির পরিমানের উপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন ফি ভিন্ন, আর ওজনের উপর নির্ভর করে রোড ট্যাক্সের পরিমাণ ভিন্ন। নিচে এই ফি গুলোর পরিমাণ উল্লেখ করছিঃ
- রেজিস্ট্রেশন ফি – ৪২০০ টাকা (৫০-১০০ সিসি বাইক),
৫৬০০ টাকা (১০১-১৫০ সিসি বাইক)
- ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট – ৫৪০ টাকা
- আরএফআইডি ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট – ২২০০ টাকা
- ইনস্পেকশন ফি – ৪৫০ টাকা
- রোড ট্যাক্স – ৫০০০ টাকা (ওজন <৯০ কেজি)
১০০০০ টাকা (ওজন >৯০ কেজি)
এখানে উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে, সকল ফি এর উপর ১৫% ভ্যাট যুক্ত হয়ে তারপর মোট খরচের পরিমাণ বিআরটিএ অফিস থেকে জানানো হবে। তাই সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে যাওয়া উচিত।
শেষকথা
রাস্তার বিপুল পরিমাণ মোটরবাইকের কালেকশন, যানবাহন ট্র্যাক করা ও নিয়ন্ত্রণ করার এক অভিনব ও যুগান্তকারী সমাধান হচ্ছে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সিস্টেম। আপনার ভালোবাসার বাইকটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, দৈনন্দিন চলাফেরায় বাধার পরিমাণ কমানো, এবং ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন ঠেকাতে এই ইলেক্ট্রনিক নাম্বার প্লাটিং সিস্টেম হতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরো একটি সফল ধাপ। দেশ ও নিজের স্বার্থে আপনার বাইক কিংবা গাড়ির জন্য আজই ডিজিটাল নাম্বার প্লেট রেজিস্ট্রেশন করুন।
What is a digital number plate, and what does it contain?
With the bike’s number plate, all the bikes running on the road are officially registered and validated, and all important information related to the bike is officially recorded. Since the advent of digital number plates, the whole thing has been given many benefits and possibilities. With the help of these number plates, cars or motorbikes can be tracked, and traffic control becomes easier than ever.
Electronic numberplates contain an encrypted code, which provides a unique ID for each vehicle. With the help of this ID, all the necessary information about the vehicle can be extracted from the database, such as registration history, owner information, and even the previous violation history of the vehicle.
Digital Number Plate Application Procedure:
Necessary documents:
- Receipt of payment of prescribed fee.
- Attested photocopy of Motorcycle Registration Certificate.
- Attested photocopy of fitness certificate.
- Attested photocopy of tax token documents.
How to apply:
- First, collect a deposit or assessment slip from BRTA and fill it out as per the blue book.
- Sign and seal the assessment slip after knowing the fees required from the BRTA authority.
- Deposit the amount in the designated bank and provide an active mobile number. After the money is deposited, you will be given 2 copies of the printed money receipt from the bank.
- Within a few days of the deposit, an SMS will be sent to your number to provide biometrics related to number plate registration.
- Present your biometrics in person at the BRTA office on the date mentioned in the SMS.
- BRTA authorities will send another SMS about completing digital number plate registration after providing biometrics.
- Usually, this SMS comes within a month. But if you do not receive an SMS, you can make an appointment to get the number plate by sending an SMS yourself.
Cost of bike registration and installation of digital number plates:
The total cost of registration and number plate may vary depending on the CC and weight of the bike. Digital registration certificate, RFID digital numberplate, and inspection fee are the same for any bike. The registration fee differs based on the amount of CC only, and the amount of road tax differs depending on the weight. Below are the amounts of these fees:
Registration Fee – Tk 4200 (50-100 cc Bikes),
Tk 5600 (101-150 cc bikes)
Digital Registration Certificate – 540 Tk
RFID Digital Numberplate – 2200 Tk
Inspection Fee – 450 Tk
Road Tax – Tk 5000 (Weight < 90 kg)
10000 Tk (Weight >90 kg)
The point to be noted here is that 15% VAT will be added to all fees, and then the total cost will be informed by the BRTA office. So it would help if you went for registration with preparation that way.
The digital number plate system is an innovative and revolutionary solution to track and control the huge collection of motorbikes on the road. This electronic number plating system can be another successful step towards building a digital Bangladesh for your beloved bike’s maximum safety, reducing interruptions in daily movement, and preventing traffic law violations. Register a digital number plate for your bike or car for the country and yourself today.
গ্রাহকদের কিছু জিজ্ঞাসা
ডিজিটাল নাম্বার প্লেটের কীভাবে কাজ করে?
ডিজিটাল নাম্বার প্লেটে থাকা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন(আরএফআইডি) চিপ, ক্যামেরা এবং ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিভাইসের মতো বিভিন্ন দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তায় থাকা যানবাহনগুলো ট্র্যাকিং ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড কীভাবে পাবো?
আপনার লার্নার’স ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, এ দু’টির সমন্বয়ে বিআরটিএ স্মার্ট কার্ড পাওয়ার জন্য https://bsp.brta.gov.bd/ লিংকটিতে ভিজিট করুন এবং ইউজার আইডি তৈরি করে বাকি ধাপগুলো সম্পন্ন করুন।
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি কতো?
বর্তমানে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি হচ্ছে ৪১৫২ টাকা,এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি হচ্ছে ২৪২৭ টাকা।