যেইসব কারণে রাস্তায় আমাদের মোটরসাইকেল জরিমানা বা মামলা দেয়া হয়

29 Mar, 2023   
যেইসব কারণে রাস্তায় আমাদের মোটরসাইকেল জরিমানা বা মামলা দেয়া হয়

দেশের নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল জরিমানা ও শাস্তির ব্যাপারে BRTA কর্তৃপক্ষ আগের তুলনায় বেশ কঠোর হয়েছে। দেশের বাজারে মোটরসাইকেল এখন অনেক সুলভ এবং সর্বসাধারণের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য হওয়ায় দেশে প্রতিনিয়ত বাইকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এদের মধ্যে সবাই কি নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক আইন জরিমানার ব্যাপারে সুশিক্ষিত? আমি নিজে একজন বাইকার এবং অনেক বছর ধরেই মোটরবাইক ব্যবহার করে আসছি। প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে অন্তত ৩-৪ জনকে মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলা খেতে দেখি। কিন্তু ভুল না করলে পুলিশ কখনওই মামলা দেয়না। আমাদের মধ্যে অনেকেই ভালোভাবে নতুন ট্র্যাফিক আইন জানি না বলে নিজের অজান্তে এমন কিছু ভুল করে ফেলি, যার কারণে মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলার সম্মুখীন হতে হয়।

আজ আমরা দেখবো মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলা হওয়ার পেছনে আমরা কী কী ভুল করি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত, এবং কোন ভুলের জন্য মোটরসাইকেল জরিমানা কত হয় তার একটা তালিকা।

যেইসব ভুলের কারণে মোটরসাইকেল জরিমানা হয়

কাগজপত্র সাথে না থাকা অথবা আপডেট না থাকা

একজন বাইকারের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাইকের রেজিস্ট্রেশন সনদ ও ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি কাগজপত্র ইউনিফর্মের মতই সাথে থাকা জরুরি। এইসব কাগজপত্র যদি ঠিক না থাকে, কিংবা বাইকারের কাছে পাওয়া না যায়, তাহলে মোটরসাইকেল জরিমানা, মামলা, এমনকি সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে। এই দিকে কড়াকড়ি বেশি হওয়ায় মানুষের ভুল খুব কমই হয়।

কিন্তু এইসব কাগজের ডেট ওভার হয়ে গেল কি না সেটা অনেকেই খেয়াল রাখেন না। এই কারণে প্রচুর বাইকাররা অহরহ মামলা ও মোটরসাইকেল জরিমানার শিকার হন। তাই খেয়াল করে সব সময় বাইকের কাগজপত্র আপডেট রাখুন।

সিগন্যাল ও লেন মেনে না চলা

বিকট জ্যামের মধ্যে দিয়েও সরু জায়গা দিয়ে সহজে পার হয়ে যেতে পারে বলে বাইকের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে এত বেশি। কিন্তু পাশ কেটে বেরিয়ে যেতে গিয়ে আপনি যদি ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে যেতে চান, সেটা তো আর মেনে নেয়া সম্ভব না। কিছু মানুষ আছেন যারা সিগন্যাল দেখেও বাইক টান দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে নির্ধারিত লেন থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছামত লেনে বাইক চালানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ ফুটপাথের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে জ্যাম কাটানোর চেষ্টা করেন। আরো ভয়াবহ লাগে যখন দেখি অনেকে রং-সাইড দিয়ে বাইক চালিয়ে যান। এই ব্যাপারগুলো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি ট্র্যাফিক আইন জরিমানাও এখানে বরাদ্দ।

বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং করেন যেসব ভাইয়েরা, তারা সময় বাঁচানোর কথা চিন্তা করে অনেক সময় আইন ভেংগে ফেলেন। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি সমস্ত বাইকারদের উপর মানুষের বিরক্তি চলে আসে। মামলা কিংবা মোটরসাইকেল জরিমানা কিন্তু এভাবেই আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ে, সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে!

অনুমোদন ছাড়া বাইক মডিফাই

নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী, মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার বাইকের যেসব বৈশিষ্ট্য BRTA অফিসার চিহ্নিত করে রেখেছেন, সেগুলো অনুমতি না নিয়ে বদলালে মামলা কিংবা মোটরসাইকেল জরিমানা গুনতে হবে। বাইক মডিফাই করতে চাইলে হয় রেজিস্ট্রেশনের আগে প্রথমেই করতে হবে, নয়ত BRTA অফিসে আবেদন করে অনুমোদন নিতে হবে। এই মডিফাই করার ব্যাপারেও কিছু আইন কানুন আছে সেগুলো আমার ‘বাইক মডিফাই করার নিয়ম’ এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিতে পারবেন।

অনুমতি না নিয়ে বাইকের বৈশিষ্ট্য বদলানো হলে সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। কেননা একমাত্র অপরাধীরাই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য নিজের ও নিজের বাইকের চেহারা বদলানোর চেষ্টা করেন। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাইক মডিফাই করতে হলে সেটা বৈধ ও অনুমোদিত উপায়েই করা উচিত।

সন্দেহজনক আচরণ কিংবা পালানোর চেষ্টা করলে

ট্র্যাফিক আইন জরিমানা না দিতে চাইলে, পুলিশ যখন দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেন সেখানে একজন সচেতন নাগরিক অবশ্যই বাইক থামাবেন। কিন্তু কেউ যদি না দাঁড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন, কিংবা কোনও সন্দেহজনক আচরণ করেন, তখন মামলা বা মোটরসাইকেল জরিমানা নিশ্চিত।

বিশেষ করে রাতের বেলায় বাইক চালকদের ট্র্যাফিক পুলিশরা নেশাগ্রস্ত কিংবা অপরাধী সন্দেহে বেশি থামিয়ে থাকেন। আবার বিশেষ কিছু অপরাধীকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়, এবং সবাইকে থামিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এইরকম সময়ে দায়িত্ববান নাগরিকের মত পুলিশের সাথে সহযোগিতা করুন, থামুন এবং আপনার কাগজপত্র তাদেরকে দেখতে দিন। আপনি অপরাধী না হলে, আপনার ভয়েরও কোনো কারণ নেই। 

হেলমেট মাথায় না থাকলে

হেলমেট জিনিসটা আইনের কথা চিন্তা করে এখন সবাই সাথে রাখেন। কিন্তু বাইক চালানোর সময় মাথায় হেলমেট পড়তে চান না। কিংবা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নেয়ার সময় অনেক সময় পিলিওন, তথা যাত্রী হেলমেট পড়েন না, অথবা রাইডারের কাছে বাড়তি হেলমেট থাকে না। আবার হেলমেট বাইকে ঝুলিয়ে রাখা, কিন্তু চালানোর সময় রাইডার এবং/ অথবা পিলিওন কারোই মাথায়ই হেলমেট নেই।  এসবের মধ্যে যেটাই হোক না কেন, হেলমেট মাথায় না থাকলে ট্র্যাফিক আইন জরিমানা দাবি করে।

হেলমেট জিনিসটা আমাদের নিরাপত্তার জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই যত গরমই লাগুক না কেনো, নিরাপদ ভাবে বাইক চালানোর জন্য ভালো মানের হেলমেট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। নয়ত নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী কঠিন মামলা ও মোটরসাইকেল জরিমানা ভোগ করতে হবে।

অতিরিক্ত ওজন কিংবা যাত্রী

সব মোটরবাইকেরই একটা নির্দিষ্ট ওভারলোড সীমা থাকে, অর্থাৎ নির্ধারিত একটা ওজনের চেয়ে ভারী কিছু বাইকে নিয়ে চালালে বাইকের ব্রেক সহ আরো অন্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নতুন ট্র্যাফিক আইনে অতিরিক্ত ওজন, বা ভারী মালামাল মোটরবাইকে নিয়ে চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একই সাথে অতিরিক্ত যাত্রী তথা পিলিওন বহন করার ক্ষেত্রেও কড়া ট্র্যাফিক আইন জরিমানা রয়েছে। রাইডার সহ দুইজনের বেশি চলন্ত বাইকে বসতে পারবেন না, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা ছাড় পেতে পারেন। কিন্তু সেই শিশুদের নিরাপত্তাও আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এই আইন ভঙ্গের কারণে অনাধিক ৩ মাসের জেল কিংবা জরিমানা, মোটরসাইকেল মামলা ইত্যাদি হতে পারে।

নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল জরিমানার তালিকা

ধারা বিবরণ মোটরসাইকেল জরিমানা (১ম বার) মোটরসাইকেল জরিমানা (২য় বার)
১৩৭ ট্র্যাফিক নিয়ম ভাঙ্গার সাধারণ শাস্তি ২০০/- ৪০০/-
১৩৯ নিষিদ্ধ হর্ণ কিংবা শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার ১০০/-
১৪০ (১) নির্দেশ না মানা, বাধা সৃষ্টি ও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি ৪০০/-
১৪০ নতুন ট্র্যাফিক আইন, রোড সিগন্যাল অমান্য ৪০০/-
১৪০ (২) ওয়ানওয়ে সড়কে উলটো দিকে বাইক চালানো ২০০/-
১৪২ নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুত বাইক চালানো ৩০০/- ৫০০/-
১৪৬ দূর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি ৫০০/- ১,০০০/-
১৪৯ নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় বাইক চালানো ২৫০/- 

(এইরূপ পরিস্থিতে কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি হলে ১,০০০/-)

১৫০ মোটরবাইক থেকে ধোঁয়া বের হলে ২০০/-
১৫১ অনুমোদন ছাড়া মোটরবাইক মডিফাই ও বিক্রি ২,০০০/-
১৫২ রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস অথবা পারমিট ছাড়া মোটরবাইক চালানো ১৫০০/- ২৫০০/-
১৫৩ অনুমোদিত এজেন্ট ও ক্যানভাসার ৫০০/- ১০০০/-
১৫৪ ওভারলোড নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো ১,০০০/- ২০০০/-
১৫৫ ইনস্যুরেন্স ছাড়া মোটরযান চালানো ৭৫০/-
১৫৬ অনুমোদন ছাড়া মোটরবাইক চালানো ৭৫০/-
১৫৭ সড়ক অথবা পাবলিক প্লেসে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি ৫০০/-
১৫৮ অনুমতি ছাড়া অন্য কারো বাইক চালানো ৫০০/-
০০০ অবৈধ লেনে বাইক চালানো ১০০০/-

শেষকথা

একটা মানুষের বিশেষ সমস্যা বা জরুরী অবস্থা থাকতেই পারে; আর তখন কিছু কিছু ট্র্যাফিক আইন মানতে অসুবিধা হয়। এরকম হলে ট্রাফিক পুলিশকে একবার অনুরোধ করে দেখুন। বিশ্বাস করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে তারাও আপনাকে সহযোগিতা করবে। বিনয় আপনাকে কখনও ছোট করবে না, বরং আপনার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দেয়। নতুন ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন এবং মোটরসাকেল জরিমানা বা মামলা হতে পারে এমন কাজগুলো এড়িয়ে চলুন। আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি রাইড!

দেশের নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল জরিমানা ও শাস্তির ব্যাপারে BRTA কর্তৃপক্ষ আগের তুলনায় বেশ কঠোর হয়েছে। দেশের বাজারে মোটরসাইকেল এখন অনেক সুলভ এবং সর্বসাধারণের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য হওয়ায় দেশে প্রতিনিয়ত বাইকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এদের মধ্যে সবাই কি নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক আইন জরিমানার ব্যাপারে সুশিক্ষিত? আমি নিজে একজন বাইকার এবং অনেক বছর ধরেই মোটরবাইক ব্যবহার করে আসছি। প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে অন্তত ৩-৪ জনকে মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলা খেতে দেখি। কিন্তু ভুল না করলে পুলিশ কখনওই মামলা দেয়না। আমাদের মধ্যে অনেকেই ভালোভাবে নতুন ট্র্যাফিক আইন জানি না বলে নিজের অজান্তে এমন কিছু ভুল করে ফেলি, যার কারণে মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলার সম্মুখীন হতে হয়।

আজ আমরা দেখবো মোটরসাইকেল জরিমানা ও মামলা হওয়ার পেছনে আমরা কী কী ভুল করি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত, এবং কোন ভুলের জন্য মোটরসাইকেল জরিমানা কত হয় তার একটা তালিকা।

যেইসব ভুলের কারণে মোটরসাইকেল জরিমানা হয়

কাগজপত্র সাথে না থাকা অথবা আপডেট না থাকা

একজন বাইকারের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স, বাইকের রেজিস্ট্রেশন সনদ ও ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি কাগজপত্র ইউনিফর্মের মতই সাথে থাকা জরুরি। এইসব কাগজপত্র যদি ঠিক না থাকে, কিংবা বাইকারের কাছে পাওয়া না যায়, তাহলে মোটরসাইকেল জরিমানা, মামলা, এমনকি সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে। এই দিকে কড়াকড়ি বেশি হওয়ায় মানুষের ভুল খুব কমই হয়।

কিন্তু এইসব কাগজের ডেট ওভার হয়ে গেল কি না সেটা অনেকেই খেয়াল রাখেন না। এই কারণে প্রচুর বাইকাররা অহরহ মামলা ও মোটরসাইকেল জরিমানার শিকার হন। তাই খেয়াল করে সব সময় বাইকের কাগজপত্র আপডেট রাখুন।

সিগন্যাল ও লেন মেনে না চলা

বিকট জ্যামের মধ্যে দিয়েও সরু জায়গা দিয়ে সহজে পার হয়ে যেতে পারে বলে বাইকের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে এত বেশি। কিন্তু পাশ কেটে বেরিয়ে যেতে গিয়ে আপনি যদি ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে যেতে চান, সেটা তো আর মেনে নেয়া সম্ভব না। কিছু মানুষ আছেন যারা সিগন্যাল দেখেও বাইক টান দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে নির্ধারিত লেন থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছামত লেনে বাইক চালানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ ফুটপাথের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে জ্যাম কাটানোর চেষ্টা করেন। আরো ভয়াবহ লাগে যখন দেখি অনেকে রং-সাইড দিয়ে বাইক চালিয়ে যান। এই ব্যাপারগুলো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি ট্র্যাফিক আইন জরিমানাও এখানে বরাদ্দ।

বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং করেন যেসব ভাইয়েরা, তারা সময় বাঁচানোর কথা চিন্তা করে অনেক সময় আইন ভেংগে ফেলেন। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি সমস্ত বাইকারদের উপর মানুষের বিরক্তি চলে আসে। মামলা কিংবা মোটরসাইকেল জরিমানা কিন্তু এভাবেই আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ে, সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে!

অনুমোদন ছাড়া বাইক মডিফাই

নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী, মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার বাইকের যেসব বৈশিষ্ট্য BRTA অফিসার চিহ্নিত করে রেখেছেন, সেগুলো অনুমতি না নিয়ে বদলালে মামলা কিংবা মোটরসাইকেল জরিমানা গুনতে হবে। বাইক মডিফাই করতে চাইলে হয় রেজিস্ট্রেশনের আগে প্রথমেই করতে হবে, নয়ত BRTA অফিসে আবেদন করে অনুমোদন নিতে হবে। এই মডিফাই করার ব্যাপারেও কিছু আইন কানুন আছে সেগুলো আমার ‘বাইক মডিফাই করার নিয়ম’ এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিতে পারবেন।

অনুমতি না নিয়ে বাইকের বৈশিষ্ট্য বদলানো হলে সেটাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। কেননা একমাত্র অপরাধীরাই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য নিজের ও নিজের বাইকের চেহারা বদলানোর চেষ্টা করেন। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাইক মডিফাই করতে হলে সেটা বৈধ ও অনুমোদিত উপায়েই করা উচিত।

সন্দেহজনক আচরণ কিংবা পালানোর চেষ্টা করলে

ট্র্যাফিক আইন জরিমানা না দিতে চাইলে, পুলিশ যখন দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেন সেখানে একজন সচেতন নাগরিক অবশ্যই বাইক থামাবেন। কিন্তু কেউ যদি না দাঁড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন, কিংবা কোনও সন্দেহজনক আচরণ করেন, তখন মামলা বা মোটরসাইকেল জরিমানা নিশ্চিত।

বিশেষ করে রাতের বেলায় বাইক চালকদের ট্র্যাফিক পুলিশরা নেশাগ্রস্ত কিংবা অপরাধী সন্দেহে বেশি থামিয়ে থাকেন। আবার বিশেষ কিছু অপরাধীকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়, এবং সবাইকে থামিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এইরকম সময়ে দায়িত্ববান নাগরিকের মত পুলিশের সাথে সহযোগিতা করুন, থামুন এবং আপনার কাগজপত্র তাদেরকে দেখতে দিন। আপনি অপরাধী না হলে, আপনার ভয়েরও কোনো কারণ নেই। 

হেলমেট মাথায় না থাকলে

হেলমেট জিনিসটা আইনের কথা চিন্তা করে এখন সবাই সাথে রাখেন। কিন্তু বাইক চালানোর সময় মাথায় হেলমেট পড়তে চান না। কিংবা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নেয়ার সময় অনেক সময় পিলিওন, তথা যাত্রী হেলমেট পড়েন না, অথবা রাইডারের কাছে বাড়তি হেলমেট থাকে না। আবার হেলমেট বাইকে ঝুলিয়ে রাখা, কিন্তু চালানোর সময় রাইডার এবং/ অথবা পিলিওন কারোই মাথায়ই হেলমেট নেই।  এসবের মধ্যে যেটাই হোক না কেন, হেলমেট মাথায় না থাকলে ট্র্যাফিক আইন জরিমানা দাবি করে।

হেলমেট জিনিসটা আমাদের নিরাপত্তার জন্যই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই যত গরমই লাগুক না কেনো, নিরাপদ ভাবে বাইক চালানোর জন্য ভালো মানের হেলমেট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। নয়ত নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী কঠিন মামলা ও মোটরসাইকেল জরিমানা ভোগ করতে হবে।

অতিরিক্ত ওজন কিংবা যাত্রী

সব মোটরবাইকেরই একটা নির্দিষ্ট ওভারলোড সীমা থাকে, অর্থাৎ নির্ধারিত একটা ওজনের চেয়ে ভারী কিছু বাইকে নিয়ে চালালে বাইকের ব্রেক সহ আরো অন্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নতুন ট্র্যাফিক আইনে অতিরিক্ত ওজন, বা ভারী মালামাল মোটরবাইকে নিয়ে চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একই সাথে অতিরিক্ত যাত্রী তথা পিলিওন বহন করার ক্ষেত্রেও কড়া ট্র্যাফিক আইন জরিমানা রয়েছে। রাইডার সহ দুইজনের বেশি চলন্ত বাইকে বসতে পারবেন না, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা ছাড় পেতে পারেন। কিন্তু সেই শিশুদের নিরাপত্তাও আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এই আইন ভঙ্গের কারণে অনাধিক ৩ মাসের জেল কিংবা জরিমানা, মোটরসাইকেল মামলা ইত্যাদি হতে পারে।

নতুন ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেল জরিমানার তালিকা

ধারা বিবরণ মোটরসাইকেল জরিমানা (১ম বার) মোটরসাইকেল জরিমানা (২য় বার)
১৩৭ ট্র্যাফিক নিয়ম ভাঙ্গার সাধারণ শাস্তি ২০০/- ৪০০/-
১৩৯ নিষিদ্ধ হর্ণ কিংবা শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার ১০০/-
১৪০ (১) নির্দেশ না মানা, বাধা সৃষ্টি ও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি ৪০০/-
১৪০ নতুন ট্র্যাফিক আইন, রোড সিগন্যাল অমান্য ৪০০/-
১৪০ (২) ওয়ানওয়ে সড়কে উলটো দিকে বাইক চালানো ২০০/-
১৪২ নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুত বাইক চালানো ৩০০/- ৫০০/-
১৪৬ দূর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি ৫০০/- ১,০০০/-
১৪৯ নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় বাইক চালানো ২৫০/- 

(এইরূপ পরিস্থিতে কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি হলে ১,০০০/-)

১৫০ মোটরবাইক থেকে ধোঁয়া বের হলে ২০০/-
১৫১ অনুমোদন ছাড়া মোটরবাইক মডিফাই ও বিক্রি ২,০০০/-
১৫২ রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস অথবা পারমিট ছাড়া মোটরবাইক চালানো ১৫০০/- ২৫০০/-
১৫৩ অনুমোদিত এজেন্ট ও ক্যানভাসার ৫০০/- ১০০০/-
১৫৪ ওভারলোড নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো ১,০০০/- ২০০০/-
১৫৫ ইনস্যুরেন্স ছাড়া মোটরযান চালানো ৭৫০/-
১৫৬ অনুমোদন ছাড়া মোটরবাইক চালানো ৭৫০/-
১৫৭ সড়ক অথবা পাবলিক প্লেসে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি ৫০০/-
১৫৮ অনুমতি ছাড়া অন্য কারো বাইক চালানো ৫০০/-
০০০ অবৈধ লেনে বাইক চালানো ১০০০/-

শেষকথা

একটা মানুষের বিশেষ সমস্যা বা জরুরী অবস্থা থাকতেই পারে; আর তখন কিছু কিছু ট্র্যাফিক আইন মানতে অসুবিধা হয়। এরকম হলে ট্রাফিক পুলিশকে একবার অনুরোধ করে দেখুন। বিশ্বাস করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে তারাও আপনাকে সহযোগিতা করবে। বিনয় আপনাকে কখনও ছোট করবে না, বরং আপনার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দেয়। নতুন ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন এবং মোটরসাকেল জরিমানা বা মামলা হতে পারে এমন কাজগুলো এড়িয়ে চলুন। আনন্দময় হোক আপনার প্রতিটি রাইড!

Similar Advices



1 comment

  1. মোটর সাইকেল অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সে রূপান্তর ফি tutorial video in bangla

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Bikesbikroy
GB-Padma-Gold (Blue) 2023 for Sale

GB-Padma-Gold (Blue) 2023

0 km
verified MEMBER
Tk 70,000
16 hours ago
atv Quad বাইক 2024 for Sale

atv Quad বাইক 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 295,000
19 hours ago
golf kart 4 seater 2024 for Sale

golf kart 4 seater 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 645,000
19 hours ago
E bike brand new 2023 for Sale

E bike brand new 2023

0 km
verified MEMBER
Tk 70,000
22 hours ago
TVS Metro এ 2017 for Sale

TVS Metro এ 2017

2,000 km
MEMBER
Tk 55,000
1 day ago
Buy Used Bikesbikroy
Bajaj Pulsar 150 2022 for Sale

Bajaj Pulsar 150 2022

8,000 km
verified MEMBER
Tk 167,000
1 minute ago
Yamaha MT 15 10 Years Papers 2021 for Sale

Yamaha MT 15 10 Years Papers 2021

13,558 km
verified MEMBER
verified
Tk 300,000
1 minute ago
Mahindra Gusto . 2018 for Sale

Mahindra Gusto . 2018

25,645 km
verified MEMBER
verified
Tk 72,000
2 minutes ago
Bajaj CT 100 fresh condition 2017 for Sale

Bajaj CT 100 fresh condition 2017

15,000 km
verified MEMBER
verified
Tk 60,500
2 minutes ago
Bajaj Pulsar UG-5 Double Disc 2020 for Sale

Bajaj Pulsar UG-5 Double Disc 2020

17,588 km
verified MEMBER
verified
Tk 120,000
4 minutes ago
+ Post an ad on Bikroy