প্রযুক্তির আশির্বাদে আমরা এখন মোটরসাইকেলে অনেক ধরণের ক্লাচের ব্যবহার দেখতে পাই, যেমন – ওয়েট ক্লাচ, ড্রাই ক্লাচ, স্লিপার ক্লাচ, অটোমেটিক ক্লাচ এবং মাল্টিপ্লেট ক্লাচ। সবগুলো ক্লাচের নাম দেখলেই বোঝা যায় যে এটি মোটরসাইকেলে কেনো ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে মাল্টি প্লেট ক্লাচ কেনো ব্যবহার করা হয় সেটা সবার বুঝে আসে না। আবার অনেক সময় প্রিমিয়াম বাইকগুলোতে মাল্টি প্লেট ক্লাচের দেখা পাওয়া যায়। তাই অনেকেই নিজের বাইকে এই ক্লাচ লাগাতে গিয়ে দেখেন যে তার বাইকের জন্য এই সিস্টেম অ্যাপ্লিকেবল নয়। তাহলে কেন মাল্টি প্লেট ক্লাচ মোটরসাইকেলে ব্যবহার করা হয়? লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে আশা করি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
মাল্টি প্লেট ক্লাচ কী?
মাল্টি প্লেট ক্লাচ সাধারণত হাই পারফরম্যান্স বাইক ও গাড়িতে ব্যবহার করা হয়। আমরা সাধারণ বাইকে যেই ওয়েট এবং ড্রাই ক্লাচ দেখে থাকি সেগুলো হয় সিঙ্গেল-প্লেট ক্লাচ। অর্থাৎ, এই ক্লাচগুলোতে শুধু একটি ফ্রিকশন সারফেস থাকে। অন্যদিকে, মাল্টি প্লেট ক্লাচে একাধিক ফ্রিকশন সারফেস প্লেট থাকে। এইদিক বিবেচনায় বলা যায় যে মাল্টি প্লেট ক্লাচ একাধিক ওয়েট অথবা ড্রাই ক্লাচের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া মাল্টি প্লেট ক্লাচের কাজের ধরণ অনেকটা ড্রাই ও ওয়েট ক্লাচের মতোই। মাল্টি প্লেট ক্লাচের সুবিধা হচ্ছে এই যে, যেহেতু এই ক্লাচে ফ্রিকশন সারফেস বেশি থাকে, তাই এই ক্লাচের টর্ক ট্রান্সমিটিং পাওয়ার’ও অন্যান্য ক্লাচের থেকে বেশি হয়। তাই তো হাই পারফরম্যান্স বাইকে এই ধরণের ক্লাচ ব্যবহার করা হয়।
কেন মাল্টি প্লেট ক্লাচ মোটরসাইকেলে ব্যবহার করা হয়?
মাল্টি প্লেট ক্লাচ সাধারণত মোটরসাইকেলে একাধিক কারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
১। কমপ্যাক্ট ডিজাইন – মাল্টি প্লেট ক্লাচ সাধারণত সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচের তুলনায় অনেক বেশি কমপ্যাক্ট হয়ে থাকে, তাই মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারীরা আরো কমপ্যাক্ট ক্লাচ অ্যাসেম্বলি তৈরি করতে পারেন। এতে করে মোটরসাইকেলে স্পেস কম লাগে এবং ওজন কম রাখা যায়।
২। টর্ক ট্রান্সমিটিং ক্যাপাসিটি – সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচের তুলনায় মাল্টি প্লেট ক্লাচ অনেক বেশি পরিমাণ টর্ক হ্যান্ডেল করতে পারে। তাই বেশি সিসি’র বাইকগুলোতে এই ক্লাচ ব্যবহার করা হয়।
৩। পাওয়ার ট্রান্সমিশন – সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচের তুলনায় মাল্টি প্লেট ক্লাচে সারফেস এরিয়া বেশি থাকে। তাই এই ক্লাচের এফিশিয়েন্সি’ও ভালো হয়। দেখা যায় যতোটা পাওয়ার ট্রান্সমিশনে ট্রান্সমিট করা হচ্ছে ঠিক ততোটা ফুয়েল খরচ হচ্ছে না। অপরদিকে সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচ দিয়ে এটি করতে গেলে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি একেবারে কমে যেতে পারে।
৪। রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স – মাল্টি প্লেট ক্লাচের মাধ্যমে ক্লাচের এনগেইজমেন্ট ও ডিসএনগেইজমেন্ট বেশ সরল হয়। এই বিষয়ে বাইক স্টার্ট ও স্টপ করার মাধ্যমে রাইডারের হাতে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় এবং রাইডিং এক্সপিরিয়েন্স ইমপ্রুভ করে।
৫। ঠান্ডা হওয়া – সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচের তুলনায় মাল্টি প্লেট ক্লাচ অনেক দ্রুত ঠান্ডা হয়। বিশেষ করে হাই পারফরম্যান্স বাইকগুলোর জন্য এই বৈশিষ্ট্য অনেক ক্রিটিকাল, কারণ সেগুলোর ক্লাচ অনেক গরম হয়ে উঠতে পারে।
৬। স্থায়িত্ব – সিঙ্গেল প্লেট ক্লাচের তুলনায় মাল্টি প্লেট ক্লাচ অনেক বেশিদিন স্থায়ী হয়, কারণ সেগুলোতে লোড ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য একাধিক সারফেস থাকে।
পরিসংহার
মোটরসাইকেল রাইডিং এক্সপিরিয়েন্সকে আরো উন্নত ও সহজ করার লক্ষ্যে বাইক প্রস্তুতকারীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছেন। সেই পথা চলায় একটি যুগান্তকারী সংযোজন মাল্টি প্লেট ক্লাচ। আশা করি মাল্টি প্লেট ক্লাচ সম্পর্কে আপনাদের আজ একটি বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছি। তবে ক্লাচকে সঠিকভাবে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার বাইকের জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল সিলেক্ট করতে হবে।