মোটরসাইকেলের চেইন-এর যত্ন নেবেন যেভাবে
এই আর্টিকেল এমন ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে আপনি পাচ্ছেন চেইন মেইন্টেনেন্স (Chain Maintenance) এর একটি কমপ্লিট গাইড। এছাড়াও নিউ বাইকারদের জন্যে এটি একটি টিপস অ্যান্ড হ্যাক গাইড।
চেইন বাইকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যা নিশ্চিত করে যে বাইকটি কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলবে! বিশেষ করে স্পোর্টস বাইকের জন্য চেইন পরিষ্কারের কাজটি রেগুলারলি করাটা অপরিহার্য। আপনার বাইক আপনি নিজে ক্লিন করে সযত্নে রাখুন।
অন্তত প্রতি ৮00 থেকে ১,000 কিলোমিটারে একবার ওয়াশ করা বাইককে সচল রাখার একটি ভালো প্র্যাকটিস।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাইকের চেইন (Motorcycle Chain) নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যাবশ্যকীয়, যেহেতু আমাদের রাস্তা গুলতে ধুলা ও কাঁদার পরিমাণ কিছুটা বেশি।
যদিও এটি চেইন কভার সংরক্ষণ করে, তবে স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইকে এটি নেই। তাছাড়া, এই বাইকগুলো চেইন দিয়ে কভার করা থাকে তবে বিশেষভাবে চেইন কভার শুরু হয় 125cc এর বাইক গুলো থেকে।
প্রধাণত চেইন দুই ধরনের, যেমন; ও-রিং চেইন, এবং নন ও-রিং চেইন। ও-রি চেইন সংযুক্ত বাইকগুলো বিশেষভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন কারন এদের ডিউরেবিলিটি কম থাকে।
অতএব, আপনার বাইকটি যদি চেইন ড্রাইভেন হয় তবে আপনার এটির অধিক যত্ন নেওয়া উচিত অর্থাৎ নিয়মিত পরিস্কার ও যত্ন (cleaning and lubrication) সহকারে বাইক চালানো উচিৎ।
যদি আপনি স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইকের সাথে পরিচিত থাকেন তাহলে জেনে থাকবেন চেইন ড্রাইভেন বাইক নিয়মিত ওয়াশ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বাইককের স্বাভাবিক পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে হলে চেইন পরিষ্কার রাখা বাধ্যতামুলক।
স্পোর্টস বাইকে মেটালিক চেইন এর ব্যবহার অনেক বেশি কমন। কাজেই মেটালিক চেইনকে ফ্লেক্সিবল রাখতে এর রক্ষণাবেক্ষণ এর বেপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
Tools for Motorcycle Chain Maintenance
কিছু প্রয়োজনীয় টুলস জেগুলো চেইন এর কাজে টপ অফ অফ দা লিস্ট সেগুলো হলোঃ
১. (থ্রী – ওয়ে) চেইন ব্রাশ/ টুথ ব্রাশ।
২. চেইন ক্লিনার ওয়াইপ/ পুরাতন নরম কাপড়।
৩. চেইন লুব্রিকেন্ট
৪. চেইন অয়েল// চেইন ক্লিনার স্প্রেয় (motorcycle chain cleaner alternative)/ কেরাসিন
যেভাবে বাইকের চেইন পরিষ্কার করবেন
- প্রথমেই চেইনের কভার সরিয়ে নিতে হবে (যদি থাকে)। টুথব্রাশ এর সাহায্যে ভালভাবে কেরোসিন লাগিয়ে নিতে হবে যাতে চেইনের উভয় পাশে পর্যাপ্ত পরিমান কেরোসিন লাগে। রিয়ার হুইলটিকে বার বার ঘুরিয়ে কেরোসিন লাগানো সম্পূর্ণ করতে হবে।
- এবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট এর জন্যে অপেক্ষা করতে হতে যাতে করে চেইনে লেগে থাকা কাঁদা মাটি ভিজে নরম হয়ে যায়। এরপর থ্রী-ওয়ে চেইনব্রাশ এর সাহায্যে পুরো চেইনটিকে ডাস্ট ও মাড ফ্রী করে নিতে হবে।
- পুনরায় আরেকবার কেরোসিন অথবা চেইন স্প্রে বব্যবহার করে চেইনটিকে ভিজিয়ে নিতে হবে। এবার ওয়াইপ কিংবা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে সম্পূর্ণ চেইনটিকে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- বাজারে সবচেয়ে পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি চেইন স্প্রে এর নাম ডব্লিউডি৪০ (WD40). এটি ২৪০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যেই পাওয়া সম্ভব। আপাতত এটি ছাড়া বাইকের জন্যে স্পেসিফিক কোনো স্প্রে প্রচলিত নেই।
- WD40 এক ধরনের ওয়াটার সলিউশন যা খুব সহজেই চেইনে লেগে থাকা ধুলাবালিতে দ্রুত শুষে নেয় এবং দ্রুত পরিষ্কারও করে নেয়া যায়। এছাড়াও এটিতে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান নেই।
- মোটামুটি ফার্স্ট রাউন্ড ক্লিনিং এর পরেই চেইনটি লাইট ওয়েট মনে হবে। সেকেন্ড রাঊন্ড ক্লিনিং এর পরে আরো কয়েকবার রিয়ার হুইলটি মুভ করে দেখতে হবে যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় চেইন সবচেয়ে ভালভাবে ক্লিন করা সম্ভব।
লুব্রিকেট এর ব্যবহার
- বলা হয়ে থাকে, “লুব্রিকেট ইজ দা কী টু কিপ থিংস স্মুথ”। আর সেটা যদি হয় মোটরবাইক, তাহলে লুব্রিকেট এর কোনো বিকল্প নেই। সাধারনত বাংলাদেশের বাইকগুলোর চেইন কভার দেয়া থাকে যা চেইনকে পানি ও ধুলাবালি থেকে প্রটেক্ট করে।
- প্রতি ৮০০ কিঃমিঃ এ একবার লুব্রিকেট ব্যবহার করা ভালো। লুব্রিকেট ব্যবহারের পরে চেইন কভারড রাখা বাঞ্ছনীয়। কারন লুব্রিকেট চেন লিংকস (chain links) গুলা স্বভাবতই স্টিকি (আঠালো) হওয়ার কারনে ধুলাবালি কে আকর্ষণ করে। তাই চেইনকে একইসাথে স্মুথ ও ক্লিন রাখতে চেইন কভার এর কোনো বিকল্প নেই।
- তাই, বাইককে রাখুন লুবড কোনোরকম কোনো প্রকার স্কুইকস (কিচিমিচি শব্দ), স্ন্যপস (সহজেই ভাঙ্গা), ও র্যাটেলস (ঘর্ঘর শব্দ) ছাড়াই।
বাইকের চেইন পরিষ্কারে সতর্কতা
চেইনকে সচল রাখার জন্য যেমন কিছু ব্যসিক গাইডলাইন ফলো করা হয় তেমনি কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে যা চেইনের দীর্ঘস্থায়ী রক্ষায় মেনে চলতে হয়।
১. চেইন ওয়াশ এর ক্ষেত্রে কখোনোই পানি বা ডিটারজেন্ট ব্যভার করা যাবে না।
২. চেইন স্প্রে এর বদলে, মবিল কিংবা ইঞ্জিন ওয়েল, গিয়ার অয়েল, থিন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা যাবে না। পরবর্তীতে এজাতীয় পদার্থ চটচটে হয়ে জমাট বেধে যায় যা চেইন এর মভিং মেটাল গুলোর জন্য অত্যাধিক ক্ষতিকারক।
৩. চাকায় পেপার মুড়িয়ে নিলে চেইনে এ স্প্রে করার সময় চাকার কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না।
৪. বলা বাহুল্য যে, কেরোসিন শুধুমাত্র পূর্বে ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট রিমুভ করার জন্যেই উপযোগী। তাছাড়া ডাস্ট অ্যান্ড মাড ক্লিনিং এর জন্যে স্প্রে ই রাইট চয়েস।
৫. ইঞ্জিন চালিত অবস্থায় কোনোভাবেই চেইন ক্লিন করা যাবে না।
৬. বর্ষাকালে ফ্রেকুয়েন্টলি চেইন ক্লিন করা অত্যাবশ্যকীয়।
পরিশেষে বলা যায়, বাইকের চেইন ভালো রাখার জন্য একজন বাইকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। চেইনের স্থায়িত্ত যতটা এর মেইন্টেনেন্স এর উপর নিরভরশীল ততটাই নির্ভরশীল বাইকার কিভাবে চেইনকে পারফর্ম করাচ্ছে বাইক চালানোর সময়।
উল্লেখিত, প্রত্যেকটি নিয়মাবলী ও সতর্কবাণী যে কোনো শ্রেণীর বাইকারদের (বিগিনার টু প্রো) কাজে আসবে বলেই প্রত্যাশা করা যাচ্ছে।
FAQ
১. Motorcycle chain wax vs lube কোনটা বেস্ট?
লুব খুব তাড়াতাড়ি আপনার চেইন লুব্রিকেট করতে পারে কিন্তু ওয়াক্স দিয়ে লুব্রিকেট করলে অনেক দিন যাই। তাই আপনার ব্যবহার উপর নির্ভর করে কোনটা বেস্ট।
২. Motorcycle chain cleaner alternative কি কি?
মোটরসাইকেলচেইন ক্লিনিং অল্টারনেটিভ হচ্ছে কেরোসিন।
৩. Motorcycle Chain Service এর ইন্টারভ্যাল কত কিলোমিটার পরপর ?
চেইন সার্ভিস ইন্টারভ্যাল ৮০০ থেকে ১৫০০ কিলোমিটার পরপর করা উচিত।
৪. How to tell if motorcycle chain needs lube?
চেইন থেকে আওয়াজ আসবে এবং ভাইব্রেশন বেড়ে যাবে।
৫.মোটরসাইকেল এর চেইন কি কেরোসিন দিয়ে ওয়াশ করা যাবে (cleaning motorcycle chain with kerosene) ?
জি কেরোসিন দিয়ে আপনার চেন ওয়াশ করা যাবে।