রাস্তায় চলার সময় দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা উচিৎ। আমাদের সকলের সুবিধার্থে সকল যানবাহনের জন্য বাংলাদেশ সরকার আলাদাভাবে কিছু আইন প্রণয়ন করেছেন। মোটরসাইকেল রাইডারদের জন্য তেমন কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী দেওয়া হয়েছে যা মোটরযান আইন নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনে সড়ক দুর্ঘটনা এখন একটি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। দৈনিক খবরের কাগজে কিংবা টিভি নিউজে আমরা প্রতিনিয়ত এমন খবর দেখে থাকি। এমন সব দুর্ঘটনার কবলে পরে বহু পরিবার তাদের আপনজন হারাচ্ছেন। কিন্তু তবুও এই দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে। এর মূল কারণ হলো অসচেতনতা।
রাস্তায় চলাচলের সময় আমাদের সকলের উচিৎ সড়ক আইন মেনে চলার। ঠিক একইভাবে যারা বিভিন্ন যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল, বাস কিংবা প্রাইভেট কার চালান তাদের উপরেও কিছু আইন প্রণীত রয়েছে। তাদের উচিৎ সেই আইন সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে রাস্তায় গাড়ি চালানো।
শহরের রাস্তায় মোটরসাইকেল হর্ন একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে নিরাপত্তা এবং যোগাযোগ নিশ্চিত করতে। তবে, এই হর্ন অবশ্যই যেকোনো সময় ব্যবহার করা যাবে না। মোটরসাইকেলের হর্নের ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
আমরা আজকে মোটরযান আইন এবং মোটরসাইকেল চালানোর নিয়মাবলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট মোটর সাইকেলের হর্নের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানবো।
মোটরযান আইন অনুযায়ী হর্ন ব্যবহারের বিধিনিষেধ
অধিকাংশ এলাকায় মোটরসাইকেল হর্ন কীভাবে এবং কখন ব্যবহৃত হবে তার সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সাধারণভাবে, হর্নগুলি অন্যদেরকে আপনার উপস্থিতির সতর্ক করতে এবং দুর্ঘটনার প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
আপনার হর্ন সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করলে বা বিঘ্নকর পদ্ধতিতে শব্দ করলে তা কেবলমাত্র আইন ভঙ্গই হয় না, এতে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। অতিরিক্ত হর্ন বাজানো ফাইনের কারণ হতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ আপনার মোটরসাইকেলটি আবদ্ধ করতে পারে।
একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হর্নের ডেসিবেল স্তর। কর্তৃপক্ষ সাধারণভাবে শব্দ নিয়ন্ত্রণের সীমা নির্ধারণ করে যাতে একটি অতিরিক্ত শব্দবর্জন এবং জনস্বাস্থ্যের একটি ঝুঁকি হতে না পারে। রাইডারদের জন্য তাই এটি খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেন তাদের মোটরসাইকেল হর্ন এই শব্দ নির্দেশনার আওতায় থাকে।
মোটর সাইকেলের হর্নের ব্যবহারের সঠিক সময়
-
আপনার পার্শ্ববর্তী গাড়িকে অবগত করতেঃ
রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় মূলত আপনার আশেপাশে অন্যান্য যেসকল যানবাহন থাকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হর্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় আপনার সামনের পরিবহনকে আপনার অবস্থান জানাতেও হর্ন ব্যবহার করুন।
-
ব্লাইন্ড স্পটে বাইক চালানোর সময়ঃ
আমরা যখন গাড়ি চালায় তখন সামনে যতটুকু রাস্তা আমরা দেখতে পায় ততটুকু দূরত্ব সম্পর্কে আমরা প্রিপেয়ার থাকি। কিন্তু যেই দূরত্বের পরের রাস্তা আমাদের কাছে দৃশ্যমান না তাকে ব্লাইন্ড স্পট বলে। যেমন বড় রাস্তা থেকে আপনি একটি ছোট রাস্তায় টার্ন করবেন, এক্ষেত্রে আপনি সেই ছোট রাস্তায় চলাচল্ক্রত অন্য যানবাহন বা পথচারী দেখতে পাচ্ছেন না সেক্ষেত্রে তাদের আপনার অবস্থান সম্পর্কে জানাতে হর্ন ব্যবহার করুন।
-
ওভারটেক করার সময়ঃ
যদিও মোটরযান আইন অনুসারে হাইওয়েতে অপ্রয়োজনীয় অভারটেকিং দ্বন্ডনীয় অপরাধ তবুও অনেক সময় প্রয়োজনের কারণে ওভারটেক করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওভারটেক করার পূর্বে আপনার সামনে থাকা বাহনটিকে অবশ্যই অবগত করতে হবে যে আপনি তাকে ওভারটেক করতে চাচ্ছেন। এই সময়য় আপনি হর্ন ব্যবহার করলে সামনের গাড়িটি বুঝতে পারবে এবং ওভারটেক করার জন্য আপনাকে জায়গা করে দিবে।
-
পথিমধ্যে পথচারী কিংবা কোনো প্রাণী দেখলেঃ
আমরা সকলেই কম বেশি মোটরযান আইন সম্পর্কে জানি কিন্তু জেনেও অনেক ক্ষেত্রেই মানি না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন অসচেতনতার বশবর্তী হয়ে অনেকেই রাস্তার মাঝে হঠাৎ চলে আসে। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন অবুঝ পশুপাখি ও রাস্তার মাঝে চলে আসে। তাই, সবসময় চেষ্টা করতে হবে আপনার মোটরসাইকেলটির গতি যেন আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে সঠিক সময়ে ব্রেক করতে না পরলে অবশ্যই হর্ন ব্যবহার করতে হবে।
-
স্কুল, কলেজ এবং সিগন্যাল ক্রস করার সময়ঃ
স্কুল, কলেজের সামনে দিয়ে সাধারণত বয়সে ছোট ছেলেমেয়েরা চলাচল করে। তারা অনেক সময় না বুঝেই সামনে চলে আসতে পারে। তাই স্কুল, কলেজ ক্রস করার সময় আপনার বাইকের গতি কম রাখুন এবং প্রয়োজনে হর্ন ব্যবহার করুন। একইভাবে, সিগন্যাল ক্রস করার সময়ও প্রয়োজনে হর্ন ব্যবহার করুন।
চলুন এবার মোটরসাইকেলের হর্নের সাউন্ড ইফেক্ট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মোটরসাইকেলের হর্নের সাউন্ড ইফেক্ট
অত্যধিক শব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজালে তা ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আমরা সবাই জানি দীর্ঘকাল উচ্চ শব্দের মাঝে থাকলে শ্রবণশক্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, নিয়মিত এরকম শব্দদূশনের ফলে মানুষের মানুষিক ক্ষতিও হয় ফলে তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ইয়াং রাইডাররা বিভিন্ন উচ্চ শব্দের হর্ন ব্যবহার করেন এতে করেও পরিবেশ দূষিত হয়। তাই এই রকম রাইডারদের উচিৎ দ্রুত তাদের মোটরসাইকেলের হর্ন রিপ্লেসমেন্ট করা।
আশা করি, আপনারা সকলে মোটরসাইকেলের হর্নের সাউন্ড ইফেক্ট সম্পর্কে সচেতন হবেন, মোটরসাইকেলের হর্নের ব্যবহারের নিয়মাবলী মেনে এবং মোটরযান আইন মেনে মোটরসাইকেলের হর্নের ব্যবহার করবেন। মোটরসাইকেল চালানোর এমন সব প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে আমাদের ব্লগে নিয়মিত চোখ রাখুন।