সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে যে ১১ টি বিষয় জানা জরুরি

29 Mar, 2023   
সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে যে ১১ টি বিষয় জানা জরুরি

অনেকেই নিজের সাধ্যের মধ্যে কেনার জন্য সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেলের খোঁজ করে থাকেন, তবে আপনি যদি প্রথমবার এই কাজটি করে থাকেন তবে তা আপনার জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কীরকম বাইক খুঁজবো? কী কী জিজ্ঞাসা করবো? আমি কি সঠিক বাইকটিই কিনছি? কেনার আগে এরকম যাবতীয় প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে আপনার মাথায়।

নিয়মিত পর্যায়ে দেশের বহু সংখ্যক মোটরবাইক বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ Bikroy.com-কে বাংলাদেশের অন্যতম মোটরবাইক কেনাবেচার মার্কেট হিসেবে একটি স্থায়ী আসন এবং স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনার ক্ষেত্রেও সঠিক বাইকটি বেছে নিতে Bikroy-ই হতে পারে আপনার অন্যতম আস্থার একটি জায়গা।

আজকের লেখায় আমরা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনার আগে সতর্কতা সহ অন্যান্য যেসমস্ত বিষয়ে জানতে হবে তা নিয়ে এবং বর্তমানে দেশের বাজারে পুরাতন মোটরসাইকেলের দাম নিয়ে আলোচনা করবো।

ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার আগে যেসমস্ত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে

নতুন মোটরসাইকেল কেনার পূর্বে তার কন্ডিশনের জন্য অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে না হলেও, পুরাতনের ক্ষেত্রে তা জরুরি। দেখে নিন ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনার সময় কী কী বিষয় জেনে রাখতে হবেঃ

১. বাইকের লুক

একটি পরিছন্ন মোটরসাইকেল সবসময়ই গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। একেবারে শুরু থেকেই বিক্রেতার সাথে খোলামেলা ভাবে বাইকের ব্যাপারে আলোচনা করুন। চেষ্টা করুন মোটরসাইকেলটির খুঁটিনাটি লক্ষ্য করতে। অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র বিক্রি হওয়ার উদ্দেশ্যে বাইকটি সেই মুহূর্তের জন্য পরিছন্ন রাখেন, তবে অনেকেই আছেন যারা সত্যিই যত্ন সহকারে বাইকের দেখাশোনা করেছেন এবং সেটি বাইক দেখা মাত্রই আপনি বুঝতে পারবেন।

মোটরসাইকেলের ভেতরের অংশগুলো দেখার চেষ্টা করুন, যেই জায়গাগুলোতে সহজেই ময়লা পৌঁছাতে পারে এমন জায়গাগুলো বাইক লাভাররা সবসময় পরিষ্কার রাখেন।

২. ইঞ্জিনের শব্দ

এবার বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ দিয়ে শুরু করা যাক। সবাই চায় তার পছন্দের বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে। যেহেতু ওয়ার্ম বা চালু থাকা অবস্থায় ইঞ্জিনের আওয়াজ অনেকাংশেই ঠিকঠাক শোনা যায় তাই আপনি আপনার বিক্রেতাকে অনুরোধ করতে পারেন যে আপনি উপস্থিত হওয়ার পরেই যাতে বাইক চালু করা হয়।

তবে মাঝে মাঝে সাইলেন্সার পাইপের সমস্যার কারণে ইঞ্জিনের শব্দ ভাইব্রেট বা কাঁপছে বলে আপনার মনে হতে পারে।

৩. ফ্রেম

ইঞ্জিনের শব্দ ঠিকঠাক থাকলে এবার বাইকের ফ্রেমের দিকে তাকানো যেতে পারে। ভালোভাবে লক্ষ্য করুন সেখানে কোনো দাগ, স্পট, অথবা সেটি বেঁকে গেছে কিনা। যদি আপনার কোনো কারণে মনে হয় বাইকটি এর আগে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছিল, তাহলে শুরুতেই বিক্রেতার কাছে বিস্তারিত জেনে নিন। সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।

৪. ক্লাচ

ক্লাচ আপনার মন মতো না হলে সেটি ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। তবে দেখার জন্য শুরুতেই ক্লাচ টি চেপে ধরে ছাড়ুন, স্মুথ মনে হচ্ছে? টানা এবং ছেড়ে দেওয়া দুই অবস্থাতেই ক্লাচটি মসৃণ ভাবে কাজ করার কথা। এবার বাইকটি চালু করে গিয়ার দিন, ক্লাচটি হালকা করে ছাড়লেই বাইকটি আগাতে থাকবে।

৫. ব্রেকিং সিস্টেম

ক্লাচ চেক করার পরে বাইকটি নিয়ে চালিয়ে দেখুন। কিছুটা গতিতে থাকা অবস্থায় সামনের ব্রেকে চাপ দিন। কোনো ধরণের আওয়াজ ছাড়াই বাইকটি সেই জায়গাতেই স্থির হয়ে যাবে। এবার আস্তে আস্তে ব্রেক ছেড়ে ক্লাচে হাত দিয়ে পিকআপ বাড়ালেই বাইকটি এগোতে থাকবে পুনরায়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার কোথাও সমস্যা বোধ হলে অতিসত্বর বিক্রেতার সাথে কথা বলে তা ঠিক করানোর বা আপনি যেমন চাইছেন তেমন করানোর ব্যবস্থা করুন। ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে ব্রেকিং সিস্টেম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ, তাই আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সব ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।

বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই

৬. সাসপেনশন

মোটরবাইকের সাসপেনশন চেক করার জন্য ব্রেকের সাহায্য নিতে হবে। বাইকের সাসপেনশন ফোর্কগুলো ব্রেক কষার পর পুনরায় খুব স্মুথ ভাবে কোনো আওয়াজ ছাড়াই যথাস্থানে ফিরে আসবে। এবার ফোর্ক রিংগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। সেগুলো পরিষ্কার, চকচকে এবং মসৃণ ভাবে আছে তো?

এবার পেছনের সাসপেনশন শকগুলো দেখে নেওয়ার জন্য বাইকের সিটে বসে নিচের দিকে চাপ দিতে হবে, এতে করে সেটি নিচের দিকে নেমে কোনো রকম কাঁপা ছাড়াই পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

৭. টায়ার

মোটরসাইকেলের টায়ারের লেয়ার লক্ষ্য করুন। চাকার মাঝামাঝি যদি কিছু ফেটে যাওয়ার মত দাগ থাকে এবং পাশগুলো ক্ষয়ে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে মোটরসাইকেলটি এই চাকা ব্যবহার করে অনেক দিন চালানো হয়েছে। যা বাইকের ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকরও বটে। এছাড়াও হার্ড ব্রেক এবং স্কিড করার কারণেও চাকায় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও রিং-এ ডেন্ট আছে কিনা বা রিং বেঁকে গেছে কিনা খেয়াল করুন। এরজন্য বাইকটিকে মাঝের স্ট্যান্ডের সাহায্যে দাঁড় করিয়ে চালু করে দুই চাকা ঘুরিয়ে ভালো করে দেখে নিন।

৮. ট্যাংক

তেলের ক্যাপটি খুলে ভিতরে লক্ষ্য করুন। তেলের রং দেখার চেষ্টা করুন এবং ভেতরের ট্যাংকের ভেতরের মেটাল বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিনা তাও দেখুন। এই কাজটি করার জন্য আপনি টর্চ ব্যবহার করতে পারেন। যদি ভেতরে অন্ধকার হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বাইকের তেল বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে আপনি যদি সেই বাইকটি নেওয়ার মনস্থির করে থাকেন সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইঞ্জিনটি ফ্ল্যাশ করে নিয়ে ব্যবহার করা ভালো।

৯. কোল্ড স্টার্ট

এবার বাইকটি কোল্ড রান করে দেখুন। প্রতিটি বাইক কোম্পানির কোল্ড স্টার্ট পদ্ধতি আলাদা। এজন্য তেলের চকটি রিসার্ভ পজিশনে দিন। এবার বাইকের বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে নিন সে সাধারণত কেমন এক্সেলেটর ব্যবহার করে বাইক চালু করার জন্য। যদি মোটরসাইকেলে ইলেকট্রিক সুইচ থাকে, তাহলে তার সাহায্যে বাইকটি অন্য করে পিকআপ ছেড়ে দিন।

বাইকের ইঞ্জিন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে থাকলে ইঞ্জিনের আওয়াজটি লক্ষ্য করুন। এবার বাইকের পেছনে তাকান এবং দেখার চেষ্টা করুন বাইকটি কেমন ধোঁয়া নির্গমন করছে। যদি ধোঁয়া বেশি মনে হয় সেক্ষেত্রে বাইকের তেলের সমস্যা হতে পারে। তবে ঘন ধোঁয়া বা গন্ধ পরবর্তীতে সারিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

১০. সঙ্গে নিন দক্ষ কাউকে

কেনার আগে বাইকের খুঁটিনাটি লক্ষ্য করতে থাকুন। আপনি যদি কোনো মার্কেটপ্লেস থেকে বাইকটি কিনে থাকেন, এবং আপনাকে সেই জায়গায় যেয়ে বাইকটি দেখতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কাদের সাথে ডিল করছেন সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যদি মনে হয় আপনি কোনো ভাবে প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে পুলিশি সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না।

নিরুপায় না হলে একা একা গিয়ে পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল না কেনাই ভালো। আপনার কোনো বাইকার বন্ধু বা পরিচিত মেকানিককে সাথে নিন। তাদের মাধ্যমে আপনি সঠিক দাম দিয়ে বাইকটি কিনছেন কিনা তাও দেখে নেওয়া যেতে পারে।

১১. কাগজপত্র

পরিশেষে বাইকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এবং লাইসেন্স নাম্বার মিলিয়ে নিশ্চিত করুন এটিই সেই বাইক কিনা যার সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক বিক্রি বিজ্ঞাপন আপনি দেখেছেন। সমস্ত নাম্বার মিলিয়ে নিন এবং লাইসেন্সের মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।

বাইকটি রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে কিংবা অন্য কোনো শহরে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে মালিকানা পরিবর্তনের পর কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তার ব্যাপারে আগেই জেনে রাখতে হবে।

পরিশেষ

মোটরসাইকেল কেনার পর দক্ষ কোনো মেকানিক দ্বারা সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিন এবং কিছু ঠিক করার থাকলে করিয়ে নিন। তবে মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখতে হবে। রাস্তায় নামার আগে প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল সেফটি গিয়ার কিনে নিতে ভুলবেন না।

আমরা আশা করি আমাদের আজকের লেখার মাধ্যমে আপনার সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে রিসার্চ করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা হলেও সুবিধা হবে।

হ্যাপি রাইডিং!

Similar Advices



4 comments

  1. ইঞ্জিনের শব্দ কেমন শোনা গেলে আমি বুঝবো ইঞ্জিন সমস্যা আছে?

    1. অসাধারণ একটা লেখা,,কাজের কথা

  2. অসাধারণ লিখেছেন পড়ে শিখলাম অভিজ্ঞতাও হলো, ধন্যবাদ।

  3. আমি একটা সি জি ১২৫ জাপান নিতে চাচ্ছি চিটি রাইডের জন্য, এবং বাইক ট্যুরের জন্য, পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়ার আগ্রহ বেশি কেমন দাম হলে নিতে পারি…?

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Bikesbikroy
Bajaj Pulsar 150 নিউ মডেল 2020 for Sale

Bajaj Pulsar 150 নিউ মডেল 2020

12,736 km
verified MEMBER
Tk 142,500
1 day ago
Bajaj Discover 125 নিউ মডেল 2022 for Sale

Bajaj Discover 125 নিউ মডেল 2022

8,357 km
verified MEMBER
Tk 108,500
1 day ago
Bajaj Pulsar 150 ১২ 2012 for Sale

Bajaj Pulsar 150 ১২ 2012

55,000 km
MEMBER
Tk 45,000
1 day ago
Yamaha FZ s 2022 for Sale

Yamaha FZ s 2022

16,500 km
MEMBER
Tk 195,000
1 day ago
Buy Used Bikesbikroy
Freedom Runner ২০১৬ 2018 for Sale

Freedom Runner ২০১৬ 2018

23,500 km
MEMBER
Tk 27,500
26 minutes ago
Bajaj Pulsar 150 2013 for Sale

Bajaj Pulsar 150 2013

133,000 km
MEMBER
Tk 65,000
1 hour ago
Yamaha YBR 2016 for Sale

Yamaha YBR 2016

30,000 km
MEMBER
Tk 55,000
1 hour ago
Honda CDI 2001 for Sale

Honda CDI 2001

35 km
MEMBER
Tk 28,500
1 hour ago
Hero Passion Pro 2011 for Sale

Hero Passion Pro 2011

40,000 km
MEMBER
Tk 40,000
2 hours ago
+ Post an ad on Bikroy