বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালাবেন কীভাবে?
মোটরসাইকেল চালানোর সময় বৃষ্টির শর্তাবলী মেনে চলা খুবই জরুরি। ভুল-ত্রুটি এড়াতে ও ছোট-বড় যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে সেইফ রাখতে Bikes Guide-র এই Advice blog আপনাকে সাহায্য করবে!
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম– গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা-র দিকে নজর দেওয়া। কথায় আছে, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না”, তাই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন ভালোমতো জেনে মোটরসাইকেল চালানো জরুরি, না হলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে বড় দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বৃষ্টিতে রাইডিং এর জটিল সমস্যা টায়ার গ্রিপ বা মসৃণ থ্রোটল নয়। যেহেতু বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত হয়ে থাকে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ এক্ষেত্রে খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এছাড়াও, রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে পানি প্রবেশের কারণে সঠিক ভাবে নিয়ন্রণ করা যায়না। তাই চলুন ভালোভাবে জেনে নেই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন-গুলো।
আপনার ভাইসরের দিকে খেয়াল রাখুন
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন-র মধ্যে অন্যতম – ভারী বৃষ্টিতে পরিষ্কার দৃষ্টি । এটি দ্বিগুণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ বৃষ্টির জলের ময়লা ভাইসরে আঁকড়ে থাকে, যার কারণে ভাইসর দিয়ে আপনি ক্লিয়ার দেখতে পারবেন না। আপনার ভাইসরে একটি পিনলকের মতো একটি অ্যান্টি-ফগ ডিভাইস ব্যবহার করুন যাতে এটি বাষ্প হতে না পারে এবং আপনার ভাইসরটি খোলা না রাখার চেষ্টা করুন, কারণ একবার বৃষ্টি হলে এটি পরিষ্কার করা খুব কঠিন হতে পারে।
তাড়াহুড়ো করে বাইক চালাবেন না
কথায় আছে, “একটা দুর্ঘটনা, সারাজীবনের কান্না”, প্রত্যেক রাইডারকে এটা মাথায় নিয়ে বাইক চালানো উচিত। তাই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন মেনে চলা জরুরি। এমনেই উড়তি বয়সী ছেলেরা বাইক রাইডিংয়ের সময় স্পিডে বাইক চালানোর মনমানসিকতা থাকে, বৃষ্টিতে এই টেন্ডেন্সি আরও বেড়ে যায়, দেখা যায় জোরে বা তাড়াহুড়ো করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা, কিংবা এডভেন্সার ভাইব নেওয়ার জন্য পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত রাস্তাতেও জোরে বাইক চালানো, এটা কখনোই উচিত না। বরং ধীরে-সুস্থে মোটরবাইক কোথাও পার্কিং করে বৃষ্টি উপভোগ করুন, প্রিয়জনকে ফোন দিয়ে ভালোবাসার কথা বলুন। বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা মেনে চলুন।
সঠিক মোটরসাইকেলের টায়ার ব্যবহার করুন
বছরের পর বছর ধরে টায়ারের ডেভেলপমেন্ট মানে ঠান্ডা এবং ভেজা অবস্থায় গ্রিপ করার মাত্রা ব্যাপকভাবে উন্নত করা। তা সত্ত্বেও, সকল টায়ার সর্ব-উদ্দেশ্যে একইভাবে কাজ করবে না। আপনি বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা-র সাথে অবশ্যই সঠিক রাবার বেছে নিবেন। একটি ট্র্যাকডে টায়ার এবং একটি শীতকালীন টায়ারের মধ্যে পার্থক্য বিশাল। টায়ার চাপও অত্যাবশ্যক; চাপ খুব বেশি বা খুব কম হলে টায়ারের খাঁজগুলি বৃষ্টিতে ভিজে সঠিকভাবে কাজ করবে না। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন অনুযায়ী বৃষ্টিতে বাইক চালানোর সময় বাইকের টায়ার প্রেশার কিছুটা কমিয়ে নিতে পারেন। এতে ভালো গ্রিপ পাওয়া যায়।
আরও জানুন – বর্ষাকালে মোটরসাইকেল চালানোর সঠিক উপায়
বৃষ্টিকালীন সময়ে হেলমেটের ব্যবহার
হেলমেটের ব্যবহার সবসময়েই জন্য জরুরি, তবে বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা মেনে চলুন ভালোভাবে। কারণ বৃষ্টিতে আপনার দৃষ্টি যতটা সম্ভব ক্লিয়ার রাখতে হবে। ভালো মানের হেলমেট এবং এন্টি ফগ ডিভাইস ব্যবহার করলে দেখা যাবে বৃষ্টির কারণে যদি গ্লাস ময়লা হয়ে যায়, এন্টি ফগ ডিভাইসের কারণে বাষ্প হওয়া থেকে বিরত রাখবে।
অন্যান্য গাড়িগুলো থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখুন
বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। চেষ্টা করবেন আশেপাশের গাড়িগুলো থেকে একটু ডিসটেন্স বজায় রাখতে। কারণ, যেহেতু বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ বেশ চেলেঞ্জিং হয়ে যায়, তাই আশেপাশের গাড়ির সাথে লেগে বাজে রকমের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়াও, যেহেতু বৃষ্টিতে পানির কারণে ভাইসর ও হেলমেটের উপর ঝাপসা একটা অবস্থা তৈরি হয়, তাই দূরত্ব বজায় রেখে চলা উত্তম। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
বডি আর্মোর জ্যাকেট ব্যবহার করুন
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন – এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো জ্যাকেট। মজবুত বডি আর্মোর জ্যাকেটগুলি মোটরসাইকেল রাইডারদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য উত্কৃষ্ট বিকল্প হতে পারে। একটি মজবুত আঘাত প্রতিরোধী ব্যবস্থা থাকলে জ্যাকেটটি দূর্ঘটনাগ্রস্ত সময়ে আপনাকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এই জ্যাকেট আপনার বুকে কাঁধে আঘাত লাগা থেকে আপনাকে প্রচুর সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম। বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
হেডলাইন জ্বালিয়ে রাখুন
ল্যাশিং এলইডি (LED) ফ্ল্যাশ লাইটগুলি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাইক রাইডারদের মধ্যে। এই ধরণের লাইটগুলি আনুকূল্যের জন্য একটি ভাল বিকল্প হিসাবে পরিচিত। এই লাইটগুলি বৃষ্টির কারণে যে অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেই পরিবেশে বাইকের দৃশ্যমানতা বা অবস্থা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও নতুন প্রযুক্তির গ্লোভ লাইট ব্যবহার করতে পারেন, এটি মোটরসাইকেলের গ্লোভের মাঝে থাকে, পরে বা হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই, আপনার একটা আঙুলের চাপই যথেষ্ট আলোর অভাব দূর করতে।
একসাথে অনেকগুলো কাজ থেকে বিরত থাকুন
আপনার মনোযোগ সবসময় সঠিক স্থানে রাখুন এবং সময় থাকলে কোনো ব্যাপারে অলসতা করবেন না। এক্সেলারেশান বা গিয়ার পরিবর্তনের সময় ধৈর্যশীলতা অবলম্বন করুন। সব কাজ একসাথে করতে যাবেন না। বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা মেনে চলুন। আপনার মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ এবং সিস্টেমগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সার্ভিস এবং পরীক্ষা করা উচিত। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
এন্টি-রাস্ট এন্ড প্রোটেকশন
এন্টি-রাস্ট স্প্রে একটি ধরনের প্রোটেকশন পদার্থ, যা মেটাল সারফেসে ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে। এই স্প্রে সাধারণত বৃষ্টিপাতের সময়-ই উপযুক্ত হএবং মোটরসাইকেলের বাহিরের মেটাল পার্টগুলি ধ্রুবক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি অক্সিডেশন প্রতিরোধী ব্যাটারির মতো কাজ করে এবং মোটরসাইকেলের বৃষ্টির প্রভাবে মেটালে অক্সিডেশনের প্রতিরোধ করে উচ্চ মাত্রায়।
সবশেষে বলা যায়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা – বৃষ্টির সময় অত্যন্ত সতর্ক হোন এবং যত্নসহকারে সব ধরনের যোগাযোগ এবং রোড পরিসরের নিরাপত্তা মেনে চলুন। অন্যদের বহন ও আপনার নিজের নিরাপত্তা উন্নত রাখার জন্য সবসময় বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। এক্সেলারেশান এবং গিয়ার পরিবর্তনের জন্য সঠিক টেকনিক এবং প্রয়োগ জানতে আপনার মতো ট্রেনিং করতে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে। আপনার কাছে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলে, একজন অভিজ্ঞ রাইডার বা মোটরসাইকেল ইনস্ট্রাক্টরের সাথে মিলিয়ে আপনার দক্ষতা উন্নত করতে পারেন। বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
দেখে নিন – নতুনদের জন্য মোটরসাইকেল চালানো শেখার প্রাথমিক নিয়ম
গ্রাহকদের কিছু নিয়মিত প্রশ্নের উত্তর
সামনের গাড়ি থেকে আমার কত দূরে থাকা উচিত?
দুটি কারণে ভারী বৃষ্টিতে আপনার ব্রেকিং দূরত্ব দ্বিগুণ করতে হবে। প্রথমত, কারণ আপনি শুষ্ক অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি বাইক থামতে পারেন, ভেজা রাস্তায় ততো তাড়াতাড়ি পারবেন না এবং দ্বিতীয়ত, বৃষ্টিতে আপনার দৃশ্যমানতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হওয়ার কারণে এক্সিডেন্টের প্রবণতা বেশি থাকে।
ভেজা অবস্থায় কোন লেন সবচেয়ে নিরাপদ?
সাধারণভাবে বলতে গেলে, ডুয়েল ক্যারেজওয়ে এবং মোটরওয়েতে, ভিতরের লেন সবচেয়ে বেশি পানি পরিপূর্ণ থাকে। এর কারণ হল ট্রাকগুলি প্রায়শই দুটি ‘নর্দমা’ তৈরি করে – জলের গভীর চ্যানেল যেখানে লরির চাকা চলে৷ বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা মেনে চলুন, বিশেষ করে যখন এই লেনটি ব্যবহার করবেন।
মোটরবাইকে কি আধুনিক ইলেকট্রনিক ফিচার দরকার?
২০১৬ থেকে যখন Euro4 রেগুলাশন কার্যকর হয়, তখন ১২৫ সিসি ধারণক্ষমতার বেশি সকল নতুন বাইকে অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) ইনস্টল করা আইনত প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে এবং যেকোনো সাইজের বাইকের জন্য এখন ABS বা লিঙ্কযুক্ত ব্রেকিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। .
আপনি যদি আপনার পুরানো বাইকে ইলেকট্রনিক ফিচার পেয়ে থাকেন, তবে আপনি যথেষ্ট ভাগ্যবান, সেগুলি ভালোভাবে ব্যবহার করুন। ট্র্যাকশন কন্ট্রোল চালু করুন, পাওয়ার বন্ধ করুন এবং নিশ্চিত করুন যে ABS সক্রিয় আছে। প্রায়শই আমরা এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ভুলে যাই। সাসপেনশনও সামঞ্জস্য করুন কারণ কিছু বাইকের একটি ‘অয়েট মোড’ থাকে যা সাসপেনশনকে নরম করে তোলে।
কিভাবে ভিজে রাস্তায় মোটরসাইকেল ব্রেক করব?
বৃষ্টিতে বাইক চালাতে সতর্কতা-র সাথে ধীরে ধীরে শুরু করুন, সামনের ব্রেকটিতে ফোকাস করুন এবং ধীরে ধীরে লেভারের চাপ বাড়ান যাতে আপনি আপনার ব্রেকগুলির শক্তি এবং রাস্তায় টায়ারের অনুভূতি সম্পর্কে আরও বেশি করে অনুভব করতে পারেন।
ভালো মানের বাইকার রেইনকোট কোথায় পাবো?
আপনার এলাকায় যদি কোনও ভালো স্পোর্টস বা অটো পার্টস অ্যাক্সেসরিজের দোকান থেকে থাকে, তাহলে সেখানেই ভালো বাইকার রেইনকোট ও প্যান্ট পেয়ে যাবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস bikroy.com-এ বিভিন্ন ধরণের রাইডিং পোশাক, উইন্ডব্রেকার জ্যাকেট, প্রতিফলক স্টিকার ইত্যাদি সব ধরনের পণ্য এক জায়গা থেকেই কিনতে পারবেন।