ডার্ট বাইকিং কী এবং কেন বাইকাররা এটি পছন্দ করেন?

03 Dec, 2023   
ডার্ট বাইকিং কী এবং কেন বাইকাররা এটি পছন্দ করেন?

অফ-রোড বাইকিং নিয়ে গড়ে উঠা একটি থ্রিলিং স্পোর্টসের হলো ডার্ট বাইকিং। সমুদ্রের তীরে, মরুভূমির শুষ্ক বালি, পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তা কিংবা ঘন বন জঙ্গল, মূলত যেকোনো চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে থ্রিলিং বাইক রাইডিং এর নামই হলো ডার্ট বাইকিং। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার পিপাসু হয়ে থাকেন এবং প্রকৃতির সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে চান, তাহলে ডার্ট বাইকিং স্পোর্টসটি আপনার জন্য। আর এই অ্যাডভেঞ্চার পিপাসু ইচ্ছা মিটিয়ে দিতেই গড়ে উঠেছে ডার্ট বাইক এর আলাদা বাজার। ডার্ট বাইক-এর দাম আয়ত্তের মাঝে থাকায় অনেকেই এই বাইকের জন্য ছুটছেন। নানান ব্র্যান্ডের ডার্ট বাইক সহ বিশ্বজুড়ে দেখা মিলছে ডার্ট বাইকিং এর অজস্র ইভেন্ট। পৃথিবীর অন্য সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও আছে ডার্ট বাইকিং এর বিভিন্ন ট্রেইল। আর এই ট্রেইলগুলোতে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজতে প্রতিবছর হাজির হচ্ছেন হাজারো ডার্ট বাইকার। 

কিন্তু কেন ডার্ট বাইকিং নিয়ে মানুষের এতো আগ্রহ? কি লুকিয়ে আছে এই অ্যাডভেঞ্চারের পিছনে? চলুন জেনে নেই সেই রহস্য। 

কেন ডার্ট বাইকিং এর এতো জনপ্রিয়?

বিশ্বজুড়ে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় সকল বাইকারের মাঝে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডার্ট বাইকিং এর জনপ্রিয়তা। প্রাকৃতিক পরিবেশে থ্রিল খুঁজে বেড়ানোর পাশাপাশি, ডার্ট বাইকিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পিছনে আছে আরও অনেক কারণ – 

১। অ্যাডভেঞ্চারের সন্ধান- প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত পাখির মতো বাইক চালানোর মতো রোমাঞ্চ অন্য কোন স্পোর্টসই দিতে পারে না। রহস্যে ঘেড়া উঁচু নিচু রাস্তায় নানা রকম স্টান্ট এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি বাইকারদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে করে তুলে চাঙ্গা। 

২। শারীরিক ফিটনেস – যেকোনো শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিন্তু ডার্ট বাইকিং সম্ভব নয়। ডার্ট বাইকিং এর জন্য প্রয়োজন শারীরিক এবং মানসিক দৃঢ়তা। এই রোমাঞ্চের স্বাদ নিতেই ডার্ট বাইকাররা নিজেদের শারীরিকভাবে ফিট রাখেন যাতে যেকোনো পরিস্থিতে নিজের ব্যালেন্স সঠিকভাবে ধরে রাখা যায়। 

৩। ডার্ট বাইক কমিউনিটি – যেকোনো অঞ্চলে ডার্ট বাইকিং এর সাথে জড়িয়ে থাকে বিশাল এক কমিউনিটি। আর এই ডার্ট বাইক কমিউনিটির মাঝে আয়োজিত হয় নানান বাইকিং ইভেন্ট এবং প্রতিযোগিতা। এ সকল আয়োজনের কারণে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব ডার্ট বাইকিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর অন্যতম এক কারণ।

৪। ডার্ট বাইক এর সহজলভ্যতা- বাজারে প্রচলিত অন্যান্য স্পোর্টস বাইকের তুলনায় ডার্ট বাইক-এর দাম বেশ কম হওয়ায় অনেকের কাছেই পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। শারীরিকভাবে ফিট এবং সুস্থ যেকোনো বয়স থেকে শুরু করে স্বল্প অভিজ্ঞতার বাইকাররাও সহজে ডার্ট বাইক চালাতে পারেন। তবে তরুণদের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই ডার্ট বাইকিং এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫। মানসিক চ্যালেঞ্জ- প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার রোমাঞ্চ অনেক বাইকারকে তাড়া করে বেড়ায়। আর এই রোমাঞ্চের স্বাদ নিতেই ডার্ট বাইক কমিউনিটি রাইডাররা নিজেদের চ্যালেঞ্জ করেন এমন সব প্রতিকূল পরিবেশে, যেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে প্রয়োজন মানসিক দৃঢ়তা। আর একবার এই চ্যালেঞ্জ উৎরিয়ে গেলেই মিলে মানসিক স্বস্তির যা বাইকাররের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। 

এসকল কারণেই একদিকে যেমন বড় হচ্ছে ডার্ট বাইকার কমিউনিটি, অপরদিকে চালু হচ্ছে ডার্ট বাইকিং এর নানান ইভেন্ট এবং স্পোর্টিং কম্পিটিশন। আর এভাবেই দিন দিন সকল বয়সের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ডার্ট বাইকিং

ডার্ট বাইক এর বিশেষ দিক-

প্রতিকূল পরিবেশ এবং রাফ রাইডিং এর সাথে টিকে থাকার জন্য ডার্ট বাইক গুলো তৈরি করা হয় বিশেষভাবে। প্রচলিত স্পোর্টস বাইকের থেকে ডার্ট বাইক গুলোতে রয়েছে চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু পার্থক্য। এক নজরে দেখে নেয়া যাক ডার্ট বাইক এর বিশেষ ফিচারগুলো – 

  • হালকা ফ্রেম- সড়কের কমিউটার বাইক কিংবা স্পোর্টস বাইকের তুলনায় ডার্ট বাইকগুলোর ফ্রেম এবং বডি বেশ হালকা হয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তায় যাতে বাইকটিকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ভারী ফ্রেম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যাতে অতিরিক্ত শক্তির খরচ না হয়। 
  • হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স- অন্যান্য সকল বাইকের থেকে ডার্ট বাইক গুলোতে গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি থাকে। অফ-রোড বাইকগুলোতে গড়ে ১৭০-১৮০ মিলিমিটারের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হলো, প্রতিকূল রাস্তায় মাটির সংস্পর্শ থেকে বাইকের ইঞ্জিন যথাসম্ভব উঁচুতে রাখা এবং রাইডার যাতে স্বাচ্ছন্দে অফ-রোডে বাইক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 
  • মানানসই সাসপেনশন- ডার্ট বাইক গুলো নিয়ে যেহেতু অফ-রোড রাইডিংই বেশি হয়, তাই এই বাইকগুলোর সাসপেনশন অন্যান্য বাইকের তুলনায় অধিক ধকল নিতে পারে এমনভাবেই প্রস্তুত করা হয়। অফ-রোড জাম্পিং এবং প্রতিকূল ট্রেইল ধরে বাইক যাতে স্বাচ্ছন্দে চালানো যায়, সেই ব্যবস্থাই রাখা হয় সাসপেনশনগুলোতে। 
  • শক্তিশালী ইঞ্জিন- অফ-রোড রাইডিং এবং প্রতিকূল পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখে বাইকগুলোর ইঞ্জিন অধিক শক্তিশালী হিসেবে তৈরি করা হয় যাতে কম আরপিএম এ ও ম্যাক্সিমাম পারফরম্যান্স দিতে পারে। ডার্ট বাইক-এর দাম অনুযায়ী কুইক অ্যাক্সেলারেশন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে হাইস্পিড রাইডিংও সম্ভব এই ইঞ্জিনগুলোতে। তবে এ সকল বাইকের মাইলেজ গড়ে লিটারে ৪০-৬০ কিলোমিটার পাওয়া যায়।
  • অধিক গ্রিপ সম্পন্ন টায়ার- অফ-রোড রাইডিং এর জন্য ডার্ট বাইকের টায়ারগুলো আকারে বড় এবং অধিক গ্রিপ সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে পাহাড়ি রাস্তায় রাইডিং করার সময়ও পর্যাপ্ত ট্র্যাকশন পাওয়া যায়। 
  • সিম্পল এবং প্রোটেক্টিভ ডিজাইন- বাড়তি ওজন কমাতে ডার্ট বাইক গুলোতে অনেক সময় স্ট্রিট বাইকের বেশ কিছু কমন ফিচার যেমন হেডলাইড, ইন্ডিকেটর লাইট, মিরর এগুলো বাদ দিয়ে দেয়া হয়। উল্টো বেশ কিছু সেইফটি ফিচার যেমন হ্যান্ড গার্ড, স্কিড প্লেট, ইঞ্জিন গার্ড এগুলো যুক্ত করা হয় যাতে যেকোনো দুর্ঘটনায় রাইডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

বাংলাদেশে ডার্ট বাইক- এর দাম 

বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে বেশ কয়টি ডার্ট বাইক রয়েছে যা একদিকে ডার্ট বাইক- এর দাম 

অনুযায়ী রাইডারদের হাতের নাগালে আবার অপরদিকে বেশ মানানসই। Speeder Republic 100, Motocross Fighter 71, Motocross Fighter 150, Aprilia Terra 150, Motrac M6-125 এবং GPX Legend 150 এর মতো বাইক রয়েছে যা পারফরম্যান্স অনুযায়ী দামে বেশ সাশ্রয়ী বলা যায়। ডার্ট বাইক- এর দাম বিবেচনা করলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী গড়ে ১,৭০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা এর মাঝে পড়বে এই বাইকগুলো।

অপরদিকে হাই পারফরম্যান্সের কথা বিবেচনা করলে বাজারে Honda CRF300L, Honda CRF150L, Kawasaki KLX 150BF, Kawasaki D-Tracker 150 এবং Yamaha YZ series বাইকগুলো রয়েছে। বাংলাদেশে এসকল ডার্ট বাইক- এর দাম ৩,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ টাকা এর ভেতর। 

বাংলাদেশের কোথায় ডার্ট বাইকিং সম্ভব?

ডার্ট বাইকিং কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তেমন কোন স্পট গড়ে না উঠলেও পাহাড় ও ঘন জঙ্গলে ঘেরা যেকোনো পরিবেশে আপনি বাইক নিয়ে চলে যেতে পারেন রোমাঞ্চের সন্ধানে। এর জন্য চট্টগ্রামের হিল ট্র্যাক, সিলেটের চা বাগান, কক্সবাজারের সমুদ্রের পাড় এবং সুন্দরবনের চ্যালেঞ্জিং ট্র্যাক ডার্ট বাইকিং এর জন্য বেশ মানানসই। তবে খেয়াল রাখবেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে গভীরে বাইক নিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিবেন। এজন্য ডার্ট বাইক কমিউনিটি এর সাথে একত্রে রাইড করতে পারেন।

ডার্ট বাইকিং এর সতর্কতা

ডার্ট বাইকিং আপনাকে থ্রিলিং অভিজ্ঞতা দিলেও, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি স্পোর্টস। তাই আগে থেকে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিৎ-

  • নিরাপত্তার জন্য প্রোটেক্টিভ গিয়ার পরিধান করুন। ভালো মানের হেলমেট, গগলস, গ্লাভস, পূর্ণাঙ্গ শরীর ঢেকে রাখার মতো পোশাক এবং বুট অবশ্যই পরিধান করবেন।
  • বাইকের সকল ফিচার যেমন টায়ার ও ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা খেয়াল রাখবেন।
  • আপনার শারীরিক ও মানসিক লিমিটের বাহিরে গিয়ে কখনওই রাইড করবেন না।
  • সবসময় দল বেঁধে রাইড করবেন।
  • আশেপাশের পরিবেশের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

ডার্ট বাইক-এর দাম অনুযায়ী এটি বেশ সহজলভ্য হওয়ায় এর কমিউনিটি দিন দিন বড় হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে ডার্ট বাইককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজিত হবে।

ডার্ট বাইক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে চোখ রাখুন বাইকস গাইড– এ। এছাড়া ২০২৩ সালের মোটরবাইকের বাজার জানতে ভিজিট করুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।

Similar Advices



Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Motorbikes for Salebikroy logo
Suzuki GSX R150 ABS , 2022 for Sale

Suzuki GSX R150 ABS , 2022

11,000 km
verified MEMBER
Tk 262,000
1 day ago
Suzuki GSX R150 ABS 150 2022 for Sale

Suzuki GSX R150 ABS 150 2022

11,000 km
verified MEMBER
Tk 264,000
1 day ago
Honda Shine . 2024 for Sale

Honda Shine . 2024

3,600 km
MEMBER
Tk 90,000
1 day ago
Bajaj Discover 110 , 2021 for Sale

Bajaj Discover 110 , 2021

24,000 km
MEMBER
Tk 105,000
1 hour ago
Yamaha FZS , 2023 for Sale

Yamaha FZS , 2023

17,000 km
MEMBER
Tk 218,000
1 hour ago
Auto Parts for salebikroy logo
+ Post an ad on Bikroy