মোটরসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা অনেকটাই নির্ভর করে মোটরসাইকেলের চাকা এর উপর। টায়ার শুধু মোটরসাইকেলকে গতি দেয় না, বরং নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক যাত্রার এক অপরিহার্য অংশ। সঠিক মোটরসাইকেল টায়ার নির্বাচন আপনার বাইকিং অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। বিভিন্ন ধরনের টায়ার বিভিন্ন পরিস্থিতি ও উদ্দেশ্যে উপযোগী। এই লেখায় আমরা মোটরসাইকেলের বিভিন্ন ধরণের টায়ার, এর গঠন এবং চাকার যত্ন কিভাবে নিতে হয়, সেই ব্যাপারে জানবো-
মোটরসাইকেলের চাকার গঠন
মোটরসাইকেলের চাকা নিয়ে জানতে হলে, আগে জানতে হবে এর গঠন সম্পর্কে এবং এটি কিভাবে কাজ করে। মোটরসাইকেলের চাকার গঠনে ৪টি ভাগ থাকে-
- সাইডওয়াল
- ট্রেড
- বিড
- র্যাডিয়াল
এই প্রতিটি অংশ মিলে চাকাকে সচল রাখে। সাইডওয়াল হলো চাকার বাহিরের আবরণ, যেটিকে আমরা বাহির থেকে দেখতে পাই। চাকায় যদি পর্যাপ্ত বাতাস না থাকে, অর্থাৎ স্ফীত অবস্থায় থাকে, তাহলে এই সাইডওয়াল সহজেই বাকিয়ে যায়। আর যদি চাকায় পর্যাপ্ত বাতাস থেক, তাহলে পুরো মোটরবাইকের ভর এই সাইডওয়াল নিতে সক্ষম হয়। ট্রেড হলো চাকার যেই অংশ সরাসরি মাটির সংস্পর্শে আসে। শেপ এবং ডিজাইন অনুযায়ী ট্রেডের অনেক ধরণের হতে পারে। রাস্তার উপর ট্র্যাকশন ধরে রাখা এবং চাকার গুণাবলী বজায় রাখা এই ট্রেডের উপর নির্ভর করে। বিড হলো চাকার ভেতর রাবার এবং মেটালের রিং যা টায়ারটিকে রিমের সাথে আটকে রাখে এবং ভেতরে বাতাস ধরে রাখে। সব শেষে র্যাডিয়াল স্টিলের তার যা চাকার দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন ধরণের চাকা
মোটরসাইলের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে মোটরসাইলের চাকা এর ধরণও বিভিন্নরকম হতে পারে। এবার আমরা প্রচলিত কিছু ধরণ নিয়ে আলোচনা করব-
-
স্পোর্ট টায়ার
স্পোর্ট টায়ার ব্যবহার হয় কর্ণারিং এবং মোটরবাইকের হাই পারফরম্যান্স নিশ্চিত করার জন্য। এগুলো ওজনে অন্যান্য টায়েরের থেকে অনেক হালকা হয়। কর্ণারিং এর কাজে ব্যবহার হয় বলে এর দুই পাশের গঠনে বেশ ভালো কার্ভ দেখা যায়।
-
ট্যুরিং টায়ার
স্পোর্টস বাইক নিয়ে লং রাইডে বের হলে ট্যুরিং টায়ার সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এটি একই সাথে হাইওয়েতে ট্র্যাকশন ধরে রাখতে পারে আবার দীর্ঘ মাইলেজ দিতে সাহায্য করে। এই টায়ারগুলো গঠনে বেশ শক্ত হয় এবং ভালো গ্রিপের জন্য চাকার ট্রেডে কাট করা থাকে।
-
ডুয়াল স্পোর্ট টায়ার
ডুয়াল স্পোর্ট বা অ্যাডভাঞ্চার টায়ার হলো যারা বাইক নিয়ে অফরোডে রাইড করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য। মূলত ডার্ট বাইকগুলোতে এই টায়ারের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এসকল টায়ার প্রধান সড়কের তুলনায় পাহাড়ি রাস্তা কিংবা কাঁদা বা মাটির রাস্তার উপর দিয়ে বাইক চালাতে বেশি সহায়তা করে।
টিউবলেস টায়ারের ব্যবহার
বর্তমান সময়ে মোটরবাইকের টায়ার বাজারে নতুন সংযোজন হলো টিউবলেস টায়ার। সাধারণ টিউব টায়ারের তুলনায় টিউবলেস টায়ারের গুণাবলি বেশ উন্নত হওয়ায় বাইকারদের মাঝে এর কদর বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ টিউব টায়ারে বাতাস আটকে রাখার জন্য একটি টিউব থাকে। যা ফুলানোর মাধ্যমে টায়ারের গঠন ঠিক করা হয়। কিন্তু টিউবলেস টায়ারে সেরকম কোনো টিউব থাকে না। বরং এখানে একটি লাইনার ব্যবহারের মাধ্যমে রিমের সাথে টায়ারকে আটকে রাখা হয়।
টিউবলেস টায়ারের সুবিধা
- টিউবলেস টায়ার সহজে পাংচার হয় না। টিউব না থাকায় চাকায় কিছু আটকে গেলেও বাতাস সহজে আটকে রাখার ব্যবস্থা করা যায়।
- টিউব টায়ারের তুলনায় টিউবলেস টায়ার লো প্রেশারে চলতে পারে। যেখানে টিউব টায়ারের ভিতর হাই প্রেশার নিশ্চিত করতে হয় বাইক ঠিকভাবে চালানোর জন্য।
- টিউবলেস টায়ার কোনো কারণে পাংচার হয়ে গেলে লিকুইড সিলেন্ট দিয়ে সহজেই সেই পাংচার বন্ধ করে দেয়া যায়।
- টিউবলেস টায়ার ওজনেও বেশ হালকা। ফলে বাইক চালানো যায় স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে।
- টিউবলেস টায়ার অন্যান্য টায়ারের তুলনায় অধিক স্ট্যাবিলিটি প্রদান করে।
চাকার যত্ন কিভাবে নিবো
সঠিক পারফরম্যান্স পেতে এবং সেই সাথে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত মোটরসাইকেলের চাকার যত্ন নেওয়া জরুরি। নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই সহজে টায়ারের যত্ন নেওয়া যায়-
-
নিয়মিত টায়ার পরীক্ষা করুন
বাইক বের করার আগে লক্ষ্য করুন চাকায় কোনো ছিদ্র বা ক্ষত আছে কিনা। যেকোনো প্রকার অনাকাংক্ষিত কাটা ছেঁড়া বা ফাটল দেখা দিলে টায়ার পরিবর্তন করা জরুরি।
-
চাকার প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করুন
বাইকের চাকায় কখনওই অতিরিক্ত প্রেশার দিবেন না, যাতে চাকা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার খুব কম প্রেশারে রাখবেন না যাতে চাকার গঠনই বাকিয়ে যায়।
-
টায়ারের ট্রেড পরীক্ষা করুন
টায়ারের ট্রেড সময়ের সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে। এজন্য নিয়মিত ট্রেডের অবস্থা পরীক্ষা করবেন। যখন দেখবেন ট্রেড তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না বা টায়ারের বডির সাথে মিশে গিয়েছে, সাথে সাথে টায়ার পরিবর্তনের ব্যবস্থা নিবেন।
-
ওভারলোডিং করবেন না
বাইক ওভালোড করে ফেললে তা টায়ারের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলবে। এজন্য টায়ারের পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘমেয়াদ নিশ্চিত করতে চাইলে অতিরক্ত মাল বোঝাই করে বাইক চালাবেন না।
-
পরিস্থিতি বুঝে টায়ার ব্যবহার করুন
আপনার রাইডিং হ্যাবিট এবং কোন পরিস্থিতিতে বাইক চালাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে টায়ার নির্বাচন করুন। হাইওয়ে রাইড করার সময় যেমন অ্যাডভেঞ্চার টায়ার সুবিধার না, তেমনই অফরোডে ড্রাইভ করার জন্য স্পোর্ট টায়ার কার্যকর হবে না।
এই বিষয়গুলো মেনে চললে সহজেই আপনি মোটরসাইকেলের চাকা এর দীর্ঘমেয়াদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাইকের সঠিক পারফরম্যান্স এবং আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
বাইকের চাকা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে চোখ রাখুন বাইকস গাইড– এ। এছাড়া ২০২৩ সালের মোটরবাইকের বাজার জানতে ভিজিট করুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।