রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি?

04 Sep, 2023   
রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি?

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল রাইডের সময় যেকোনো সমস্যা কিংবা দুর্ঘটনা এড়াতে আপনাকে বিভিন্ন দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইক রাইডাররা প্রায়ই রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইড করে থাকেন কোনো না কোনো প্রয়োজনে, অথবা শখের বসে। আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায় তরুণ রাইডাররা মাওয়া হাইওয়েতে রাতে রাইড করতে যান। এর মধ্যে অনেক রাইডারেরই অভ্যাস থাকে রাতে হাইওয়েতে রাইড করার, আবার অনেকের কাছেই এক্সপেরিয়েন্সটি সম্পূর্ণ নতুন। তাই চলুন রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-গুলো জেনে নেইঃ  

১. হেলমেট ব্যবহার করা

হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটা হলো, ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা। আপনি বাইক রাইডিং-এ যতো দক্ষ চালকই হোন না কেনো, একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন সেইফ রাইডিং-এর জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সচরাচর দেখা যায়, অনেকেই আমরা হেলমেট ব্যবহার করতে চাই না। অনেকেই মনে করেন হেলমেট একটা সুন্দর রাইডিং-এর অন্যতম বাধা, তাদের মতে হেলমেট পড়লে আশেপাশের সঠিকভাবে লক্ষ্য করা যায়না। 

অনেকের মতে, হেলমেট ব্যবহারের পর দেখা যায়, আপনার বাইকের মিটার ডিসপ্লে-এর তুলনায় বাইকের গতি কম মনে হয়। ব্যাপারটা হলো হেলমেট পড়ে থাকা অবস্থায় আপনার চারপাশের বাতাসের চাপের কারনে আপনি মাথায় একটা চাপ অনুভব করেন, যার ফলে আপনার মনে হয় গাড়ির গতি কম। আসলে এক্ষেত্রে আপনার একটা মাইন্ড-সেট তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিত হেলমেট পড়ার অভ্যাস করতে হবে। 

২. গতির উপর নিয়ন্ত্রণ

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইডিং-এর সময় গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। গতি অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারনে প্রায় প্রত্যেকদিনই দুর্ঘটনার নিউজ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে দেখতে পাই। ‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালোনা’ – নিজেকে খুব দক্ষ প্রমাণ করতে চাওয়ার চেষ্টায় আপনি ঝোঁকের মাথায় রাতের অন্ধকারে গতি বাড়িয়ে চালিয়ে নিজেরই বিপদ ডেকে আনছেন। তাই, রাতে বাইক নিয়ে হাইওয়েতে স্পিড-শো করবেন না। মোটরসাইকেল চালানোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। 

৩. ছো্ট খাটো গর্ত হতে সাবধান

অনেক সময় হাইওয়েতে মাঝে ছোট খাটো কিছু গর্ত থাকে, রাতে খুব একটা চোখেও পড়ে না। কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনা করলে এগুলো মাঝে মাঝে ভালো বিপত্তি ঘটাতে পারে। এই ছোট খাটো গর্ত গুলোয় আপনার বাইকের চাকা পড়ে গেলে মুহূর্তের মাঝেই বাইকের কন্ট্রোল চলে যেতে পারে। তাই মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং এসব ছোট খাটো ব্যাপারে সাবধান হউন। 

৪. বাতাসের চাপ

রাতে হাইওয়েতে বাতাসের চাপ অনেক বেশি থাকে এবং অনেক এলোমেলোভাবে বাতাস বইতে থাকে। যদি আপনার বাইকের নিয়ন্ত্রণজনিত কোনো সমস্যা থাকে তবে রাতে হাইওয়েতে বাইক চালাতে খুবই সাবধান থাকবেন। যদিও এখনকার সকল বাইক-ই প্রায় আধুনিক এরো ডিজাইন সম্বলিত, তারপরও আপনি যদি মনে করেন, বাতাসের চাপের কারনে বাইকের গতির হেরফের হতে পারে তবে সে অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণযোগ্য গতিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছি। 

৫. বাস/ট্রাক ওভারটেক

এটা সচরাচর দেখা যায়, বেশির ভাগ তরুন রাইডাররা রাতে হাইওয়েতে দূরপাল্লার বাস/ট্রাকগুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করে। এটা বুদ্ধিহীনতারই পরিচয়। শুধু যে তারা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তা নয়, আশেপাশের রাইডারদেরও বিপদে ফেলে দেয়, আর এই কারনে বাইকার কিংবা পথচারীর মৃত্যুর খবর তো আছেই! ঝুঁকি বিবেচনা না করে কোনো কাজ করতে যাবেন না।

রাতে হাইওয়েতে অবশ্যই খুবই সাবধান থাকবেন, বাস/ট্রাকের হেডলাইটের আলো দেখে দূরত্ব অনুমান করে বাইক চালাবেন। কোনো ভাবেই আগ বাড়িয়ে আপনি ওভারটেক করতে যাবেন না। একটা উক্তি না বললেই না “ছোট জিনিসের মোহে যে বড় কিছু হারাতে দুঃখবোধ করে না, সে আর যাই-ই হোক, শিক্ষিত নয়”, এইখানে ছোট জিনিস হলো “ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা” আর বড় কিছু হলো “আপনার জীবন”। মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা-গুলো মেনে চলবেন।

৬. স্পিড ব্রেকার লক্ষ্য করা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো রাতে হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় স্পিড ব্রেকারের দিকে নজর রাখবেন। অনেক সময়ই অনেক বাইকাররা স্পিড ব্রেকার খেয়াল করেন না, এমতাবস্তায় যদি স্পিড বেশি থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলছি এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাতে হাইওয়েতে স্পিড ব্রেকার ও ভাঙ্গা গর্ত গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে বাইক চালাবেন। হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনুন।

৭. যানবাহনের গতিবিধি লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটি হলো, হাইওয়েতে খেয়াল রাখতে হবে আপনার সামনে পিছনে কি ধরণের যানবাহন চলছে, গাড়ির গতি কেমন, কিভাবে চালাচ্ছে, কতোটা দূরত্বে অবস্থান করছে, এসব বিষয়। 

অনেকসময়ই দেখা যায়, আপনার গতি হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু পাশের গাড়িটি গতির কন্ট্রোল হারিয়ে আপনার বাইকের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দেয়, এতে আপনি বড় একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। রাতের বেলা খেয়াল রাখা একটু কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে, তারপরও সতর্ক থাকুন। ভারী যানবাহনের আশেপাশে, সামনে-পিছনে বাইক রাইড করার সময় নিজের ও পাশের গাড়ির গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুন। রড, বাঁশ বহনকারী গাড়ি গুলো থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখুন। 

৮. রাতে হাইওয়েতে বৃষ্টি

বর্ষাকালে যেকোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। হাইওয়েতে রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়া মানে আপনি খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলেন, তাই না? অনেকেই হয়তো বৃষ্টির মাঝে বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যদি অনভিজ্ঞ হোন, তবে কোথাও দাড়িয়ে বৃষ্টি কমার পর রাইড করাটাই ভালো। রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী এটিই শ্রেয় হবে বলে মনে করি।

বৃষ্টিতে আপনার বাইকের টায়ার বা গ্রিপিং অথবা রাস্তার সাথে চাকার সামঞ্জস্যতা ধরে রাখাটাই অনেক কঠিন ব্যাপার। ওয়েট-টায়ার থাকলে আপনার বাইকের স্পিড কমে যাবে আবার বেড়ে যাবে, এমন সমস্যা হবে আবার হাইওয়েতে গ্রিপিং সঠিকভাবে নাও হতে পারে। ঝুঁকি বিবেচনা-য় এটি গুরুত্বর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যেহেতু রাতে রাইড করছেন, উত্তম পরামর্শ এটাই হবে যে আপনি কোনো নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন এবং বৃষ্টি শেষ হলে আবার যাত্রা শুরু করুন। হাইওয়ের যেখানে সেখানে দাঁড়াবেন না, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। 

৯. রাস্তার বাঁক লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি হলো, রাতে হাইওয়েতে রাস্তার মাঝে থাকা টারনিং পয়েন্ট বা বাঁকগুলো দেখে চালাবেন। আপনার বাইকের ধরণ এবং কার্যক্ষমতা বুঝে এসব টার্নিং পয়েন্টগুলোর মাঝে টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে জায়গাটুকু পার হবেন। তাড়াহুড়া করতে যাবেন না, বিশেষত পাহাড়ি বাঁকের ক্ষেত্রে। 

বাইকের চাকার আকৃতির উপরেও নির্ভর করে আপনি কীভাবে বাঁকগুলোতে টার্নিং করবেন। ধরুন “এফজেডএস” বাইকের টায়ার একটু গোল আকৃতি হবার কারনে এই বাইক দিয়ে আপনি সহজেই টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে পার হতে পারবেন। আবার,ঝুঁকি বিবেচনা করলে অন্যান্য বাইক যেমন “পালসার” কিংবা “অ্যাপাচি” হলে ঝামেলায় পরতে পারেন, তাই বাঁক লক্ষ্য রাখবেন ও সাবধানে চালাবেন।

১০. হেডলাইট চেক করুন

হাইওয়েতে রাতের বেলায় আপনার হেডলাইট ভালো করে চেক করে পরে বাইক নিয়ে বের হবেন। এটি রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে অন্যতম। অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ভালো মানের লাইট ব্যবহার করবেন। এতে করে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। আরজিএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনা-য় দিনের তুলনায় রাতের বেলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি।

আরও পড়ুন – হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম ও কৌশল

আশা করি হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনলে, রাতে হাইওয়েতে আপনার বাইক রাইডিং হবে আরও বেশি নিরাপদ। তাই হাইওয়েতে রাতে রাইড করার সম্পূর্ণ মজা উপভোগ করতে নিজ দায়িত্বে মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করে বাইক চালান। 

বেপরোয়া ভাবে চালাতে গিয়ে নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিবেন না। দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা যখনই হাইওয়েতে বাইক চালাবেন আশেপাশের সবকিছুর প্রতি ভালো করে নজর রেখে বাইক চালাবেন। মনে রাখবেন, “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”।

While riding a motorcycle on the highway at night, you must take care of various aspects to avoid any problems or accidents. In our country, young riders often go for a night ride on the Mawa highway. Many of these riders are used to riding on highways at night, and for many the experience is completely new. So let’s know the rules for riding a motorcycle on the highway at night:

1. Use a good-quality helmet. No matter how skilled you are in bike riding, one thing to always remember is that helmet use is mandatory for safe riding.
2. Do control over speed because ‘Nothing is too much’ – trying to prove yourself too good, you’re putting yourself at risk by speeding up the incline in the dark of night. So, don’t do a speed show on the highway with your bike at night.
3. Beware of small holes which seem invisible at night. If the wheel of your bike falls into these small holes, the bike’s control can be lost in a moment.
4. Note the air pressure to make sure the speed is alright.
5. Bus/truck overtaking shouldn’t be the right choice for an ideal rider.
6. Note the speed breaker to control your speed whenever is needed.
7. Follow the movement of vehicles: to let yourself know you are on the right track.
8. Be careful while raining on the highway at night, stop somewhere safe, and once the rain stops, drive slowly and cautiously.
9. Follow the curve of the road to move your bike perfectly.
10. And most importantly, check the headlights before starting your bike journey on a highway at night.

Don’t risk your life by driving recklessly. Whenever you ride on the highway during the day or at night, keep a close eye on your surroundings. Remember, ‘An accident is a cry of a lifetime.’ Have a safe ride.

রাতের বেলা হাইওয়েতে রাইডিং নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা

রাতে হাইওয়েতে রাইডিং-এর জন্য অ্যান্টি গ্লেয়ার চশমা পড়া যাবে কি?

বাইক চালকদের জন্য সাধারণত এই চশমা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। তবে রাতে চালানোর সময় সমস্যা বাড়লে অ্যান্টি গ্লেয়ার চশমা কাজে আসতে পারে।

রাতে হাইওয়ে রাইডিং-এ রিয়ার ভিউ মিরর কেমন কার্যকরী?

বিপরীত লেনের পাশাপাশি পিছনে আসা গাড়ি বা বাইকের হেডলাইটের আলো থেকে আপনার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। অনেকসময় রিয়ার ভিউ মিররে আলো প্রতিফলিত হয়ে সরাসরি চালকের চোখে পড়ে। তাই রাতে লম্বা ভ্রমণের আগে আলো যাতে প্রতিফলিত হয়ে চোখে না পড়ে সেইভাবে রিয়ার ভিউ মিরর অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারেন।

রাতে হাইওয়েতে রাইডিং-এর জন্য হেলমেট কেমন হওয়া উচিত?

বাইক চালকদের সবসময় উন্নত মানের হেলমেট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। পুরু কাঁচের টেকসই হেলমেট ব্যবহার করুন যাতে রাতের বেলা হেডল্যাম্পের উজ্জ্বল আলো সরাসরি চোখে পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।

রাতে হাইওয়েতে রাইডিং-এ চোখের যত্ন নেওয়া কতোটা জরুরী?

চোখের যত্ন নেওয়া বাধ্যতামূলক কারন রাইডিং-এ পুরো বিষয়টাই চোখ নির্ভর।  খুব বেশি আলো সহ্য করতে যদি চোখে সমস্যা হয় বিশেষ করে রাতের সময় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালাবেন।

রাতে হাইওয়েতে রাইডিং-এর জন্য উইন্ডশিল্ড এর ব্যবহার কতোটুক?

বিপরীত লেন থেকে আসা গাড়ির উজ্জ্বল আলো উইন্ডশিল্ড ভেদ করে আপনার চোখে আঘাত করলে আপনি রিস্কে পড়তে পারেন। আর তাই উইন্ডশিল্ড নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, পাশাপাশি স্ক্র্যাচ রয়েছে কিনা সেটিও পরীক্ষা করুন।

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল রাইডের সময় যেকোনো সমস্যা কিংবা দুর্ঘটনা এড়াতে আপনাকে বিভিন্ন দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইক রাইডাররা প্রায়ই রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইড করে থাকেন কোনো না কোনো প্রয়োজনে, অথবা শখের বসে। আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায় তরুণ রাইডাররা মাওয়া হাইওয়েতে রাতে রাইড করতে যান। এর মধ্যে অনেক রাইডারেরই অভ্যাস থাকে রাতে হাইওয়েতে রাইড করার, আবার অনেকের কাছেই এক্সপেরিয়েন্সটি সম্পূর্ণ নতুন। তাই চলুন রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-গুলো জেনে নেইঃ  

১. হেলমেট ব্যবহার করা

হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটা হলো, ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা। আপনি বাইক রাইডিং-এ যতো দক্ষ চালকই হোন না কেনো, একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন সেইফ রাইডিং-এর জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। সচরাচর দেখা যায়, অনেকেই আমরা হেলমেট ব্যবহার করতে চাই না। অনেকেই মনে করেন হেলমেট একটা সুন্দর রাইডিং-এর অন্যতম বাধা, তাদের মতে হেলমেট পড়লে আশেপাশের সঠিকভাবে লক্ষ্য করা যায়না। 

অনেকের মতে, হেলমেট ব্যবহারের পর দেখা যায়, আপনার বাইকের মিটার ডিসপ্লে-এর তুলনায় বাইকের গতি কম মনে হয়। ব্যাপারটা হলো হেলমেট পড়ে থাকা অবস্থায় আপনার চারপাশের বাতাসের চাপের কারনে আপনি মাথায় একটা চাপ অনুভব করেন, যার ফলে আপনার মনে হয় গাড়ির গতি কম। আসলে এক্ষেত্রে আপনার একটা মাইন্ড-সেট তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিত হেলমেট পড়ার অভ্যাস করতে হবে। 

২. গতির উপর নিয়ন্ত্রণ

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী রাতে হাইওয়েতে বাইক রাইডিং-এর সময় গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। গতি অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারনে প্রায় প্রত্যেকদিনই দুর্ঘটনার নিউজ আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিতে দেখতে পাই। ‘অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালোনা’ – নিজেকে খুব দক্ষ প্রমাণ করতে চাওয়ার চেষ্টায় আপনি ঝোঁকের মাথায় রাতের অন্ধকারে গতি বাড়িয়ে চালিয়ে নিজেরই বিপদ ডেকে আনছেন। তাই, রাতে বাইক নিয়ে হাইওয়েতে স্পিড-শো করবেন না। মোটরসাইকেল চালানোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। 

৩. ছো্ট খাটো গর্ত হতে সাবধান

অনেক সময় হাইওয়েতে মাঝে ছোট খাটো কিছু গর্ত থাকে, রাতে খুব একটা চোখেও পড়ে না। কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনা করলে এগুলো মাঝে মাঝে ভালো বিপত্তি ঘটাতে পারে। এই ছোট খাটো গর্ত গুলোয় আপনার বাইকের চাকা পড়ে গেলে মুহূর্তের মাঝেই বাইকের কন্ট্রোল চলে যেতে পারে। তাই মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং এসব ছোট খাটো ব্যাপারে সাবধান হউন। 

৪. বাতাসের চাপ

রাতে হাইওয়েতে বাতাসের চাপ অনেক বেশি থাকে এবং অনেক এলোমেলোভাবে বাতাস বইতে থাকে। যদি আপনার বাইকের নিয়ন্ত্রণজনিত কোনো সমস্যা থাকে তবে রাতে হাইওয়েতে বাইক চালাতে খুবই সাবধান থাকবেন। যদিও এখনকার সকল বাইক-ই প্রায় আধুনিক এরো ডিজাইন সম্বলিত, তারপরও আপনি যদি মনে করেন, বাতাসের চাপের কারনে বাইকের গতির হেরফের হতে পারে তবে সে অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণযোগ্য গতিতে বাইক চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছি। 

৫. বাস/ট্রাক ওভারটেক

এটা সচরাচর দেখা যায়, বেশির ভাগ তরুন রাইডাররা রাতে হাইওয়েতে দূরপাল্লার বাস/ট্রাকগুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করে। এটা বুদ্ধিহীনতারই পরিচয়। শুধু যে তারা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে তা নয়, আশেপাশের রাইডারদেরও বিপদে ফেলে দেয়, আর এই কারনে বাইকার কিংবা পথচারীর মৃত্যুর খবর তো আছেই! ঝুঁকি বিবেচনা না করে কোনো কাজ করতে যাবেন না।

রাতে হাইওয়েতে অবশ্যই খুবই সাবধান থাকবেন, বাস/ট্রাকের হেডলাইটের আলো দেখে দূরত্ব অনুমান করে বাইক চালাবেন। কোনো ভাবেই আগ বাড়িয়ে আপনি ওভারটেক করতে যাবেন না। একটা উক্তি না বললেই না “ছোট জিনিসের মোহে যে বড় কিছু হারাতে দুঃখবোধ করে না, সে আর যাই-ই হোক, শিক্ষিত নয়”, এইখানে ছোট জিনিস হলো “ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা” আর বড় কিছু হলো “আপনার জীবন”। মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা-গুলো মেনে চলবেন।

৬. স্পিড ব্রেকার লক্ষ্য করা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো রাতে হাইওয়েতে বাইক চালানোর সময় স্পিড ব্রেকারের দিকে নজর রাখবেন। অনেক সময়ই অনেক বাইকাররা স্পিড ব্রেকার খেয়াল করেন না, এমতাবস্তায় যদি স্পিড বেশি থাকে তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই বলছি এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাতে হাইওয়েতে স্পিড ব্রেকার ও ভাঙ্গা গর্ত গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে বাইক চালাবেন। হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনুন।

৭. যানবাহনের গতিবিধি লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-এর মধ্যে একটি হলো, হাইওয়েতে খেয়াল রাখতে হবে আপনার সামনে পিছনে কি ধরণের যানবাহন চলছে, গাড়ির গতি কেমন, কিভাবে চালাচ্ছে, কতোটা দূরত্বে অবস্থান করছে, এসব বিষয়। 

অনেকসময়ই দেখা যায়, আপনার গতি হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু পাশের গাড়িটি গতির কন্ট্রোল হারিয়ে আপনার বাইকের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দেয়, এতে আপনি বড় একটা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। রাতের বেলা খেয়াল রাখা একটু কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে, তারপরও সতর্ক থাকুন। ভারী যানবাহনের আশেপাশে, সামনে-পিছনে বাইক রাইড করার সময় নিজের ও পাশের গাড়ির গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুন। রড, বাঁশ বহনকারী গাড়ি গুলো থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব রাখুন। 

৮. রাতে হাইওয়েতে বৃষ্টি

বর্ষাকালে যেকোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। হাইওয়েতে রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়া মানে আপনি খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলেন, তাই না? অনেকেই হয়তো বৃষ্টির মাঝে বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি যদি অনভিজ্ঞ হোন, তবে কোথাও দাড়িয়ে বৃষ্টি কমার পর রাইড করাটাই ভালো। রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম অনুযায়ী এটিই শ্রেয় হবে বলে মনে করি।

বৃষ্টিতে আপনার বাইকের টায়ার বা গ্রিপিং অথবা রাস্তার সাথে চাকার সামঞ্জস্যতা ধরে রাখাটাই অনেক কঠিন ব্যাপার। ওয়েট-টায়ার থাকলে আপনার বাইকের স্পিড কমে যাবে আবার বেড়ে যাবে, এমন সমস্যা হবে আবার হাইওয়েতে গ্রিপিং সঠিকভাবে নাও হতে পারে। ঝুঁকি বিবেচনা-য় এটি গুরুত্বর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। যেহেতু রাতে রাইড করছেন, উত্তম পরামর্শ এটাই হবে যে আপনি কোনো নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন এবং বৃষ্টি শেষ হলে আবার যাত্রা শুরু করুন। হাইওয়ের যেখানে সেখানে দাঁড়াবেন না, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভাবনা আছে। 

৯. রাস্তার বাঁক লক্ষ্য করে চলা

রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে আরেকটি হলো, রাতে হাইওয়েতে রাস্তার মাঝে থাকা টারনিং পয়েন্ট বা বাঁকগুলো দেখে চালাবেন। আপনার বাইকের ধরণ এবং কার্যক্ষমতা বুঝে এসব টার্নিং পয়েন্টগুলোর মাঝে টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে জায়গাটুকু পার হবেন। তাড়াহুড়া করতে যাবেন না, বিশেষত পাহাড়ি বাঁকের ক্ষেত্রে। 

বাইকের চাকার আকৃতির উপরেও নির্ভর করে আপনি কীভাবে বাঁকগুলোতে টার্নিং করবেন। ধরুন “এফজেডএস” বাইকের টায়ার একটু গোল আকৃতি হবার কারনে এই বাইক দিয়ে আপনি সহজেই টার্নিং কিংবা কর্নারিং করে পার হতে পারবেন। আবার,ঝুঁকি বিবেচনা করলে অন্যান্য বাইক যেমন “পালসার” কিংবা “অ্যাপাচি” হলে ঝামেলায় পরতে পারেন, তাই বাঁক লক্ষ্য রাখবেন ও সাবধানে চালাবেন।

১০. হেডলাইট চেক করুন

হাইওয়েতে রাতের বেলায় আপনার হেডলাইট ভালো করে চেক করে পরে বাইক নিয়ে বের হবেন। এটি রাতে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম-এর মধ্যে অন্যতম। অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ভালো মানের লাইট ব্যবহার করবেন। এতে করে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। আরজিএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনা-য় দিনের তুলনায় রাতের বেলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি।

আরও পড়ুন – হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর নিয়ম ও কৌশল

আশা করি হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর কৌশল-গুলো আয়ত্তে আনলে, রাতে হাইওয়েতে আপনার বাইক রাইডিং হবে আরও বেশি নিরাপদ। তাই হাইওয়েতে রাতে রাইড করার সম্পূর্ণ মজা উপভোগ করতে নিজ দায়িত্বে মোটরসাইকেল চালাতে সতর্কতা অবলম্বন করে বাইক চালান। 

বেপরোয়া ভাবে চালাতে গিয়ে নিজের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিবেন না। দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা যখনই হাইওয়েতে বাইক চালাবেন আশেপাশের সবকিছুর প্রতি ভালো করে নজর রেখে বাইক চালাবেন। মনে রাখবেন, “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”।

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Motorbikes for Salebikroy logo
Dayang Runner Other Model deluxe 80 2014 for Sale

Dayang Runner Other Model deluxe 80 2014

28,000 km
MEMBER
Tk 32,500
6 minutes ago
Honda H100S CDI 1995 for Sale

Honda H100S CDI 1995

20,000 km
MEMBER
Tk 41,000
7 minutes ago
Bajaj Pulsar NS 160 Refresh edition. 2021 for Sale

Bajaj Pulsar NS 160 Refresh edition. 2021

6,600 km
verified MEMBER
verified
Tk 166,000
12 minutes ago
Honda CBR Repsole 10 yrs reg 2017 for Sale

Honda CBR Repsole 10 yrs reg 2017

16,880 km
verified MEMBER
verified
Tk 265,000
17 minutes ago
Dayang Motorcycle 2000 for Sale

Dayang Motorcycle 2000

2,000 km
MEMBER
Tk 30,000
18 minutes ago
Auto Parts for salebikroy logo
Cycle hubs allow 36hole for Sale

Cycle hubs allow 36hole

MEMBER
Tk 1,500
27 minutes ago
Enlee 101 Best Hub for sell for Sale

Enlee 101 Best Hub for sell

MEMBER
Tk 4,500
27 minutes ago
TVS Apache RTR 4vX connect 2024 for Sale

TVS Apache RTR 4vX connect 2024

MEMBER
Tk 3,000
30 minutes ago
loking glass mirror for Sale

loking glass mirror

MEMBER
Tk 1,400
1 hour ago
+ Post an ad on Bikroy