মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে যতকিছু
ইঞ্জিন যে কোনও যানবাহনের একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর দীর্ঘায়ু বজায় রাখতে সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি ।
আপনার বাইক যখন স্বাভাবিক আচরণ করে না তখন অবশ্যই এটা ইঙ্গিত দেয় ইঞ্জিন সংক্রান্ত নানান সমস্যার ব্যাপারে। ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার জন্যে বিশেষ কিছু লক্ষণও আমাদের ইঙ্গিত দিয়ে সতর্ক করে।
আপনি ড্রাইভিং কত বেশি করেন? অথবা আপনার ব্যবহার করা তেলের গুণমান কত? এসব বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করেও তেল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে।
ইঞ্জিনের অয়েল কোন সময়ে পরিবর্তন করলে আপনার বাইক জন্য কল্যানকর হবে তা সঠিক ধারণা থাকার উচিত।
বাজারে সাধারণত তিন ধরণের ইঞ্জিন অয়েল আমরা পেয়ে থাকি
- মিনারেল
- সেমি-সিন্থেটিক
- সিন্থেটিক
মিনারেল অয়েল
বেশিরভাগ মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার মিনারেল অয়েল ব্যবহারে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মিনারেল অয়েল এর দাম বেশ সস্তা। মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ৮০০-১০০০ কিলোমিটারের ভেতর পরিবর্তন করা উচিত।
সেমি-সিন্থেটিক অয়েল
মিনারেল অয়েলকেই আরও কয়েক ধাপে বিশোধন করে এবং এর সাথে অ্যাডিটিভ যোগ করে সর্বশেষে সেমি-সিন্থেটিক অয়েল তৈরি করা হয়। এর দাম মিনারেলের চেয়ে বেশি । সাধারণত একটি সেমি-সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ১২০০-১৫০০ কিলোমিটার চালানো যায়।
সিন্থেটিক অয়েল
সিন্থেটিক অয়েল ল্যাবে তৈরিকৃত একটি বিশেষ মিশ্রনের তেল যা সর্বোচ্চ পারফরমেন্স নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি বেশি দামি হয়ে থাকে অন্যদের তুলনায়। সাধারণত লিকুইড কুলড বাইকে সিন্থেটিক খুব বেশি ব্যবহার করা হয়।
ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
১. ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা (importance of changing engine oil)
ইঞ্জিন অয়েল কত কিলোমিটার ব্যবহার করার পর আবার পরিবর্তন করা উপযোগী বলে মনে হয় ?
প্রতি ৩০০০ মাইল বাইক চলার পর আপনার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উত্তম। এতে করে আপনার ইঞ্জিনের সুরক্ষা বজায় থাকবে। প্রতি ছয় মাস পর পর তেল পরিবর্তন করলে ইঞ্জিন এর কার্যকারিতা বেড়ে যায় |
নিজের গাড়ির ইঞ্জিনের সুরক্ষার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে এই নিয়ম টি মেনে চলা বেশ নিরাপদ। নির্দিষ্ট একটি দুরুত্ব, অর্থাৎ ৩০০০ কিলোমিটার চালানোর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করাও যেন এক প্রকার সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
২. ইঞ্জিন অয়েল রঙে যদি হয় পরিবর্তন
ইঞ্জিন অয়েলের রঙ পরীক্ষা করার মাধ্যমে বুঝে নেওয়া সম্ভব কখন সেই তেলটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। একটি নির্দিষ্ট সময় বাইক ব্যবহারের পর অয়েলের রঙ একবার অন্তত যাচাই করে নিবেন।
তেলের রঙটি অস্বাভাবিক দেখালে তখন সতর্ক হয়ে যাবেন। রঙ যদি ঘন নোংরা দেখায় তবে অবশ্যই ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন করা উচিত।
৩. ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক আচরণ
আপনার বাইক এর ইঞ্জিনটি হটাৎ বেশি শব্দ করছে এমন কিছু ইঙ্গিত দেখলে বুঝবেন এর ভিতরে কিছু সমস্যা আছে।
আপনার ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন করার আগেই চেক করে নিবেন এতে কোথায় অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। যদি সমস্যা কোনো যান্ত্রিক কেন্দ্রীয় না হয় তবে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে দেখতে পারেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয় তেল দীর্ঘসময় পর্যন্ত পরিবর্তন না করার ফলে।
৪. তেলের লেভেল বা ইনডিকেটর দেখে তেল পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়
ইঞ্জিন অয়েলের লেভেল বলে দিবে কখন তা পরিবর্তন করা দরকার। তেল পরিবর্তনের সময় এসেছে সেটা বুঝতে উঠার এক অন্যতম সহজ উপায় হলো এই পদ্ধতি। এটি করতে ইঞ্জিন অয়েল লেভেল পরীক্ষক ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া, গাড়ি বা বাইকের ইনডিকেটর সহজভাবে বলেই দেয় কখন আপনার তেল পরিবর্তন করা লাগবে।
ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের উপকারিতা
আপনার বাইকের ইঞ্জিন অয়েল লুব্রিকেশনের ভারসম্য ঠিক রাখতে নিয়মিত তেল পরিবর্তন করা শ্রেয়। ইঞ্জিন লুব্রিকেশন ঠিক থাকলে ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আপনার ইঞ্জিন অনেক সময় ধরে জমে থাকা পুরানো তেলের কারণে খুব সহজেই গরম হয়ে যেতে পারে।
যার ফলে কিছু শতাংশ যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে কাজ করা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
তাই তেল পরিবর্তনের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো ইঞ্জিনে কোনো প্রকার পুরনো তেলের ময়লা আবর্জনা বেশি দিন জমে থাকে না। ফলে আপনার ইঞ্জিন স্বাচ্ছন্দে দ্রুত গতিতে চলাচল করতে সক্ষম হয়।
ইঞ্জিন তেলের পরিবর্তনের পরিষেবা নেওয়া অত্যান্ত জরুরি
সকল যানবাহন চালকদের যত্নসহকারে তেল পরিবর্তনের এই বিশেষ সার্ভিস প্রয়োগ করা উচিত। এতে করে আপনার ইঞ্জিনকে পুনর্জীবিত করে এর কার্যকারিতা বাড়ানো যায়।
এছাড়াও, তেলের পরিবর্তনের জন্য সার্ভিসিং করার মাধ্যমে একটি যানবাহনের নিরাপত্তা ও দক্ষতা নিশ্চিত হয়, যেমন অয়েল ফিল্টার, ব্রেক প্যাড, টায়ার ইত্যাদি পরীক্ষা করে মেরামত করার মাধ্যমে আপনার ইঞ্জিনের সক্ষমতা বেড়ে যায়।
বাইক ব্যবহারে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা পেতে অবশ্যই আপনার ইঞ্জিন ভালো রাখতে হবে এবং সেই জন্যই, তেল পরিবর্তনের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ এখানে |
স্বাচ্ছন্দে বাইক নিয়ে চলাচল করা শুধু তখনি সম্ভব যখন ইঞ্জিন অয়েলের সঠিক ব্যবহার আমরা মেনে চলব।
FAQ
১. কত কিলোমিটার পরপর ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করা উচিত?
যদি আপনি মিনারেল অয়েল ব্যাবহার করেন তাহলে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার এর মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করা উচিত।
২. কোন গ্রেড এর ইঞ্জিন ইউজ অয়েল করা উচিত ?
আপনার বাইক এর ইউজারম্যানুয়াল এ যেই গ্রেড ইউজার ম্যানুয়াল এ যেই গ্রেড মেনশন করা আছেই ওই গ্রেড টাই ব্যাবহার করতে হবে।
৩. মিনারেল না সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ইউজ করা উচিত ?
এইটা আপনার বাজেট এর উপর নির্ভর করবে। তবে মিনারেল অয়েল এর ডিউরেবলিটি বেশ কম।
৪.একটা মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল কত কিলোমিটার চলে ?
মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল সাধারণত ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার চলে।
৫. সেমী সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল এর ডিউরেবলিটি কেমন ?
একটা সেমী সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল খুব সহজে ১২০০-১৫০০ কিলোমিটার যেতে পারে