বাংলাদেশে বর্তমানে বাইক এবং বাইক রাইডারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ হলো কম বাজেটের মধ্যে বাইকই একমাত্র মাধ্যম যার সাহায্যে তারা অনেক কম সময়েই তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।
তবে, বাইক যে শুধুমাত্র একটি ট্রান্সপোর্ট তা নয়, অনেকের কাছেই এটি একটি ভালোবাসার নাম। যা ঝড় বৃষ্টি কিংবা প্রখর রোদে তাদের সহযাত্রী। অনেকে আবার তাদের এই ভালোবাসার বাইক নিয়ে লং ট্যুরে যেতেও অনেক পছন্দ করেন। তবে, এই বাইক কতদিন আপনার সহযাত্রী হতে পারবে তা নির্ভর করে তার মেইন্টেনেন্স এবং দেখভালের উপরে।
আমরা যখনই বাইকের মেইনটেনেন্সের কথা বলি তখন প্রথমেই আমাদের মাথায় যে বিষয়গুলি আসে তা হলো বাইকের ফুয়েল চেক, বাইকের চেইনে পর্যাপ্ত পরিমাণে লুব্রিক্যান্ট আছে কিনা, বাইকের টায়ারের এয়ার প্রেসার চেক করা ইত্যাদি।
যে একটি বিষয় আমরা সকলেই এড়িয়ে যাই তা হলো মোটরসাইকেলের সিটের যত্ন। আমরা ভুলে যাই,বাইকের অন্যান্য যন্ত্রাংশের যত্নের পাশাপাশি এর সিটের যত্ন নেওয়াটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আমরা আজকে আমাদের এই ব্লগে মোটরসাইকেলের সিট এবং তার যত্ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।
মোটরসাইকেলের সিট কভারের ম্যাটেরিয়াল
মোটরসাইকেলের সিটের যত্ন সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের আগে জানতে হবে মোটরসাইকেলের সিট কি কি ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হয়। একটি বাইকের সিট সাধারণত তিনটি লেয়ারে তৈরি হয়। এর প্রথম লেয়ারে থাকে, বেইজ প্লেট, দ্বিতীয় লেয়ারে থাকে কুশোন এবং তৃতীয় এবং সর্বশেষ লেয়ারে থাকে বাইকের সিট কভার। আমরা এখানে মূলত বাইকের সিট কভারের ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে জানবো।
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের সিট কভার দেখা যায়। একটি হলো আমাদের সকলের পরিচিত লেদার কভার এবং অন্যটি হলো মেরিন গ্রেড ভাইনল। বাইকের সিট কাভারের দাম বিবেচনা করে অনেকেই মেরিন গ্রেড ভাইনলকে বেশি প্রেফার করে থাকে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি সিট কভার খুঁজে থাকলে আর্টিফিশিয়াল মেরিন গ্রেডের তুলনায় অবশ্যই ন্যাচারাল লেদারই বেটার। তবে লেদার কিংবা ভাইনল যে ম্যাটেরিয়ালেরি তৈরি হোক বাইকের সিট কভারের যত্ন না নিলে তা বেশিদিন টেকসই হবে না তাই বাইকের সিট কাভারের যত্ন নেওয়া অবশ্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মোটরসাইকেলের সিটের যত্ন
শহরের ধুলোবালিযুক্ত রাস্তায় কিংবা হাইওয়েতে দৈনন্দিন যাতায়াতের ফলে আমাদের বাইকের সিট বেশ বাজেভাবে ময়লাযুক্ত হয়ে যায়। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে রাইড করলেও বাইকের সিট কভারের লেদারে তা বাজে ইফেক্ট ফেলে। তাই রেগুলারলি বাইকের সিট এবং বাইকের সিট কাভারের যত্ন নেওয়াটা প্রয়োজন। এখানে আমরা তিনটি ধাপে আপনাদের বাইকের সিটের যত্ন সম্পর্কে বলব।
মোটরসাইকেলের সিট কভার ক্লিনিং
বাইকের সিটের যত্নের শুরুতেই এর সিট কভারের ক্লিনিং এর দিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। কারণ, আমরা আমাদের দৈনন্দিন যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বাইক ব্যবহার করে থাকি তাই রাস্তার ধুলাবালি এতে আটকে যায় নিয়মিত তা ক্লিন করা উচিত অন্যথায় নোংরা লেদার পরবর্তীতে আপনাকে সমস্যা দিতে পারে।
প্রথমে বাইকের সিট কভারে আটকে থাকা শুকনো ধুলোবালি গুলি একটি ব্রাশ কিংবা পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মুছে ফেলুন। এরপরে একটি পরিষ্কার কাপড়ে লেদার ক্লিনিং দিয়ে যত্নের সাথে সিট পরিষ্কার করুন অথবা আপনি ওই পরিষ্কার কাপড়টি লেদার ক্লিনিং এ ডুবিয়ে এরপরে তা দিয়ে আপনার বাইকের সিট পরিস্কার করতে পারেন। এতে করে বাইকে আটকে থাকা শুকনো ধুলোবালি এবং কয়েকদিনের জমে থাকা ময়লা ও দূর হবে।
তবে পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে বাইকের এই সিট কভারটি লেদারের তৈরি তাই অবশ্যই যত্নের সাথে কাপড় দিয়ে তা পরিষ্কার করতে হবে না হলে আপনি যদি প্রেশার দিয়ে তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন এতে করে লেদারের ক্ষতি হতে পারে। বাইকের সিট পরিষ্কারের পর তা ন্যাচারালি শুকনো হতে দিন কোনোরকম কৃত্রিম হিটার কিংবা ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না এতে করে আপনার সময় বাঁচতে পারে তবে তা আপনার বাইকের সিটের ক্ষতি করবে।
বাইকের সিট কাভারের কন্ডিশনিং
বাইকের সিট কভারটি পুরোপুরি শুকনো হয়ে যাওয়ার পর এর সিট কভারটি কন্ডিশনিং এর কাজ করতে হবে। আপনি যদি বাইকটি পরিষ্কার করে এভাবেই শুকনো ফেলে রাখেন তবে এতে বাইকের সিট কভারে ক্র্যাক দেখা দিবে পরবর্তীতে যেখান থেকে লেদারটি ছিড়েও যেতে পারে তাই বাইকের সিটি পরিষ্কার করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনটা প্রয়োজন অনুসারে কন্ডিশনিং করাটাও ততটাই প্রয়োজন।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের লেদার কন্ডিশনিং প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন বাইকের সিটের জন্য যখন এমন প্রোডাক্ট কিনবেন তা যেন নন টক্সিক এবং ওয়াটার রিপেলেন্ট ফর্মুলার হয়। এতে করে আপনার বাইকের সিটটি নতুনের মত চকচকে হয়ে যাবে কিন্তু কন্ডিশনিং প্রোডাক্ট এর জন্য সিটের কোন ক্ষতি হবে না।
লেদার কন্ডিশনার ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে বাইকের সিটটি পরিষ্কার এবং শুকনো আছে। বাইকের সিট পরিষ্কারের পর তা ন্যাচারালি শুকয়ে নিন এবং খুব অল্প পরিমাণে লেদার কন্ডিশনার নিন সেটি যত্নের সাথে আপনার বাইকের সিটে ব্যবহার করুন। লেদার কন্ডিশনারটি ব্যবহারের পরে অবশ্যই নিশ্চিত করুন তা যেন ন্যাচারালি ড্রাই আউট হয়। আর এই জন্য বাইকের সিটটি ড্রাই হতে অন্তত এক হতে দুই ঘণ্টা সময় দিন।
একটি বাইকের সিটের কন্ডিশনিং মোটামুটি তিন থেকে পাঁচ মাস পরপর করা উচিত এতে করে আপনার বাইকের সিটের কন্ডিশন নতুনের মত থাকবে এবং আপনার রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স বেটার হবে।
বাইকের সিটের রক্ষণাবেক্ষণ
শুধু কি বাইকের সিটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খেয়াল রাখলেই চলবে? বাইকের সিটের যত্নের দিকে যেমন নজর দেওয়া জরুরি তেমন বাইকের সিটের রক্ষণাবেক্ষণ টাও গুরুত্বপূর্ণ আপনি যদি বাইকের রক্ষণাবেক্ষণ রেগুলার না করেন তাহলে শুধু পরিষ্কার কিংবা কন্ডিশনিং করিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। তাই আসুন এবারে আমরা বাইকের রক্ষণাবেক্ষণের কিছু টিপস সম্পর্কে জেনে নেই।
- বাইকের ফুয়েল ট্যাংকের সামনে একটি ফাঁকা স্থান থাকে সেখানে চেষ্টা করবেন একটি পরিষ্কার কাপড় রেখে দেওয়ার এতে করে বাইক চালানোর সময় কিংবা গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আপনি সেই কাপড় দিয়ে বাইকের সিট পরিষ্কার করে নিতে পারেন। অনেক সময় সিটে ময়লা লেগে যায় যা বেশ কয়েকদিন পর পরিষ্কার করতে সমস্যা হতে পারে তাই যখন ময়লা দেখবেন তখনই যদি পরিষ্কার করে ফেলেন এতে সিট কভারটি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
- বাইক পার্কিং এর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন বাইকটি ডাইরেক্ট রোদে বেশিক্ষণ না থাকে চেষ্টা করবেন বাইকটি কোনো গ্যারেজে কিংবা কোন ছায়াযুক্ত জায়গায় পার্ক করতে কারণ অতিরিক্ত রোদের কারণে আপনার ভাইকে সিটের লেদারের ক্ষতি হতে পারে।
- অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির পানির কারণেও বাইকের সিটের লেদারের ক্ষতি হতে পারে সে ক্ষেত্রে বাইক রাইডিং এর পরে একটি শুকনো কাপড় দিয়ে বাইকের সিটটি মুছে ফেলুন যেন বাইকের সিট বেশি সময় ধরে ভেজা না থাকে।
- প্রত্যেক দিনের রাইডিং এর পরে বাইক বাসায় নিয়ে আসার পরে অবশ্যই তা একটি কভার দ্বারা ঢেকে রাখুন। বাইক কভার দিয়ে ঢেকে রাখাটা জরুরি এতে শুধু বাইকের সিট নয় অন্যান্য যন্ত্রাংশ ধুলোবালি থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
- সর্বশেষ বাইকটিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর অবশ্যই সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যান । এতে করে বাইকের যন্ত্রাংশ গুলির ভালো যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত হয়।
আশা করি, আমাদের আজকের মোটরসাইকেলের সিটের যত সম্পর্কিত এই ব্লকটি আপনাদের উপকারে আসবে এবং ভবিষ্যতে আপনারা আপনাদের মোটরসাইকেলের সিটের যত্ন সম্পর্কে সচেতন হবে। এছাড়া মোটরসাইকেলের যত্ন সম্পর্কিত তথ্য এমন আরো অন্যান্য ব্লগ পেতে আমাদের BikesGuide পেইজে চোখ রাখুন।