৯০০০ কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে Royal Enfield Classic 350 এর উপর Anuj Mishra ‘র রিভিউ
বিদায় সবসময়ই হৃদয়বিদারক। বিশেষ করে যখন আপনি নতুন কোনো বাইক নিয়ে একটা ভাল সময় কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন যাবত কিন্তু তাকে অবশেষে বিদায় জানাতে হচ্ছে। এবং যখন সে চলে যায় তখন স্মৃতি ব্যতীত আর কিছু থাকে না এবং কোন একদিন তাকে আবার ফিরে পেতে মন চাইবে। এত বেশি নাটকীয়তা এবং দার্শনিক কথাবার্তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ, আমার মাথায় এসবই ঘুরছিল যখন আমি আমার দীর্ঘদিনের সহচর Royal Enfield Classic 350 কে বিদায় জানালাম।
এই দারুণ বাইকটি ছিল আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। শুধুমাত্র অফিস-বাসায় যাতায়াতের জন্যই নয় দুরের যাত্রায়ও কয়েকবার সে আমার সঙ্গী হয়েছিল। এই বাইকটি আমাকে উপহার দিয়েছে দারুণ কিছু স্মৃতি। এই ক্লাসিক বাইকটিকে বিদায় দেয়ার পরে চলুন আপনাদেরকে জানিয়ে দেই আমি এর কোন বিষয়গুলো পছন্দ করেছি এবং মনে করি কোন বিষয়গুলো আরও ভাল হতে পারত। চাইলে এটাকে একটা বিদায় সংবর্ধনা পত্রও বলতে পারেন।
Royal Enfield Classic 350 এর যা কিছু ভালো দিক
Classic 350 এর ইঞ্জিন নিঃসন্দেহে এর অন্যতম আকর্ষণ। বিশেষ করে রিফাইনমেন্ট এবং ট্র্যাক্টেবিলিটির জন্য। সবচেয়ে সুন্দর হল এর ইঞ্জিনের সাউন্ড। বেশি গতিতে চালালেও ইঞ্জিনে কোন ভাইব্রেশন টের পাবেন না এমনকি ১০০ কিঃমিঃ/ ঘণ্টায় চালালেও। আবার ধীর গতিতে চালানোর জন্যও এটি সেরা। শহরের ভিতরে ৫ম গিয়ারে ৪০ কিঃমিঃ/ ঘণ্টা গতিতে এর ইঞ্জিনের সুন্দর আওয়াজ আপনাকে এনে দেবে মনের প্রশান্তি।
আবার স্পিড যখন বারাবেন তখন দেখবেন এক্সিলারেশনে কোন সমস্যাই হচ্ছে না। সহজে চালানোর যোগ্য গিয়ারবক্স শহরের ভিতরে চালানোর সময় আপনার মনে এনে দেবে নির্মল আনন্দ। ১৯৫ কেজি ওজন হলেও একে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। যানজটের রাস্তায় সহজেই বাইকটি ফাঁকফোকর দিয়ে স্বচ্ছন্দে চালিয়ে নিতে পারবেন। এটা অবশ্য KTM এর মত অতটা কর্মক্ষম নয় তারপরও এটা দিয়ে সহজেই বাঁক নিতে পারবেন। ছোটখাটো গড়নের এই বাইকটি চালানো অনেক আরামদায়ক। লং রাইডে যাওয়ার সময় আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে চালাতে পেরেছি। তবে বেশি গতিতে বাঁক নিতে সামান্য অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি।
এই Clasic বাইকটি হল নির্ভরতার অপর নাম। ৮ মাসের বেশি সময় আমি এটি চালিয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি তেমন বড় কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি। কোন লিকুইডও লিক হয়নি। তাছাড়া এর স্ট্রং বিল্ড কোয়ালিটির কথা তো না বললেই নয়। এটা এত মজবুতভাবে তৈরি যে কোন যন্ত্রাংশেই কোন বিরক্তিকর আওয়াজ পাইনি। শুধু কয়েকবার সাইড মিরর সরে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা হয়নি।
মিররের গোল অংশটি প্রায়ই সরে যায় এবং এটি কেউ সারাতেও পারেনি। তাছাড়া ৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পরে ক্লাচ একটু শক্ত হয়ে গেছে। ক্লাচ ক্যাব্ল ঠিক করার পরে তা আবার আগের মত মসৃণ হয়ে গেছে।
২০০৮ সালে ক্লাসিক বাজারে আসার পর থেকে এর ডিজাইনে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এর ডিজাইন এখনও একই রকম আছে। এমনকি তা সর্বশেষ ডিজাইনেও আগের মতই অপরিবর্তিত। এসব বাদ দিলেও আভিজাত্য কিংবা সরলতা সব দিকেই এটি আগের মতই জনপ্রিয়। এর ছোট ডিজাইনের বডি প্যানেল এবং রাউন্ড ডিজাইন থিম একে একটি পারফেক্ট ক্লাসিক লুক দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্রোমের ব্যবহারও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
Royal Enfield Classic 350 যা আমার কাছে ভাল লাগেনি
এর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ এর রাইড কোয়ালিটি। যদিও এটি এতটাও বাজে নয় যে আপনার পিঠে ব্যথা ধরিয়ে দেবে। তবে পথের মাঝে ছোটোখাটো গর্তে পড়লে লো স্পিডেও মাঝে মাঝে রাইডারকে বিরক্তি ধরাতে পারে। আবার অতিরিক্ত স্পিডেও সামান্য ঝাকি অনুভব করতে পারেন।
আরেকটি ইস্যু হল এর ফুট পেগ। যখনই যানজটে আটকে গেছি তখন পায়ের পাতায় এবং আঙ্গুলে ব্যথা অনুভব করেছি। এটা হয়ত তেমন বড় কোন সমস্যা নয় তারপরও যানজটের সময় বিরক্ত লাগে।
সিটটাও তেমন একটা পছন্দ হয়নি। ফোমটা আরও একটু মোটা না হওয়ার কারণে ২ ঘণ্টারও কম সময়ে আপনি পিঠে সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন। তবে আপনি যদি সবসময় ট্যুরে যেতে বা হাইওয়েতে বাইক চালাতে পছন্দ করেন তবে রয়্যাল এনফিল্ড এর অফিসিয়াল এক্সেসরি ক্যাটালগ থেকে পছন্দমত সিট নিয়ে নিতে পারেন। তবে হ্যান্ডলিং, রাইড কোয়ালিটি এবং আরামের কথা চিন্তা করলে এই বাইকের জুড়ি মেলা ভার। সবশেষে বলতে চাই এর ক্লাচটি চাইলে আরও একটু নমনীয় করা যেত এবং ফ্রন্ট ডিস্কের ব্রেকটি আরও একটু উন্নত করলে ভাল হত।
কেনা কি উচিত হবে?
যদি আপনি আধুনিক ক্লাসিক বাইকের ফ্যান হয়ে থাকেন তাহলে এই বাইকটি আপনার জন্য। ক্লাসিক বাইকগুলোর মধ্যে এর ধারেকাছেও কেউ নেই। রয়্যাল এনফিল্ড বিশ্বজুড়ে বাইকারদের কাছে জনপ্রিয় এক ব্র্যান্ড। এর ভাল দিকগুলো সহজেই এর মন্দ দিকগুলো ঢেকে দেয়। যার কারণে আমি অবশ্যই এই বাইকটি নিতে পরামর্শ দেব।