কেন ইলেকট্রিক বাইক কিনবেন ?

29 Mar, 2023   
কেন ইলেকট্রিক বাইক কিনবেন ?

জ্বালানি অফুরন্ত নয়। জ্বালানির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতিকে সাবলম্বী হতে দেয় না। জ্বালানির উপর থেকে চাপ কমাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশে জ্বালানির পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈদুত্যিক চালিত যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বৈদুত্যিক চালিত বাহন আরো উন্নত করতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।

সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার হচ্ছে, এসব আবিষ্কার আমাদের জীবনকে আরো কমফোর্ট করছে। জ্বালানির এই অস্থিরতার সময়ে ইলেকট্রিক বাহনের প্রয়োজনীয়তা সকল ক্ষেত্রে অনুভব হচ্ছে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ইলেক্ট্রিক বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

বাইক সহ বিভিন্ন যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ডিজেল, অক্টেন এবং পেট্রল ব্যবহার করা হয়। এগুলো পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই জ্বালানি নির্গত ধোঁয়া পৃথিবীর ওজোনস্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে, বাতাসে কার্বন মনোঅক্সিডের পরিমান বাড়ছে। এতে অতিবেগুনি রশ্নি পৃথিবীতে আসছে, তাই পৃথিবীতে গরম বাড়ছে। তাই জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার কমাতে হবে, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

বর্তমানে জ্বালানি চালিত বাইক গুলো অনেক জনপ্রিয়, এর মধ্যেই ই-বাইককের প্রতিও মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। মূলত জ্বালানির খরচ বেঁচে যাওয়া, সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব, স্বল্প দূরত্বের জন্য ভালো বাহন, এই সুবিধাগুলো জন্য ই-বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে ইলেকট্রিক বাইকের চাহিদা বাড়ছে। ইলেকট্রিক বাইকের দাম বেশ কম, পরিবেশ বান্ধব, তাই ভবিষ্যতে এই ধরণের বাইকের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।

মোটরসাইকেল আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগযোগের মাধ্যম। এটি আমাদের জীবন-যাপনকে সহজ করেছে। ভবিষ্যতের জ্বালানি সাশ্রয়ে, পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রাখতে, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল আমাদের একটি আদর্শ বাহন হতে পারে। যোগাযোগ, ঘরের কাজে, কর্ম ক্ষেত্রে, প্রায় সকল প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। উন্নত দেশ গুলোতে বৈদুত্যিক বাহন অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গুলো এধরণের মোটরসাইকেল এবং গাড়ি তৈরী এবং বাজারজাত করছে। আসা করা যায় আমাদের দেশেও ই-বাইক উৎপাদন এবং বাজারজাত বাড়বে।

ইলেকট্রিক বাইক কি?

মোটরসাইকেল এবং ই-বাইকের মধ্যে মূল পার্থক্য হল, মোটরবাইক জ্বালানি তেলে চলে, ই-বাইক বিদ্যুতে চলে। এই বাইকে রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকে, এই ব্যাটারির সাথে ইলেকট্রিক মোটর সেট করা থাকে। ব্যাটারি বিদ্যুতে চার্জ করার পর, মোটর স্টার্ট দিলে, ব্যাটারি মোটরের ভিতরের ইঞ্জিনে শক্তি দেয়। আর মোটর বাইক জ্বালানি বা গ্যাসোলিন পুড়িয়ে ইঞ্জিনে এই শক্তি উৎপন্ন কর।

ই-বাইকে কোনো জ্বালানি লাগে না। আপনি শুধু বাইকটি চার্জ দেবেন, সম্পূর্ণ চার্জ হতে মোটামুটি ৮ ঘন্টার মতো লাগে। এধরণের একটি সাধারণ মোটরসাইকেল এক চার্জে ৭০-৮০ কিমি যায়। ভারী বাইক গুলো সাধারণত ৫০-৬০ কিমি যায়। কাজেই বুঝতে পারছেন, স্বল্প দূরত্বের জন্যে এসব বাইক খুবই সাশ্রয়ী। আমাদের দেশের শহর অঞ্চলের মানুষজন, এবং কর্মজীবীদের স্বল্প দূরত্বে দ্রুত যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। তাদের জন্যে এসব বাইক অনেক ভালো হবে। বাংলাদেশে ইলেকট্রিক বাইকের দামও হাতের নাগালে।

কেন ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল কিনবেন?

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ই-বাইকের বাজারের সম্ভবনা অনেক। দেশের অনেক কর্মজীবী নারী-পুরুষ রয়েছে। যানজটে তাদের বিপুল কর্ম ঘন্টা নষ্ট হয়। স্বল্প দূরত্বে, যানজট এড়িয়ে, যানবাহন খরচ বাঁচিয়ে তারা এই এধরণের মোটরসাইকেল গুলো কমিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই এই বাইক রেগুলার কমিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ইলেকট্রিক বাইকের দাম এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ সবার সাধ্যের মধ্যে। বাইকগুলো সাধারণ প্রতিদিন ৪০-৫০ কিমি রাইডের জন্য ভালো, তাহলে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবে। এগুলো সাধারণত এক চার্জে ৬০-৮০ কিমি পথ অনায়াসে যায়।

দেশে যত বাইক আছে তার বেশির ভাগ ৫০সিসি থেকে ১১০ সিসি পর্যন্ত। এগুলোর প্রায় সব গুলোই কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, অর্থাৎ কমিউটার বাইক। আমাদের বেশি ভাগ বাইকাররা বাইক চালানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখি। যেহেতু ইলেকট্রিক বাইক বেশ কম খরচের, তাই সবাই আমরা দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বিবেচনায় রাখতে পারি। এই বাইক গুলো স্বাভাবিক রাস্তায় চলার উপযোগী, ভালো রক্ষনাবেক্ষন করলে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবে।

তবে অবশই মনে রাখবেন এই বাইকগুলো দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য উপযোগী নয়। হাইওয়ে রাস্তার জন্যেও উপযোগী নয়। স্বল্প দূরত্বের জন্য অনেক লাভজনক। বিশেষ করে যারা অল্প দুরুত্বে, দ্রুত কাজের জন্যে বের হন তাদের জন্য এ বাইকগুলো হতে পারে আদর্শ বাহন।

এখন সব উন্নত দেশ জ্বালানি বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি যোগান দেবার চেষ্টা করছে। নতুন নতুন এনার্জি সোর্স আবিষ্কার হচ্ছে বা উন্নত হচ্ছে। ইলেকট্রিক শক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার এসবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জ্বালানি তেল, যেমন, পেট্রল, ডিজেল, অক্টেনের বহুল ব্যবহার কার্বন নিঃসরণ অত্যাধিক পরিমানে বাড়াচ্ছে। এতে ওজোনস্তর ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় এধরণের মোটরসাইকেল ব্যবহার পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী।

রেলওয়ে, গাড়ি, বাস ইলেকট্রিক পাওয়ারে চলছে। ইলেক্ট্রিক যানবাহন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। জ্বালানির বিকল্প হিসেবে, ইলেকট্রিক মোটরের ব্যবহার বাড়ছে। জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেল বাজার ধরে ফেলছে, অত্যাধুনিক মোটরসাইকেল বাজারে আসছে। বাংলাদেশের ই-মোটরসাইকেলের বাজার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও, কিছু কিছু কারণে ই-মোটরসাইকেল এখনো আমাদের দেশে সহজলোভ্য নয়।

এখন আমরা আলোচনা করবো ইলেকট্রিক বাইকের কিছু আকর্ষণীয় দিক নিয়ে, যা আপনাদের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল কিনতে উদ্বুদ্ধ করবে।

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ব্যবহারের কিছু উপকারী দিক

(১) জ্বালানি তেলে চালিত বাইকের জ্বালানি খরচ বিবেচনায়, ই-বাইকের জ্বালানি খরচ নেই বললেই চলে। এই বাইকে আপনাকে হিসেবে করে ফুয়েল ভরতে হবে না। এখানে আপনাকে শুধু বিদ্যুতের চার্জটাই বহন করতে হবে। এই বিদ্যুতের খরচ আপনি কমাতে পারেন যদি, সোলার প্যানেল দিয়ে চার্জ করতে পারেন, তাহলে আপনার গ্রিডের লাইন থেকে বিদ্যুৎ নেবার প্রয়োজন হবে না।

(২) ইলেক্ট্রিক বাইকের সবচে বড় উপকারিতা হল, এটি পরিবেশ বান্ধব। এই বাইক জ্বালানি পোড়ায় না, তাই কোনো ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না, তাই পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না। এই বাইকের হর্নের ডেসিবেলও অনেক কম, তাই শব্দ দূষণ করে না। কন্ট্রোল করা সুবিধাজনক তাই এই বাইক চালানো খুবই নিরাপদ।

(৩) ই-বাইকের মেইনটেন্যান্স খুব সহজ। রক্ষনাবেক্ষন খরচ খুব কম। ২ থেকে ৩ বছর পর পর ব্যাটারি চেঞ্জ করতে হয়। ঠিক মতো চার্জ করলে, নির্দেশিকা অনুযায়ী বাইক চালালে, দীর্ঘদিন পর পর সার্ভিসিং করা লাগে। অন্যান্য পার্টস সহজেই পাওয়া যায়, দামও নাগালের মধ্যেই থাকে।

(৪) জ্বালানি চালিত বাইকের মেরামত বা সার্ভিসিং খরচ অনেক বেশি। এবং নিয়মিত এটি করা লাগে। ই-বাইকের সাধারণ সার্ভিসিং আপনি নিজেই করতে পারবেন। বড় কোনো ত্রুটি বা ক্ষতি হলে আপনাকে সার্ভিসিংয়ে যেতে হবে। আপনাকে শুধু খেয়াল রাখতে হবে বাইকের ব্রেক ঠিক মতো কাজ করছে কিনা, প্যাড এবং টায়ার ঠিকঠাক আছে কিনা।

(৫) ই-বাইক কন্ট্রোল করা খুব সহজ। এই বাইকে গিয়ার পরিবর্তনের দরকার নেই, ক্লাস ধরে রাখা নিয়ে চিন্তা নেই, তেল-মবিল চেক করার প্রয়োজন নেই, আপনি শুধু ব্রেক দিয়েই বাইক কন্ট্রোল করতে পারবেন। তাই মহিলা, বয়স্ক চালকরা এই বাইক অনায়াসে হ্যান্ডেল করতে পারবেন। এই বাইক চালানো সহজ এবং নিরাপদ।

(৬) একটি স্ট্যান্ডার্ড ই-বাইকের মূল্য, মিড্ রেঞ্জের জ্বালানি চালিত বাইকের চেয়ে কম। তবে এখন বেশ উন্নত মানের বাইক উৎপাদন এবং আমদানি হচ্ছে। তাই কোয়ালিটি বিবেচনায় দামও সামঞ্জস্য পূর্ণ । ই-বাইকের পার্টস কম, তাই রেগুলার বাইকের চেয়ে দাম বেশি হয় না। এই ব্লগের শেষ অংশে আপনাদের ইলেকট্রিক বাইকের দাম সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। 

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ব্যবহারের কিছু অসুবিধা

(১) বাংলাদেশে ই-বাইক খুব একটা চোখে না পরার কারণ হলো, এই বাইক গুলোর বি আর টি কর্তৃক অনুমোদন না থাকা। অনুমোদন না থাকার কারণে, ভালো মানের বাইক গুলো আমদানি হয় না। ৫০ সিসির কিছু ই-বাইক রাস্তায় দেখা যায়, কারণ ওগুলোর লাইসেন্স লাগে না। এই সব বাইকের অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার না থাকা, ভালো মানের স্পেয়ার পার্টস না থাকায়, মানুষের কাছে এই বাইক গুলোর গ্রহণযোগ্যতা এখনো কম। মূল কথা এই সব বাইকের এখনো হাইওয়ে রোডে চলার অনুমতি নেই।

(২) ই-বাইক সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের দেশে এখনো ঠিক মতো জনপ্রিয় না হবার কারণ হল, দেশে যে ই-বাইক পাওয়া যায়, সেগুলো সাইকেলের মতো অথবা হালকা স্কুটারের মতো। এগুলোকে প্রপারলি ইলেকট্রিক বাইক বলা যায় না। তাই যে সব ই-বাইক আছে, সেগুলো বাইকারদের পছন্দের না। ভালো মানের স্ট্যান্ডার্ড ই-মোটরসাইকেল এসেম্বল বা আমদানি করলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরী হবে।

(৩) এধরণের মোটরসাইকেল রেগুলার চার্জ দিতে হয়। এবং চার্জ দেবার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়। এসব বাইক প্রপারলি চার্জ করার মতো বুথ বা পোর্ট আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এ জন্য ইলেক্টিসিটি খরচও বেশি হয়। ঠিক মতো মোটর চার্জ না হলে প্রপার মাইলেজ পাবেন না। ব্যাটারির কন্ডিশনও খারাপ হতে থাকবে। বাইক পুরোনো হলে এই সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

(৪) স্ট্যান্ডার্ড মানের বাইক না হলে, এবং ঠিক মতো মেইনটেন্যান্স না করা হলে, ২-৩ বছর পর পর বাইকের ব্যাটারি চেঞ্জ করতে হয়। এতে বেশ কিছু খরচ হয়ে যায়। আর দেশের বাজারে যে ব্যাটারি পাওয়া যায় তা নিম্ন মানের। ইলেকট্রিক বাইকের অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার নাই বলেই এই অবস্থা। বাইকাররা এসব চিন্তা করে ই-মোটরসাইকেল প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

(৫) ই-বাইকের চার্জ লিমিটেশন আছে, তাই ৬০-৮০ কিমি, স্ট্যান্ডার্ড বাইক হলে ১০০ কিমি, এর বেশি আপনি যেতে পারবেন না। জ্বালানি চালিত বাইকে আপনি ফুয়েল রিচার্জ করেই স্টার্ট করতে পারবেন, কিন্তু এই সব বাইকে আপনার ফুল চার্জ নিশ্চিত করতে হবে।

(৬) এধরণের মোটরসাইকেলের জনপ্রিয় না হবার আর একটি করুন হল, এর গতির অভাব। হাইওয়ে রোডে চলার জন্য এই বাইক উপযুক্ত নয়। আপনি সিটি রাইডের জন্য এই বাইক ব্যবহার করতে পারেন।

(৭) ইলেকট্রিক বাইকের রি-সেল ভ্যালু নেই বললেই চলে। এটাও জনপ্রিয় না হবার আরো একটি কারণ।

তবে সব দিক বিবেচনায়, যেমন, ইলেকট্রিক বাইকের দাম, খরচ সাশ্রয়ী, নিরাপদ, সহজে চালানো যায়, যানজট পূর্ণ এলাকায় কমুনিকেশনের উপযোগী, এসব চিন্তা করলে ই-বাইক ব্যবহার অনেক উপকারী। সচেতন নাগরিক হিসেবে, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ই-বাইক সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। দিন শেষে ফুয়েল রিসোর্স বাঁচানোর জন্য ইলেকট্রিক বা অন্য পাওয়ারের বাইক বা যানবাহনের দিকে আমাদের যেতেই হবে।

ই-মোটরসাইকেল চালানো সহজ, যোগাযোগ সহজ করে, পরিবেশ বান্ধব, খরচ সাশ্রয়ী, তারপরেও কিছু কিছু জিনিস এই বাইক আমাদের দিতে পারে না। গতি কম, লং রাইড করা যায় না, মূলত এই দুটিই প্রধান কারণ। জাৰ্মারী এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে উন্নত মানের ই-বাইক পাওয়া যায়। ফুয়েল রিসোর্স সেভ করতে আমাদের দেশের মানুষদের ইলেকট্রিক বাহনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। ইলেকট্রিক বাইকের অনুমোদন এবং সার্ভিসিং সেন্টার না করলে, এই সেক্টর কখনই আগাবে না।

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স

বাংলাদেশে এসব বাইকের জন্য লাইসেন্স করা লাগে না। কারণ যে সব বাইক রাস্তায় চলে সেগুলো সাধারণত ৫০-৭৫ সিসি লিমিটের। কম সিসি লিমিটের বাইকের লাইসেন্স বাদ্ধবাধকতা নেই। আর আমাদের দেশে এসব বাইকের হাইয়ার সিসির অনুমোদন নেই। তাই রেজিস্ট্রেশন নিয়েও কোনো চিন্তা নেই। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন বড় কোম্পানি ভালো মানের ই-বাইক বাজারে এনেছে। যেমন, হোন্ডা, ইয়ামহা, ওলা, বাজাজ, ওকিনাওয়া সহ বিভিন্ন কোম্পানি বাজার দখল করছে, এবং জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব বাইক এক চার্জে ১০০ কিমির বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। আমাদের দেশে এসব বাইকের অনুমোদন পেলে নিশ্চই রেজিস্ট্রেশন , ইন্সুরেন্স এবং লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের দাম

বাংলাদেশে বাইকের দাম সব সময় সমান থাকে না। বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাড়া-কমার উপর এর দাম নির্ভর করে। বাংলাদেশে চাহিদা ও উৎপাদন কম হবার কারণে এই বাইক অনেকটা আমদানি নির্ভর। তুলনামূলক বেশি বিক্রিত কিছু বাংলাদেশে বাইকের দাম (অগাস্ট -২০২২) উল্লেখ করা হলো-

বাইক নাম সিসি মাইলেজ এবং স্পিড দাম
Bir Magnum (বীর ম্যাগনাম) ইলেকট্রিক ৮০/৪০ ৳৭৩,৫০০
Akij Durdanto (আকিজ দুর্দান্ত) ইলেকট্রিক ৭০/৬০ ৳১১০,০০০
Akij Ponkhiraj (আকিজ পনখিরাজ ইলেকট্রিক ৬৫/৪০ ৳৮০,০০০
kij Durjoy (আকিজ দুর্জয়) ইলেকট্রিক ৭০/৫০ ৳৮৫,০০০
Runner eWave Eco (রানার ইওয়েভ ইকো) ইলেকট্রিক ৬০/৬০ ৳৭১,০০০
GreenTiger GT-5 (গ্রিনটাইগার জিটি -৫) ইলেকট্রিক ৭০/৪৫ ৳৬৭,৫০০
Motrac M2 Electric Bike (মোট্রাক এম২ ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৬০/৬০ ৳৮৫,০০০
Exploit Babui Electric Bike (এক্সপ্লইট বাবুই ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৫৫/৫০ ৳৬৮,০০০
Exploit Moyna Electric Bike (এক্সপ্লইট ময়না ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৬৫/৬০ ৳৭০,০০০

Note: The mentioned price information may not be 100% accurate. We collect information from manufacturer websites and other reputed sources. Please inform us if you have found any mistakes or wrong information.

জ্বালানি অফুরন্ত নয়। জ্বালানির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতিকে সাবলম্বী হতে দেয় না। জ্বালানির উপর থেকে চাপ কমাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশে জ্বালানির পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈদুত্যিক চালিত যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বৈদুত্যিক চালিত বাহন আরো উন্নত করতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।

সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার হচ্ছে, এসব আবিষ্কার আমাদের জীবনকে আরো কমফোর্ট করছে। জ্বালানির এই অস্থিরতার সময়ে ইলেকট্রিক বাহনের প্রয়োজনীয়তা সকল ক্ষেত্রে অনুভব হচ্ছে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ইলেক্ট্রিক বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

বাইক সহ বিভিন্ন যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ডিজেল, অক্টেন এবং পেট্রল ব্যবহার করা হয়। এগুলো পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই জ্বালানি নির্গত ধোঁয়া পৃথিবীর ওজোনস্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে, বাতাসে কার্বন মনোঅক্সিডের পরিমান বাড়ছে। এতে অতিবেগুনি রশ্নি পৃথিবীতে আসছে, তাই পৃথিবীতে গরম বাড়ছে। তাই জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার কমাতে হবে, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। 

বর্তমানে জ্বালানি চালিত বাইক গুলো অনেক জনপ্রিয়, এর মধ্যেই ই-বাইককের প্রতিও মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। মূলত জ্বালানির খরচ বেঁচে যাওয়া, সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব, স্বল্প দূরত্বের জন্য ভালো বাহন, এই সুবিধাগুলো জন্য ই-বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দেশে ইলেকট্রিক বাইকের চাহিদা বাড়ছে। ইলেকট্রিক বাইকের দাম বেশ কম, পরিবেশ বান্ধব, তাই ভবিষ্যতে এই ধরণের বাইকের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।

মোটরসাইকেল আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগযোগের মাধ্যম। এটি আমাদের জীবন-যাপনকে সহজ করেছে। ভবিষ্যতের জ্বালানি সাশ্রয়ে, পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রাখতে, ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল আমাদের একটি আদর্শ বাহন হতে পারে। যোগাযোগ, ঘরের কাজে, কর্ম ক্ষেত্রে, প্রায় সকল প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। উন্নত দেশ গুলোতে বৈদুত্যিক বাহন অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গুলো এধরণের মোটরসাইকেল এবং গাড়ি তৈরী এবং বাজারজাত করছে। আসা করা যায় আমাদের দেশেও ই-বাইক উৎপাদন এবং বাজারজাত বাড়বে।

ইলেকট্রিক বাইক কি?

মোটরসাইকেল এবং ই-বাইকের মধ্যে মূল পার্থক্য হল, মোটরবাইক জ্বালানি তেলে চলে, ই-বাইক বিদ্যুতে চলে। এই বাইকে রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকে, এই ব্যাটারির সাথে ইলেকট্রিক মোটর সেট করা থাকে। ব্যাটারি বিদ্যুতে চার্জ করার পর, মোটর স্টার্ট দিলে, ব্যাটারি মোটরের ভিতরের ইঞ্জিনে শক্তি দেয়। আর মোটর বাইক জ্বালানি বা গ্যাসোলিন পুড়িয়ে ইঞ্জিনে এই শক্তি উৎপন্ন কর।

ই-বাইকে কোনো জ্বালানি লাগে না। আপনি শুধু বাইকটি চার্জ দেবেন, সম্পূর্ণ চার্জ হতে মোটামুটি ৮ ঘন্টার মতো লাগে। এধরণের একটি সাধারণ মোটরসাইকেল এক চার্জে ৭০-৮০ কিমি যায়। ভারী বাইক গুলো সাধারণত ৫০-৬০ কিমি যায়। কাজেই বুঝতে পারছেন, স্বল্প দূরত্বের জন্যে এসব বাইক খুবই সাশ্রয়ী। আমাদের দেশের শহর অঞ্চলের মানুষজন, এবং কর্মজীবীদের স্বল্প দূরত্বে দ্রুত যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। তাদের জন্যে এসব বাইক অনেক ভালো হবে। বাংলাদেশে ইলেকট্রিক বাইকের দামও হাতের নাগালে।

কেন ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল কিনবেন?

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ই-বাইকের বাজারের সম্ভবনা অনেক। দেশের অনেক কর্মজীবী নারী-পুরুষ রয়েছে। যানজটে তাদের বিপুল কর্ম ঘন্টা নষ্ট হয়। স্বল্প দূরত্বে, যানজট এড়িয়ে, যানবাহন খরচ বাঁচিয়ে তারা এই এধরণের মোটরসাইকেল গুলো কমিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই এই বাইক রেগুলার কমিউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ইলেকট্রিক বাইকের দাম এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ সবার সাধ্যের মধ্যে। বাইকগুলো সাধারণ প্রতিদিন ৪০-৫০ কিমি রাইডের জন্য ভালো, তাহলে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবে। এগুলো সাধারণত এক চার্জে ৬০-৮০ কিমি পথ অনায়াসে যায়।

দেশে যত বাইক আছে তার বেশির ভাগ ৫০সিসি থেকে ১১০ সিসি পর্যন্ত। এগুলোর প্রায় সব গুলোই কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, অর্থাৎ কমিউটার বাইক। আমাদের বেশি ভাগ বাইকাররা বাইক চালানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখি। যেহেতু ইলেকট্রিক বাইক বেশ কম খরচের, তাই সবাই আমরা দৈনন্দিন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বিবেচনায় রাখতে পারি। এই বাইক গুলো স্বাভাবিক রাস্তায় চলার উপযোগী, ভালো রক্ষনাবেক্ষন করলে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেবে।

তবে অবশই মনে রাখবেন এই বাইকগুলো দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য উপযোগী নয়। হাইওয়ে রাস্তার জন্যেও উপযোগী নয়। স্বল্প দূরত্বের জন্য অনেক লাভজনক। বিশেষ করে যারা অল্প দুরুত্বে, দ্রুত কাজের জন্যে বের হন তাদের জন্য এ বাইকগুলো হতে পারে আদর্শ বাহন।

এখন সব উন্নত দেশ জ্বালানি বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি যোগান দেবার চেষ্টা করছে। নতুন নতুন এনার্জি সোর্স আবিষ্কার হচ্ছে বা উন্নত হচ্ছে। ইলেকট্রিক শক্তির বহুমাত্রিক ব্যবহার এসবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জ্বালানি তেল, যেমন, পেট্রল, ডিজেল, অক্টেনের বহুল ব্যবহার কার্বন নিঃসরণ অত্যাধিক পরিমানে বাড়াচ্ছে। এতে ওজোনস্তর ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় এধরণের মোটরসাইকেল ব্যবহার পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী।

রেলওয়ে, গাড়ি, বাস ইলেকট্রিক পাওয়ারে চলছে। ইলেক্ট্রিক যানবাহন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। জ্বালানির বিকল্প হিসেবে, ইলেকট্রিক মোটরের ব্যবহার বাড়ছে। জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে ইলেক্ট্রিক মোটরসাইকেল বাজার ধরে ফেলছে, অত্যাধুনিক মোটরসাইকেল বাজারে আসছে। বাংলাদেশের ই-মোটরসাইকেলের বাজার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও, কিছু কিছু কারণে ই-মোটরসাইকেল এখনো আমাদের দেশে সহজলোভ্য নয়।

এখন আমরা আলোচনা করবো ইলেকট্রিক বাইকের কিছু আকর্ষণীয় দিক নিয়ে, যা আপনাদের ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল কিনতে উদ্বুদ্ধ করবে।

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ব্যবহারের কিছু উপকারী দিক

(১) জ্বালানি তেলে চালিত বাইকের জ্বালানি খরচ বিবেচনায়, ই-বাইকের জ্বালানি খরচ নেই বললেই চলে। এই বাইকে আপনাকে হিসেবে করে ফুয়েল ভরতে হবে না। এখানে আপনাকে শুধু বিদ্যুতের চার্জটাই বহন করতে হবে। এই বিদ্যুতের খরচ আপনি কমাতে পারেন যদি, সোলার প্যানেল দিয়ে চার্জ করতে পারেন, তাহলে আপনার গ্রিডের লাইন থেকে বিদ্যুৎ নেবার প্রয়োজন হবে না।

(২) ইলেক্ট্রিক বাইকের সবচে বড় উপকারিতা হল, এটি পরিবেশ বান্ধব। এই বাইক জ্বালানি পোড়ায় না, তাই কোনো ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না, তাই পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না। এই বাইকের হর্নের ডেসিবেলও অনেক কম, তাই শব্দ দূষণ করে না। কন্ট্রোল করা সুবিধাজনক তাই এই বাইক চালানো খুবই নিরাপদ।

(৩) ই-বাইকের মেইনটেন্যান্স খুব সহজ। রক্ষনাবেক্ষন খরচ খুব কম। ২ থেকে ৩ বছর পর পর ব্যাটারি চেঞ্জ করতে হয়। ঠিক মতো চার্জ করলে, নির্দেশিকা অনুযায়ী বাইক চালালে, দীর্ঘদিন পর পর সার্ভিসিং করা লাগে। অন্যান্য পার্টস সহজেই পাওয়া যায়, দামও নাগালের মধ্যেই থাকে।

(৪) জ্বালানি চালিত বাইকের মেরামত বা সার্ভিসিং খরচ অনেক বেশি। এবং নিয়মিত এটি করা লাগে। ই-বাইকের সাধারণ সার্ভিসিং আপনি নিজেই করতে পারবেন। বড় কোনো ত্রুটি বা ক্ষতি হলে আপনাকে সার্ভিসিংয়ে যেতে হবে। আপনাকে শুধু খেয়াল রাখতে হবে বাইকের ব্রেক ঠিক মতো কাজ করছে কিনা, প্যাড এবং টায়ার ঠিকঠাক আছে কিনা।

(৫) ই-বাইক কন্ট্রোল করা খুব সহজ। এই বাইকে গিয়ার পরিবর্তনের দরকার নেই, ক্লাস ধরে রাখা নিয়ে চিন্তা নেই, তেল-মবিল চেক করার প্রয়োজন নেই, আপনি শুধু ব্রেক দিয়েই বাইক কন্ট্রোল করতে পারবেন। তাই মহিলা, বয়স্ক চালকরা এই বাইক অনায়াসে হ্যান্ডেল করতে পারবেন। এই বাইক চালানো সহজ এবং নিরাপদ।

(৬) একটি স্ট্যান্ডার্ড ই-বাইকের মূল্য, মিড্ রেঞ্জের জ্বালানি চালিত বাইকের চেয়ে কম। তবে এখন বেশ উন্নত মানের বাইক উৎপাদন এবং আমদানি হচ্ছে। তাই কোয়ালিটি বিবেচনায় দামও সামঞ্জস্য পূর্ণ । ই-বাইকের পার্টস কম, তাই রেগুলার বাইকের চেয়ে দাম বেশি হয় না। এই ব্লগের শেষ অংশে আপনাদের ইলেকট্রিক বাইকের দাম সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। 

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল ব্যবহারের কিছু অসুবিধা

(১) বাংলাদেশে ই-বাইক খুব একটা চোখে না পরার কারণ হলো, এই বাইক গুলোর বি আর টি কর্তৃক অনুমোদন না থাকা। অনুমোদন না থাকার কারণে, ভালো মানের বাইক গুলো আমদানি হয় না। ৫০ সিসির কিছু ই-বাইক রাস্তায় দেখা যায়, কারণ ওগুলোর লাইসেন্স লাগে না। এই সব বাইকের অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার না থাকা, ভালো মানের স্পেয়ার পার্টস না থাকায়, মানুষের কাছে এই বাইক গুলোর গ্রহণযোগ্যতা এখনো কম। মূল কথা এই সব বাইকের এখনো হাইওয়ে রোডে চলার অনুমতি নেই।

(২) ই-বাইক সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের দেশে এখনো ঠিক মতো জনপ্রিয় না হবার কারণ হল, দেশে যে ই-বাইক পাওয়া যায়, সেগুলো সাইকেলের মতো অথবা হালকা স্কুটারের মতো। এগুলোকে প্রপারলি ইলেকট্রিক বাইক বলা যায় না। তাই যে সব ই-বাইক আছে, সেগুলো বাইকারদের পছন্দের না। ভালো মানের স্ট্যান্ডার্ড ই-মোটরসাইকেল এসেম্বল বা আমদানি করলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরী হবে।

(৩) এধরণের মোটরসাইকেল রেগুলার চার্জ দিতে হয়। এবং চার্জ দেবার জন্য অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হয়। এসব বাইক প্রপারলি চার্জ করার মতো বুথ বা পোর্ট আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এ জন্য ইলেক্টিসিটি খরচও বেশি হয়। ঠিক মতো মোটর চার্জ না হলে প্রপার মাইলেজ পাবেন না। ব্যাটারির কন্ডিশনও খারাপ হতে থাকবে। বাইক পুরোনো হলে এই সমস্যা বাড়তেই থাকবে।

(৪) স্ট্যান্ডার্ড মানের বাইক না হলে, এবং ঠিক মতো মেইনটেন্যান্স না করা হলে, ২-৩ বছর পর পর বাইকের ব্যাটারি চেঞ্জ করতে হয়। এতে বেশ কিছু খরচ হয়ে যায়। আর দেশের বাজারে যে ব্যাটারি পাওয়া যায় তা নিম্ন মানের। ইলেকট্রিক বাইকের অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার নাই বলেই এই অবস্থা। বাইকাররা এসব চিন্তা করে ই-মোটরসাইকেল প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

(৫) ই-বাইকের চার্জ লিমিটেশন আছে, তাই ৬০-৮০ কিমি, স্ট্যান্ডার্ড বাইক হলে ১০০ কিমি, এর বেশি আপনি যেতে পারবেন না। জ্বালানি চালিত বাইকে আপনি ফুয়েল রিচার্জ করেই স্টার্ট করতে পারবেন, কিন্তু এই সব বাইকে আপনার ফুল চার্জ নিশ্চিত করতে হবে।

(৬) এধরণের মোটরসাইকেলের জনপ্রিয় না হবার আর একটি করুন হল, এর গতির অভাব। হাইওয়ে রোডে চলার জন্য এই বাইক উপযুক্ত নয়। আপনি সিটি রাইডের জন্য এই বাইক ব্যবহার করতে পারেন।

(৭) ইলেকট্রিক বাইকের রি-সেল ভ্যালু নেই বললেই চলে। এটাও জনপ্রিয় না হবার আরো একটি কারণ।

তবে সব দিক বিবেচনায়, যেমন, ইলেকট্রিক বাইকের দাম, খরচ সাশ্রয়ী, নিরাপদ, সহজে চালানো যায়, যানজট পূর্ণ এলাকায় কমুনিকেশনের উপযোগী, এসব চিন্তা করলে ই-বাইক ব্যবহার অনেক উপকারী। সচেতন নাগরিক হিসেবে, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ই-বাইক সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। দিন শেষে ফুয়েল রিসোর্স বাঁচানোর জন্য ইলেকট্রিক বা অন্য পাওয়ারের বাইক বা যানবাহনের দিকে আমাদের যেতেই হবে।

ই-মোটরসাইকেল চালানো সহজ, যোগাযোগ সহজ করে, পরিবেশ বান্ধব, খরচ সাশ্রয়ী, তারপরেও কিছু কিছু জিনিস এই বাইক আমাদের দিতে পারে না। গতি কম, লং রাইড করা যায় না, মূলত এই দুটিই প্রধান কারণ। জাৰ্মারী এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে উন্নত মানের ই-বাইক পাওয়া যায়। ফুয়েল রিসোর্স সেভ করতে আমাদের দেশের মানুষদের ইলেকট্রিক বাহনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। ইলেকট্রিক বাইকের অনুমোদন এবং সার্ভিসিং সেন্টার না করলে, এই সেক্টর কখনই আগাবে না।

ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স

বাংলাদেশে এসব বাইকের জন্য লাইসেন্স করা লাগে না। কারণ যে সব বাইক রাস্তায় চলে সেগুলো সাধারণত ৫০-৭৫ সিসি লিমিটের। কম সিসি লিমিটের বাইকের লাইসেন্স বাদ্ধবাধকতা নেই। আর আমাদের দেশে এসব বাইকের হাইয়ার সিসির অনুমোদন নেই। তাই রেজিস্ট্রেশন নিয়েও কোনো চিন্তা নেই। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন বড় কোম্পানি ভালো মানের ই-বাইক বাজারে এনেছে। যেমন, হোন্ডা, ইয়ামহা, ওলা, বাজাজ, ওকিনাওয়া সহ বিভিন্ন কোম্পানি বাজার দখল করছে, এবং জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব বাইক এক চার্জে ১০০ কিমির বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। আমাদের দেশে এসব বাইকের অনুমোদন পেলে নিশ্চই রেজিস্ট্রেশন , ইন্সুরেন্স এবং লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের দাম

বাংলাদেশে বাইকের দাম সব সময় সমান থাকে না। বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাড়া-কমার উপর এর দাম নির্ভর করে। বাংলাদেশে চাহিদা ও উৎপাদন কম হবার কারণে এই বাইক অনেকটা আমদানি নির্ভর। তুলনামূলক বেশি বিক্রিত কিছু বাংলাদেশে বাইকের দাম (অগাস্ট -২০২২) উল্লেখ করা হলো-

বাইক নাম সিসি মাইলেজ এবং স্পিড দাম
Bir Magnum (বীর ম্যাগনাম) ইলেকট্রিক ৮০/৪০ ৳৭৩,৫০০
Akij Durdanto (আকিজ দুর্দান্ত) ইলেকট্রিক ৭০/৬০ ৳১১০,০০০
Akij Ponkhiraj (আকিজ পনখিরাজ ইলেকট্রিক ৬৫/৪০ ৳৮০,০০০
kij Durjoy (আকিজ দুর্জয়) ইলেকট্রিক ৭০/৫০ ৳৮৫,০০০
Runner eWave Eco (রানার ইওয়েভ ইকো) ইলেকট্রিক ৬০/৬০ ৳৭১,০০০
GreenTiger GT-5 (গ্রিনটাইগার জিটি -৫) ইলেকট্রিক ৭০/৪৫ ৳৬৭,৫০০
Motrac M2 Electric Bike (মোট্রাক এম২ ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৬০/৬০ ৳৮৫,০০০
Exploit Babui Electric Bike (এক্সপ্লইট বাবুই ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৫৫/৫০ ৳৬৮,০০০
Exploit Moyna Electric Bike (এক্সপ্লইট ময়না ইলেকট্রিক বাইক) ইলেকট্রিক ৬৫/৬০ ৳৭০,০০০

Note: The mentioned price information may not be 100% accurate. We collect information from manufacturer websites and other reputed sources. Please inform us if you have found any mistakes or wrong information.

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy e-Bikesbikroy
Green Tiger Digital 300 . 2023 for Sale

Green Tiger Digital 300 . 2023

5,150 km
MEMBER
Tk 37,500
3 hours ago
Exploit WD E-Bike 07 2023 for Sale

Exploit WD E-Bike 07 2023

7,580 km
MEMBER
Tk 35,500
4 hours ago
Walton Cruize 2024 for Sale

Walton Cruize 2024

30 km
MEMBER
Tk 50,000
3 days ago
Yamaha R15 M . 2023 for Sale

Yamaha R15 M . 2023

14,500 km
verified MEMBER
Tk 541,500
3 days ago
GB-JAMUNA-GOLD-BROWN 2023 for Sale

GB-JAMUNA-GOLD-BROWN 2023

5 km
verified MEMBER
Tk 65,999
1 day ago
Buy Scootersbikroy
TVS Wego 2019 2017 for Sale

TVS Wego 2019 2017

15,200 km
verified MEMBER
Tk 95,000
7 hours ago
Zongshen Z One T london 2021 for Sale

Zongshen Z One T london 2021

0 km
MEMBER
Tk 4,500
13 hours ago
Mahindra Gusto . 2018 for Sale

Mahindra Gusto . 2018

25,645 km
verified MEMBER
verified
Tk 72,000
13 hours ago
Yamaha Ray-ZR ALMOST NEW 2022 for Sale

Yamaha Ray-ZR ALMOST NEW 2022

9,000 km
verified MEMBER
Tk 208,000
15 hours ago
Runner Skooty . 2021 for Sale

Runner Skooty . 2021

15,325 km
MEMBER
Tk 82,000
15 hours ago
+ Post an ad on Bikroy