মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয়ের কিছু টিপস

29 Mar, 2023   
মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয়ের কিছু টিপস

যোগাযোগের প্রয়োজনে এখন বাইকের ব্যবহার অনেক বাড়ছে। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানান পেশার মানুষের প্রয়োজনীয় বাহন এখন মোটরসাইকেল। যানজটের সমস্যা, দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম, সর্বোপরি মানুষের প্রয়োজনীয়তার কারণেই মোটরসাইকেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে ব্যায় নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের ব্যাপারটি সবাই গুরুত্বের সাথে ভাবছে। তবে অনেকেই জানেন না কিভাবে মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করা যায় ।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আরো বহুবিধ কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে। জ্বালানি ব্যায় বৃদ্ধির কারণে অনেকেই এখন খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মোটরসাইকেল সব কাজে ব্যবহার করেন না। আমরা অনেকেই জানিনা বাইকের বেশি জ্বালানি খরচ হচ্ছে কেন এবং এতে নিজের কোন মেইনটেনেন্স ভুল আছে কি না তাও আমরা অনেকেই জানি না। তবে, একটু সচেতন হলেই মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। ফুয়েল সাশ্রয় শুধু আপনার ব্যায় কমাতেই সাহায্য করবে না, এই সাশ্রয় আপনাকে পরিবেশ দূষণ থেকেও রক্ষা করবে।

জ্বালানি তেলের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায়, জীবন ধরণের ব্যায়ও বেড়ে গেছে, বেশিরভাব বাইক চালক প্রয়োজনে এবং জীবিকার প্রয়োজনে বাইক চালান, তাই তাদের দৈনন্দিন খরচ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এই জ্বালানি ব্যায় অনেকটাই আপনি সামলাতে পারবেন, যদি কিছু কৌশল মেনে বাইক চালান, এবং বাইক মেইনটেনেন্স করতে পারেন। কিছু সাধারণ এবং সহজ বিষয় মেনে চললে ফুয়েল সাশ্রয় করে বাইক চালানো যায়। আসুন জেনে নেই কিভাবে মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করে নিশ্চিতে বাইক চালাবেন। এখানে মোটরসাইকেলের জ্বালানি বাঁচানোর টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো আপনাকে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই বাঁচাতে সাহায্য করবে

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার উপায়

নিয়মিত বাইক চেকআপ করালে বেশ খানিকটা ফুয়েল সাশ্রয় করা সম্ভব। শুরুতে যে কাজটি করবেন তা হলো, প্রতিদিন বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে বাইক স্টার্ট দিয়ে ২-১ মিনিট রাখুন। এর পর বাইক চালানো শুরু করুন। বাইক চালানো শুরু করার পর প্রথম ৪-৫ মিনিট বাইকটা আস্তে চালান, এই সময়ে বাইকে প্রেশার কম দিন। বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে বাইক চালাবেন। আপনি যদি এইভাবে বাইক চালান প্রতিদিন তাহলে আপনি আপনার বাইক থেকে বেশ ভালো মাইলেজ পাবেন সাথে ফুয়েল সাশ্রয় হবে।

ঘর থেকে বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময়ই এটির ইঞ্জিনের শব্দ পরীক্ষা করুন। ইঞ্জিনের শব্দে কোনো গড়মিল থাকলে সময় নিয়ে তা খেয়াল করুন। এছাড়া, কাবুরেটর, প্লাগ, ব্যাটারি এবং ক্ল্যাচ রেগুলার অ্যাডজাস্ট করুন। কয়েকদিন পরপর চাকার হাওয়া পরীক্ষা করুন। চাকায় বাতাসের চাপ কম হলে ইঞ্জিন বেশি তেল পোড়ায়। সরাসরি সূর্যের নিচে, খুব গরম কোনো স্থানে মোটরসাইকেলটাকে পার্ক করে রাখবেন না। এতে পেট্রল বাষ্পীভূত হতে থাকে। এখানে কিছু জ্বালানি বাঁচানোর টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো –

বাইকের জ্বালানি বাঁচানোর টিপস

(১) নিয়মিত স্পার্ক প্লাগ পরিস্কার করুন

স্পার্ক প্লাগ বৈদ্যুতিক স্পার্ক তৈরী করে, যা জ্বালানি কবুশন বা দহন করতে সাহায্য করে, আপনার বাইক স্টার্ট করতে এই স্পার্ক লাগবেই। ইঞ্জিনে স্টার্ট করার সাথে সাথে বৈদ্যুতিক সিস্টেম থেকে এই স্পার্ক সৃষ্টি হয়, এবং জ্বালানি দহন করতে শুরু করে। এতে ইঞ্জিনের ভিতরে তাপের সৃষ্টি হয়, ইঞ্জিনের ভিতরের কম্পার্টমেন্ট ঘুরতে শুরু করে। কোনো ভাবে যদি প্লাগে ময়লা জমে তাহলে বাইক স্টার্ট নেয় না, অথবা হুট্ করে বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এই ময়লা স্পার্ক করতে দেয় না। স্পার্ক প্লাগ সহজেই পরিস্কার করা যায়, কিন্তু এই সহজ কাজটাই অনেকে করতে জানেন না। রেগুলার স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার রাখলে, মোটর সাইকেল বার বার বন্ধ হবে না এবং জ্বালানিরও সাশ্রয় হবে।

(২) কার্বুরেটর পরিস্কার রাখুন

কার্বুরেটর বাইকের ইঞ্জিনের একটি ডিভাইস, এটি ভিতরের কম্বুশন ইঞ্জিনে বায়ু এবং জ্বালানীকে ভালোভাবে মিশ্রিত করে। এর মাধ্যমেই যে কোনো বাহনের ইঞ্জিনে তেল প্রবেশ করে। এটি বোর বা ভেনটুরির মাধ্যমে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, এই বায়ু জ্বালানিতে মিশ্রিত হয় এবং মিশ্রণটি ইনটেক ভালভের মাধ্যমে ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। বায়ু এবং তেল দুটোই বাইরে থেকে কার্বুরেটরে আসে, তাই এতে ময়লা, ধুলা-বালি জমা স্বাভাবিক ব্যাপার। বেশি ময়লা জমলে কম্বুশন ইঞ্জিন ঠিক মতো অপারেট করতে পারে না। এতে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত প্রেসার সৃষ্টি করে তাই জ্বালানি বেশি পোড়ে।  তাই নিয়মিত কার্বুরেটর পরিষ্কার না করলে, জ্বালানি খরচ বাড়বে।

আবার কার্বুরেটর সঠিকভাবে টিউনিং করা না থাকলে ইঞ্জিনে তেল বেশি প্রবেশ করে পড়ে যায়। অনেকেই মোটরসাইকেলে জ্বালানি একটু বেশি খরচ হলেই কার্বুরেটর টিউনিং করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে যত কম হাত দিবেন ততই মঙ্গল। কার্বুরেটরের অ্যাডজাস্টমেন্ট স্ক্রু গুলি অত্যন্ত সেনসেটিভ।এই সমস্যার সমাধানে নিয়মিত দক্ষ মেকানিকের মাধ্যমে কার্বুরেটর পরিস্কার করুন।

(৩) রেগুলার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। নিম্নমানের তেল বাইকের ইঞ্জিনের ক্ষতি করে, জ্বালানি খরচ বাড়ায়। বাইকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা জরুরি। সাধারণত আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের অবস্থা বিবেচনায়, এক্সপার্টরা ১ হাজার কিলোমিটার মাইলেজ হবার পর  ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। নতুন বাইকে ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন, সিনথেটিক অয়েলে ব্যবহার না করাই ভালো। নিয়মিত ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে বাইক চলবে স্মুথ এবং জ্বালানিও সাশ্রয় হবে। অবশ্যই ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলের ব্যবহার করুন, এতে ইঞ্জিনের স্থায়ীত্ব বাড়বে। সামান্য খরচ বাঁচানোর জন্য নিম্ন মানের অয়েল ব্যবহার করবেন না, বারবার তেলের গ্রেড পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হয়। বাজারে ভালো ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েল যেমন পাওয়া যায়, ভেজাল তেলও পাওয়া যায়, ভেজালযুক্ত জ্বালানি ব্যাবহারে নানান ধরণের সমস্যায় পরবেন। জ্বালানি খরচ বাড়বে, ইনজিন উত্তপ্ত হবে। প্লাগ, রিংপিস্টন ইত্যাদি নষ্ট হবে।

(৪) নিয়ম মেনে সঠিক গিয়ারে বাইক চালান

স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালালে জ্বালানি খরচ কম হয়।  বাইকের গিয়ারের ব্যবহার আয়ত্ত করুন, সঠিক গিয়ারে বাইক চালান, এতে কম ফুয়েল খরচ হবে। কম গিয়ারে বাইক চালানো আয়ত্ত করুন, এতে ফুয়েল খরচ কম হয়। অনেকেই ফার্স্ট গিয়ারে বাইক স্টার্ট করে অকারণে প্রেশার দেন। এই কাজ করলে বাইকের ইঞ্জিনের উপর প্রেসার পরে, তাই তেল বেশি পোড়ে। তাই দীর্ঘ সময় লো গিয়ারে বাইক চালালে জ্বালানি খরচ বাড়বে। এজন্য বাইক স্টার্ট করার পর গতি বাড়িয়ে যথাসম্ভব টপ গিয়ারে চালায় আয়ত্ত করুন।এতে ফুয়েল সাশ্রয় হবে। রাস্তা বুঝে যখন যে গিয়ারে বাইক চালানো প্রয়োজন সেই গিয়ারে বাইক চালান। যখন বাইক বেশি গিয়ারের জন্য প্রস্তুত হবে যত দ্রুত সম্ভব বেশি গিয়ার ব্যবহার করুন। বাইকের ইঞ্জিন চালু থাকা অবস্থায় অযথা থ্রটল ঘুরাবেন না।

(৫) আস্তে ধীরে গতি বাড়ান এবং নিয়ন্ত্রিত গতি মেনে চলুন

বাইকের কম বা বেশি যাই হোক, তেল বেশি পুড়বে। এই কারণে স্বাভাবিক গতিতে বাইক চালাবেন। গিয়ারের ব্যবহার জানুন, বাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে প্রথমে কিছুক্ষন ফাস্ট গিয়ারে চালান। তারপর গতির সঙ্গে রাস্তার অবস্থা বিবেচনায় একটা একটা করে গিয়ার পরিবর্তন করুন। আবার হটাৎ করে টপ গিয়ার থেকে ফাস্ট গিয়ারে বাইকের গতি আনবেন না, এতে জ্বালানি খরচ বাড়ে। সবচেয়ে ভালো উপায় যথাসম্ভব একই গতিতে বাইক চালান। ঘন ঘন গিয়ারের উঠানামা করবেন না। এতে যেমন বাইকের ইঞ্জিনের সমস্যা হবে তেমনি তেলও পুড়বে বেশি। বাইক চালানোর সময় ব্রেক হালকা করে চেপে রাখবেন না।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ওভার স্পীডে বাইক চালিয়ে থাকে। মনে রাখবেন বাইকের গতি যত বাড়াবেন ততই জ্বালানি পুড়বে। নির্দিষ্ট গতিতে চালালে তেলের খরচ অনেক কম হয়।সব সময় চেষ্টা করুন বাইক ৫০-৬০ স্পীডে চালাতে। এ সময় গিয়ার রাখুন টপে। বাইকের স্পিডো মিটারে ইকোনমি স্পীড দেয়া আছে। এই ইকোনমি স্পীডে বাইক চালালে অনেকটাই ফুয়েল সাশ্রয় হবে। আপনি যদি ইকোনমি স্পীডে বাইক চালান তাহলে আপনি মাইলেজ ভালো পাবেন, জ্বালানি খরচও কম হবে।

(৬) চাকার হাওয়া চেক করুন

হাওয়ার কারণে চাকার ওজন কম বা বেশি হয়। চাকার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে ইঞ্জিনের উপর প্রেসার পরে। চাকায় হাওয়া বেশি হলে, এর আকার পরিবর্তন হয়ে যায়, এতে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। চাকায় হাওয়া বা প্রেশার কম থাকলে ইঞ্জিনে ঠিক মতো অপারেট করতে পারে না, ইঞ্জিনের ডিসপ্লেসমেন্ট (সিসি) অনুযায়ী, টর্ক ঠিক মতো কাজ করে না। এতে চাপ বাড়ে ইঞ্জিনের ওপর, ফলে বাইকের জ্বালানি খরচের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই বাইকের টায়ারের হাওয়া সবসময় ঠিক রাখুন।

(৭) এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার রাখুন

মোটরসাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্রাংশ এয়ার ফিল্টার। এই যন্ত্রটি রেগুলার ফিল্টার করতে থাকে বলেই, এর ভিতরে ধুলা ময়লা জমতে থাকে। আমাদের দেশের রাস্তায় ধুলাবালির পরিমান অনেক বেশি, এই ফিল্টারে ময়লাও জমে বেশি। বেশি ময়লা জমলে এয়ার ফিল্টার বন্ধ হয়ে যায়। ফিল্টার বন্ধ হয়ে গেলে ইঞ্জিনে বাতাস চলাচলে সমস্যা হয়। ফলে তেল কবুশনের সময় ইঞ্জিনে কম অক্সিজেন যায়, এতে বেশি তেল খরচ হয়। দীর্ঘ সময় এই অবস্থায় থাকলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। বাইক চালানোর সময় যেদিকে এয়ার ফিল্টার আছে, সেদিকটা খোলা রাখুন। এয়ার ফিল্টারের খোলা মুখগুলোকে কখনো ঢেকে দেবেন না।

(৮) ক্লাচের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখুন

বাইক চালানোর সময় অযথা ক্লাচ লিভারে চাপ ফেলবেন না। ক্লাচ হ্যান্ডেল করার নিয়ম জানতে হবে। অযথা বাইক চালানোর সময় ক্লাচ চেপে রাখা যাবে না। অনেকে দ্রুত চলতে গিয়ে বার বার ক্লাচ চেপে ব্রেক করেন, আবার হুটহাট ক্লাচ ছেড়ে হঠাৎ গতি বাড়িয়ে চালান। এগুলো কোনোতাই বাইকের ইঞ্জিনের জন্য ভালো নয়। বাইক চালানোর অবস্থায় বেশিসময় ক্লাচ চেপে রাখবেন না। এতে ইঞ্জিনের উপর চাপ পরে, ফলে জ্বালানি পুড়তে থাকে।

(৯) নিয়মিত টায়ারের চাপ পরীক্ষা করুন

বাইক স্টার্ট দেবার আগে টায়ারের চাপ চেক করুন। আপনার নিরাপত্তার জন্যেই এই চেক করার অভ্যাস করুন। কম চাপের টায়ার চাকার ওজন বাড়ায়, ফলে ইঞ্জিনে প্রেসার বেড়ে যায়। টায়ারের চাপের হেরফের হলে বাইক কন্ট্রোলিংয়ে সমস্যা হয়। এটি শুধু বিপদজনকই নয় এটা আপনার জ্বালানীর ব্যবহারও বাড়াবে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য টায়ারের পাম্প নির্দেশনা মত রাখুন।

(১০) বেশি ওজন – বেশি জ্বালানি

বাইক যত বেশী ওজন বহন করবে তত বেশী জ্বালানি ব্যবহার করবে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য অতিরিক্ত ওজনের কোনো কিছুই মোটরসাইকেলে বহন করা উচিত নয়। আপনার বাইককে দুই জনের বেশী যাত্রী বহন করবেন না।

(১১) পারফেক্ট চেইন ব্যবহার করুন

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য জন্য নিয়মিত চেন পরীক্ষা করা উচিত। বাইকের পুরোনো চেইনে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে, যেমন, মরিচ পরে, ময়লা জমে, লুব্রিকেশন কম থাকে, ইত্যাদি। এসব কারণে পুরোনো চেইন বাইকের ইঞ্জিনের উপর প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। চেইন বেশি ঢিলা অথবা টাইট করবেন না। টাইট চেইনের স্প্রোকেট খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়, ঢিলা চেইনে কন্ট্রোলিংয়ে সমস্যা হয়। তাই সঠিক মাপে মোটরসাইকেলের চেন ব্যবহার করা উচিত। ম্যানুয়ালে উল্লেখ করা মাত্রায় চেইন টাইট রাখুন।

(১২) বাইক নিয়মিত সার্ভিসিং করুন

আপনার বাইক ভালোভাবে ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর বাইকের সার্ভিসিং করুন। বাইকের অনুমোদিত সার্ভিসিং সেন্টার অথবা মানসম্মত সার্ভিসিং সেন্টার থেকে বাইক সার্ভিসিং করান। এতে বাইকের জ্বালানি খরচ যেমন কমবে তেমনি বাইক দীর্ঘস্থায়ী হবে। আপনি যদি বাইক দীর্ঘদিন সার্ভিসিং না করান একটা সময় গিয়ে বাইকের মাইলেজ অনেক কমে যাবে। নিয়মিত বিরতিতে ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন, চেইন লুব্রিকেট এবং কুল্যান্টগুলো প্রতিস্থাপন করুন। তেলের ট্যাংক ও পাইপসহ বিভিন্ন পয়েন্টের জয়েন্ট যেন লিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(১৩)ট্রাফিক সিগনালে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন

ইঞ্জিনে চালু থালেই বাইকের তেল পুড়তে থাকে, এমনকি নিউট্রাল অবস্থায় থাকলেও তেল পুড়তে থাকে। তাই রাস্তায় বড় ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লেই বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন। তবে আপনার বাইকটি যদি নিউট্রাল অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়ে থাকে তাহলে ইঞ্জিনে বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। আধুকিক বাইক গুলো নিউট্রাল অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয়ী কিন্তু ঘন ঘন স্টার্ট করলে জ্বালানি খরচ করে। জ্যামের কারণে বাইকের গতি কমানো ও বাড়ানো লাগে। এটা অতিরিক্ত জ্বালানি খরচের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া জ্যামে বাইক চলমান থাকলে ইঞ্জিন এবং গিয়ারের ওপর চাপ পড়ে। যা বাইকের আয়ু কমিয়ে দেয়।  তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী যা ভালো হয় তাই করুন।

(১৪) ঘন ঘন ব্রেক

আপনার বাইকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। স্বাভাবিক গতিতে বাইক চালালে ঘন ঘন ব্রেক করা লাগে না। ঘন ঘন ব্রেক করলে তেল খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য ভাঙা রাস্তা এড়িয়ে চলা উচিত। বারবার মোটরসাইকেলের গতি কমানো ও বাড়ানোর ফলে তেল খরচ বেশি হয়। তাই মোটরসাইকেলের ফুয়েল সাশ্রয় করতে ঘন ঘন ব্রেক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা

সর্বোপরি, মোটরসাইকেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। ফুয়েল সাশ্রয়ে বিনা প্রয়োজনে বাইক নিয়ে না বের হবার চেষ্টা করুন। সল্প দূরত্বে হাঁটার অভ্যাস করুন, এতে শরীর সুস্থ থাকবে। আমাদের দেশ এখনকার বিশ্ব পরিস্থিতিতে খুব একটা ভালো অর্থনৈতিক অবস্থানে নেই। তাই নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে এবং ভবিষ্যতের জন্যে ফুয়েল সাশ্রয় করা জরুরি।

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য যে জ্বালানি বাঁচানোর টিপস দেয়া হলো, সেগুলো মেনে চলা অনেক সহজ কিন্তু আমরা খুব কমই এইগুলো মেনে চলি। সহজ এই টিপস গুলো ফুয়েল সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমাদের অর্থেরও খরচ কমায়। এই টিপস গুলো মেনে চলা ছাড়াও নিজে সচেতন হওয়া জরুরি। আপনি যদি এই জ্বালানি বাঁচানোর টিপস গুলো মেনে বাইক ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বাইকের ফুয়েল সাশ্রয় হবেই।

 

বাইক সম্পর্কে যে কোনো ধরণের ধারণা পেতে ভিজিট করুন ‘বাইকস গাইড‘। এখানে আপনি বিভিন্ন বাইকের রিভিউ, দাম-দর, দরকারি পরামর্শ পাবেন।

যোগাযোগের প্রয়োজনে এখন বাইকের ব্যবহার অনেক বাড়ছে। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানান পেশার মানুষের প্রয়োজনীয় বাহন এখন মোটরসাইকেল। যানজটের সমস্যা, দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম, সর্বোপরি মানুষের প্রয়োজনীয়তার কারণেই মোটরসাইকেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে ব্যায় নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের ব্যাপারটি সবাই গুরুত্বের সাথে ভাবছে। তবে অনেকেই জানেন না কিভাবে মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করা যায় ।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আরো বহুবিধ কারণে জ্বালানির দাম বেড়েছে। জ্বালানি ব্যায় বৃদ্ধির কারণে অনেকেই এখন খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া মোটরসাইকেল সব কাজে ব্যবহার করেন না। আমরা অনেকেই জানিনা বাইকের বেশি জ্বালানি খরচ হচ্ছে কেন এবং এতে নিজের কোন মেইনটেনেন্স ভুল আছে কি না তাও আমরা অনেকেই জানি না। তবে, একটু সচেতন হলেই মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। ফুয়েল সাশ্রয় শুধু আপনার ব্যায় কমাতেই সাহায্য করবে না, এই সাশ্রয় আপনাকে পরিবেশ দূষণ থেকেও রক্ষা করবে।

জ্বালানি তেলের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায়, জীবন ধরণের ব্যায়ও বেড়ে গেছে, বেশিরভাব বাইক চালক প্রয়োজনে এবং জীবিকার প্রয়োজনে বাইক চালান, তাই তাদের দৈনন্দিন খরচ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এই জ্বালানি ব্যায় অনেকটাই আপনি সামলাতে পারবেন, যদি কিছু কৌশল মেনে বাইক চালান, এবং বাইক মেইনটেনেন্স করতে পারেন। কিছু সাধারণ এবং সহজ বিষয় মেনে চললে ফুয়েল সাশ্রয় করে বাইক চালানো যায়। আসুন জেনে নেই কিভাবে মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করে নিশ্চিতে বাইক চালাবেন। এখানে মোটরসাইকেলের জ্বালানি বাঁচানোর টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো আপনাকে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই বাঁচাতে সাহায্য করবে

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার উপায়

নিয়মিত বাইক চেকআপ করালে বেশ খানিকটা ফুয়েল সাশ্রয় করা সম্ভব। শুরুতে যে কাজটি করবেন তা হলো, প্রতিদিন বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে বাইক স্টার্ট দিয়ে ২-১ মিনিট রাখুন। এর পর বাইক চালানো শুরু করুন। বাইক চালানো শুরু করার পর প্রথম ৪-৫ মিনিট বাইকটা আস্তে চালান, এই সময়ে বাইকে প্রেশার কম দিন। বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে বাইক চালাবেন। আপনি যদি এইভাবে বাইক চালান প্রতিদিন তাহলে আপনি আপনার বাইক থেকে বেশ ভালো মাইলেজ পাবেন সাথে ফুয়েল সাশ্রয় হবে।

ঘর থেকে বাইক নিয়ে বের হওয়ার সময়ই এটির ইঞ্জিনের শব্দ পরীক্ষা করুন। ইঞ্জিনের শব্দে কোনো গড়মিল থাকলে সময় নিয়ে তা খেয়াল করুন। এছাড়া, কাবুরেটর, প্লাগ, ব্যাটারি এবং ক্ল্যাচ রেগুলার অ্যাডজাস্ট করুন। কয়েকদিন পরপর চাকার হাওয়া পরীক্ষা করুন। চাকায় বাতাসের চাপ কম হলে ইঞ্জিন বেশি তেল পোড়ায়। সরাসরি সূর্যের নিচে, খুব গরম কোনো স্থানে মোটরসাইকেলটাকে পার্ক করে রাখবেন না। এতে পেট্রল বাষ্পীভূত হতে থাকে। এখানে কিছু জ্বালানি বাঁচানোর টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো –

বাইকের জ্বালানি বাঁচানোর টিপস

(১) নিয়মিত স্পার্ক প্লাগ পরিস্কার করুন

স্পার্ক প্লাগ বৈদ্যুতিক স্পার্ক তৈরী করে, যা জ্বালানি কবুশন বা দহন করতে সাহায্য করে, আপনার বাইক স্টার্ট করতে এই স্পার্ক লাগবেই। ইঞ্জিনে স্টার্ট করার সাথে সাথে বৈদ্যুতিক সিস্টেম থেকে এই স্পার্ক সৃষ্টি হয়, এবং জ্বালানি দহন করতে শুরু করে। এতে ইঞ্জিনের ভিতরে তাপের সৃষ্টি হয়, ইঞ্জিনের ভিতরের কম্পার্টমেন্ট ঘুরতে শুরু করে। কোনো ভাবে যদি প্লাগে ময়লা জমে তাহলে বাইক স্টার্ট নেয় না, অথবা হুট্ করে বন্ধ হয়ে যায়, কারণ এই ময়লা স্পার্ক করতে দেয় না। স্পার্ক প্লাগ সহজেই পরিস্কার করা যায়, কিন্তু এই সহজ কাজটাই অনেকে করতে জানেন না। রেগুলার স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার রাখলে, মোটর সাইকেল বার বার বন্ধ হবে না এবং জ্বালানিরও সাশ্রয় হবে।

(২) কার্বুরেটর পরিস্কার রাখুন

কার্বুরেটর বাইকের ইঞ্জিনের একটি ডিভাইস, এটি ভিতরের কম্বুশন ইঞ্জিনে বায়ু এবং জ্বালানীকে ভালোভাবে মিশ্রিত করে। এর মাধ্যমেই যে কোনো বাহনের ইঞ্জিনে তেল প্রবেশ করে। এটি বোর বা ভেনটুরির মাধ্যমে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, এই বায়ু জ্বালানিতে মিশ্রিত হয় এবং মিশ্রণটি ইনটেক ভালভের মাধ্যমে ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। বায়ু এবং তেল দুটোই বাইরে থেকে কার্বুরেটরে আসে, তাই এতে ময়লা, ধুলা-বালি জমা স্বাভাবিক ব্যাপার। বেশি ময়লা জমলে কম্বুশন ইঞ্জিন ঠিক মতো অপারেট করতে পারে না। এতে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত প্রেসার সৃষ্টি করে তাই জ্বালানি বেশি পোড়ে।  তাই নিয়মিত কার্বুরেটর পরিষ্কার না করলে, জ্বালানি খরচ বাড়বে।

আবার কার্বুরেটর সঠিকভাবে টিউনিং করা না থাকলে ইঞ্জিনে তেল বেশি প্রবেশ করে পড়ে যায়। অনেকেই মোটরসাইকেলে জ্বালানি একটু বেশি খরচ হলেই কার্বুরেটর টিউনিং করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানে যত কম হাত দিবেন ততই মঙ্গল। কার্বুরেটরের অ্যাডজাস্টমেন্ট স্ক্রু গুলি অত্যন্ত সেনসেটিভ।এই সমস্যার সমাধানে নিয়মিত দক্ষ মেকানিকের মাধ্যমে কার্বুরেটর পরিস্কার করুন।

(৩) রেগুলার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন। নিম্নমানের তেল বাইকের ইঞ্জিনের ক্ষতি করে, জ্বালানি খরচ বাড়ায়। বাইকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা জরুরি। সাধারণত আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের অবস্থা বিবেচনায়, এক্সপার্টরা ১ হাজার কিলোমিটার মাইলেজ হবার পর  ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। নতুন বাইকে ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন, সিনথেটিক অয়েলে ব্যবহার না করাই ভালো। নিয়মিত ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে বাইক চলবে স্মুথ এবং জ্বালানিও সাশ্রয় হবে। অবশ্যই ভালো গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলের ব্যবহার করুন, এতে ইঞ্জিনের স্থায়ীত্ব বাড়বে। সামান্য খরচ বাঁচানোর জন্য নিম্ন মানের অয়েল ব্যবহার করবেন না, বারবার তেলের গ্রেড পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হয়। বাজারে ভালো ব্রান্ডের ইঞ্জিন অয়েল যেমন পাওয়া যায়, ভেজাল তেলও পাওয়া যায়, ভেজালযুক্ত জ্বালানি ব্যাবহারে নানান ধরণের সমস্যায় পরবেন। জ্বালানি খরচ বাড়বে, ইনজিন উত্তপ্ত হবে। প্লাগ, রিংপিস্টন ইত্যাদি নষ্ট হবে।

(৪) নিয়ম মেনে সঠিক গিয়ারে বাইক চালান

স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালালে জ্বালানি খরচ কম হয়।  বাইকের গিয়ারের ব্যবহার আয়ত্ত করুন, সঠিক গিয়ারে বাইক চালান, এতে কম ফুয়েল খরচ হবে। কম গিয়ারে বাইক চালানো আয়ত্ত করুন, এতে ফুয়েল খরচ কম হয়। অনেকেই ফার্স্ট গিয়ারে বাইক স্টার্ট করে অকারণে প্রেশার দেন। এই কাজ করলে বাইকের ইঞ্জিনের উপর প্রেসার পরে, তাই তেল বেশি পোড়ে। তাই দীর্ঘ সময় লো গিয়ারে বাইক চালালে জ্বালানি খরচ বাড়বে। এজন্য বাইক স্টার্ট করার পর গতি বাড়িয়ে যথাসম্ভব টপ গিয়ারে চালায় আয়ত্ত করুন।এতে ফুয়েল সাশ্রয় হবে। রাস্তা বুঝে যখন যে গিয়ারে বাইক চালানো প্রয়োজন সেই গিয়ারে বাইক চালান। যখন বাইক বেশি গিয়ারের জন্য প্রস্তুত হবে যত দ্রুত সম্ভব বেশি গিয়ার ব্যবহার করুন। বাইকের ইঞ্জিন চালু থাকা অবস্থায় অযথা থ্রটল ঘুরাবেন না।

(৫) আস্তে ধীরে গতি বাড়ান এবং নিয়ন্ত্রিত গতি মেনে চলুন

বাইকের কম বা বেশি যাই হোক, তেল বেশি পুড়বে। এই কারণে স্বাভাবিক গতিতে বাইক চালাবেন। গিয়ারের ব্যবহার জানুন, বাইকের ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে প্রথমে কিছুক্ষন ফাস্ট গিয়ারে চালান। তারপর গতির সঙ্গে রাস্তার অবস্থা বিবেচনায় একটা একটা করে গিয়ার পরিবর্তন করুন। আবার হটাৎ করে টপ গিয়ার থেকে ফাস্ট গিয়ারে বাইকের গতি আনবেন না, এতে জ্বালানি খরচ বাড়ে। সবচেয়ে ভালো উপায় যথাসম্ভব একই গতিতে বাইক চালান। ঘন ঘন গিয়ারের উঠানামা করবেন না। এতে যেমন বাইকের ইঞ্জিনের সমস্যা হবে তেমনি তেলও পুড়বে বেশি। বাইক চালানোর সময় ব্রেক হালকা করে চেপে রাখবেন না।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ওভার স্পীডে বাইক চালিয়ে থাকে। মনে রাখবেন বাইকের গতি যত বাড়াবেন ততই জ্বালানি পুড়বে। নির্দিষ্ট গতিতে চালালে তেলের খরচ অনেক কম হয়।সব সময় চেষ্টা করুন বাইক ৫০-৬০ স্পীডে চালাতে। এ সময় গিয়ার রাখুন টপে। বাইকের স্পিডো মিটারে ইকোনমি স্পীড দেয়া আছে। এই ইকোনমি স্পীডে বাইক চালালে অনেকটাই ফুয়েল সাশ্রয় হবে। আপনি যদি ইকোনমি স্পীডে বাইক চালান তাহলে আপনি মাইলেজ ভালো পাবেন, জ্বালানি খরচও কম হবে।

(৬) চাকার হাওয়া চেক করুন

হাওয়ার কারণে চাকার ওজন কম বা বেশি হয়। চাকার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে ইঞ্জিনের উপর প্রেসার পরে। চাকায় হাওয়া বেশি হলে, এর আকার পরিবর্তন হয়ে যায়, এতে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। চাকায় হাওয়া বা প্রেশার কম থাকলে ইঞ্জিনে ঠিক মতো অপারেট করতে পারে না, ইঞ্জিনের ডিসপ্লেসমেন্ট (সিসি) অনুযায়ী, টর্ক ঠিক মতো কাজ করে না। এতে চাপ বাড়ে ইঞ্জিনের ওপর, ফলে বাইকের জ্বালানি খরচের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই বাইকের টায়ারের হাওয়া সবসময় ঠিক রাখুন।

(৭) এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার রাখুন

মোটরসাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্রাংশ এয়ার ফিল্টার। এই যন্ত্রটি রেগুলার ফিল্টার করতে থাকে বলেই, এর ভিতরে ধুলা ময়লা জমতে থাকে। আমাদের দেশের রাস্তায় ধুলাবালির পরিমান অনেক বেশি, এই ফিল্টারে ময়লাও জমে বেশি। বেশি ময়লা জমলে এয়ার ফিল্টার বন্ধ হয়ে যায়। ফিল্টার বন্ধ হয়ে গেলে ইঞ্জিনে বাতাস চলাচলে সমস্যা হয়। ফলে তেল কবুশনের সময় ইঞ্জিনে কম অক্সিজেন যায়, এতে বেশি তেল খরচ হয়। দীর্ঘ সময় এই অবস্থায় থাকলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। বাইক চালানোর সময় যেদিকে এয়ার ফিল্টার আছে, সেদিকটা খোলা রাখুন। এয়ার ফিল্টারের খোলা মুখগুলোকে কখনো ঢেকে দেবেন না।

(৮) ক্লাচের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখুন

বাইক চালানোর সময় অযথা ক্লাচ লিভারে চাপ ফেলবেন না। ক্লাচ হ্যান্ডেল করার নিয়ম জানতে হবে। অযথা বাইক চালানোর সময় ক্লাচ চেপে রাখা যাবে না। অনেকে দ্রুত চলতে গিয়ে বার বার ক্লাচ চেপে ব্রেক করেন, আবার হুটহাট ক্লাচ ছেড়ে হঠাৎ গতি বাড়িয়ে চালান। এগুলো কোনোতাই বাইকের ইঞ্জিনের জন্য ভালো নয়। বাইক চালানোর অবস্থায় বেশিসময় ক্লাচ চেপে রাখবেন না। এতে ইঞ্জিনের উপর চাপ পরে, ফলে জ্বালানি পুড়তে থাকে।

(৯) নিয়মিত টায়ারের চাপ পরীক্ষা করুন

বাইক স্টার্ট দেবার আগে টায়ারের চাপ চেক করুন। আপনার নিরাপত্তার জন্যেই এই চেক করার অভ্যাস করুন। কম চাপের টায়ার চাকার ওজন বাড়ায়, ফলে ইঞ্জিনে প্রেসার বেড়ে যায়। টায়ারের চাপের হেরফের হলে বাইক কন্ট্রোলিংয়ে সমস্যা হয়। এটি শুধু বিপদজনকই নয় এটা আপনার জ্বালানীর ব্যবহারও বাড়াবে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য টায়ারের পাম্প নির্দেশনা মত রাখুন।

(১০) বেশি ওজন – বেশি জ্বালানি

বাইক যত বেশী ওজন বহন করবে তত বেশী জ্বালানি ব্যবহার করবে। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য অতিরিক্ত ওজনের কোনো কিছুই মোটরসাইকেলে বহন করা উচিত নয়। আপনার বাইককে দুই জনের বেশী যাত্রী বহন করবেন না।

(১১) পারফেক্ট চেইন ব্যবহার করুন

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য জন্য নিয়মিত চেন পরীক্ষা করা উচিত। বাইকের পুরোনো চেইনে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে, যেমন, মরিচ পরে, ময়লা জমে, লুব্রিকেশন কম থাকে, ইত্যাদি। এসব কারণে পুরোনো চেইন বাইকের ইঞ্জিনের উপর প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। চেইন বেশি ঢিলা অথবা টাইট করবেন না। টাইট চেইনের স্প্রোকেট খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়, ঢিলা চেইনে কন্ট্রোলিংয়ে সমস্যা হয়। তাই সঠিক মাপে মোটরসাইকেলের চেন ব্যবহার করা উচিত। ম্যানুয়ালে উল্লেখ করা মাত্রায় চেইন টাইট রাখুন।

(১২) বাইক নিয়মিত সার্ভিসিং করুন

আপনার বাইক ভালোভাবে ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর বাইকের সার্ভিসিং করুন। বাইকের অনুমোদিত সার্ভিসিং সেন্টার অথবা মানসম্মত সার্ভিসিং সেন্টার থেকে বাইক সার্ভিসিং করান। এতে বাইকের জ্বালানি খরচ যেমন কমবে তেমনি বাইক দীর্ঘস্থায়ী হবে। আপনি যদি বাইক দীর্ঘদিন সার্ভিসিং না করান একটা সময় গিয়ে বাইকের মাইলেজ অনেক কমে যাবে। নিয়মিত বিরতিতে ইঞ্জিনের তেল পরিবর্তন, চেইন লুব্রিকেট এবং কুল্যান্টগুলো প্রতিস্থাপন করুন। তেলের ট্যাংক ও পাইপসহ বিভিন্ন পয়েন্টের জয়েন্ট যেন লিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

(১৩)ট্রাফিক সিগনালে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন

ইঞ্জিনে চালু থালেই বাইকের তেল পুড়তে থাকে, এমনকি নিউট্রাল অবস্থায় থাকলেও তেল পুড়তে থাকে। তাই রাস্তায় বড় ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লেই বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন। তবে আপনার বাইকটি যদি নিউট্রাল অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়ে থাকে তাহলে ইঞ্জিনে বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। আধুকিক বাইক গুলো নিউট্রাল অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয়ী কিন্তু ঘন ঘন স্টার্ট করলে জ্বালানি খরচ করে। জ্যামের কারণে বাইকের গতি কমানো ও বাড়ানো লাগে। এটা অতিরিক্ত জ্বালানি খরচের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া জ্যামে বাইক চলমান থাকলে ইঞ্জিন এবং গিয়ারের ওপর চাপ পড়ে। যা বাইকের আয়ু কমিয়ে দেয়।  তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী যা ভালো হয় তাই করুন।

(১৪) ঘন ঘন ব্রেক

আপনার বাইকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। স্বাভাবিক গতিতে বাইক চালালে ঘন ঘন ব্রেক করা লাগে না। ঘন ঘন ব্রেক করলে তেল খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য ভাঙা রাস্তা এড়িয়ে চলা উচিত। বারবার মোটরসাইকেলের গতি কমানো ও বাড়ানোর ফলে তেল খরচ বেশি হয়। তাই মোটরসাইকেলের ফুয়েল সাশ্রয় করতে ঘন ঘন ব্রেক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা

সর্বোপরি, মোটরসাইকেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। ফুয়েল সাশ্রয়ে বিনা প্রয়োজনে বাইক নিয়ে না বের হবার চেষ্টা করুন। সল্প দূরত্বে হাঁটার অভ্যাস করুন, এতে শরীর সুস্থ থাকবে। আমাদের দেশ এখনকার বিশ্ব পরিস্থিতিতে খুব একটা ভালো অর্থনৈতিক অবস্থানে নেই। তাই নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে এবং ভবিষ্যতের জন্যে ফুয়েল সাশ্রয় করা জরুরি।

মোটরসাইকেলের জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য যে জ্বালানি বাঁচানোর টিপস দেয়া হলো, সেগুলো মেনে চলা অনেক সহজ কিন্তু আমরা খুব কমই এইগুলো মেনে চলি। সহজ এই টিপস গুলো ফুয়েল সাশ্রয়ের পাশাপাশি আমাদের অর্থেরও খরচ কমায়। এই টিপস গুলো মেনে চলা ছাড়াও নিজে সচেতন হওয়া জরুরি। আপনি যদি এই জ্বালানি বাঁচানোর টিপস গুলো মেনে বাইক ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বাইকের ফুয়েল সাশ্রয় হবেই।

 

বাইক সম্পর্কে যে কোনো ধরণের ধারণা পেতে ভিজিট করুন ‘বাইকস গাইড‘। এখানে আপনি বিভিন্ন বাইকের রিভিউ, দাম-দর, দরকারি পরামর্শ পাবেন।

Similar Advices



3 comments

  1. মাশাল্লাহ
    খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পরামর্শ দেওয়ার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

  2. উপদেশ ভালো লাগলো। ধ‍্যবাদ

Leave a comment

Please rate

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Buy Engine Oilsbikroy
Mobil for Sale

Mobil

MEMBER
Tk 2,000
3 days ago
SV-1 Fuel Enhancer for Sale

SV-1 Fuel Enhancer

MEMBER
Tk 1,000
1 week ago
SV-1 Fuel Enhancer for Sale

SV-1 Fuel Enhancer

MEMBER
Tk 950
1 week ago
castrol mobil for Sale

castrol mobil

MEMBER
Tk 700
2 weeks ago
toyama japan engine oil (mobil) for Sale

toyama japan engine oil (mobil)

MEMBER
Tk 500
2 weeks ago
Buy Other Auto partsbikroy
4200 2024 for Sale

4200 2024

MEMBER
Tk 4,200
6 minutes ago
48 Volt Auto charger for Sale

48 Volt Auto charger

MEMBER
Tk 4,500
18 minutes ago
Yamaha FZS tasslock GPS 2024 for Sale

Yamaha FZS tasslock GPS 2024

MEMBER
Tk 3,500
24 minutes ago
+ Post an ad on Bikroy