একজন বাইকার তার রাইডিং গিয়ার ছাড়া অসম্পূর্ণ। বিভিন্ন রাইডিং কন্ডিশনে রাইডারের সুরক্ষার পাশাপাশি কঠোর আবহাওয়া থেকেও বাঁচতে সাহায্য করে এইসব রাইডিং গিয়ার। আজ আমরা বিশেষ করে মোটরসাইকেল গ্লাভস নিয়ে আলোচনা করবো, আর জানবো দেশের ১০টি সেরা গ্লাভস পেয়ার সম্পর্কে।
বিভিন্ন ধরণের বাইকার গ্লাভস
মার্কেটপ্লেসগুলোতে আমরা অনেক রকম গ্লাভস পেয়ার দেখতে পাই। গ্লাভসের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে তাদের কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। সেগুলো হলো-
১। স্ট্রিট গ্লাভস
নিয়মিত বাইক চালান এমন ব্যক্তিরা এই গ্লাভস ব্যবহার করে থাকেন। চামড়া কিংবা রাবারের তৈরি এই গ্লাভসগুলোতে জালিযুক্ত প্যানেল থাকে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য এই গ্লাভসগুলো বেশ আরামদায়ক।
২। রেসিং গ্লাভস
হাই পারফরম্যান্স রাইডিং এবং সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য রেসিং গ্লাভসগুলো ডিজাইন করা হয়। এই বাইকার গ্লাভসগুলোর গায়ে বিশেষ প্যাডেড সুরক্ষা, শক্ত মুষ্টির সুরক্ষা, এবং আঙ্গুলের ভাঁজ ও আকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাবার কিংবা সিলিকনের প্যাড লাগানো থাকে। এতে করে সর্বাধিক গ্রিপ এবং কনট্রোল পাওয়া যায়।
৩। ট্যুরিং গ্লাভস
দুরপাল্লার ভ্রমণ অর্থাৎ বাইকে লং ট্যুর দেয়ার জন্য এই মোটরসাইকেল গ্লাভসগুলো ডিজাইন করা হয়। এই গ্লাভসগুলোতে একই সাথে সুরক্ষা ও আরামের একটা ব্যালেন্স পাওয়া যায়।
৪। ফিঙ্গারলেস গ্লাভস
ফিঙ্গারলেস গ্লাভসগুলো উষ্ণ এলাকায় থাকেন এমন রাইডারদের জন্য আদর্শ। গ্লাভসের আঙ্গুলগুলো উন্মুক্ত থাকায় বাইকারের হাত সহজে ঘেমে যায় না, এবং রাইড করার সময় হাত স্বাধীণভাবে নাড়াচাড়া করা যায়। এগুলোকে অনেকে হাফ-ফিঙ্গার গ্লাভসও বলেন।
যেভাবে সেরা মোটরসাইকেল গ্লাভস পেয়ার বেছে নিবেন
যেকোনো রাইডিং গিয়ার কেনার সময় আপনার চাহিদা আর উদ্দেশ্য কতটুকু পূরণ হচ্ছে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাছাই করা খুব দরকারি। শুধুমাত্র চেহারা দেখে একটা গ্লাভস পেয়ার কখনো কেনা ঠিক না, বরং গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য আর ব্যবহারিক দিক থেকে কতটা কাজের সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা দেখবো দেশের সেরা ১০টি গ্লাভস পেয়ার আর তাদের বিশেষত্বগুলো। তার আগে আপনার জন্য পারফেক্ট বাইকার গ্লাভস বছে নেয়ার জন্য যেইসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটা আমরা এখানে আলোচনা করবোঃ
- গ্লাভসের সাইজ চেক করার জন্য সেটি হাতে পরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেখুন। কয়েক ঘন্টা টানা রাইড করার সময় বেশিরভাগ মোটরসাইকেল গ্লাভস আমাদের হাতের গিঁটগুলোতে ঘষা লেগে বেশ কষ্ট দেয়। তাই হাতের গিঁটে যেন ঘষা না লাগে সেইভাবে গ্লাভসের সাইজ দেখে নেয়া উচিৎ।
- বায়ু চলাচলের উপযোগী জালির মত অংশ থাকলে সেই গ্লাভস পরে অনেক আরাম পাওয়া যায়। হাত ঘামার মতো সমস্যা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
- আঙ্গুল ও গিঁটগুলোতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্যাড বা আবরণ আছে কিনা (কমপক্ষে লেভেল ১) চেক করে নিন।
- লং ট্যুর আপনার প্যাশন হলে সেই ক্যাটাগরির বাইকার গ্লাভস কেনা উচিৎ। অন্তত প্রি-কার্ভড ফিঙ্গারস আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- আপনার গ্লাভসের তালুতে প্লাস্টিকের সুরক্ষা প্যাড থাকলে খেয়াল রাখুন, যে রাইড করার সময় সেগুলো ভিতর থেকে ব্যথা দিচ্ছে কি না। যদি সেগুলো সমস্যা করে তাহলে অন্য সাইজের গ্লাভস বেছে নিন।
- হাত থেকে দ্রুত ও সহজে খোলা যায় কিংবা পরা যায় এমন গ্লাভস বেছে নিন। ভেলক্রো সিস্টেম হলে আমাদের মতে সবচেয়ে ভালো।
- রাইড করার সময় অনেকেরই স্মার্টফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই যেইসব গ্লাভসে টাচস্ক্রিন ব্যবহার করার মতো সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে চেক করে আর নিশ্চিত হয়েই কেনা উচিৎ।
১০টি গ্লাভস পেয়ার এর সুবিধা এবং অসুবিধা
রয়্যাল এনফিল্ড আর্বান হাসলার বাইকার গ্লাভস (রোভার ভি৩)
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- প্রিমিয়াম মানের পলি স্ট্রেচ কাপড় দিয়ে তৈরি।
- পলিয়েস্টারের জালি দিয়ে ডিজাইন করা, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
- মাইক্রো-সুয়েড প্যাচ দিয়ে তালুতে আবরণ দেয়া, যা সর্বোচ্চ গ্রিপ নিশ্চিত করে।
- আঘাত থেকে সুরক্ষার জন্য টিপিআর গিঁট ও আঙ্গুলের প্রোটেকশন দেয়া।
- হাতের তালুতে রাবার স্পঞ্জ দিয়ে আরাম ও আরো বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
টিভিএস রেসিং বাইকার গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- আরাম স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিভিন্ন ধরণের কাপড় দিয়ে তৈরি।
- জালির প্যানেল দিয়ে ডিজাইন করা, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
- গ্লাভসের তর্জনীগুলো টাচস্ক্রিন সাপোর্ট করে, যাতে রাইডার গ্লাভস না খুলেই ফোন ব্যবহার করতে পারেন।
- হাতের কব্জি বরাবর ভেলক্রো দিয়ে বন্ধনী দেয়া, যাতে যেকোনো মাপের হাতে সুন্দরভাবে ফিট করা যায়।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
ইয়ামাহা বাইকার গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- রাইডের সময় বাড়তি গ্রিপ ও সুরক্ষার জন্য রাবার দিয়ে তৈরি গ্লাভস।
- সমস্ত গ্লাভসের বিভিন্ন জায়গায় জালি দিয়ে ডিজাইন করা, যাতে ঘাম না হয়।
- গ্লাভসের তর্জনীগুলো টাচস্ক্রিন সাপোর্ট করে, যাতে রাইডার গ্লাভস না খুলেই ফোন ব্যবহার করতে পারেন।
- আঘাত থেকে সুরক্ষার জন্য গিঁটের উপর বর্ম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- হাতের তালুতে রাবারের লাইনার দিয়ে আরো আরাম নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
ভেগা ভিজিএল-২১ অরেঞ্জ মোটরসাইকেল গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- হাতের সুরক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য জালি কাপড় দিয়ে ডিজাইন করা।
- আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
- রাইডারের সুবিধার জন্য গ্লাভসের বুড়ো আঙ্গুল ও তর্জনীগুলো টাচস্ক্রিন সাপোর্ট করে।
- আঘাত থেকে সুরক্ষার জন্য গিঁটের উপর বর্ম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- হাতের তালুতে এন্টি-স্লিপ গ্রেইনস দিয়ে আরো ভালো গ্রিপ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
রাইনক্স হিলিয়াম জিটি মোটরসাইকেল গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- ১০০% সিনথেটিক সুয়েড লেদারের তৈরি, যা ঘর্ষণ থেকে হাতকে সুরক্ষা দেয়।
- স্ক্যাফয়েড বোন্স এবং আঙ্গুলের জয়েন্টগুলোর উপর টিপিআর বর্ম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- কাফ-লেংথ গ্লাভসগুলো যেকোনো মাপের হাতে কাস্টমাইজ ফিট হওয়ার জন্য ভেলক্রো বন্ধনী দেয়া হয়েছে।
- আঙ্গুলগুলোতে সিলিকন প্যানেল দিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিপ ও কনট্রোল নিশ্চিত করা হয়েছে।
সুবিধাঃ |
|
স্টাডস এসএমজি-৬ বাইকার গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- প্রিমিয়াম মানের উপাদান দিয়ে তৈরি, যাতে আপনার হাত থাকবে সুরক্ষিত ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।
- হাতের গিঁট এবং আঙ্গুলের জয়েন্টগুলোকে আঘাত থেকে বাঁচাতে বর্ম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- হুক এন্ড লুপ বন্ধনী দিয়ে সুরক্ষিত ফিট নিশ্চিত করা হয়েছে।
- হাতের তালুতে কারচুপি প্যাটার্ন সর্বোচ্চ গ্রিপ ও কনট্রোল নিশ্চিত করে।
সুবিধাঃ |
|
প্রো-বাইকার মোটোওয়ে গ্লাভস পেয়ার
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- রাইডের সময় গ্রিপ ও সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী রাবার দিয়ে তৈরি।
- আরাম ও বাতাস চলাচলের সুবিধার জন্য আঙ্গুলগুলোতে জালি দিয়ে ডিজাইন করা।
- হালফ-কাট গ্লাভসগুলোতে গিঁটের উপর শক অ্যাবসর্বার বর্ম দেয়া হয়েছে।
- নিরাপদ ও কাস্টমাইজ ফিটের জন্য হুক এন্ড লুপ বন্ধনী দেয়া হয়েছে।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
স্প্রুগাল মোটরসাইকেল রাইডিং গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- বাতাস চলাচল উপযোগী কাপড় দিয়ে তৈরি, যাতে হাতে ঘাম না হয়।
- হাতের সুরক্ষার জন্য সুপার ফ্যাব্রিক এবং নিওপ্রিন এর সমন্বয়ে তৈরি।
- হাতের গিঁটগুলোকে আঘাত থেকে বাঁচাতে কার্বন-বর্ম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- আঙ্গুলে নরম প্যাডিং দিয়ে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
- পিভিসি ডটেড উপাদান ভালো গ্রিপ ও কনট্রোল নিশ্চিত করে।
সুবিধাঃ |
|
কোবো মোটরসাইকেল গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- বাতাস চলাচল উপযোগী জালি কাপড় দিয়ে তৈরি, যাতে হাতে ঘাম না হয়।
- সহজে ফিট হওয়ার জন্য হুক এন্ড লুপ বন্ধনী ব্যবহার করা হয়েছে।
- হাতের গিঁটগুলোকে আঘাত থেকে বাঁচাতে শক্ত বর্ম ও ফোম দিয়ে প্রোটেকশন দেয়া।
- হাতের তালুতে রাবার ব্লকের উপর ডটেড প্যাটার্ন ভালো গ্রিপ নিশ্চিত করে।
সুবিধাঃ |
|
এড্রইটজ বাইক রেসিং গ্লাভস
গ্লাভসের বৈশিষ্ট্য:
- ইলাস্টিক লাইক্রা এবং টেকসই নিটেড কাপড় দিয়ে ডিজাইন করা, যা দেখতে বেশ প্রিমিয়াম
- গ্লাভসের ভিতরে নরম কাপড়ের আবরণ হাতকে আরামে ও শুষ্ক রাখে।
- হাতের গিঁট ও আঙ্গুলগুলোতে শক অ্যাবসর্বার রাবারের বর্ম দিয়ে সুরক্ষা দেয়া।
- খোলামেলা ডিজাইন হওয়ায় ফোন ব্যবহার কিংবা বিভিন্ন ধরণের জিনিস হাতে ধরতে সুবিধা হয়।
সুবিধাঃ |
অসুবিধাঃ |
|
|
শেষকথা
যেকোনো রোড কন্ডিশনে রাইড করার সময় মোটরসাইকেল গ্লাভস আপনার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে পারে। তাই বাইকার গ্লাভসের দাম যেমনই হোক, ভালো মানের আর সেরা কোয়ালিটিরটিই বেছে নিন। আমাদের আজকের প্রতিবেদনে গ্লাভসের উপাদান, ফিটিং, সুরক্ষার ধরণসহ দেশের সেরা ১০টি ব্র্যান্ডেড বাইকার গ্লাভসের সুবিধা, অসুবিধা ও বিশেষত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনার পছন্দের গ্লাভস পেয়ার কোনটি? জানান আমাদের কমেন্ট সেকশনে।