স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ অথবা পরিষ্কার করার উপায় কী?
সাধারণত, বাইকের স্পার্ক প্লাগ সহজেই নষ্ট হয় না। তবে প্লাগ নষ্ট হবার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকে। আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগে সমস্যা আছে এটা যদি সঠিক সময়ে বুঝতে না পারেন তাহলে আপনার বাইকের ইঞ্জিনের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আপনার বাইক চালানোর ধরণ এবং যত্নের উপর নির্ভর করবে আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগ কত সময় পর্যন্ত ঠিক থাকবে। স্পার্ক প্লাগ নষ্ট হয়ে যাবার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো বাইকে পুরানো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা। ফুয়েলে ভেজাল থাকলে বা দীর্ঘদিন প্লাগ পরিষ্কার না করলে কার্বন ডিপোজিটস বেশি পরিমাণে জমে যায়। ফলে স্পার্ক প্লাগ আগের মতো সচল থাকে না।
অন্যদিকে, বাইক ওয়াশ করার সময় প্লাগে পানি চলে যেতে পারে। এমনটা হলে বাইক স্টার্ট করার সময় স্পার্ক প্লাগ জ্বলে যেতে পারে।
আপনি কখন বুঝবেন আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করা লাগবে?
আপনি যদি দেখেন আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগ অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে গেছে এবং এর মধ্যে থেকে কালো ধরণের কালি এসে হাতে লাগছে তাহলে এটি বদলে ফেলা উচিত। যদি দেখেন পুরো প্লাগটি কালো হয়ে আছে এবং উপরের অংশটি বাদামি রঙ দেখাচ্ছে তাহলে বুঝবেন স্পার্ক প্লাগ পরিবর্তন করার সময় এসেছে।
স্পার্ক প্লাগ বাইকের ছোট একটা অংশ তবে এটা বাইকের ইঞ্জিনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। বাইকের ইঞ্জিন ভালো রাখতে স্পার্ক প্লাগ সচল থাকা অনেক প্রয়োজন।
প্লাগ ভালো থাকলে আপনার বাইকের ইঞ্জিনও ঠিকমত কাজ করবে।
আজকের আলোচনায় আমরা জানবো স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করা কেন বাইকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে প্লাগ ক্লিন রাখা যায়।
কেন স্পার্ক প্লাগ পরিস্কার করা প্রয়োজন?
মোটরসাইকেলের ফুয়েলে যদি ভেজাল থাকে অথবা বহুদিন ব্যবহার না করার ফলে ফুয়েল পুরানো হয়ে যায় তাহলে স্পার্ক প্লাগে সমস্যা দেখা দেয়।
বাইক ফুয়েলে কোনোরকম সমস্যা সৃষ্টি হলে তা ইঞ্জিনের উপর প্রভাব ফেলে। যার ফলে স্পার্ক প্লাগে কার্বন ডিপোজিটস ও বাড়তি ময়লা জমা হয় এবং প্লাগটি জ্যাম হয়ে যায়। এমনটা হলে মোটরসাইকেল সহজে স্টার্ট হয় না।
এসব কারণে স্পার্ক প্লাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা জং ধরে গেলে অবশ্যই তা চেঞ্জ করে নিতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময় কোনো মেকানিক দ্বারা স্পার্ক প্লাগটি পরিস্কার করিয়ে নিতে পারেন।
স্পার্ক প্লাগ পরিস্কার রাখবেন যেভাবে
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পর স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করলে আপনার বাইকের পারফরম্যান্স ভালো থাকবে এবং রাইডিং কমফোর্ট বেড়ে যাবে। স্পার্ক প্লাগ সহ বাইকের বাকি পার্টসগুলোরও যত্ন নেওয়া আবশ্যক। আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগ ঠিক থাকলে বাইকের ইঞ্জিনও সচল থাকবে।
স্পার্ক প্লাগের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। এর যত্নের উপর নির্ভর করে আপনার বাইক কি রকম পারফরম্যান্স দিবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক স্পার্ক প্লাগ পরিস্কার রাখার উপায়গুলো কি কি এবং কেন তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
-
পেট্রোল বা কেরোসিন
বাইকের স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করুন পেট্রোল বা কেরোসিন।
প্লাগটি পরিষ্কার করতে কেরোসিন বা পেট্রোলে ডুবিয়ে রাখুন। তারপর, একটি পরিষ্কার ও শুকনো কাপড় দিয়ে প্লাগটি ক্লিন করে নিন।
-
স্যান্ড পেপার
স্যান্ড পেপার দিয়ে প্লাগের উপর জমে থাকা কার্বন ডিপোজিটস ক্লিন করা যায়। স্যান্ড পেপার দিয়ে ক্লিন করার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে প্লাগ ক্লিন করার সময় চোখের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্যান্ড পেপার কাজে না দিলে এর পরিবর্তে ফাইল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আপনি চাইলে একটি ওয়্যার ব্রাশের সাহায্যে ভালো করে ক্লিন করে নিতে পারেন। তবে ওয়্যার ব্রাশ কিছুটা ধারালো হয়ে থাকে তাই সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। ওয়্যার ব্রাশ দিয়ে প্লাগ ক্লিন করার আগে হাতে গ্লাভস পড়ে নেওয়া নিরাপদ। এতে করে হাতে আঘাত লাগবে না। স্পার্ক প্লাগ দীর্ঘসময় ধরে ভালো রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করা আবশ্যক।
-
কার্বুরেটর ক্লিনার স্প্রে
প্লাগে জমে থাকা কঠিন কার্বন ডিপোজিটস ক্লিন করতে কার্বুরেটর ক্লিনার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহারের পর একটি পরিষ্কার এবং শুকনো কাপড় দিয়ে প্লাগটি ক্লিন করে নিন। স্প্রে করার পরও যদি প্লাগে লেগে থাকা ময়লা না যায় সেক্ষেত্রে একটি ওয়্যার ব্রাশের সাহায্যে ঘষে প্লাগটি ক্লিন করে নিন।
-
ভিনেগার সল্যুশন
স্পার্ক প্লাগ ক্লিন করতে ভিনেগার দিয়ে একটি সল্যুশন রেডি করে ব্যবহার করতে পারেন। ১/৩ কাপ ভিনেগার এর সাথে ১/৩ কাপ বাইকার্বোনেট সোডা মিক্স করে একটি ক্লিনিং সল্যুশন প্রস্তুত করে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি প্লাগ হোলে ঢেলে দিলে আটকে থাকা কার্বন ডিপোজিটস বা কঠিন ময়লাগুলো সহজেই বের হয়ে আসে।
এরপর, ওয়্যার ব্রাশ দিয়ে ঘষে জমে থাকা কঠিন কার্বন ডিপোজিটস প্লাগ থেকে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। যদি বাড়তি ময়লা থেকে যায় তাহলে ভিনেগার সল্যুশনে প্লাগটি কিছু সময় ডুবিয়ে রাখতে পারেন। এতে জমে থাকা এক্সট্রা কার্বন ডিপোজিটস বের হয়ে আসবে।
-
ব্লো টর্চ
ব্লো টর্চ দিয়ে প্লাগে আটকে থাকা ময়লা ক্লিন করা যায়। এতে হাত পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,তবে সাবধানে ব্লো টর্চ ব্যবহার করলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। টর্চের হিট আপনার প্লাগের কোনো ক্ষতি করবে না। বেশ কিছু সময় ব্লো টর্চ প্লাগে দিয়ে রাখলে কঠিন সব ময়লা বের হয়ে আসে।
-
স্পার্ক প্লাগ ক্লিনিং মেশিন
স্পার্ক প্লাগ ক্লিন করতে একটি বিশেষ ক্লিনিং মেশিন ব্যবহৃত হয়। এই মেশিনের মাধ্যমে স্যান্ডব্লাস্টিং পদ্ধতিতে স্পার্ক প্লাগটি ক্লিন করা হয়। এই ক্লিনিং টুলটি প্লাগ ক্লিন করতে বেশ কার্যকরী। ক্লিনিং মেশিনের এক পাশে স্পার্ক প্লাগটি ফিক্স করে নিতে হবে। মেশিনের আরেক পাশে এয়ার সাপ্লাই এর জন্য লাইন সেট করে নিতে হবে।
এর পর মেশিনের উপরের অংশে একটি এয়ার ব্যাগ বসিয়ে তা ক্লিপ দিয়ে ফিক্স করে নিতে হবে যাতে স্যান্ডব্লাস্টিং করার সময় সবাই নিরাপদ থাকে। এরপর মেশিনে স্যান্ডব্লাস্টিং মোড অন করে প্লাগটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্লিন করে নিতে হবে যতক্ষণ না কার্বন ডিপোজিটস ও কঠিন ময়লাগুলো পুরোপুরি বের হচ্ছে।
এরপর মেশিনের এয়ার সাপ্লাই মোড অন করে বাকি থেকে যাওয়া ধুলো ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এই টুলটি ব্যবহারের সময় অনেক সতর্ক থাকতে হবে। স্যান্ডব্লাস্টিং করার সময় মেশিনে এয়ার ব্যাগ না থাকলে বা ব্যাগ ছুটে গেলে তা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
স্যান্ডে থাকা সিলিকা ক্রিস্টেলগুলো চোখে এবং শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠে।
এর ফলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টেও আপনি ভুগতে পারেন। যেসব মেকানিক প্রতিনিয়ত স্যান্ডব্লাস্টিং করে থাকেন তাদের লাং ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই নিরাপদ থাকতে, এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা বেশ জরুরি।
-
আইসোপ্রোপাইল এলকোহল
আইসোপ্রোপাইল এলকোহল দিয়ে প্লাগ ক্লিন করা আরেকটি অন্যতম ক্লিনিং পদ্ধতি। প্লাগের টিপ বা শেষ অংশটি যেখানে কার্বন ডিপোজিটস জমে আছে সেই জায়গাটুকু এই এলকোহল সল্যুশনে এক মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
এরপর সল্যুশন থেকে বের করে একটি প্লাষ্টিক ব্রাশের সাহায্যে সেই প্লাগের টিপ থেকে ময়লা তুলে ফেলুন। প্লাগের টিপটি পুরোপুরি ক্লিন করতে প্রয়োজনে ক্লিনিং প্রসেসটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে।
পরিশেষে
মোটরসাইকেলের মেইনটেনেন্সের মধ্যে স্পার্ক প্লাগের যত্ন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশ যা ইঞ্জিনকে সচল রাখে। এটি ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর যত্ন করা মানেই ইঞ্জিনের যত্ন নিশ্চিত করা।
বাইকে ফুয়েলে ভেজাল থাকলে স্পার্ক প্লাগে সমস্যা দেখা দেয়। আপনার ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ বা পরিষ্কার করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক সেইভাবে কত সময় পর পর প্লাগটি ক্লিন রাখতে হবে এই ব্যাপারটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের আলোচিত সব পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার বাইকের স্পার্ক প্লাগের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন আশা করা যায়। ২০২২ সালে বাইকের বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন বাইকস গাইড সাইটে।
এই ব্লগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
কত মাইল পর পর স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করা প্রয়োজন?
প্রতি ১৫,০০০ থেকে ১৬,০০০ মাইলস ব্যবহারের পর বাইকের স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করা প্রয়োজন।
কি দিয়ে স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করা সম্ভব?
স্যান্ড পেপার দিয়ে প্লাগের উপর জমে থাকা কার্বন ডিপোজিটস ক্লিন করা যায়। আপনি চাইলে একটি ওয়্যার ব্রাশের সাহায্যে ভালো করে ক্লিন করে নিতে পারেন। এছাড়াও, আইসোপ্রোপাইল এলকোহল, বিশেষ ক্লিনিং মেশিন ,ব্লো টর্চ, ভিনেগার সল্যুশন কিংবা কার্বুরেটর ক্লিনার স্প্রে ব্যবহার করে স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার করা যায়।
কখন স্পার্ক প্লাগে সমস্যা দেখা দেয়?
মোটরসাইকেলের ফুয়েলে যদি ভেজাল থাকে অথবা বহুদিন ব্যবহার না করার ফলে ফুয়েল যদি পুরানো হয়ে যায় তাহলে স্পার্ক প্লাগে সমস্যা দেখা দেয়।
স্যান্ডব্লাস্টিং করার সময় সতর্ক কেন থাকা লাগবে?
স্যান্ডে থাকা সিলিকা ক্রিস্টেলগুলো চোখে এবং শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠে। সুতরাং, স্যান্ডব্লাস্টিং করার সময় সতর্ক না থাকলে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টেও আপনি ভুগতে পারেন। সাবধানতা অবলম্বন না করলে এমনকি লাং ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
কখন বুঝবেন আপনার স্পার্ক প্লাগ চেঞ্জ করা প্রয়োজন?
বাইক স্টার্ট করার সময় যদি বেশি সমস্যা হয় কিংবা জ্বালানি খরচ বেড়ে যায় তাহলে বুঝবেন স্পার্ক প্লাগ দ্রুত চেঞ্জ করা প্রয়োজন।