হিরো হাঙ্ক ১০,০০০ কিমি রাইডিং রিভিউ
হিরো হাঙ্ক, বাইকার দের খুব পছন্দের একটি বাইক। বাইক রিভিউয়ার দের মতে, আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের অবস্থা এবং অস্বাভাবিক যানজট বিবেচনায়, একটি কার্যকর, টেকসই সাথে স্টাইলিশ বাইক একমাত্র হিরো হাঙ্কই হতে পারে। এটা সত্য যে ইউনিকর্ন, ড্যাজলার, সিবিজেড হাঙ্কের মতো একই ইঞ্জিন ব্যবহার করে; কিন্তু এটাও সত্য যে চেহারার তুলনায়, কেউ হাঙ্কের কাছেও নেই। যদিও FZ সিরিজ সামগ্রিকভাবে হাঙ্কের চেয়ে বেশি সুন্দর; কিন্তু তাদের মূল্য এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হাঙ্কের চেয়ে বেশি।
বিভিন্ন বাইকারদের রিভিউ অনুযায়ীই, বাইকের সার্ভিস, কর্মক্ষমতা, কার্জকারিতা, পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, রাজকীয় ডিজাইনের কারণে হিরো হাঙ্ক, অন্যান্য বাইক থেকে বেশ এগিয়ে।
বাইকারদের রিভিউ অনুযায়ী, এই বাইক নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। বেশিরভাগ বাইকার পছন্দ করে এর পেশীবহুল লুক এর জন্য। বাইকার যারা অন্তত ১০,০০০+ কিমি চালিয়েছেন, নিয়মিত ড্রাইভ করেছেন, বেশিরভাগই বাইকের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। ২০০০-৩০০০+ কিমি ড্রাইভ করার পর বেশিরভাগ বাইকার ব্রেক প্যাড এবং ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন করেছেন। বাইকটিতে ভাল রেডি পিকআপ নেই তবে ছোট ভাইব্রেশনের কারণে এটি দীর্ঘ যাত্রার জন্য উপযুক্ত। পেছনে ১০০ সেকশন টায়ার ব্যবহারের কারণে বাইকটি স্কিড করলেও কিছু দিন ব্যবহার করার পর কন্ট্রোলিং আয়ত্বে আনতে পারবেন।
হিরো হাঙ্কের ব্রেকিং সিস্টেম নিয়ে প্রায় সবাই সন্তুষ্ট। তবে একটি বাইক যত ভালো ব্রেকিং সিস্টেম অফার করুক না কেন সবকিছু নির্ভর করে রাইডারের দক্ষতার উপর। রাইডার তার দক্ষতা দিয়ে যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। রিভিউ অনুযায়ী হিরো হাঙ্কের ব্রেকিং সিস্টেম ভালো এবং নিরাপদ। সাসপেনশন ওয়ার্ক রেট বেশ ভালো, এটি যেকোন রাস্তায় একটি ভাল রেসপন্স দেয়।বাইকের সুইচটি দেখতে অসাধারণ। হেডলাইট থেকে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায় এবং উচ্চ গতিতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় না। কিন্তু টায়ারের কারণে ইমার্জেন্সি ব্রেক করলে বাইকটি স্লিপ হয়ে যায় বলে বেশ কিছু রিভিউয়ার বলেছেন। সম্ভবত এর কারণ, টায়ার বা টায়ারের গ্রিপ তেমন ভালো নয়।
বাইকটির সিটিং পজিশন অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের তুলনায় ভালো এবং বড়। হ্যান্ডেল বার থাকায় এটি চড়তে আরামদায়ক। এজন্য বাইকাররা ক্লান্ত হন না। রিভিউ অনুযায়ী, সাধারণ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে, লং ড্রাইভে, ইঞ্জিন বেশ গরম হয়ে যায়। তাই সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, দেশে বিভিন্ন ধরণের বাইক রয়েছে যা বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনে সেরা। প্রতিটি কোম্পানি চায় তাদের বাইকটি সেরা হোক। তাই কোন বাইক খারাপ নয় যদি এর ভালো যত্ন নেন, এটি আপনাকে ভালো ফিডব্যাক দেবে। এই ব্লগে আপনি পাবেন, যেসব বাইকাররা ১০,০০০+ কিমি হিরো হাঙ্ক বাইক ড্রাইভ করেছেন, তাদের রিভিউ সমন্বয় করে, একটি পূর্ণাঙ্গ আর্টিকেল।
হিরো হাঙ্ক পারফরম্যান্স রিভিউ
ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, ফুয়েল ইকোনমি এবং গিয়ারবক্স ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী এবং মাইলেজও পালসার সংস্করণের তুলনায় ভালো। বাইকের ক্ষেত্রে রাইড কোয়ালিটি এবং হ্যান্ডলিংই প্রধান বিষয়; এতে দুটি ডিস্ক ব্রেক রয়েছে যা জরুরী পরিস্থিতিতে সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে, এবং আপনার ভ্রমণকে আরামদায়ক করবে। অনুযায়ী রাইড কোয়ালিটি অসাধারণ। তবে যে লোকেরা ব্যস্ত রাস্তায় বেশির ভাগ সময় বাইক চালায়, এই বাইকটি তাদের বিবেচনার জন্য নয়।
হিরো হাঙ্ক এর বিভিন্ন রিভিউ পর্যালোচনা করে, এর ইঞ্জিন কর্মক্ষমতা, কন্ট্রোলিং এবং কমফোর্ট জোন, ব্রেকিং সিস্টেম, মাইলেজ, প্রয়োজনীয় মোডিফিকেশন্স নিয়ে আলোচনা করা হলো –
- ইঞ্জিন কর্মক্ষমতা:
আপনি লং রুটে এর ইঞ্জিন পাওয়ার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন। অন্যান্য বাইকের তুলনায় এক্সিলারেশন একটু কম বলে মনে হয়েছে। কিন্তু ৬০ কিমি/ঘণ্টার পর তা অন্যরকম হয়ে যায়। এতে রয়েছে ৫টি স্পিড ট্রান্সমিশন সিস্টেম। গিয়ার পরিবর্তন করা বেশ সহজ।তবে, প্রথম গিয়ারে কাজের স্প্যান খুব একটা নেই, এজন্য আপনাকে শুরু করার সাথে সাথে এটি পরিবর্তন করতে হবে।
দ্বিতীয় গিয়ারটি মসৃণ এবং আপনি ৫০০০-৬০০০ আরপিএম-এ ৩৫-৪০ কিমি/ঘন্টা গতি পেতে পারেন৷ তৃতীয় গিয়ারটি উচ্চ গতিতে টানার জন্য এবং সিটি রাইডের জন্য উভয়ই ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই এই বাইকটি লং রুটে, ব্যস্ত রাস্তায়, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করে চালাতে পারবেন। চতুর্থ গিয়ারটি মূলত খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৮০-৮৫ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত উচ্চ গতিতে টানার জন্য। পঞ্চম গিয়ার হল ফিনিশার।
বেশিরভাগ বাইকার সর্বোচ্চ গতি ১১০+ কিমি/ঘন্টা পেয়েছেন। বাইকটি কত ঘন ঘন ব্যবহার করা হয় তার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন গিয়ার সহ, গতি সীমা পরিবর্তন করা যেতে পারে। জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। হাঙ্কের কম্প্রেশন অনুপাত হল ৯:১ যা অকটেনের সাথে ভালোভাবে ম্যাচ করে। হিরো হাঙ্কের নিষ্কাশন পাইপ খুব কম পরিমাণে শব্দ তৈরি করে যা হেলমেট পরার পরে আরো কম হয়ে যায়। ইঞ্জিন ভাইব্রেশন খুবই কম। ৫৫-৬৫ কিমি/ঘণ্টা গতিতে এটি একটু বেশি কম্পন করে কিন্তু তারপরে এটি আবার কম হয়ে যায়।
- কন্ট্রোলিং এবং কমফোর্ট জোন:
কন্ট্রোলিং বাইকটির সেরা অংশ। বাইকাররা এই অংশের পারফরম্যান্সে বেশ সন্তুষ্ট। সেন্টার অফ গ্রাভিটি এই বাইকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এটি আপনাকে নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। প্রস্তুতকারকরা এটিকে এমন ভাবে তৈরী করেছেন যে, এর ওজন সবদিকে সমান ভাবে পরে। ফলে কন্ট্রোল করা সহজ হয়ে যায়, এবং রাইডারকে ব্যস্ত রাস্তায় সুবিধা দেয়। আসনের উচ্চতা এবং হ্যান্ডেলের অবস্থান একটি জটিল কোণ তৈরি করে যা বাইকারকে একটি কমফোর্ট জোন তৈরী করে দেয়।
বাইকাররা কখনও কখনও দীর্ঘ ভ্রমণের পরে পিঠে ব্যথার অভিযোগ করেন। তবে হিরো হাঙ্কের রিভিউয়াররা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করেছেন যে, দীর্ঘ ভ্রমণের পরে আপনি প্রায় কিছুই অনুভব করবেন না। সাসপেনশন সিস্টেম খুব ভালো। ওজনের সমান তারতম্যের কারণে বাইকটি উচ্চ গতিতে কাঁপে না যদি না আপনি ঢিলেঢালা পোশাক না পরেন বা অতিরিক্ত লাগেজ রাখেন। ৭০+ কিমি/ঘন্টা বেগে যাওয়ার পর আপনার মনে হবে বাইকটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
চেইন নিয়ে বাইকারদের কিছু অসন্তুষ্টি আছে। চেইন মাঝে মাঝে শুকনো এবং আলগা হয়ে যায়। তাই আপনাকে নিয়মিত চেইন চেক করতে হবে। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখবেন, উভয় চাকায় সঠিক ভাবে টায়ারের চাপ না থাকলে আপনি যথেষ্ট আরাম এবং টোটাল কন্ট্রোলিং পাবেন না।
- ব্রেকিং:
লাস্ট আপডেটেড হিরো হোন্ডা হাঙ্কের উভয় চাকায় ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। তাই ব্রেক করা আগের চেয়ে সহজ। ব্রেকিংকে গুরুত্ব বিবেচনায় বাইকাররা, একই সময়ে উভয় ব্রেক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি ৭০+ কিমি/ঘন্টা বেগেও আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বাইকটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
পেছনের টায়ারের প্রস্থ কিছুটা কম। পিচ্ছিল রাস্তায় এটি একটি সমস্যা। কারণ ভেজা অবস্থায় এর গ্রিপের অভাব থাকে। কিন্তু রাইডার যদি নিয়ন্ত্রিত লিভারের চাপের সাথে একই সাথে ব্রেক ব্যবহার করতে পারে তবে এটি খুব বেশি সমস্যা তৈরি করে না। তাই ভেজা অবস্থায় অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। ব্রেকিং সিস্টেমটি আরও চওড়া পিছনের টায়ারের সাথে আরও ভাল হতে পারত।
- মাইলেজ:
বেশিরভাগ বাইকাররা হিরো হাঙ্কের জ্বালানী খরচের হার সম্পর্কে সন্তুষ্ট। রিভিউ অনুযায়ী হাইওয়েতে ৪৫-৫০ কিমি/লিঃ এবং ব্যস্ত রাস্তায় ৩৫-৪০ কিমি/লিঃ পাওয়া যায়। জ্বালানি খরচ অনেকটাই নির্ভর করে জ্বালানির মানের উপর। বাইকাররা অকটেন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
- Midification/পরিবর্তন:
হাঙ্কে অনেকগুলি পার্টস রয়েছে যা পরিবর্তন: করা যেতে পারে। রিভিউয়ারদের পরামর্শ হলো, একটি আর ১৫ (R15) সামনে কিট সংযুক্ত করা যেতে পারে, একটি ডিসি সিস্টেম সামনের আলোর ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। স্টক হ্যান্ডেল বদলে হিরো এক্সট্রিম হ্যান্ডেল বা বাজাজ পালসার হ্যান্ডেল ব্যবহার করলে ভালো হতে পারে। কেউ যদি তাৎক্ষণিক পিক আপ নিতে চান তবে তিনি এয়ার ফিল্টারিং সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারেন। তবে সবই করতে হবে বিশেষজ্ঞের হাতে।
হিরো হোন্ডা হাঙ্ক এর সংক্ষিপ্ত স্পেসিফিকেশন
Engine:
- Type: Air cooled, 4 – stroke single cylinder
- Displacement: 149.2 c.c
- Max. Power: 10.6 kW (14.4 Ps) @ 8500rpm
- Max. Torque: 12.80 N – m @ 6500 rpm
- Compression Ratio: 9.1 : 1
- Starting: Self Start
- Engine oil capacity: 1.2 Litres
- Engine oil grade: SAE 10 W 30 SJ grade
Transmission & Chassis
- Clutch: Multiplate wet
- Gear box: 5 Speed constant mesh
- Chassis Type: Tubular, diamond type
Suspension
- Front: Telescopic hydraulic shock absorbers
- Rear: Swing arm with nitrox GRS (Gas reservoir suspension)
Brakes
- Front Brake: Dia 240 mm Disc
- Rear Brake Disc:Dia 220 mm
Wheels & Tyres
- Rim Size Front: 18 x 1.85, 5 spoke cast wheels
- Rim Size Rear: 18 x 2.15, 5 spoke cast wheels
- Tire Size Front: 2.75 x 18 – 42 P, Tubeless tires
- Tyre Size Rear: 80 / 100 X 18 – 47 P, Tubeless tyres
Dimensions
- Length: 2080 mm
- Width: 765 mm
- Wheelbase: 1325 mm
- Saddle Height: 795 mm
- Ground Clearance: 145 mm
- Fuel Tank Capacity: 12.4 liters
- Reserve: 2.2 liters
- Weight: 146 kgs
হিরো হাঙ্ক বাইক সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু মূল্যায়ন
ইতিবাচক:
- নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে ভালো, পাওয়ার মার্ক স্ট্যান্ডার্ড, ডিজাইন খুবই ভালো এবং আকর্ষণীয়।
- হাইওয়ে এবং লম্বা রুটে ড্রাইভিংয়ের জন্য ভালো, ব্রেকিংসিস্টেম ভালো, বাইকের নিয়ন্ত্রণ অনেক ভালো।
- রাইডার এবং পিলিয়ন উভয়ের জন্য আরামদায়ক বসার অবস্থান।
- সাসপেনশন সিস্টেম এবংএক্সিলারেশন ভালো।
- ডাবল ডিস্কের কারণেএই বাইকটিকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
- কম ইঞ্জিন ভাইব্রেশন।
- সার্ভিসিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশ কম।
নেতিবাচক:
- যন্ত্রাংশগুলি ব্যয়বহুল এবং সমস্ত দোকানে সহজে পাওয়া যায় না।
- টায়ারের আকার যথেষ্ট চওড়া নয়। পেছনের টায়ারের প্রস্থ কিছুটা কম। ভেজা রাস্তায় ব্যবহার করা কঠিন
- পিছনের টায়ার মাঝে মাঝে ব্রেক করার জন্য সমস্যা তৈরি করে।
- খুচরা যন্ত্রাংশের দাম বেশি।
- নাইট রাইডিংয়ে এসি লাইটিং সিস্টেম সন্তোষজনক নয়।
- চেইন মাঝে মাঝে শুকনো এবং আলগা হয়ে যায়। যদি এটি পড়ে যায় তবে বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
পরিশেষে, বাইক সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন পছন্দ রয়েছে। বেশিরভাগ বাইকার হিরো হাঙ্কের স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে সন্তুষ্ট। বাইকের ক্ষেত্রে রাইড কোয়ালিটি এবং কন্ট্রোলিংই প্রধান বিষয়; তবে একটি বাইক যত ভালো হোকনা কেন সবকিছু নির্ভর করে রাইডারের দক্ষতার উপর। তাই আপনি বাইকের ভালো যত্ন নেন, এটি আপনাকে ভালো ফিডব্যাক দেবে।