মোটরসাইকেলের প্রকারভেদঃ দেশের বাজারে যে ধরণের বাইক দেখা যায়

29 Mar, 2023   
মোটরসাইকেলের প্রকারভেদঃ দেশের বাজারে যে ধরণের বাইক দেখা যায়

বাংলাদেশের মানুষের বাইক প্রীতি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণ এবং যুবকদের খুব পছন্দের বাহন হল মোটরসাইকেল। তাই মোটরসাইকেলের বড় একটি বাজার রয়েছে এখানে। শুধু ইয়ং জেনারেশন নয়, বরং সব বয়সের মানুষ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, অনেকেরই বাইক নির্ভরতা বেড়েছে। কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা, সর্বোপরি জীবিকার তাগিদেই বাইকের ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রুচিবোধ, তাই বাইকের প্রতি ভিন্ন ভিন্ন এট্রাকশন এবং আগ্রহ কাজ করে। তাই দেশের বাজারে বিভিন্ন বাইকের ধরণ দেখা যায়।

অনেকে কর্মক্ষেত্রের জন্য বেশি মাইলেজ চলবে এমন বাইক চান, অনেকে গর্জিয়াস লুকিং বাইক পছন্দ করেন, অনেকে ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে টেকসই বাইক চান, অনেকে সাধারণ প্রয়োজনে অল্প সিসির বাইক চান, অনেকে তেল সাশ্রয়ী বাইক চান, নারীরা স্কুটি বাইক বেশি পছন্দ করেন, তেমনি তরুণদের পছন্দ মাসল লুক বাইক, এমন ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ। এই ব্লগে আমরা মোটরসাইকেলের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের দেশের বাজারে যে ধরণের মোটরসাইকেলের রকমফের বেশি দেখা যায় সেগুলো নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করবো।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের অসহনীয় যানজট, গণ পরিবহনের ভোগান্তি, এসব নানা কারণে বাইক একটি প্রয়োজনীয় বাহন হয়ে উঠেছে। বাইক মানুষের কাছে এখন শুধু স্ট্যাটাস এর বিষয় নয়, দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে যাচ্ছে। যানজট এড়াতে, দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে এখন মোটরসাইকেলের বিকল্প নেই। এখানে আমরা আপনাদের ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি বিভিন্ন বাইকের ধরণ, যার যার পারফেকশন অনুযায়ী, এবং দেশে মোটরসাইকেলের রকমফের, যাতে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী সুইটেবল বাইক বেঁছে নিতে পারেন।

দেশে অনেক ধরণের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। বাজারে হায়ার সিসির বাইক যেমন আছে, তেমনি অল্প সিসির বাইক পাবেন। এখানে যেমন গর্জিয়াস মাসল লুক বাইক পাবেন তেমনি হালকা কর্মক্ষেত্রের জন্য উপযোগী বাইকও পাবেন। যেহেতু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি একটি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই বাইক কেনার আগে বিভিন্ন অপশন থেকে বাছাই করে কেনাই ভালো। আপনি বাইক কি কাজে ব্যবহার করবেন, রেগুলার কি পরিমানে রাইডিং হতে পারে, যানজটের পরিস্থিতি কেমন, রাস্তার অবস্থা কেমন, কোনো স্পেসিফিক বাইকের প্রতি এট্রাকশন আছে কিনা, সর্বোপরি আপনার বাজেটের উপর চিন্তা করে, সুইটেবল বাইক কিনুন।

মোটরসাইকেলের রকমফের

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্রান্ডের বাইক পাওয়া যায়। এখানে যেমন সরাসরি ইম্পোর্টেড বাইক বাইক পাওয়া যায়, তেমনি দেশে এসেম্বল করা বাইকও পাওয়া যায়। আমাদের দেশের বাজারে জাপান, ভারত, চীন, আরো বেশ কিছু দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল দেখা যায়। আমাদের দেশের কিছু ব্র্যান্ডের বাইকও বাজার দখল করছে, যেমন রানার, যমুনা গ্রুপের পেগাসাস, ওয়াল্টন ইত্যাদি।

দাম-মান ভেদে সব ব্র্যান্ডের বাইকেরই কোনো না কোনো স্পেশালিটি আছে। যেমন গতি, ডিজাইন, গর্জিয়াস লুক বিবেচনা করলে হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি এসব বাইক সবার আগে আসবে। আবার স্থায়িত্ব, মাইলেজ, তেল সাশ্রয়ী বিবেচনায় বাজাজ, হিরো, টিভিএস এসব বাইক আগে আসবে। এখানে উল্লেখিত সব গুলো বাইক ব্র্র্যান্ডই শক্ত, মজবুত, টেকসই, এবং বিখ্যাত।

২-৩ দশক আগে কিছু কিছু বাইক ব্র্যান্ড মানুষের মধ্যে আস্থার স্বরূপ হিসেবে বিবেচিত হতো। যেমন হিরো-হোন্ডা, বাজাজ ইত্যাদি। এখন বাইকারদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে, তরুণদের মধ্যে গতিই এখন সব কিছু। তাই ইয়ামাহা, হোন্ডা, আরো কিছু স্পোর্টস বাইক বাজারে অনেক দেখা যায়। এখন সব ব্র্যান্ডই সবার উপযোগী বিভিন্ন রকম বাইকের ধরণ বাজারে নিয়ে আসছে। সব ব্রান্ডেই সাধারণ বাইকের পাশাপাশি স্পোর্টস বাইকও বাজারজাত করে। তেমনি চাইনিজ মেইড বাইকগুলোও বাংলাদেশের বাজারে অনেক দেখা যায়। এসব বাইকগুলো তুলনামূলক কমদাম কিন্তু মানসম্পন্ন, স্থায়িত্ব এবং টেকসই, তাই অনেক বাইকারদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ড বাইক হলো ডায়াং, কীওয়ে, লিফান, এটলাস-জংশেন, ইত্যাদি।

মোটরসাইকেলের রকমফের বা ক্লাসিফিকেশন করার কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই। ব্যবহারের ধরণ, ডিজাইন, পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য তুলনা করে বাইক কোম্পানি গুলো কিছু বাইকের ধরণ ঠিক করে, মার্কেট যাচাই করে, তারপরে বাজারে আনে। স্বীকৃত কিছু মোটরসাইকেলের প্রকারভেদ হল – স্ট্যান্ডার্ড বাইক, ক্রুজার বাইক, ট্যুরিং বাইক, স্পোর্টস বাইক, অফ-রোড বাইক, ডুয়াল পারপোজ বাইক, স্কুটার, ইলেকট্রিক বাইক, ইত্যাদি। এখন আমরা আলোচনা করবো আমাদের দেশের বাজারে কি কি ধরনের বাইক পাওয়া যায়। দাম ও মান অনুযায়ী মোটরসাইকেলের প্রকারভেদ।

দেশের বাজারে মোটরসাইকেলের প্রকারভেদ

(১) স্ট্যান্ডার্ড বাইক – সাধারণ ভাবে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য

প্রতিদিন যারা কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসার প্রয়োজনে রেগুলার বাইক ব্যবহার করেন তাঁরা এসব স্ট্যান্ডার্ড বাইক ব্যবহার করেন। এসব বাইক শহর-গ্রাম, সব রাস্তায় চলার উপযোগী। এসব বাইক তুলনামূলক কম দামের হয়, জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়, এবং বেশ ভালো মাইলেজ দিয়ে থাকে।

যারা কম বেশি রেগুলার ৩০-৫০ কিমি রাইড করেন তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড বাইক বেস্ট। এসব বাইকের ধরণ দেশের মার্কেটে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এধরণের বাইকের মধ্যে ভারতীয় ব্রান্ডের বাইক গুলো মার্কেটের বেশিরভাগ দখল করে আছে। যেমন হিরো ব্র্যান্ডের ১০০ সিসি থেকে ১২৫ সিসি বাইক। হিরো প্যাশন, হিরো ইগনিটোর, হিরো গ্ল্যামার, হিরো স্প্লেন্ডার, হিরো প্লেজার, এই বাইক গুলো আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়। এসব বাইক রাস্তায় সব চেয়ে বেশি দেখা যায়। বাজাজের বাইক গুলোও রাস্তায় অনেক দেখা যায়। স্ট্যান্ডার্ড বাইকের মধ্যে বাজাজ অন্যতম সেরা। বাজাজের ডিসকভার এবং প্লাটিনা সিরিজ স্ট্যান্ডার্ড বাইকের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে ইয়ামাহার স্যালুটো, সুজুকির হায়াতে এবং লেটস বাইক, টিভিএস এর মেট্রো এবং স্কুটি বাইক গুলো বেশ জনপ্রিয়।

৯০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে এই বাইক গুলো পাওয়া যায়। আমাদের দেশীয় ব্রান্ডের কিছু স্ট্যান্ডার্ড বাইকও রাস্তায় দেখা যায়, রানার কোম্পানির কিছু বাইক বেশ আস্থা অর্জন করেছে, যমুনা গ্রুপের পেগাসাস বাইকও বেশ ভালো করছে। কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ড, যেমন, কীওয়ে, লিফান এগুলোরও কিছু স্ট্যান্ডার্ড বাইক বেশ জনপ্রিয়।

 (২) হাই স্ট্যান্ডার্ড বাইক – বেশি সময় ব্যবহারের জন্য

কাজ, ব্যবসা, বা অন্য যে কোনো কারণে যদি আপনাকে দিনের বেশিরভাগ সময় বাইকে কাটাতে হয়, তাহলে এধরণের বাইক আপনার জন্য ভালো হবে। হাইওয়ে রোডে চলাচলের জন্য এই বাইক গুলো খুব ভালো। স্ট্যান্ডার্ড বাইক গুলোর ১২৫ সিসি থেকে ১৫০ সিসি বাইক গুলো হাই স্ট্যান্ডার্ড। হিরো ব্রান্ডের হাঙ্ক, থ্রিলার, এচিভার এধরণের বাইক গুলো আমাদের দেশের বাজারে বেশ জনপ্রিয়। বাজাজের পালসার বাংলাদেশে সব চেয়ে জনপ্রিয় বাইক এবং সর্বাধিক বিক্রিত বাইক। তাছাড়া হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকির বেশ কিছু হাই স্ট্যান্ডার্ড বাইক আছে, যা তরুণ ইয়ং জেনারেশন এর মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এধরণের বাইক গুলো জ্বালানি অনুযায়ী খুব একটা বেশি মাইলেজ হয় না। কিন্তু গতি, টেকসই এবং কমফোর্টের দিক থেকে অনন্য।

(৩) ক্রুজার বাইক

ক্রুজার মোটরসাইকেল আমাদের দেশে খুব একটা দেখা যায় না। বাইক প্রেমীদের কাছে এধরণের বাইক গুলো অত্যন্ত ফ্যাশনেবল। ডিজাইনের দিক থেকে এই বাইক গুলো অনন্য। লং ট্যুরে কম্ফোর্টেবল এবং রাজকীয় লুকের জন্য এই বাইক দুর্দান্ত। এসব বাইকের ধরণ গুলোর মধ্যে হার্লেই-ডেভিডসন, এক্সেলসিয়র এবং হেন্ডারসন কোম্পানির বাইক গুলো তুমুল জনপ্রিয়। এসন বাইকের রাইডিং পজিশন সাধারণত মেরুদন্ড খাড়া রাখতে হয়, হাত অনেকটা সামনের দিকে বা উপরে রাখতে হয়।

এসব বাইকের আকার অন্য বাইকের তুলনায় বেশ বড়, বাইকের ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী, কন্ট্রোল করাও সহজ। কিন্তু সিসি লিমিটের কারণে এধরণের বাইক আমাদের দেশে খুব একটা আসে না। আমাদের দেশে অনেক বাইকপ্রেমী কাস্টোমাইজ করে এই ধরণের বাইক বানান। চাইনিজ মেড কিছু ক্রুজার মোটরসাইকেল দেশের রাস্তায় দেখে যায়, যেমন, কীওয়ে সুপারলাইট, হাওজুয়ে টিআর, রিগাল রাপ্টার পিলডার, ইত্যাদি। তাছাড়া সুজুকি ইন্ট্রুডের, বাজাজ এভেঞ্জার, লিফান আপনাকে ক্রুজার লাইক ফীল দেবে।

(৪) ট্যুরিং বাইক

ট্যুরিং বাইকগুলো সাধারণত ভ্রমণের জন্য ডিজাইন করা হয়। তবে আপনি যেকোনো রাইডের জন্য এই বাইকগুলো ব্যবহার করতে পারেন। বাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলো ট্যুর বেসড রাইডারদের জন্য উপযোগী করে এই বাইক গুলো ডিজাইন করে, নির্দিষ্ট কিছু মডেল বাজারে আনে। এই বাইক গুলোতে বড় ডিসপ্লেসমেন্ট ফেয়ারিংস এবং উইন্ডশীল্ড থাকে, যা যেকোনো আবহাওয়াতে সুরক্ষা দেয়, বাতাসের চাপ থেকেও রক্ষা করে। এর ফুয়েল ট্যাংক বেশ বড়, বসার জায়গাও অনেক কম্ফোর্টেবল। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেবার জন্য এই বাইকগুলোতে বড় স্পেস থাকে। লিফান এবং জোন্টাস কোম্পানির বেশ কিছু ট্যুরিং মোটরসাইকেলের রকমফের আমাদের দেশে পাওয়া যায়।

(৫) স্পোর্টস বাইক

স্পোর্টস বাইকের প্রধান বৈশিষ্ট হল গতি, একসেলেরশন, নিয়ন্ত্রণ, ডিজাইন এবং ব্রেকিং। এই বাইক গুলো বেশ কমফোর্ট, জ্বালানি সাশ্রয়ী, এবং গতি সম্পন্ন। দাম কিছুটা নাগালের মধ্যেই থাকে তাই অনেক তরুণদের পছন্দের এই স্পোর্টস বাইক। মুহূর্তের মধ্যে গতি বাড়ানো যায়, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, হান্টিং লুক, এবং দুর্দান্ত ব্রেকিং সিস্টেম এই বাইক গুলোর এট্রাকশনের কারণ। ইয়ামাহা কোম্পানির আর সিরিজ এর বাইক, সুজুকির জিক্সসার সিরিজ, কাওয়াসাকি বাইক, কেটিএম বাইক আপনাকে স্পোর্টস বাইকের ফীল দেবে।

(৬) অফ-রোড মোটরসাইকেল

অফ-রোড মোটরসাইকেলগুলি রুক্ষ রাস্তা, মাটি, বালুময় রাস্তা এমনকি তুষার ঢাকা রাস্তায় চলার উপযোগী। এই বাইক গুলো এরকম রাস্তায় চলার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক বাইকাররা অফ-রোড বাইক কাস্টোমাইজ করে তৈরী করে বা অর্ডার করে বানিয়ে নেয়। এসব বাইকের জ্বালানী ট্যাঙ্ক অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের, বসার জায়গা লম্বাটে, কন্ট্রোল করা খুবই সহজ। বাংলাদেশে বেশ কিছু অফ-রোড বাইক পাওয়া যায়, যেমন, লিফান এক্স-পেক্ট, টিভিএস ম্যাক্স, কাওয়াসাকি কেএলক্স, অপ্রিলিয়া ইত্যাদি।

(৭) ডুয়াল পারপোজ বাইক

ডুয়াল পারপোজ বাইক অন এবং অফ দুই ধরণের রাস্তার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এসব বাইকের ওজন হালকা, কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ইঞ্জিন। এডভেঞ্চারাস বাইক লাভারদের এই ধরণের বাইক অনেক প্রিয়। কারণ সাধারণ রাইডিংয়ের পাশাপাশি, রেস্, খেলাধুলার জন্যও এসব বাইক ব্যবহার করা যায়। ডুয়াল পারপোজ বাইকের লুক স্ট্যান্ডার্ড বাইকের মতোই, তবে এর তেল ধারণ ক্ষমতা কম। এর সবচেয়ে উপকারী দিক হল এর সাসপেনশন অসাধারণ, যে কোনো ধরণের রাস্তায় আপনি এসব বাইক চালাতে পারবেন। হালকা হওয়ায় কন্ট্রোল করা খুব সহজ।

(৮) স্কুটার বাইক

স্কুটি বাইক এখন সব বয়সী মানুষের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। এই বাইক সিটি এলাকায় চলাচলের উপযোগী। হাইওয়ে রাস্তার জন্য উপযোগী নয়। এই বাইক কন্ট্রোল করা খুব সহজ বলে নারী এবং বয়স্ক ব্যাক্তিরা এসব বাইক খুব পছন্দ করেন। এই বাইক গুলো খুব ভালো মানের কমিউটার বাইক, অল্প রাস্তায় চলাচলের জন্যে খুবই ভালো এবং নিরাপদ। এসব বাইকের ধরণ জ্বালানি সাশ্রয়ী, মাইলেজও অনেক ভালো। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড স্কুটি বাইক বাজারজাত করে। ইয়ামাহার ট্রাইসিটি, সুজুকির এক্সেস এবং অপ্রিলিয়া সিরিজ বহুল বিক্রিত বাইক। এছাড়াও লিফান, ভেসপা, হোন্ডা, হিরো, টিভিএস ব্রান্ডের বেশ কিছু স্কুটিও বেশ জনপ্রিয়। এসব বাইকের দাম ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ এর মধ্যেই পাওয়া যায়।

(৯) ইলেক্ট্রিক বাইক

এখন বাংলাদেশে ইলেকট্রিক বাইকও পাওয়া যাচ্ছে। দেশের রাস্তায় বেশ কিছু অল্প সিসির ইলেকট্রিক বাইক দেখা যায়। কারণ বেশি সিসির বাইক এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। ৫০-৭৫ সিসি ইলেকট্রিক বাইক যেগুলো রাস্তায় দেখা যায় সেগুলোর লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। এই বাইক গুলো পরিবেশ বান্ধব এবং অনেক কম খরচের। অল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য এগুলো আদর্শ বাহন। এসব বাইকের জ্বালানি খরচ নেই, শুধু বিদ্যুৎ চার্জে চলে। বাংলাদেশেও যেসব ইলেকট্রিক বাইক বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো, গ্রীন টাইগার সিরিজ, এক্সপ্লইট সিরিজ, আকিজ গ্রুপের কিছু বাইক, ইত্যাদি। এসব বাইকের দাম ৫০ হাজার থেকে দেড়লক্ষ টাকার মধ্যে হয়।

বাংলাদেশে বাইকের ধরণ

এতক্ষন আপনারা মোটরসাইকেলের রকমফের নিয়ে ধারণা পেলেন। দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষজন আরো কিছু বিষয় এবং প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে তাঁর পছন্দের মোটরসাইকেলটি কেনেন। তরুণ এবং ইয়ং জেনেরেশনদের পছন্দ আবার ভিন্ন রকম। তারাও কিছু বিষয় মাথায় রেখে বাইক নির্বাচন করেন। এখানে তেমন কিছু বাইকের ধরণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

(১) স্পীডি বাইক

আপনারা অনেকেই আছেন স্পিড বা গতি সবার আগে বিবেচনা করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৬০ সিসির বেশি গতির বাইক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তাই হাইয়ার সিসির বাইক আপনি রাস্তায় চালাতে পারবেন না। স্পীড লাভাররা দেশে বেশ কিছু ভালো মানের ১৬০ সিসি বাইক পাবেন। হোন্ডা সিবি হরনেট, হোন্ডা এক্স-ব্লেড, ইয়ামাহা এফজেডএস, ফেজার, বাজাজ এভেঞ্জার, টিভিএস এপাচি আরটিয়ার, সুজুকি জিক্সার সিরিজ, লিফান সিরিজ অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও পালসার, হাংক এবং এক্ট্রিম এগুলোও তরুণদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়।

(২) জ্বালানী সাশ্রয়ী

অনেকেই বাইক নির্বাচন করেন জ্বালানী সাশ্রয়ীর ব্যাপার বিবেচনা করে।স্ট্যান্ডার্ড বাইক এবং স্কুটার বাইক গুলো বেশ তেল সাশ্রয়ী হয়। এগুলোর মাইলেজও বেশি হয়। হিরো এবং বাজাজ ব্রান্ডের ১০০ সিসি থেকে ১২৫ সিসি বাইক গুলো বেশ জ্বালানি সাশ্রয়ী। এই বাইক গুলো টেকসই এবং স্থায়িত্বও অনেক।

(৩) মজবুত, টেকসই এবং স্থায়ীত্ব

বাইক কেনার আগে অনেকেই চিন্তা করেন টেকসই এবং স্থায়ীত্ব নিয়ে। জাপানি বাইক কোম্পানি গুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে। এরপর আপনি বাজাজ, হিরো ব্র্যান্ডকে রাখতে পারেন। ইয়ামাহা, হোন্ডা, সুজুকি এবং কাওয়াসাকি খুব জনপ্রিয় জাপানি ব্র্যান্ড। এই বাইকগুলো বেশ দামি হয়।

বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কিছু বিখ্যাত বাইক ব্র্যান্ড

(১) বাজাজ

বাজাজ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছে। বাজাজ ব্রান্ডের বাইক আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বাইক। সকল সেগমেন্টের বাইক বাজাজে পাওয়া যায়। তাই সকল শ্রেণীর, সকল পেশার মানুষ এই বাইকের ক্রেতা। বাজাজের বাইকের আকর্ষণীয় ডিজাইন, গুণগত মান, মানসম্পন্ন ইঞ্জিন, স্থায়িত্ব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, এবং দাম বিবেচনায় এটি মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। পালসার, বাজাজ ব্রান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিক্রিত বাইক। এছাড়াও বাজাজ অ্যাভেঞ্জার এবং ডিসকভার মার্কেটে অনেক জনপ্রিয়।

(২) হিরো

বাজাজের পরেই হিরো ব্র্যান্ড বাংলাদেশের বাইক বাজারে অন্যতম জনপ্রিয়। এই কোম্পানিও নাগালের মধ্যে দামে বাইক বাজারজাত করে। এই ব্রান্ডের বাইক গুলোও জ্বালানি সাশ্রয়ী, টেকসই এবং স্থায়িত্ব ভালো। কমিউটার থেকে হাইয়ার সিসির বাইক এই কোম্পানি বাজারজাত করে। হাঙ্ক, হিরো ব্রান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি বিক্রিত বাইক। এছাড়াও এই ব্রান্ডের প্লেজার, অ্যাচিভার, থ্রিলার, ইগনিটো, গ্ল্যামার, ম্যাস্টেরিও স্কুটি মার্কেটে বেশ জনপ্রিয়।

(৩) হোন্ডা

হোন্ডা ব্র্যান্ড বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি আস্থার নাম। এর দীর্ঘস্থায়িত্ব, উন্নত প্রযুক্তি এবং ব্রেকিং সিস্টেম জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ। মোটামুটি কম দামে, অত্যন্ত টেকসই বাইক বাজারজাত করে হোন্ডা ব্র্যান্ড। এই কোম্পানির হরনেট, এক্স-ব্লেড এবং ডিও স্কুটি জবাজারে অনেক জনপ্রিয়। এছাড়াও হাইয়ার সিসির মধ্যে হোন্ডা সিবিআর সিরিজ ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়।

(৪) টিভিএস

টিভিএস বাংলাদেশে বিক্রিত অন্যতম জনপ্রিয় ব্রান্ড। এটিও ভারতীয় কোম্পানি। টিভিএস অ্যাপাচি এই ব্রান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি বিক্রিত বাইক। কমিউটার থেকে স্পোর্টস সব ধরণের বাইক এই কোম্পানি বাজারজাত করে। টিভিএস বাইকের ডিজাইন অনন্য, রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি সমন্বিত অ্যান্টি ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) । এই ব্রান্ডের কিছু জনপ্রিয় বাইক গুলো হলো – টিভিএস ম্যাক্স, মেট্রো প্লাস, এন-টর্ক স্কুটি ইত্যাদি।

(৫) ইয়ামাহা

তরুণ এবং বর্তমান প্রজন্মের খুব পছন্দের বাইক ব্র্যান্ড হচ্ছে ইয়ামাহা। টেকসই এবং স্থায়িত্বের দিক থেকে এই বাইক অসামান্য। এই ব্রান্ডের বাইক গুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। উন্নত প্রযুক্তি, গর্জিয়াস লুক এবং পাওয়ারফুল ইঞ্জিনের সমন্বয়ে জনপ্রিয়তা ও চাহিদা সব দিক দিয়েই এই বাইক ব্র্যান্ড অনেক এগিয়ে।

(৬) সুজুকি

এই বাইক ব্র্যান্ড দ্রুত বাংলাদেশে বাইকপ্রেমীদের মধ্যে জায়গা দখল করে নিয়েছে। দুর্দান্ত প্রযুক্তি, টেকসই, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন এবং অত্যাধুনিক ব্রেকিং সিস্টেমের কারণে সুজুকি অনেক সুনাম অর্জন করেছে। সুজুকি জিক্সার এই ব্রান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি বিক্রিত বাইক। তাছাড়া সুজুকি জিএসএক্স, হায়াতে, ইন্ট্রুডার এবং ব্যান্ডিট বাজারে বেশ জন

(৭) রানার

বাংলাদেশের বাইক বাজারে রানার একটি ভালো সুনামের জায়গা করে নিয়েছে। এটিই একমাত্র দেশি ব্র্যান্ড যা বিদেশি বাইকের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটির কিছু বাইক, বেশ কম দামে বাজারে এনে রানার বাজারে পরিচিত হয়েছে এবং এখন বেশ বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ১০০ সিসি থেকে ১৬০ সিসি পর্যন্ত সব সেগমেন্টের বাইক পাবেন রানারে।

শেষ কথা

পরিশেষে, বাইক এখন একটি প্রয়োজনীয় বাহন। আপনার প্রয়োজন এবং ব্যবহার উপযোগী বাইকটি নির্বাচন করুন। বাইকের দাম এবং পারফরম্যান্স কেমন দরকার চিন্তা করুন। তবে মাথায় রাখবেন যে যেমন বাইকই কিনুন, বাইকের আফটার সেলস সার্ভিস কেমন তা যাচাই করবেন, পার্টস এভেইলেবল কিনা যাচাই করুন। কোনো বাইকই ১০০% আপনার মনমতো হবে না। তাই কোন বিষয় গুলো বেশি দরকারি তা বিবেচনা করে বাইক কিনুন, প্রয়োজন, পছন্দ এবং দাম সব কিছুর সমন্বয়ে নির্বাচন করুন পছন্দের বাইক।

 

মোটরসাইকেলের প্রকারভেদ সম্পর্কে আরো ধারণা পেতে, বিভিন্ন বাইকের স্পেসিফিকেশন এবং ভালো-মন্দ যাচাই করতে ভিজিট করুন বাইকস গাইডে এখানে আপনি বিভিন্ন বাইকের ধরণ, মোটরসাইকেলের রকমফের সহ আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।

Similar Advices



1 comment

  1. কোন গাধায় সিসি লিমিট করছে?
    ও নির্ঘাত ভরতের বাইকের বাজার পাইয়ে দেয়ার জন্য এমনটা করেছে।
    কারন হিসাবে দেখিয়েছে যে অপরাধীরা বেশি সিসির বাইকে করে পালিয়ে যায়। আসলে মুর্খরা পরশাসনে বসলে এমনই হয়।
    সিসি বেশি থাকলে গতি বেশি হয়না। এটা এৃননা যে পানি বেশি পান কে পেশাব হবে।

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy Motorcyclesbikroy
Bajaj Pulsar NS ABS Carburetor 2020 for Sale

Bajaj Pulsar NS ABS Carburetor 2020

16,400 km
MEMBER
Tk 148,000
1 month ago
Honda Shine SP . 2019 for Sale

Honda Shine SP . 2019

15,200 km
MEMBER
Tk 105,000
6 minutes ago
Speeder Countryman 165 Black 2017 for Sale

Speeder Countryman 165 Black 2017

37,000 km
MEMBER
Tk 90,000
1 week ago
Bajaj Pulsar Single disc 2022 for Sale

Bajaj Pulsar Single disc 2022

9,263 km
verified MEMBER
verified
Tk 162,000
2 weeks ago
Yamaha Fazer . 2011 for Sale

Yamaha Fazer . 2011

25,000 km
MEMBER
Tk 95,000
27 minutes ago
Buy Scootersbikroy
TVS NTORQ 110 2021 for Sale

TVS NTORQ 110 2021

18,000 km
MEMBER
Tk 160,000
16 hours ago
Mahindra Gusto 2017 2019 for Sale

Mahindra Gusto 2017 2019

14,800 km
verified MEMBER
verified
Tk 88,000
5 days ago
LML Scutty 1999 for Sale

LML Scutty 1999

49,609 km
MEMBER
Tk 85,000
1 week ago
Akij Durbar এক দাম 2018 for Sale

Akij Durbar এক দাম 2018

32,157 km
verified MEMBER
Tk 35,000
1 month ago
TVS XL এক দাম 2019 for Sale

TVS XL এক দাম 2019

3,941 km
verified MEMBER
Tk 38,000
1 month ago
+ Post an ad on Bikroy