বাইক দ্রুত চালানোর মাধ্যমে কোনো ভাবেই আপনার বাইকের উপর নিয়ন্ত্রণ বা আপনার পারদর্শিতা প্রকাশ পায় না। বরং দ্রুত গতির বাইক আপনি কতো দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন বা তা থামিয়ে আনতে পারছেন তার উপরই আপনার পারদর্শিতা প্রকাশ পায়। আবার ব্যস্ত সড়কে বাইক চালানোর সময় এর উপর আপনার সুস্বাস্থ্য’ও নির্ভর করতে পারে। তাই বাইকের গতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের সকলেরই যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করা উচিত। আর এই গতি কমিয়ে আনার কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে ইঞ্জিন ব্রেক। আজকের লেখায় আমরা ইঞ্জিন ব্রেক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
ইঞ্জিন ব্রেক কী?
সহজ ভাষায় বললে, বাইকের সামনের ও পেছনের ব্রেক ব্যবহার না করে বরং থ্রোটল ছেড়ে দিয়ে বাইকের গতি কমিয়ে ফেলা হচ্ছে ইঞ্জিন ব্রেক। আর পদ্ধতিতে বাইককে থামিকে দেয়াকে বলা হয় ইঞ্জিন ব্রেকিং। ইঞ্জিন ব্রেক বলতে বাইকের ইঞ্জিনে কোনো ধরণের ফিজিকাল ব্রেকের উপস্থিতি বোঝায় না। ইঞ্জিন ব্রেক করতে চাইলে আপনাকে শুধু থ্রোটল ছেড়ে দিতে হবে এবং বাইক নিজেই ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে ফেলবে।
অনেকে এই ধারণা পোষণ করেন যে ইঞ্জিন ব্রেকিং বাইকের ইঞ্জিনের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। তবে বিশেষজ্ঞ এবং বাইক প্রস্তুতকারীগণ ইঞ্জিন ব্রেকিং-এর পদ্ধতি সাজেস্ট করেন। দ্রুত গতিতে বাইক চালানোর সময় ধ্রোটল ধরে রেখে ব্রেক প্রেস করা অনেক সময় যথেষ্ট না’ও হতে পারে। বিশেষ করে আমরা চিন্তা করার জন্যই পাচ্ছি মাত্র ২-৩ সেকেন্ড বা তার’ও কম। তাই সেই মুহুর্তে যেভাবে সম্ভব এবং যতো দ্রুত সম্ভব বাইকের গতি কমিয়ে আনা’ই আমাদের উদ্দেশ্য।
সামনের ও পেছনের ব্রেক প্রেস করার পাশাপাশি থ্রোটল ছেড়ে দিয়ে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করলে বাইকের গতি আরো দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব। আর না, ইঞ্জিন ব্রেকে বাইকের ইঞ্জিনের কোনো ধরণের ক্ষতি হয় না। বরং, সঠিক উপায়ে ইঞ্জিন ব্রেক করলে তা বাইক ও রাইডারের সেফটি এনশিওর করে।
ইঞ্জিন ব্রেক কীভাবে কাজ করে?
যখন থ্রোটল ওপেন থাকে, তখন পিস্টন বাতাস ও জ্বালানী সিলিন্ডারের দিকে টেনে আনে। থ্রোটল বন্ধ থাকলেও পিস্টন বাতাস সিলিন্ডারের দিকে টেনে আনে, তবে তখন থ্রোটল প্লেট তা আটকে দেয়। ফলে একটি ভ্যাকুম তৈরি হয়। এতে করে পিস্টনে ঘর্ষণ তৈরি হয় এবং পিস্টনের গতি কমে যায়। আবার এতে করে পেছনের চাকার গতি’ও কমে যায়। আপনি যখন থ্রোটল ছেড়ে দেন, তখন ইঞ্জিন আরপিএম যতো বেশি থাকে, ঘর্ষণ ততো বেশি তৈরি হয়। এতে করে ইঞ্জিন-ব্রেকিং ফোর্স’ও বেড়ে যায়। এই কারণেই ইঞ্জিন ব্রেকিং-এর সময় থ্রোটল ছেড়ে দিতে হয়।
এই ঘর্ষণের কারণেই অনেকে মনে করেন যে এতে করে ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে। তবে এই ধারণাটি ভুল। ইঞ্জিন ব্রেক করার কারণে আপনার মোটরবাইকের ইঞ্জিনের অবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসে না। আপনি ইঞ্জিন ব্রেক করলে রেভ বেড়ে যায়, এতে করে মনে হয় ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এতে করে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না যতক্ষণ আপনি অনেক দ্রুত গিয়ার ডাউনশিফট করছেন না। উদাহরণস্বরুপ, আপনি যদি ৪র্থ গিয়ার থেকে সাথে সাথে ১ম গিয়ারে চলে আসেন, তাহলে ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তখন ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে। তাই ইঞ্জিন ব্রেক করার সময় কখনোই গিয়ার ডাউনশিফট করা যাবে না।
ইঞ্জিন ব্রেকের অসুবিধা
ইঞ্জিন ব্রেকের একমাত্র অসুবিধা হচ্ছে এই যে, ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার সময় আপনার ব্রেক লাইট জ্বলে উঠে না। তাই আপনার পেছনের বাইক বা গাড়ি জানতে পারে না যে আপনি আসলে ব্রেক করে গতি কমিয়ে আনছেন। তাই খোলা রাস্তায় ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ অথবা যখন আপনি জানেন যে আপনার পেছনে আর কোনো বাইক বা গাড়ি নেই, তখন আপনি ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করতে পারেন।
আর যদি ব্যস্ত সড়কে কখনো ইঞ্জিন ব্রেক করতেই চান, তাহলে আমরা সাজেস্ট করবো যে আপনার সামনের বা পেছনের ব্রেকে অন্তত হালকা করে হলেও চাপ দিবেন। এতে করে আপনার পেছনের বাইক বা গাড়ি জেনে যাবে যে আপনি আসলে গতি কমিয়ে আনছেন।
পরিসংহার
দ্রুত গতিতে বাইক চালানোর সময় আমাদের বাইকের সামনে যেকোনো কিছু চলে আসতে পারে, তখন আমাদের কিছু মিলিসেকেন্ডের মাঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এমতাবস্থায় যতো দ্রুত নিজের বাইকের গতি কমিয়ে আনবেন, ততোই সামনের মানুষ/বাইক বা গাড়ির জন্য এবং আপনার জন্য ভালো। তাই সামনের ও পেছনের ব্রেক প্রেস করার পাশাপাশি থ্রোটল ছেড়ে দিয়ে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার পরামর্শ রইলো।