মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্সঃ কী, কেন, ও কীভাবে

29 Mar, 2023   
মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্সঃ কী, কেন, ও কীভাবে

আমাদের দেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় যেখানে সড়ক দূর্ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার, সেখানে কমবেশি অনেকেই ইনস্যুরেন্স এর ব্যাপারে অবগত। মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স এমন একটি পলিসি যা আপনার বাইকে বিভিন্ন দূর্ঘটনা, চুরি, এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির কভারেজ প্রদান করে থাকে।

বাইক ইনস্যুরেন্স দূর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি আর্থিক ভাবে কাটিয়ে উঠার একটি অনন্য সমাধান। তবে অনেকেরই ইনস্যুরেন্স করার নিয়মকানুন সঠিক উপায়ে জানা থাকে না বিধায় ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।

আমাদের আজকের লেখার মাধ্যমে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স করার সঠিক উপায় এবং বর্তমান বাজারে মোটরসাইকেলের দাম নিয়ে আলোচনা করেছি। চলুন দেখে নেওয়া যাক সাধারণ উপায়ে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স করতে হলে কী কী প্রয়োজন।

মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স পলিসির নানান সুবিধা

রাস্তাঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে চলার সময় যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। ভালো রাস্তাঘাটের অপ্রতুলতা, যোগ্য চালকদের অভাব, অফিস যাওয়ার সময়ের তীব্র যানজট আমাদের নিত্যদিনের অংশে পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও বর্ষাকালে কিংবা তীব্র গরমে রাস্তায় চালকেরা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন যেমন পিচ্ছিল রাস্তা এবং অস্বাভাবিক গরম। এসব প্রাকৃতিক কারণেও রাস্তাঘাটে হরহামেশাই দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই দূর্ঘটনার পরে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে ইনস্যুরেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইনস্যুরেন্স করার মাধ্যমে আপনি যা যা সুবিধা উপভোগ করতে পারবেনঃ

  • আর্থিক সুরক্ষাঃ মোটরসাইকেল চুরি, দূর্ঘটনা, এবং অন্যান্য দূর্যোগের ক্ষেত্রে ইনস্যুরেন্স পলিসি আপনাকে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
  • দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতিঃ বাইক ইনস্যুরেন্স শুধুমাত্র আপনার মোটরসাইকেলেরই আর্থিক ক্ষতি পূরণ করবে না, বরং আপনার নিজের যদি কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রেও আপনাকে সাহায্য করবে আপনার মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স।
  • সকল প্রকার মোটরবাইক এবং স্কুটারঃ আপনার মোটরসাইকেল অথবা স্কুটারের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ আপনার ইনস্যুরেন্স-এর মাধ্যমে সম্ভব।
  • সহজলব্ধ সার্ভিসঃ পলিসি কেনার সময় কিছু বাড়তি টাকার মাধ্যমে আপনি রোড সার্ভিস বা রাস্তার ধারের গ্যারেজ থেকে পরিষেবা নিতে পারেন।
  • মানসিক শান্তিঃ মোটরসাইকেলের ছোটখাটো সেবাই অনেক সময় বেশ খরচসাপেক্ষ হতে পারে। কিন্তু যখন আপনার ইনস্যুরেন্স থাকবে আপনি বেশ নিশ্চিন্তেই বাইক চালাতে সক্ষম হবেন।

বাইক ইনস্যুরেন্স করতে যা যা প্রয়োজন

বাংলাদেশে যেকোনো ধরণের যানবাহনের জন্যেই তিনটি ক্যাটাগরির ইনস্যুরেন্স পাওয়া যায়। এদেরকে মূলত টাইপ ১, টাইপ ২, টাইপ ৩ এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে প্রথম দুটি ক্যাটাগরিকে বলা হয় হাই প্রিমিয়াম, যা আপনাকে যেকোনো অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনায় পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম। তবে তৃতীয় ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট হারেই মিলবে ক্ষতিপূরণ, তাই ক্যাটাগরি বাছাই করার সময় সতর্ক থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।

ইনস্যুরেন্স কিনতে হলে যা যা লাগবে

  • আপনার মোটরসাইকেলের ব্লু বুক
  • দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • মোটরসাইকেলের কাগজ
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • বাইক কেনার কপি

মূলত কম খরচের জন্য অনেক চালকেরাই তৃতীয় ক্যাটাগরির ইনস্যুরেন্স কিনে থাকেন। এই ক্যাটাগরিতে একবছর মেয়াদী ইনস্যুরেন্স-এর খরচ পরবে ২০০ টাকা। পরবর্তীতে প্রতি বছর ২২৫ টাকার (ভ্যাট সহ) বিনিময়ে তা আবার রিনিউ করে নিতে হবে।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স প্ল্যান-এর ধরণ

বড় পরিসরে বাংলাদেশে মূলত দুই ধরণের ইনস্যুরেন্স প্ল্যান রয়েছে, যা হলোঃ

  • থার্ড পার্টি মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্সঃ থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স পলিসি সাধারণত চালকদের কোনো দূর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে থার্ড পার্টি হতে (সম্পত্তি অথবা মানুষ) সম্পর্কিত সমস্ত রকম আইনি ঝামেলা থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়াও এটি চালকদেরকে দূর্ঘটনার শিকার কোনো মানুষের (এমনকি মৃত্যু) দায়ভার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
  • কম্প্রেহেন্সিভ মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্সঃ কম্প্রেহেন্সিভ মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স বা সম্পূর্ণ বাইক ইনস্যুরেন্স তৃতীয় পক্ষের আইনি দায়বদ্ধতা ছাড়াও অন্যান্য দূর্ঘটনা, বাইক চুরি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সৃষ্ট ক্ষতি থেকে আপনার মোটরসাইকেলকে সুরক্ষা প্রদান করবে।

অনলাইন মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স কেন দ্রুত এবং সহজ?

অনলাইনে বাইক ইনস্যুরেন্স কেনার ক্ষেত্রে যেসমস্ত সুবিধা পাওয়া যেতে পারেঃ

  • আপনার মোটরসাইকেলের জন্য দ্রুত ইনস্যুরেন্স পলিসিঃ বাইক কেনার পরে অনেকেই সহজ উপায়ে ইনস্যুরেন্স করাতে চান, যা অনলাইনের মাধ্যমে মাত্র কিছু মিনিটেই করা সম্ভব।
  • অতিরিক্ত চার্জ নেইঃ অনলাইন ইনস্যুরেন্স করার ক্ষেত্রে বাড়তি বা অতিরিক্ত কোনো চার্জ কাটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
  • আগের ইনস্যুরেন্স-এর তথ্যাদি দেওয়ার প্রয়োজন হয়নাঃ আপনার পূর্ববর্তী ইনস্যুরেন্স যদি ৯০ দিনের আগে করা হয়ে থাকে, সেক্ষত্রে নতুন ইনস্যুরেন্স করার সময় আগের কোনো তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়না।
  • নবায়ন করার সময় কোনো কাগজাদির প্রয়োজন নেইঃ পলিসি নবায়ন করার সময় কোনো তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়না, শুধুমাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই আপনার ইনস্যুরেন্স নবায়ন করে নেওয়া সম্ভব।
  • অনলাইন সাপোর্টঃ এছাড়াও বেশিরভাগ মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের জন্য অনলাইন সার্ভিস দিয়ে থাকেন।

কীভাবে অনলাইন মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স করবেন?

আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানি অনলাইনে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স সেবা দিয়ে থাকে এবং আপনি রেজিস্ট্রেশন করার দুই/তিন দিনের মধ্যেই তা হাতে পেয়ে যাবেন। অনেকেই আছেন যারা নতুন মোটরসাইকেল কেনার পরে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে ক্ষতি এড়াতে বাইক ইনস্যুরেন্স করার সহজ উপায়ের খোঁজ করে থাকেন। অনলাইনে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স পেতে যেসমস্ত তথ্য প্রদান করার প্রয়োজন হতে পারেঃ

  • বাইকের সিসি লিমিট
  • মোটরসাইকেলের মূল্য (শোরুম-এর কাগজ অনুযায়ী)
  • পূর্ববর্তী ইনস্যুরেন্স-এর তথ্যাদি
  • রোড ট্যাক্স টোকেন এর মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ
  • ফিটনেস এর মেয়াদ উত্তীর্নের তারিখ
  • আপনি যেসমস্ত ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করছেন
  • আপনার বাইকে কোনো ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো রয়েছে কিনা

বেশিরভাগ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ওয়েবসাইটেই ক্যালকুলেটর ফিচার রয়েছে, যেখান থেকে সহজেই আপনি সমস্ত তথ্য দেওয়ার পরে খরচের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

অনলাইনে কীভাবে বাইক ইনস্যুরেন্স ক্লেইম করবেন?

আপনি যদি অনলাইন থেকেই আপনার ইনস্যুরেন্স কিনে থাকেন তাহলে দুটো উপায়ে আপনি সেটি ক্লেইম করতে পারবেনঃ

  • ক্যাশলেস ক্লেইমঃ ক্যাশলেস ক্লেইমের ক্ষেত্রে ক্লেইম করা অর্থ সরসরি নেটওয়ার্ক গ্যারেজে প্রদান করা হয়ে থাকে, যেখানে আপনার বাইককে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। তবে এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি আপনার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধিত গ্যারেজ থেকে পরিষেবা নিয়ে থাকবেন।
  • ডিরেক্ট ক্লেইমঃ এই পদ্ধতিতে সরাসরি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ক্লেইম করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে যেহেতু কোম্পানির কাছ থেকে ক্লেইম এর আবেদন আসতে হয় তাই আপনি থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স নিয়ে থাকলে নিশ্চিত হয়ে নিন তারা তাদের পার্টনারের সাথে নিবন্ধিত উপায়ে ব্যবসা করছেন।

শেষ কথা

আমরা কোনোভাবেই চাইনা কেউ কোনোভাবেই অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনার শিকার হোক। তবে বাইক চালানোর সময় পর্যাপ্ত সতর্কতা এবং সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চললে দূর্ঘটনায় পরার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে আসে। এছাড়াও বাইক চালানোর কোর্স করতে পারলে আপনি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বা প্রতিকুল মূহুর্তেও ভালোভাবে সেটি চালাতে সক্ষম হবেন।

তাই বাইক নিয়ে রাস্তায় নামার আগেই একটি ফুল-ফেস হেলমেট এবং অন্যান্য রাইডিং সেফটি গিয়ার পরে নিতে ভুলবেন না। আপনি যদি নতুন চালক হয়ে থাকেন, তবে আশা করি আমাদের আজকের লেখার মাধ্যমে আপনি দ্রুত এবং নিরাপদে অনলাইনে মোটরসাইকেল ইনস্যুরেন্স করার প্রয়োজনীয়তা এবং উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

হ্যাপি রাইডিং!

Similar Advices



3 comments

  1. আমি করতে চাই। কিভাবে আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

  2. বাইকের ইন্সুরেন্স না করলে কি পুলিশ মামলা দিবে বর্তমানে? জানতে চাই

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy New Bikesbikroy
Suzuki Gixxer ABS Fi 2025 for Sale

Suzuki Gixxer ABS Fi 2025

1,400 km
MEMBER
Tk 275,000
4 hours ago
Honda Hornet good 2019 for Sale

Honda Hornet good 2019

52,000 km
MEMBER
Tk 145,000
5 hours ago
Lifan KPR Full fresh 2025 for Sale

Lifan KPR Full fresh 2025

6,800 km
MEMBER
Tk 200,000
2 days ago
Bajaj Pulsar 150 বাজাজ পালসার 2021 for Sale

Bajaj Pulsar 150 বাজাজ পালসার 2021

12,514 km
verified MEMBER
Tk 135,000
1 week ago
bike 2024 for Sale

bike 2024

0 km
verified MEMBER
Tk 430,000
4 weeks ago
Buy Used Bikesbikroy
Royal Enfield Hunter 350 . 2025 for Sale

Royal Enfield Hunter 350 . 2025

210 km
MEMBER
Tk 370,000
6 hours ago
Honda CBR 150r indo 2022 for Sale

Honda CBR 150r indo 2022

8,500 km
MEMBER
Tk 460,000
1 day ago
Lifan KPR Full fresh 2025 for Sale

Lifan KPR Full fresh 2025

6,800 km
MEMBER
Tk 200,000
2 days ago
Yamaha R15 M BS7 2023 for Sale

Yamaha R15 M BS7 2023

13,000 km
MEMBER
Tk 510,000
2 weeks ago
Bajaj Pulsar N 160 Dual-channel ABS 2023 for Sale

Bajaj Pulsar N 160 Dual-channel ABS 2023

348 km
MEMBER
Tk 260,000
1 day ago
+ Post an ad on Bikroy