মোটরবাইকের ব্যাটারি নিয়ে যত কথা
মোটরসাইকেলের ব্যাটারি বাইককে স্টার্ট নিতে সাহায্য করে। আর আপনার বাইক ঠিক মতো স্টার্ট নিচ্ছে কিনা বা পারফর্ম করছে কিনা তা নির্ভর করে বাইকের যত্নের উপর। বাইকের যন্ত্রাংশগুলো ঠিক আছে কি না তা সার্ভিসিং এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া বেশ জরুরি। বিশেষ করে লং ট্রিপে বের হবেন তখন সবকিছু পরীক্ষা করে নেওয়া আপনার জন্য নিরাপদ।
বাইকের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অংশ হলো ব্যাটারি। ব্যাটারির যত্ন নেওয়া মানে এক কথায়, বাইকের যত্ন নেওয়া। ব্যাটারি প্রস্তুতকারকেরা সাধারণত বলে থাকেন যে, একটি মোটরসাইকেলের ব্যাটারি সর্বনিম্ন ৪৮ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া উচিত। তবে যত্নের অভাবে দেখা যায় ব্যাটারি সময়ের আগে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কখনো পানি লেগে বা কখনো জং ধরে, এভাবে নানা কারণে বাইকের ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপনার অজান্তেই।
আজকের আলোচনায় আমরা মোটরসাইকেলের ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানবো।
ব্যাটারির যত্ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ও পরামর্শ
মোটরবাইকের অতি গুরুত্বপৃর্ণ একটি অংশ হলো ব্যাটারি। মোটরবাইককে সক্রিয় রাখতে এর ভূমিকা অপরিহার্য। চলুন জেনে নেই এই ব্যাটারির কিভাবে সঠিক যত্ন নেয়া যাবে তা সম্পর্কে :
সঠিকভাবে ব্যাটারির যত্ন
আপনার মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ঠিক থাকলে আপনার বাইক রাইডিং এক্সপেরিয়েন্সও ঠিক থাকবে। আপনি যদি লক্ষ্য করেন আগের তুলনায় আপনার বাইকের গতি কম পাচ্ছেন তাহলে ব্যাটারি একবার চেক করিয়ে নিন। বাইকের ব্যাটারি পুরানো হয়ে গেলে এমনটা হয়ে থাকে।
দীর্ঘ সময় ধরে বাইকের অটো পার্টস সার্ভিসিং না করার ফলে বাইকের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যায়। একটা লম্বা সময় ধরে অযত্নে থাকার কারণে, বাইকের ব্যাটারি সহ অন্যান্য পার্টগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে, বাইকের কিছু বিশেষ যন্ত্রাংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় বাইক না চালানোর কারণে ব্যাটারিতে জং ধরে যেতে পারে। অতএব, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়মিত বাইক সার্ভিসিং করানো প্রয়োজন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মোটরসাইকেলের ব্যাটারি বদলে ফেলা উচিত।
মোটরসাইকেলের ব্যাটারি সুরক্ষিত রাখতে যা করণীয়
ব্যাটারির সাথে সংযোগ করা সকল পার্টস ঠিক মত কাজ করছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। ব্যাটারির সাথে সংযোগে আছে এমন যন্ত্রাংশে যদি মরিচা পড়ে, তাহলে আপনার ব্যাটারি দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে, অটো পার্টগুলোতে জং ধরেছে কি না তা পরীক্ষা করা আবশ্যক।
বাইকের পার্টসগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে করে সংযোগে থাকা ব্যাটারি সুরক্ষিত থাকবে। কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত মেরামত করিয়ে নিতে হবে। অবশ্যই অভিজ্ঞ মেকানিক দ্বারা মেরামত করানো প্রয়োজন। ব্যাটারির যত্ন সঠিকভাবে করলে বাইকের পারফরম্যান্স নিশ্চিত হবে।
ব্যাটারির যত্ন নিতে এটিকে পানি থেকে দূরে রাখুন
মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো এটিকে পানি থেকে দূরে রাখা। বাইক ওয়াশ করার সময় ব্যাটারিতে যেন পানি না লাগে সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দিন।
অন্যদিকে, বৃষ্টির সময় বাইকের ব্যাটারিতে পানি চলে যেতে পারে। রাইডিং করার সময় বৃষ্টিতে আপনার বাইকের পার্টসগুলো ভিজে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনটা হলে বাইকের ব্যাটারি সহ বাকি পার্টস ঠিক আছে কি না তা অবশ্যই চেক করিয়ে নিন।
বাইকের ওভারহিটিং সমস্যা রোধ করুন
এমন কিছু ধরণের বাইকের ব্যাটারি রয়েছে যা বাইকের ঝাঁকুনির প্রভাবে এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বাইকের ইঞ্জিনে ওভারহিটিং সমস্যা দেখা দিলে ব্যাটারি অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়। ব্যাটারি অতিরিক্ত তাপ সহ্য করতে পারে না বলেই এর কার্যকারিতা কমে যায়।
বাজারে এমন কয়েকটি শক্তিশালি মোটরসাইকেলের ব্যাটারি উপলব্ধ আছে যা বেশি তাপ শোষণ করতে পারে এবং বাইকের ঝাঁকুনিতেও তেমন প্রভাবিত হয় না। এর মধ্যে এজিএম ব্যাটারি এবং জেল সেল ব্যাটারি বেশ কার্যকর।
আপনার বাইকের জন্য উপযুক্ত হলে এই দুটি ব্যাটারির মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েট সেল ব্যাটারি নিয়ে কিছু কথা
ওয়েট সেল ব্যাটারি সাধারনত বাইকে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ধরনের ব্যাটারিতে লিকুইড সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ঠিকভাবে রিচার্জ করলে এই ব্যাটারি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়। এতে নিয়মিত পানি ও এসিডের মিশ্রণ দিয়ে এর কার্যক্ষমতা বাড়ানো হয়। এই ব্যাটারির দাম কম হলেও এর যত্ন নেওয়া বেশ ব্যয়বহুল। এটি ব্যবহারে অন্যান্য মেইনটেনেন্স খরচ বেড়ে যায়।
ড্রাই সেল ব্যাটারির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
এখনকার বেশিরভাগ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি তাদের মোটরসাইকেলে ড্রাই সেল ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। অন্যান্য ব্যাটারির তুলনায় এই ব্যাটারি ব্যবহার করলে বাইকের পারফরম্যান্স ভালো হয়। তবে এর মধ্যে থাকা ড্রাই কেমিক্যালস একবার শুকিয়ে গেলে এটার কার্যকারিতা কমে যায় এবং যার ফলে ব্যাটারি রিচার্জ করার মতো অবস্থা আর থাকে না। ওয়েট সেল ব্যাটারির চেয়ে ড্রাই সেল ব্যাটারি বেশি টেকসই, তাই দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। এটির একটি ভালো দিক হলো এ ধরনের ব্যাটারি সহজে মেইনটেইন করা যায়।
এ ব্যাটারি এক প্রকার পেস্ট বা পাউডার জাতীয় কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হয়। বাকি অন্যান্য ব্যাটারি গুলোর মতো এতে তরল কোনো উপাদান নেই। তাই এ ব্যাটারি থেকে কোনো লিকেজ হবার সম্ভাবনা থাকে না। তাই এটি ব্যবহারে ঝামেলা একদমই হয় না। ওয়েট সেলের তুলনায় এটি বেশ দামি তবে ওজনে বেশ হালকা।
বাইকের ব্যাটারির গুরুত্ব
মোটরসাইকেলের ব্যাটারি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা বাকি সব পার্টস সঠিকভাবে পারফর্ম করতে সাহায্য করে। বাইকের প্রতিটি ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশে বিদ্যুৎ প্রদানের কাজ করে এই ব্যাটারি। যেমন বাইকের বিভিন্ন রকম লাইটস, স্পার্ক প্লাগ, কন্ট্রোলার, হর্ন ইত্যাদি।
ইলেক্ট্রিক বাইকে ব্যাটারির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের বাইকের মধ্যে থাকে মোটর, যেখানে বিদ্যুৎ সাপ্লাই প্রয়োজন পড়ে বাইক স্টার্ট করার জন্য। এই ব্যাটারি যখন কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এর মাঝে বিদ্যুৎ চলাচল ঠিক মতো হয় না। ফলে ব্যাটারি অকার্যকর হয়ে পড়ে ও বাইকের পারফরম্যান্স খারাপ হয়।
বাইকের ব্যাটারি সচল রাখার কিছু টিপস
- মোটরসাইকেলের ব্যাটারি মাসে একবার পরীক্ষা করানো ভালো। সেক্ষেত্রে এর কার্যক্ষমতা বজায় থাকবে।
- আপনার ব্যাটারির সংযোগে থাকা বাকি পার্টসগুলো জং ধরেছে কি না তাতে বিশেষ নজর দিন।
- ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় মাঝে মাঝে, এমন সমস্যা লক্ষ্য করলে কোনো অভিজ্ঞ মেকানিক দ্বারা চেক করিয়ে নিন।
- আপনার বাইকে অতিরিক্ত লোড নিবেন না। এতে ব্যাটারিতে প্রেসার পড়ে।
- ইঞ্জিন বেশি মাত্রায় গরম হয়ে গেলে ব্যাটারিতে প্রভাব ফেলে। তাই বাইকে ওভারহিটিং সমস্যা দেখা দিলে চেক করে নিন ব্যাটারি ঠিক মতো কাজ করছে কি না।
- আপনার বাইকে যদি লিকুইড সেল ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটির ওয়াটার লেভেল প্রতি মাসে চেক করবেন। ওয়াটার লেভেল কমে গেলে এটি আর আগের মতো সচল থাকবে না। ডিস্টিলড ওয়াটার যোগ করলে এই ব্যাটারি আবার আগের মতো কার্যকর হয়ে উঠবে।
পরিশেষে
বাইকের ব্যাটারি আপনার বাইক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যাটারির যত্ন করা মানে বাইকের যত্ন নিশ্চিত করা।
আপনার মোটরসাইকেলের ব্যাটারি কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তাতে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। এতে কোনো ছিদ্র থাকলে অথবা ব্যাটারি ফুলে গেলে আপনার বাইকের পারফরম্যান্স খারাপ করতে পারে।
বাইকের ব্যাটারি ভালো রাখতে, নিতে হবে বিশেষ যত্ন এবং সময়ের মধ্যে করাতে হবে সার্ভিসিং। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে অনেকেই বাইকের হেডলাইট অফ করতে ভুলে যায়, আবার কেউ কেউ ইঞ্জিন অন রেখে সিগনালে বসে থাকে জ্যামে।
এরকম বদঅভ্যাস আমাদের বাইকের ব্যাটারির প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। আপনি লং রাইডে বের হবার আগেই বাইকের ব্যাটারি চেক করিয়ে নিন। এতে রাইডিং এর সময় ব্যাটারি বদলানোর ঝামেলা এড়ানো যাবে। সুতরাং, বাইকের পারফরম্যান্স ঠিক রাখতে ব্যাটারির যত্ন নিয়মিত করতে হবে।
মোটরবাইকের ব্যাটারির দাম এবং বিভিন্ন ধরণের মোটরবাইক সম্পর্কে রিভিউ পেতে সঙ্গে থাকুন Bikes Guide– এর ব্লগে।
গ্রাহকদের কিছু নিয়মিত প্রশ্নের উত্তর
কত কত সময় পর পর আমার মোটরসাইকেলের ব্যাটারি প্রতিস্থাপন করা উচিত?
এটি ব্যাটারির প্রকারের উপর নির্ভর করে, তবে বেশিরভাগ মোটরসাইকেলের ব্যাটারি প্রায় দুই থেকে পাঁচ বছর স্থায়ী হয়।
একটি মোটরসাইকেল ব্যাটারির আয়ুষ্কালকে কোন বিষয়গুলো প্রভাবিত করে?
- কম্পাঙ্ক ব্যবহার.
- নিয়মিত ব্যাটারি চেক এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
- ভোল্টেজ পরীক্ষা করুন।
- ইলেক্ট্রোলাইট রিফিল করুন।
- টার্মিনালগুলিতে ক্ষয় পরিষ্কার করুন।
- জলবায়ু।
আমি কি আমার মোটরসাইকেলে গাড়ির ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারি?
সাধারণত না, একটি গাড়ির ব্যাটারি সাধারণত আকারে অনেক বড় হয় যা বেশিরভাগ মোটরসাইকেলে ফিট করবে না।
আমার মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ডেড হয়ে গেছে কিনা কিভাবে বুঝব?
একটি খারাপ ব্যাটারির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ভাঙা টার্মিনাল, প্লাস্টিকের আবরণে একটি ফাটল বা স্ফীতি, সেইসাথে কোনও ফুটো তরল বা বিবর্ণতা।
কিভাবে মোটরসাইকেলের ব্যাটারির ভোল্টেজ পরীক্ষা করতে পারি?
একটি ভোল্টমিটারকে ব্যাটারির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত করা (কী বন্ধ এবং সমস্ত আলো এবং আনুষাঙ্গিক বন্ধ) ব্যাটারির চার্জ স্তর প্রকাশ করবে৷ ১২.৬৬ ভোল্টের রিডিং একটি সম্পূর্ণ চার্জযুক্ত ব্যাটারি নির্দেশ করে। রিডিং ১২.৪৫ ভোল্ট বা তার কম হলে, ব্যাটারি কম এবং রিচার্জ করতে হবে।