চলুন ট্র্যাফিক সাইন সম্পর্কে জানি, নিরাপদ থাকি
রাস্তায় চলাফেরার সময় আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের রোড সাইন বা ট্র্যাফিক সাইন দেখতে পাই। এগুলো বেশিরভাগ সময় দেখেই বুঝা যায় যে এখানে কী করতে আদেশ বা নিষেধ করা হচ্ছে। দেশের অনেক মানুষই লেটেস্ট মোটরসাইকেলের দাম জানে, অথচ এখন পর্যন্ত এই রোড সাইনগুলোর সঠিক মানে জানেন না, অথবা জানলেও মেনে চলেন না। একজন দক্ষ রাইডার যেকোনো অবস্থায় নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন। আর রাস্তায় নিরাপত্তার প্রথম ধাপ হচ্ছে ট্র্যাফিক সাইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা।
রোড সাইনগুলো বিভিন্ন ধরণের হয়। কিছু সাইন রয়েছে শুধুমাত্র দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য, কিছু অবশ্য পালনীয় নির্দেশ সম্পর্কে জানায়, কিছু ট্র্যাফিক সাইনে রয়েছে স্পষ্ট নিষিদ্ধ কাজ, কিছু আপনাকে সতর্ক করার জন্য দেয়া। আজকের প্রতিবেদনে আমরা রোড সাইন কত প্রকার ও কী কী, এসব সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করব এবং বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত কিছু ট্র্যাফিক সাইনের অর্থ জানবো।
রোড সাইন কত প্রকার ও কী কী?
বাংলাদেশে আমরা মূলত ৫ ধরণের ট্র্যাফিক সাইন দেখতে পাই। সেগুলো হচ্ছেঃ
- বাধ্যতামূলক রোড সাইন
- নিষেধাজ্ঞা রোড সাইন
- সতর্কতামূলক রোড সাইন
- তথ্যপূর্ণ রোড সাইন
- রোড মার্কিং ড্রাইভিং চিহ্ন
বাধ্যতামূলক রোড সাইন
বাংলাদেশে এমন কিছু ট্র্যাফিক সাইন দেখতে পাবেন যেগুলো রাস্তায় দেয়া হয় রাইডারদের বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার জন্য। এই সাইনগুলো বৃত্তাকৃতির এবং হালকা নীল রং-এর হয়ে থাকে। এই সাইনগুলোতে মূলত গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা, গতিবিধির সীমা ও নির্ধারিত লেনের পরিচিতি উল্লেখ করা থাকে, যেমন- ডানে বা বামে ঘোরা, রাস্তার ডান অথবা বাম দিকে অবস্থান নেয়া, রিকশা বা সাইকেলের জন্য নির্ধারিত লেন চিহ্নিত করা ইত্যাদি। এই ড্রাইভিং চিহ্নগুলো অমান্য করার কোনও উপায় নেই, কেননা এই সাইনগুলো বিশেষভাবে দুর্ঘটনা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু বাধ্যতামূলক রোড সাইনঃ
নিষেধাজ্ঞা রোড সাইন
এই ধরণের ট্র্যাফিক সাইনগুলো চালক ও পথচারীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কিছু কাজ বা জিনিস নিষিদ্ধ করে বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য দেয়া হয়। এই ধরণের সাইনের লাল রং-এর বৃত্তাকার বর্ডার থাকে, এবং এই বর্ডারের ভেতরে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর নিষেধসূচক বার্তা প্রকাশ করা হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে কখনও কখনও অষ্টভুজ আকৃতির রোড সাইন ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ থাকে সাময়িকভাবে থামা ও চলার নির্দেশ। বাংলাদেশে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু নিষেধাজ্ঞা রোড সাইন নিচে উল্লেখ করছিঃ
সতর্কতামূলক রোড সাইন
রাইডারদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য কিছু বিশেষ ট্র্যাফিক সাইন ব্যবহার করা হয়। এই সাইনগুলো ত্রিভুজাকৃতির হয়, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাল রং-এর বর্ডার থাকে। নিচে প্রচলিত কিছু সতর্কতামূলক রোড সাইন অর্থসহ উল্লেখ করা হলঃ
এছাড়াও কিছু অস্থায়ী ও বিশেষ ধরণের সতর্কতামূলক রোড সাইন রয়েছে। নিচে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলোঃ
তথ্যপূর্ণ রোড সাইন
এই ড্রাইভিং চিহ্নগুলো বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু রাইডারদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন দরকারি তথ্য সম্বলিত কিছু ট্র্যাফিক সাইন থাকে। এই রোড সাইনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলাকার নাম, দিক-নির্দেশনা, বিভিন্ন স্থাপনা বা সেবার পরিচিতি, যেমন- হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির, পার্কিং ইত্যাদি তথ্য প্রদর্শন করে। আমাদের দেশে তথ্যপূর্ণ রোড সাইনগুলো সবুজ, নীল, হলুদ অথবা সাদা রং-এর আয়তক্ষেত্র হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বহুল ব্যবহৃত কিছু তথ্যপূর্ণ ট্র্যাফিক সাইন নিচে দেয়া হলঃ
রোড মার্কিং ড্রাইভিং চিহ্ন
রাস্তার গায়ে সাদা কিংবা হলুদ রঙে বিভিন্ন ট্র্যাফিক সাইন আঁকা থাকে। দূর থেকে আসন্ন ড্রাইভারদের পড়ার সুবিধার জন্য এই চিহ্নগুলো বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থের হয়ে থাকে। লেন লাইন, ক্যারেজ লাইন। ব্যারিয়ার লাইন, ট্র্যাফিক আইল্যান্ড মার্কার, নিষিদ্ধ পার্কিং, ডানে বামে মোড় নেয়া, রাস্তা বিভক্ত হওয়া, ওভারটেকিং নিষিদ্ধ লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন লাইন সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিস্তারিত জানতে BRTA-এর রোড সাইন ম্যানুয়াল পড়ে দেখতে পারেন।
আশা করি আমাদের এই প্রতিবেদনটি আপনাকে ভবিষ্যতে রাস্তায় বাইক চালানোর সময় যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে করে তুলবে রোড-স্মার্ট।
ট্র্যাফিক সাইন এবং দেশের আইন সম্পর্কে জানুন। সবসময় আইনের সাথে তাল মিলিয়ে রাস্তায় চলুন, হ্যাপী রাইডিং!