ডিস্ক Vs ড্রাম ব্রেক | মোটরবাইকের জন্য কোনটি বেছে নিবেন

17 Aug, 2023   
ডিস্ক Vs ড্রাম ব্রেক | মোটরবাইকের জন্য কোনটি বেছে নিবেন

বাইকের ক্ষমতা ও প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি আজকাল হাই স্পিডে মোটরসাইকেল চালানো বেশ প্রচলিত একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুরন্ত গতি আর প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে মোটরবাইকের ব্রেকও এখন অনেক উন্নত হয়েছে। বাইকের দাম ২০২২ সালে অনেক বাড়া সত্ত্বেও সব মোটরবাইকের ব্রেক লেটেস্ট প্রযুক্তির হয় না। যখন আপনি হাই স্পিডে বাইক চালাতে থাকবেন, তখন হঠাৎ এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, যখন আপনাকে আচমকা হার্ড ব্রেক করতে হবে কিন্তু ব্রেকিং দুরত্বও কম হতে হবে। ঠিক এই জায়গাতেই এসে প্রযুক্তি ড্রাম ব্রেককে সরিয়ে দিয়ে আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে দ্রুততর ডিস্ক ব্রেক

আর এখন প্রায় বেশিরভাগ স্কুটারেই সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সামনের চাকা পেছনের চাকার তুলনায় প্রায় ৭০% অধিক কার্যকরী। তবে ডিস্ক যে ড্রামের তুলনায় সব দিক থেকে এগিয়ে তাও সত্যি নয়। ড্রাম ব্রেকেরও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আর তাই মোটরবাইকের ব্রেক সিস্টেম এক একজন রাইডারের কাছে এক এক রকম পছন্দ হতে পারে।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে ধারণা:

আসুন জেনে নেয়া যাক ডিস্ক এবং ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত ধারণা-

ড্রাম ব্রেক

একটি ড্রাম ব্রেকের সমন্বয়ে মূলত ব্রেক শ্যু, স্প্রিং, ব্রেক কেবল, ব্রেক আর্ম, ব্রেক প্যানেল এবং ব্রেক ড্রাম থাকে। মোটরবাইকের ব্রেকের ঘূর্ণায়মান সিলিন্ডার আকৃতির অংশে থাকা বাইরের দিকে বল প্রয়োগকারী ব্রেক শ্যু হাইড্রোলিক চাপের প্রভাবে ড্রামের গায় লেগে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি করে।

এই ড্রামটি চাকার শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং টায়ারের মাঝখানে বসানো থাকে। ফলে ব্রেক চাপা হলে মোটরবাইকের ব্রেক ফ্লুইড লিভারের পিস্টনের চাপে ব্রেক প্যাডের উপর বল প্রয়োগ করে। এতে করে প্যাডোগুলো ড্রামের গায়ে ঘর্ষণ বল তৈরি করে চাকার শ্যাফটকে থামিয়ে দেয়।

ডিস্ক ব্রেক

ডিস্ক ব্রেকের ডিজাইন বেশ সাদামাটা। এতে রয়েছে একটি ডিস্ক, ক্যালিপার এবং এক জোড়া মোটরসাইকেল ব্রেক প্যাড। পুরো সিস্টেমটি একটি গাঢ় মসৃণ ফ্লুইড লাইনের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই গাঢ় তরলটিকেই আমরা ব্রেক অয়েল নামে চিনি। ব্রেক লিভারের পাম্পের সাথে একটি ছোট ট্যাংকের ভেতরে ব্রেক ফ্লুইড জমা থাকে।

বাইক বা স্কুটার থামানোর জন্য মোটরবাইক ব্রেক লিভারে চাপ দেয়া হয়। এই চাপের কারণে মোটরবাইকের ব্রেক ফ্লুইড লাইনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ক্যালিপারের পিস্টনে চাপ দেয় এবং ব্রেক প্যাডগুলোর মাঝে ডিস্কটি ঘর্ষণ ক্রিয়ার শিকার হয়। এই ঘর্ষণের প্রভাবে ডিস্ক অর্থাৎ বাইকের গতি কমে যায়, নয়ত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ব্রেক প্যাড ডিস্কের গায়ে কতটুকু লেগে থাকবে বা দূরে থাকবে। আর কত দ্রুত ব্রেক হবে সেটা নির্ভর করে ব্রেক প্যাড কত জোরে ডিস্ককে চেপে ধরেছে অর্থাৎ মোটরবাইকের ব্রেকের বাইটের উপর।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের সুবিধা ও অসুবিধা

থামার গতি বা স্টপিং পাওয়ার

এই প্রতিবেদনের শুরুর দিকেই আমরা জেনেছি যে ড্রাম ব্রেকের তুলনায় ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং পাওয়ার অনেক বেশি। ওভারলোড হোক বা না হোক, আচমকা হার্ড ব্রেক করতে চাইলে ডিস্ক ব্রেক বেশি কার্যকরী।

ডুয়াল ডিস্ক রোটরের ব্যবহার, একাধিক কিংবা বড় আকৃতির মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড সংযোগ করা হলে ব্রেক প্যাডের বাইট আরো বাড়ানো সম্ভব; যেটা ড্রাম ব্রেকে করা যায় না।

থামার দুরত্ব বা স্টপিং দুরত্ব

যেকোনো মোটরবাইকের ব্রেক বাছাই করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সেটার স্টপিং দুরত্ব বিবেচনা করা। ব্রেক করার পর বাইকটি পুরোপুরি থেমে যাওয়ার আগে যতটুকু দুরত্ব অতিক্রম করে, সেটাই হলো মোটরবাইকের ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব।

আর এই দিক থেকেও ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের মধ্যে এগিয়ে আছে ডিস্ক ব্রেক। এর স্টপিং দুরত্ব ড্রাম ব্রেকের চেয়ে বেশ কম। তাই হঠাৎ কোন বাধার সম্মুখীন হয়ে ব্রেক করতে হলে ডিস্ক ব্রেক সবচেয়ে দ্রুত সুরক্ষা দিতে পারবে। আর সেই সাথে যদি এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম অর্থাৎ এবিএস প্রযুক্তি যোগ করা হয়, তাহলে স্টপিং দুরত্ব আরো কমে আসে।

তাপ নির্গমনের ক্ষমতা

যখন আমাদের ইঞ্জিন ও বাইকের টায়ার অনেক বেশি গরম হয়ে যায়, তখন ড্রাম ব্রেকের ব্রেকিং দক্ষতা আস্তে আস্তে কমে যায়। কেননা ব্রেক শ্যুগুলো ঘর্ষণ ক্রিয়ার ফলে আরো বেশি তাপ উৎপন্ন করে, আর পুরো ব্যাপারটা টায়ারের মাঝে ড্রামের মধ্যে ঘটায় সেটা ঠান্ডা হতে বেশ সময় লেগে যায়।

ডিস্ক ব্রেক বাইকের টায়ারের বাইরের দিকে বসানো থাকে, আর ড্রাম ব্রেক থাকে টায়ারের ভেতরে আবদ্ধ। সেজন্য ডিস্কের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা মোটরবাইকের ব্রেক দক্ষতায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কারণ ড্রাম ব্রেকের তুলনায় এটি অনেক দ্রুত তাপ নির্গমন করে ঠান্ডা হতে পারে।

ভেজা রাস্তা কিংবা বৃষ্টির প্রভাব

যখন ভেজা রাস্তায় অথবা বৃষ্টিতে মোটরবাইক চালানো হয় এবং চাকা পুরোপুরি ভিজে যায়, তখন মোটরবাইকের ব্রেক শ্যু এবং ড্রামের ভেতরের পৃষ্ঠের মাঝে ঘর্ষণ প্রতিক্রিয়া কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ড্রাম ব্রেকের স্টপিং পাওয়ার হ্রাস পায়। কিন্তু একই পরিস্থিতে ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং পাওয়ারের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

চাকার ক্ষয়ক্ষতি

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের ক্ষেত্রে চাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণ ভিন্ন। কিন্তু ড্রাম ব্রেকের অতিরিক্ত তাপ এবং ঘর্ষণের ফলে আস্তে আস্তে মোটরসাইকেলের টায়ার নষ্ট হইয়ে যায়। ডিস্ক ব্রেকের ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেটার কারণে চাকার ক্ষতি হয়না বললেই চলে।

রক্ষণাবেক্ষণ

ডিস্ক ব্রেক চাকার বাইরের দিকে থাকায় এটি পরিষ্কার ও মেইনটেনেন্স করা বেশ সহজ। এটার যত্ন নেয়ার জন্য অটো সার্ভিসের দোকানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর গেলেও সেটা মেকানিক খুব সহজে ও দ্রুত ঠিক করতে পারে।

কিন্তু ড্রাম ব্রেক মেইনটেনেন্স করার জন্য পুরো চাকাটাই খুলতে হয়। এরপর এর ভেতরে অনেকগুলো স্প্রিং, অটো পার্টস এসব খুলে পরিষ্কার করতে হয়। একজন দক্ষ মেকানিকেরও এই কাজ করতে বেশ সময় লাগে।

এছাড়াও ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের বাড়তি অটো পার্টসের দামেও বেশ তারতম্য রয়েছে। ডিস্ক ব্রেকের ছোট ছোট পার্টস আলাদা ভাবে পাওয়া যায়, তাই এটা সহজে মেরামত করা যায়। কিন্তু ড্রাম ব্রেকের ক্ষতি হওয়া মানে সেটার সাথে আপনার চাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ড্রাম ব্রেকের দাম কম হলেও টায়ার পরিবর্তন করতে বেশ ভালোই খরচ হয়।

চাকা লক-আপ হওয়া

আপনার বাইকে যদি এবিএস না থাকে, তাহলে হঠাৎ হার্ড ব্রেক করার সময় মোটরসাইকেলের চাকা লক-আপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ডিস্ক ব্রেকের ক্ষেত্রে এবিএস না থাকাটা তাই অনেক বড় একটা সমস্যা। চাকা লক-আপ হলে গুরুতর বাইক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ড্রাম ব্রেক সিস্টেমে এই ধরণের চাকা লক-আপের কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই আপনার বাইকের জন্য ড্রামের চেয়ে ডিস্ক ব্রেক তখনই ভালো হবে, যখন সাথে থাকবে এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম অর্থাৎ এবিএস।

বাইক ছিটকে যাওয়া

বৃষ্টির দিনে বাইক চালানোর সময় আপনার মোটরবাইকের ব্রেক যদি ডিস্ক হয়, তাহলে হার্ড ব্রেক করা একেবারেই অনুচিত। কেননা ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব কম, ভেজা রাস্তায় হঠাৎ ব্রেক করে সামনের চাকা থেমে গেলে বাইক ছিটকে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি রয়েছে।

ড্রাম ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব বেশি হওয়ায় ভেজা রাস্তায় এটা আস্তে আস্তে থামবে। তাই হুট করে ছিটকে পড়ার ঝুঁকি এতে নেই। সাবধানে রাস্তা দেখে বাইক চালালে ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক দু’টোই আপনার জন্য উপকারী। তবে বৃষ্টির দিনে ছিটকে পড়া থেকে বাঁচার জন্য ড্রাম ব্রেকই সবচেয়ে ভালো।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের দাম

উচ্চতর ব্রেকিং দক্ষতা এবং মেইনটেনেন্সের সুবিধা সব মিলিয়ে ডিস্ক ব্রেক অনেক বেশি উন্নত। আর তাই এই ব্রেকের দাম স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি।

ড্রাম ব্রেক প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটু পিছিয়ে থাকায় এর দাম বেশ সাধ্যের মধ্যেই থাকে।

বারবার ব্রেকিং-এর কারণে ব্রেকের কিছু সমস্যা:

বারবার ব্রেকিং-এর ফলে আরো কিছু মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।  তারমাঝে কিছু সমস্যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ব্রেক প্যাডের সমস্যা

ডিস্ক ব্রেকের তাপ নির্গমন ক্ষমতা বেশি হওয়া সত্ত্বেও ইমারজেন্সি ব্রেক করা অথবা উঁচু রাস্তায় ওঠার সময় বারবার ব্রেক করার কারণে মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়। এর ফলে বাইট অর্থাৎ প্যাডের ডিস্ক ধরার ক্ষমতা কমে যায়, আর একই সাথে ব্রেকিং দক্ষতাও অনেক হ্রাস পায়।

ব্রেক ফেইল করা

মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড, ক্যালিপার কিংবা রোটরের অতিরিক্ত তাপ থেকে ব্রেক ফ্লুইডও অতিরিক্ত গরম হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক যেটাই থাকুক না কেন, বাইকের ব্রেকিং পাওয়ার অনেক কমে যায়। এইভাবে ফ্লুইড লাইনের ক্ষতি হলে তৎক্ষণাৎ মোটরবাইকের ব্রেক ফেইল হতে পারে।

রোটরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়া

অতিরিক্ত তাপ থেকে রোটরের গায়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। ফাটল না ধরলেও রোটোরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে গেলে সেটি বেঁকে যেতে পারে। আর বেঁকে যাওয়া রোটর থেকে ডিস্ক ব্রেকের অন্যান্য পার্টসেও সমস্যা হতে পারে। ফলস্বরূপ ব্রেকিং দক্ষতার ব্যাপক ক্ষতি হয়।

উপসংহার:

আশা করা যায় এই আর্টিকেল টি পড়ে ডিস্ক Vs ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।
মোটরবাইক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানতে সাথে থাকুন বাইকেস গাইডের

নতুন কিংবা পুরাতন যেকোনো বাইক বিক্রয় থেকে খুঁজে নিয়ে আপনার যাত্রাকে সহজ এবং সুন্দর করুন।

গ্রাহকদের কিছু নিয়মিত প্রশ্নের উত্তর

সিংগেল ডিস্ক বলতে কি বুঝানো হয় ?

সিংগেল ডিস্ক হচ্ছে একটি ব্রেকিং সিস্টেম যেখানে মোটরসাইকেলের একটি চাকায় ডিস্ক ব্রেকিং ব্যবহার করা হয়।

ডাবল ডিস্ক বলতে কি বুঝানো হয় ?

যদি একটি মোটরসাইকেলের সামনের এবং পিছনের উভয় চাকায় ডাবল ডিস্ক ব্রেকিং বা দুটি ব্রেকিং থাকে, তাহলে আমরা একে টুইন ডিস্ক/ ডাবল ডিস্ক বলতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে যে বাজাজ পালসারে টুইন ডিস্ক রয়েছে, যার অর্থ বাজাজ এই বাইকের জন্য দুটি অনুরূপ ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করে, তাই নাম টুইন ডিস্ক।

একটি ড্রাম ব্রেকার প্রধান সুবিধা কি?

ড্রাম ব্রেক সমান ব্যাসের ডিস্ক ব্রেকের চেয়ে বেশি ব্রেকিং বল প্রদান করতে পারে।

মোটরসাইকেলে কোন ব্রেক সবচেয়ে শক্তিশালী?

এটি মোটরসাইকেলের অবস্থান এবং প্রতিটি চাকার ওজনের পরিমাণের সাথে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণভাবে, সামনের ব্রেকগুলি আপনাকে পিছনের ব্রেকগুলির চেয়ে অনেক বেশি স্টপিং পাওয়ার প্রদান করবে। আপনার মোটরসাইকেলের 80 শতাংশ পর্যন্ত ব্রেকিং পাওয়ার সামনের প্রান্তে কেন্দ্রীভূত।

বাইকের ক্ষমতা ও প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি আজকাল হাই স্পিডে মোটরসাইকেল চালানো বেশ প্রচলিত একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুরন্ত গতি আর প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে মোটরবাইকের ব্রেকও এখন অনেক উন্নত হয়েছে। বাইকের দাম ২০২২ সালে অনেক বাড়া সত্ত্বেও সব মোটরবাইকের ব্রেক লেটেস্ট প্রযুক্তির হয় না। যখন আপনি হাই স্পিডে বাইক চালাতে থাকবেন, তখন হঠাৎ এমন পরিস্থিতি আসতে পারে, যখন আপনাকে আচমকা হার্ড ব্রেক করতে হবে কিন্তু ব্রেকিং দুরত্বও কম হতে হবে। ঠিক এই জায়গাতেই এসে প্রযুক্তি ড্রাম ব্রেককে সরিয়ে দিয়ে আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে দ্রুততর ডিস্ক ব্রেক

আর এখন প্রায় বেশিরভাগ স্কুটারেই সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সামনের চাকা পেছনের চাকার তুলনায় প্রায় ৭০% অধিক কার্যকরী। তবে ডিস্ক যে ড্রামের তুলনায় সব দিক থেকে এগিয়ে তাও সত্যি নয়। ড্রাম ব্রেকেরও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। আর তাই মোটরবাইকের ব্রেক সিস্টেম এক একজন রাইডারের কাছে এক এক রকম পছন্দ হতে পারে।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে ধারণা:

আসুন জেনে নেয়া যাক ডিস্ক এবং ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত ধারণা-

ড্রাম ব্রেক

একটি ড্রাম ব্রেকের সমন্বয়ে মূলত ব্রেক শ্যু, স্প্রিং, ব্রেক কেবল, ব্রেক আর্ম, ব্রেক প্যানেল এবং ব্রেক ড্রাম থাকে। মোটরবাইকের ব্রেকের ঘূর্ণায়মান সিলিন্ডার আকৃতির অংশে থাকা বাইরের দিকে বল প্রয়োগকারী ব্রেক শ্যু হাইড্রোলিক চাপের প্রভাবে ড্রামের গায় লেগে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি করে।

এই ড্রামটি চাকার শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং টায়ারের মাঝখানে বসানো থাকে। ফলে ব্রেক চাপা হলে মোটরবাইকের ব্রেক ফ্লুইড লিভারের পিস্টনের চাপে ব্রেক প্যাডের উপর বল প্রয়োগ করে। এতে করে প্যাডোগুলো ড্রামের গায়ে ঘর্ষণ বল তৈরি করে চাকার শ্যাফটকে থামিয়ে দেয়।

ডিস্ক ব্রেক

ডিস্ক ব্রেকের ডিজাইন বেশ সাদামাটা। এতে রয়েছে একটি ডিস্ক, ক্যালিপার এবং এক জোড়া মোটরসাইকেল ব্রেক প্যাড। পুরো সিস্টেমটি একটি গাঢ় মসৃণ ফ্লুইড লাইনের দ্বারা পরিচালিত হয়। এই গাঢ় তরলটিকেই আমরা ব্রেক অয়েল নামে চিনি। ব্রেক লিভারের পাম্পের সাথে একটি ছোট ট্যাংকের ভেতরে ব্রেক ফ্লুইড জমা থাকে।

বাইক বা স্কুটার থামানোর জন্য মোটরবাইক ব্রেক লিভারে চাপ দেয়া হয়। এই চাপের কারণে মোটরবাইকের ব্রেক ফ্লুইড লাইনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ক্যালিপারের পিস্টনে চাপ দেয় এবং ব্রেক প্যাডগুলোর মাঝে ডিস্কটি ঘর্ষণ ক্রিয়ার শিকার হয়। এই ঘর্ষণের প্রভাবে ডিস্ক অর্থাৎ বাইকের গতি কমে যায়, নয়ত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ব্রেক প্যাড ডিস্কের গায়ে কতটুকু লেগে থাকবে বা দূরে থাকবে। আর কত দ্রুত ব্রেক হবে সেটা নির্ভর করে ব্রেক প্যাড কত জোরে ডিস্ককে চেপে ধরেছে অর্থাৎ মোটরবাইকের ব্রেকের বাইটের উপর।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের সুবিধা ও অসুবিধা

থামার গতি বা স্টপিং পাওয়ার

এই প্রতিবেদনের শুরুর দিকেই আমরা জেনেছি যে ড্রাম ব্রেকের তুলনায় ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং পাওয়ার অনেক বেশি। ওভারলোড হোক বা না হোক, আচমকা হার্ড ব্রেক করতে চাইলে ডিস্ক ব্রেক বেশি কার্যকরী।

ডুয়াল ডিস্ক রোটরের ব্যবহার, একাধিক কিংবা বড় আকৃতির মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড সংযোগ করা হলে ব্রেক প্যাডের বাইট আরো বাড়ানো সম্ভব; যেটা ড্রাম ব্রেকে করা যায় না।

থামার দুরত্ব বা স্টপিং দুরত্ব

যেকোনো মোটরবাইকের ব্রেক বাছাই করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সেটার স্টপিং দুরত্ব বিবেচনা করা। ব্রেক করার পর বাইকটি পুরোপুরি থেমে যাওয়ার আগে যতটুকু দুরত্ব অতিক্রম করে, সেটাই হলো মোটরবাইকের ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব।

আর এই দিক থেকেও ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের মধ্যে এগিয়ে আছে ডিস্ক ব্রেক। এর স্টপিং দুরত্ব ড্রাম ব্রেকের চেয়ে বেশ কম। তাই হঠাৎ কোন বাধার সম্মুখীন হয়ে ব্রেক করতে হলে ডিস্ক ব্রেক সবচেয়ে দ্রুত সুরক্ষা দিতে পারবে। আর সেই সাথে যদি এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম অর্থাৎ এবিএস প্রযুক্তি যোগ করা হয়, তাহলে স্টপিং দুরত্ব আরো কমে আসে।

তাপ নির্গমনের ক্ষমতা

যখন আমাদের ইঞ্জিন ও বাইকের টায়ার অনেক বেশি গরম হয়ে যায়, তখন ড্রাম ব্রেকের ব্রেকিং দক্ষতা আস্তে আস্তে কমে যায়। কেননা ব্রেক শ্যুগুলো ঘর্ষণ ক্রিয়ার ফলে আরো বেশি তাপ উৎপন্ন করে, আর পুরো ব্যাপারটা টায়ারের মাঝে ড্রামের মধ্যে ঘটায় সেটা ঠান্ডা হতে বেশ সময় লেগে যায়।

ডিস্ক ব্রেক বাইকের টায়ারের বাইরের দিকে বসানো থাকে, আর ড্রাম ব্রেক থাকে টায়ারের ভেতরে আবদ্ধ। সেজন্য ডিস্কের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা মোটরবাইকের ব্রেক দক্ষতায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কারণ ড্রাম ব্রেকের তুলনায় এটি অনেক দ্রুত তাপ নির্গমন করে ঠান্ডা হতে পারে।

ভেজা রাস্তা কিংবা বৃষ্টির প্রভাব

যখন ভেজা রাস্তায় অথবা বৃষ্টিতে মোটরবাইক চালানো হয় এবং চাকা পুরোপুরি ভিজে যায়, তখন মোটরবাইকের ব্রেক শ্যু এবং ড্রামের ভেতরের পৃষ্ঠের মাঝে ঘর্ষণ প্রতিক্রিয়া কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ড্রাম ব্রেকের স্টপিং পাওয়ার হ্রাস পায়। কিন্তু একই পরিস্থিতে ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং পাওয়ারের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।

চাকার ক্ষয়ক্ষতি

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের ক্ষেত্রে চাকার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণ ভিন্ন। কিন্তু ড্রাম ব্রেকের অতিরিক্ত তাপ এবং ঘর্ষণের ফলে আস্তে আস্তে মোটরসাইকেলের টায়ার নষ্ট হইয়ে যায়। ডিস্ক ব্রেকের ক্ষয়ক্ষতি হলেও সেটার কারণে চাকার ক্ষতি হয়না বললেই চলে।

রক্ষণাবেক্ষণ

ডিস্ক ব্রেক চাকার বাইরের দিকে থাকায় এটি পরিষ্কার ও মেইনটেনেন্স করা বেশ সহজ। এটার যত্ন নেয়ার জন্য অটো সার্ভিসের দোকানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর গেলেও সেটা মেকানিক খুব সহজে ও দ্রুত ঠিক করতে পারে।

কিন্তু ড্রাম ব্রেক মেইনটেনেন্স করার জন্য পুরো চাকাটাই খুলতে হয়। এরপর এর ভেতরে অনেকগুলো স্প্রিং, অটো পার্টস এসব খুলে পরিষ্কার করতে হয়। একজন দক্ষ মেকানিকেরও এই কাজ করতে বেশ সময় লাগে।

এছাড়াও ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের বাড়তি অটো পার্টসের দামেও বেশ তারতম্য রয়েছে। ডিস্ক ব্রেকের ছোট ছোট পার্টস আলাদা ভাবে পাওয়া যায়, তাই এটা সহজে মেরামত করা যায়। কিন্তু ড্রাম ব্রেকের ক্ষতি হওয়া মানে সেটার সাথে আপনার চাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ড্রাম ব্রেকের দাম কম হলেও টায়ার পরিবর্তন করতে বেশ ভালোই খরচ হয়।

চাকা লক-আপ হওয়া

আপনার বাইকে যদি এবিএস না থাকে, তাহলে হঠাৎ হার্ড ব্রেক করার সময় মোটরসাইকেলের চাকা লক-আপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ডিস্ক ব্রেকের ক্ষেত্রে এবিএস না থাকাটা তাই অনেক বড় একটা সমস্যা। চাকা লক-আপ হলে গুরুতর বাইক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ড্রাম ব্রেক সিস্টেমে এই ধরণের চাকা লক-আপের কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই আপনার বাইকের জন্য ড্রামের চেয়ে ডিস্ক ব্রেক তখনই ভালো হবে, যখন সাথে থাকবে এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম অর্থাৎ এবিএস।

বাইক ছিটকে যাওয়া

বৃষ্টির দিনে বাইক চালানোর সময় আপনার মোটরবাইকের ব্রেক যদি ডিস্ক হয়, তাহলে হার্ড ব্রেক করা একেবারেই অনুচিত। কেননা ডিস্ক ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব কম, ভেজা রাস্তায় হঠাৎ ব্রেক করে সামনের চাকা থেমে গেলে বাইক ছিটকে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি রয়েছে।

ড্রাম ব্রেকের স্টপিং দুরত্ব বেশি হওয়ায় ভেজা রাস্তায় এটা আস্তে আস্তে থামবে। তাই হুট করে ছিটকে পড়ার ঝুঁকি এতে নেই। সাবধানে রাস্তা দেখে বাইক চালালে ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক দু’টোই আপনার জন্য উপকারী। তবে বৃষ্টির দিনে ছিটকে পড়া থেকে বাঁচার জন্য ড্রাম ব্রেকই সবচেয়ে ভালো।

ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেকের দাম

উচ্চতর ব্রেকিং দক্ষতা এবং মেইনটেনেন্সের সুবিধা সব মিলিয়ে ডিস্ক ব্রেক অনেক বেশি উন্নত। আর তাই এই ব্রেকের দাম স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি।

ড্রাম ব্রেক প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটু পিছিয়ে থাকায় এর দাম বেশ সাধ্যের মধ্যেই থাকে।

বারবার ব্রেকিং-এর কারণে ব্রেকের কিছু সমস্যা:

বারবার ব্রেকিং-এর ফলে আরো কিছু মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।  তারমাঝে কিছু সমস্যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

ব্রেক প্যাডের সমস্যা

ডিস্ক ব্রেকের তাপ নির্গমন ক্ষমতা বেশি হওয়া সত্ত্বেও ইমারজেন্সি ব্রেক করা অথবা উঁচু রাস্তায় ওঠার সময় বারবার ব্রেক করার কারণে মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে যায়। এর ফলে বাইট অর্থাৎ প্যাডের ডিস্ক ধরার ক্ষমতা কমে যায়, আর একই সাথে ব্রেকিং দক্ষতাও অনেক হ্রাস পায়।

ব্রেক ফেইল করা

মোটরবাইকের ব্রেক প্যাড, ক্যালিপার কিংবা রোটরের অতিরিক্ত তাপ থেকে ব্রেক ফ্লুইডও অতিরিক্ত গরম হয়ে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডিস্ক ও ড্রাম ব্রেক যেটাই থাকুক না কেন, বাইকের ব্রেকিং পাওয়ার অনেক কমে যায়। এইভাবে ফ্লুইড লাইনের ক্ষতি হলে তৎক্ষণাৎ মোটরবাইকের ব্রেক ফেইল হতে পারে।

রোটরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়া

অতিরিক্ত তাপ থেকে রোটরের গায়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। ফাটল না ধরলেও রোটোরের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে গেলে সেটি বেঁকে যেতে পারে। আর বেঁকে যাওয়া রোটর থেকে ডিস্ক ব্রেকের অন্যান্য পার্টসেও সমস্যা হতে পারে। ফলস্বরূপ ব্রেকিং দক্ষতার ব্যাপক ক্ষতি হয়।

উপসংহার:

আশা করা যায় এই আর্টিকেল টি পড়ে ডিস্ক Vs ড্রাম ব্রেক সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পেয়ে গিয়েছেন।
মোটরবাইক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানতে সাথে থাকুন বাইকেস গাইডের

নতুন কিংবা পুরাতন যেকোনো বাইক বিক্রয় থেকে খুঁজে নিয়ে আপনার যাত্রাকে সহজ এবং সুন্দর করুন।

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy Brakesbikroy
Oil break And 8 Speed Shifter for Sale

Oil break And 8 Speed Shifter

MEMBER
Tk 3,000
2 days ago
Fork Triple Tree Top Clamp for Sale

Fork Triple Tree Top Clamp

MEMBER
Tk 800
4 days ago
Fazer/Fzs V1 for Sale

Fazer/Fzs V1

MEMBER
Tk 3,000
4 days ago
Shimano Oil Break for Sale

Shimano Oil Break

MEMBER
Tk 3,000
4 days ago
Buy Other Auto partsbikroy
TorQ Full-face (Ranger Edition) for Sale

TorQ Full-face (Ranger Edition)

MEMBER
Tk 1,200
46 minutes ago
original RKS bumper for Sale

original RKS bumper

MEMBER
Tk 800
4 hours ago
lazer Helmet sale for Sale

lazer Helmet sale

MEMBER
Tk 4,500
5 hours ago
HELMET for sell for Sale

HELMET for sell

MEMBER
Tk 1,350
5 hours ago
+ Post an ad on Bikroy