রোডে বাইক চালানোর সময় আমরা কারণে-অকারণে প্রচুর হর্ন দিয়ে থাকি। অন্যান্য ইন্ডিকেটর যেমন – হেডল্যাম্প, টার্ন সিগনাল, হ্যাজার্ড লাইটের মতো হর্ন’ও খুব প্রয়োজনীয় ইন্ডিকেটর। নিজের উপস্থিতি জানানোর জন্য মোটরসাইকেলের হর্ন দেয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অন্যান্য গাড়ি বা পথিকদের জন্যে কিন্তু এটি বেশ বিরক্তিকর। তাই ভালো হয় যদি আমরা হর্নের দেয়া কমিয়ে বা বন্ধ করে হেডল্যাম্পের মাধ্যমেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পারি। কিন্তু এটি কিভাবে করা সম্ভব? আজ সেই সম্বন্ধেই আপনাদের জানাবো।
কিভাবে মোটরসাইকেলের হেডল্যাম্প হর্নের বিকল্প হতে পারে?
মোটরসাইকেলের হর্ন যেকোনো মোটরসাইকেলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও যাদের পেছনে বসে হর্ন বাজানো হয়, তাদের কিন্তু বেশ বিরক্তিকর লাগে। আবার শহরাঞ্চলে শব্দ-দূষণের বেশ কারণ’ও বটে এই হর্ন। তাই সব জায়গায় ইদানীং হর্ন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু স্পেসিফিক এরিয়া যেমন – স্কুল, হাসপাতাল, অফিস ইত্যাদির সামনে তো হর্ন না দেয়ার জন্য নির্দেশনা পর্যন্ত দেয়া থাকে।
আবার মোটরসাইকেলের সাথেই এখন প্রয়োজনীয় ইন্ডিকেটর দিয়ে দেয়া আছে, আর হেডল্যাম্প হিসেবে অনেক বাইকেই হ্যালোজেন লাইট ব্যবহার করা হয়, যার আলো বেশ তীব্র। তাই হর্ন কিন্তু বিশেষ একটা বাজানোর প্রয়োজন পরে না। আর যেসব স্থানে হর্ন বাজানোর জন্য নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলোর নির্দেশনা মেনে চললেই কিন্তু হর্নের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
আর হর্নের অল্টারনেটিভ হিসেবে কিন্তু চাইলেই বাইকের ইন্ডিকেটরগুলো ব্যবহার করা যায়। এখন এমনই কিছু টেকনিক সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
১। উজ্জ্বল আলোর ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা।
যদিও এখন বেশিরভাগ বাইকে হেডল্যাম্প হিসেবে হ্যালোজেন লাইট এবং ইন্ডিকেটর হিসেবে এলইডি ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই যাদের বাইকে এমন আছে, তাদের প্রয়োজন পরবে না। আর যাদের বাইকে ভালো মোটরসাইকেল হেডল্যাম্প নেই, তারা আলাদাভাবে লাগিয়ে নিতে পারেন।
আর দিনের আলোতে বাইক নেয়া বের হলেও নিজের হেডল্যাম্প জ্বালিয়ে রাখার আর টার্ন নেয়ার সময় ইন্ডিকেটরের ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি বেশিরভাগ সময় হর্ন না দিয়েই নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে জানাতে পারবেন। আবার এতে করে মোটরসাইকেল হেডল্যাম্পের সুবিধা’ও আপনি ভালোভাবে ভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানো’র ক্ষেত্রে এটি বেশ কাজে দিবে।
২। হেডল্যাম্প ফ্ল্যাশ করা।
সাধারণত, আমরা যখন কোনো গাড়ির পেছনে থাকি এবং সাইড দিয়ে চলে যেতে চাই, তখন হর্নের ব্যবহার করি। এমন সিচুয়েশনে হর্ন না দিয়ে, যাস্ট হেডল্যাম্পটা ফ্ল্যাশ করলেই কিন্তু সামনের ড্রাইভারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। সবসময় এটা কাজ না করলেও বেশিরভাগ সময়ই করবে। তাই, প্রথমে হেডল্যাম্প ফ্ল্যাশ করে চেষ্টা করুন, যদি এতে কাজ না হয়, তাহলে হর্নের ব্যবহার করুন।
৩। টার্ন নেয়ার সময় ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা।
অনেকসময় দেখা যায় যে টার্ন নেয়ার সময়’ও আমরা হর্ন দেই। অথচ এখানে শুধু ইন্ডিকেটরের ব্যবহার করার কথা। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা টার্ন নেয়ার সময় ইন্ডিকেটর অন রেখে হর্ন না দিয়ে টার্ন নেই। আর সামনে কোনো গাড়ি বা পথিক থাকলে তাকে’ও হেডল্যাম্প ফ্ল্যাশ করে আমরা নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারি।
৪। হ্যাজার্ড লাইটের ব্যবহার করা।
কোনো ইন্টারসেকশন বা ক্রসরোড দিয়ে সোজা বাইক চালানোর সময় আমরা হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করে নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে অন্যদের জানাতে পারি। হ্যাজার্ড লাইট ব্যবহার করতে না চাইলে শুধু হেডল্যাম্প ফ্ল্যাশ করার মাধ্যমে’ও এই কাজটি করা যায়। ইন্টারসেকশনে হর্ন দেয়ার পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়।
পরিসংহার
তো এভাবেই আমরা আমাদের হর্নের ব্যবহার খুব কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি। এতে করে আশেপাশের ড্রাইভাররা’ও বিরক্ত হবেন না, আবার শব্দ-দূষণ’ও অনেকটা কমিয়ে ফেলা যাবে। এটি করতে আমাদেরকে শুধু হেডল্যাম্প, ইন্ডিকেটর ও হ্যাজার্ড লাইটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এই প্র্যাক্টিসগুলো নিজে মেনে চলুন এবং অন্যদের’ও এগুলো সম্পর্কে জানান।