রাস্তায় আর নামবে না বীমা ছাড়া মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন

21 May, 2023   
রাস্তায় আর নামবে না বীমা ছাড়া মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই নিউজে আমরা পাচ্ছি কোনো না কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর। আর দুর্ঘটনা মানেই যেন হতাহতের পাশাপাশি নানান রকম আর্থিক ক্ষতি। যানবাহনের আর্থিক ক্ষতিও এর বাহিরে নয়। দুর্ঘটনার কারণে এমন ক্ষয় ক্ষতি থেকে আর্থিক সুবিধা পেতেই প্রয়োজন যানবাহন বীমা। আর আপনি যদি একজন বাইকার হয়ে থাকেন তবে বাইক বীমা করিয়ে রাখা হতে পারে আপনার জন্য একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। কেননা বাইক বীমা করা থাকলে, কোনো কারণে বাইক বা মোটর সাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে থাকবে ক্ষতিপূরণ পাবার নিশ্চয়তা। 

একসময় মোটরসাইকেল, গাড়ি, বাস, ট্রাকসহ সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের বীমা করা বাধ্যতামূলক থাকলেও, ২০১৮ সালে আইনটি তুলে নেওয়া হয়। যদিও বিশ্বের কোনো দেশে যানবাহন বীমা ছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচলের নজির নেই, এরপরও ২০১৮ সালে পরিবহন মালিকদের প্রভাবে এই যানবাহনের বীমা শিথিল করা হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে প্রায় ৫৬ লাখ ৬১ হাজারের বেশি যানবাহন থাকলেও, যানবাহন বীমা করা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এসব গাড়ি থেকে প্রতিবছর ৮৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত থাকছে সরকার। (প্রথম আলো) 

তবে এই বছর পহেলা মার্চ জাতীয় বীমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যানবাহন বীমা ছাড়া কোনো গাড়ি যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আবারও দেশে বাইকসহ সকল যানবাহন বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যানবাহনের বীমা না থাকলে মালিককে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি আইন অমান্য করার কারণে মামলা দেওয়ারও এখতিয়ার রাখে ট্রাফিক পুলিশ, এমনটিই জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।  

যা যা আছে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে – 

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ যানবাহন বীমা নিয়ে চারটি উপধারা আছে।

উপধারা- ১: কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার মালিকানাধীন যেকোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট করা, তাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবে।

উপধারা- ২: মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান তাদের অধীনে পরিচালিত যানবাহনের বীমা করবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকবে এবং বীমাকারীর মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবে।

উপধারা- ৩: মোটরযান দুর্ঘটনায় পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নষ্ট হলে সেটির জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না।

উপধারা- ৪: বীমার শর্ত, বীমার দায়-দায়িত্বের সীমা, বীমার দেউলিয়াত্ব, বীমা-দাবি পরিশোধ, বিরোধ-নিষ্পত্তি, বীমা সনদের কার্যকারিতা ও তা হস্তান্তর এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

কী থাকবে সংশোধিত আইনে –

পূর্বের সড়ক পরিবহন আইন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উপধারা ৬০(১) তে যাত্রীদের জন্য যানবাহন বীমা ঐচ্ছিক করা হয়েছে। পাশাপাশি উপধারা ৬০(২) এ যানবাহনের বীমা করার কথা উল্লেখ থাকলেও বীমা না করলেও নেই কোনো শাস্তির ব্যবস্থা। 

ফলে উক্ত উপধারাগুলোতে কিছু সংশোধন এবং সংযোজনের উদ্দেশ্যে বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডলকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংযোজনকৃত সম্ভাব্য উপধারাটি হবে- ‘যদি কোনো ব্যক্তি ৬০(২) ধারার বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এই অপরাধের জন্য তিনি অনধিক তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

কৃতজ্ঞতা- (প্রথম আলো) 

কিভাবে করবেন বাইক বীমা?

বাইক বীমা করার জন্য আপনি দেশের যেকোন বীমা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, যারা টু-হুইলার যানবাহনের বীমা সুবিধা প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন বীমা কোম্পানির নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করে আপনার বাইকের জন্য পছন্দ মতো বীমা পলিসি কিনে নিতে পারেন। যানবাহন বীমা করার জন্য বীমা অফিস থেকে দেওয়া তথ্য ফরম পূরণের পর প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিলেই মোটরসাইকেলের বীমা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যায়। এছাড়া আপনি চাইলে অনলাইনেও বাইক বীমা করাতে পারেন। 

অনলাইনে বাইক বীমা করার নিয়ম

বেশ সহজেই ঘরে বসে অনলাইনে বাইক বীমা করতে পারবেন। এজন্য যানবাহন বীমা কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে তাদের চাওয়া সকল তথ্য পূরণ করতে হবে এবং আপনার পছন্দ মতো পলিসি বেছে নিতে পারবেন। বীমা কোম্পানি তাদের একজন প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে আপনার বাইকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে এবং সকল তথ্য নিশ্চিত করে নিবে। 

সকল তথ্য ঠিক থাকলে পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যেই বীমা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র আপনি কুরিয়ারে পেয়ে যাবেন। 

মোটরসাইকেলের বীমা করতে কী কী লাগে?

মোটরসাইকেলের বীমা করতে আপনার যা যা লাগবে – 

  • বাইকের কাগজ
  • বাইক মালিকের সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
  • বাইকের ব্লুবুক
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • বাইক ক্রয়ের রশিদ

যানবাহন বীমা করার সুবিধা

  • যানবাহন বা বাইক চুরি হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা প্রতিস্থাপন বা ঠিক করাতে আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
  • আইনি জটিলতা থেকে সহজে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
  • দুর্ঘটনায় বাইক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমা কোম্পানি থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।

যেহেতু দেশে এখন যানবাহনের বীমা করা বাধ্যতামূলক, তাই দেরি না করে দ্রুত আপনার মোটরসাইকেল বীমা সম্পন্ন করে ফেলুন।

২০২৩ সালে মোটরবাইকের বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন বাইকস গাইড সাইটে।

 

Similar News


Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.