মোটরসাইকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে নিরাপত্তা। আর বাইকের নিরাপত্তা বিষয়ের সাথে জড়িত এর ব্রেকিং সিস্টেম। অনেক সময় হঠাৎ করে বাইক ব্রেক করতে হয়। আবার দেখা যায় যে পিচ্ছিল রাস্তায় বাইকের চাকা স্কিড করার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুটি ব্রেকিং সিস্টেম এখন বাইকে ইনস্টল করা হচ্ছে যার একটি হচ্ছে সিবিএস এবং অপরটি এবিএস। আজ আমারা ABS ব্রেকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানব।
অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS) হচ্ছে সেই জিনিস যা চাকা আটকে যাওয়া বা লক হয়ে যাওয়াকে অ্যান্টিলক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোধ করে।
ধরুণ, আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ আপনার একেবারে সামনে কোন কুকুর এসে দাঁড়াল, আপনি তখন কী করবেন? কষে ব্রেক করবেন, তাই না। কিন্তু করলে কী হবে? চাকা পিছলে যাবে, আর আপনি ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যাবেন। রাস্তা যদি পিচ্ছিল অথবা বালুযুক্ত হয় তখন কী হবে?
ব্রেক চাপার সাথে সাথেই নিয়ন্ত্রণ হারাবেন। আমাদের দেশের বেশীরভাগ দূর্ঘটনাই এমনটির জন্য হয়ে থাকে। এই সময়ে এবিএস আপনার সহায়ক হতে পারে। অতিসাম্প্রতিককালে Aprilla ১২৫, KTM 125 এবং সর্বশেষ Honda CB ex-motion আমদানির বদৌলতে মানুষ কিছুটা জানতে পারছে ABS সম্পর্কে।
তাহলে চলুন এবিএস এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
বাংলাদেশে ABS নতুন হলেও এর ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯২৮ সালে প্রথম জার্মানরা ABS উদ্ভাবন করে। ১৯৫৮ সালে Royal Enfield মোটরবাইকে প্রথম ABS সংযোজিত হয়। আমাদের দেশের গাড়িগুলোতে ১৯৯৫-৯৭ সাল থেকে ABS ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানের প্রায় সব গাড়িতেই ABS আছে। বাইকের ABS মূলত তিনটি অংশ দিয়ে তৈরি। প্রথমটা হল স্পিড সেন্সর, দ্বিতীয়টা হল ভাল্ভ, এরপর হল পাম্প।
বাইকে যখন ব্রেক প্রয়োগ করা হয়, তখন স্পিড সেন্সর চাকার গতির হিসেব করে। যখন এটি দেখে চাকার গতি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে এবং লক হয়ে যাওয়ার মত অবস্থায় যাচ্ছে, তখন এটি ভালভ আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়, যাতে কিনা ব্রেক ফ্লুয়িড অল্প পরিমাণে প্রধান ব্রেক সিলিন্ডারে প্রবেশ করে, অতিরিক্ত ব্রেক বল নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রেক ফোর্স কমে আসলে ভালভ আবার খুলে যায়, আবার বেড়ে গেলে ভালভ আংশিক বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে হাইড্রোলিক ব্রেকবল এবং চাকার ঘূর্ণনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চাকা লক হয়ে যাওয়া, স্কিড করা নিয়ন্ত্রণ করে ABS। ব্রেক ছেড়ে দিলে ভালভ বন্ধ হয়ে যায়, তখন পাম্প পুনরায় চাপ ফিরিয়ে আনে হাইড্রোলিক ব্রেকিং সিস্টেমে।
বাইক যেহেতু দুই চাকার উপর চলে, যেকোন এক চাকা লক হয়ে গেলে খুব সহজেই ভরবেগে কেন্দ্রের সামঞ্জস্যতা হারায়। বিশেষ করে বাইকের পিছনে কেউ না থাকলে, এমন সময় ব্রেক করলে, পিছনের চাকা লক হয়ে যায়, বাইক হ্যাঁচকাভাবে মোচড় দেয়। এর কারণ ব্রেক ধরার সময় সামনের চেয়ে পিছনের চাকায় ঘর্ষণ কম কাজ করে।
এটা হবেই, যত ভালো বাইকার হন না কেন। এবার একনজরে দেখে নেই, জীবন রক্ষাকারী এই ABS আর কী কী উপকারীতা আছে:
১। কষে ব্রেক করার ভিতরেও আপনি বাইকের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে বস্তুকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবেন। ABS না থাকলে এই কাজ করতে গেলে বাইক থেকে ছিটকে যাবেন।
২। রাস্তা যেমনি হোক; বৃষ্টিভেজা, বালুযুক্ত, তৈলাক্ত, কাদামাখা কিংবা নুড়িপাথরময় আপনার ব্রেক আর স্কিড নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
৩। ইঞ্জিন ব্রেক দিয়ে ক্লাচ প্লেটের বারোটা বাজানো লাগবে না।
৪। বৃষ্টির দিনে পাহাড়ি রাস্তায় ABS খুব কার্যকারি।
৫। রাস্তার মোচড়গুলোতে বাইক কাত করে চালাতে হয়। এসময় শক্ত ব্রেক ধরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ চাকা লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। ABS সেটা হতে দিবে না।
৬। লং ড্রাইভে আপনার মানসিক পরিশ্রম অর্ধেকে নেমে আসবে।
বাইকে এবিএস ব্যবহারের ফলে দূর্ঘটনার হার শতকরা ৯০ ভাগ কমানো সম্ভব।