নিরাপদ মোটরসাইকেল রাইডিং এর জন্য প্রয়োজন মানসম্মত গিয়ার। বিশেষ করে যারা লং ড্রাইভে মোটরবাইক ব্যবহার করেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ মোটরসাইকেলের নিরাপদ ক্লোদিং ব্যবহার করা আবশ্যক। মোটরসাইকেল গিয়ারের মান নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বজুড়ে যেই রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, সেটি হলো CE রেটিং। আজকের লেখায় আমরা CE Rated মোটরসাইকেল গিয়ার নিয়ে আলোচনা করবো।
CE এর পূর্ণরূপ হলো “conformité européenne” বা “European conformity”। অর্থাৎ “ইউরোপিয়ান নিশ্চয়তা”। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ১৯৯৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়ার জন্য এই মানদন্ড নির্ধারণ করে দেয়, যা ২০২০ সালে সর্বশেষ পরিমার্জন করা হয়েছে। প্রধাণত ইউরোপের বাজারে পণ্যের মান নির্ধারণে এই রেটিং ব্যবহার হলেও, বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এই CE রেটিং ব্যবহার হচ্ছে।
CE রেটিং কিভাবে নির্ধারিত হয়?
মোটরসাইকেল গিয়ার কোয়ালিটি এবং ব্যবহারের নিয়মভেদে CE রেটিং ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। CE রেটিং এর দুইটি ভাগ আছে। একটি হলো ক্লাস এবং অপরটি হলো কোড। মোটরসাইকেল গিয়ারের ক্লাস C থেকে শুরু করে AAA পর্যন্ত বেশ কিছু ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। এগুলো মূলত গিয়ারের কোয়ালিটি নির্দেশ করে। যেমন –
ক্লাস C – এটি খুবই পাতলা কাপড়ের হয়ে থাকে এবং সাধারণ ঝাঁকি ছাড়া তেমন একটা ধকল এটি সামাল দিতে পারে না।
ক্লাস B – এটি আগের ক্লাসের থেকে বেশ শক্ত হয়ে থাকে এবং কোন কারণে রাইডার সড়কে পড়ে গিয়ে স্লাইড করলে এটি গুরুতর কাটাছেঁড়া থেকে রক্ষা করে।
ক্লাস A – এই ক্লাসের গিয়ার রাইডারকে গুরুতর স্ক্র্যাচ থেকে সুরক্ষা দিবে এবং কঠিন ধাক্কা থেকে সুরক্ষা দিবে।
ক্লাস AA – এই ক্লাসে রাইডার স্ক্র্যাচ থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি পিছলে গিয়ে ভারী কোনকিছুর সাথে ধাক্কা খেলে সেখান থাকেও সুরক্ষা পাবে।
ক্লাস AAA – সর্বশেষ ক্যাটাগরি হলো রাইডারকে সামান্যতম স্ক্র্যাচ থেকেও সুরক্ষিত রাখবে এমন গিয়ারের জন্য। সাধারণত হাইস্পিড রেসিং বা ফাস্ট রাইডিং এর জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকরি গিয়ার।
এই ক্লাসগুলো দেয়া হয় ফুলবডি গিয়ারের জন্য। অর্থাৎ জ্যাকেট বা প্যান্ট এসকল CE Rated মোটরসাইকেল গিয়ার জন্য ক্লাস C থেকে ক্লাস AAA পর্যন্ত মার্কিং করা হয়। তবে অন্যান্য গিয়ার যেমন গ্লাভস, নি প্যাড এসকল গিয়ারের জন্য ব্যবহার হয় লেভেল ১ এবং লেভেল ২।
লেভেল ১ হল সাধারণ মানের মোটরসাইকেল গিয়ার। এতে রাইডার কিছুটা সুরক্ষিত থাকলেও ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হয়তো সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারবে না। মানদন্ড অনুযায়ী লেভেল ১ এ ১৮ কিলোনিউটন পর্যন্ত শক্তি রাইডার অনুভব করতে পারে। আর লেভেল ২ হলো বাজারে থাকা সেরা মানের গিয়ার। এতে রাইডারের সুরক্ষিত থাকার মান বহুগুনে বেড়ে যায়। এতে রাইডার ৯ কিলোনিউটন পর্যন্ত শক্তি অনুভব করতে পারে।
CE রেটিং কিভাবে বুঝবো?
CE Rated মোটরসাইকেল গিয়ার বোঝার জন্য তাদের নাম্বারিং সিস্টেম বুঝতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক।
ছবিতে একটি ব্যাক প্রটেক্টর দেখানো হয়েছে, যার CE কোড হলো EN 17092-6:2020। এবার একে একে এটি ভেঙ্গে দেখা যাক।
- EN মানে হলো “European Norm”। অর্থাৎ এর টেস্টিং ইউরোপিয়ান মানদন্ড মেনে করা হয়েছে।
- 17092 হলো মানদন্ডের সিরিজ যা ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
- -6 হচ্ছে এই গিয়ারটি রাইডারের কোন অংশকে প্রটেকশন দিচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য বিভিন্ন কোড ব্যবহার করা হয়। যদি কোডের আগে ড্যাশ (-) থাকে তাহলে বুঝতে হবে গিয়ারটি নির্দিষ্টভাবে সেই অংশের জন্যই বানানো হয়েছে। এই অংশের কোড 2 থেকে 6 পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- 2020 হলো কোন সালে গিয়ারটি সর্বশেষ টেস্টিং করা হয়েছে।
এভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা একটি গিয়ারের CE কোড নির্ধারণ করা সম্ভব।
CE সার্টিফিকেশন কিভাবে বুঝবো?
CE Rated মোটরসাইকেল গিয়ার এর ক্ষেত্রে মোট ৩ ধরণের সার্টিফিকেশন ব্যবহার হয়।
- CE Tested: অর্থাৎ গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের ফ্যাসিলিটির মাঝে গিয়ারটির টেস্টিং করেছে। তবে কোন ফিল্ড টেস্টিং হয়নি।
- CE Certified: এর মানে হলো গিয়ারটির কোন একটি নির্দিষ্ট অংশের জন্য স্পেশাল টেস্টিং হয়েছ। গ্রাহককে কেনার আগে জেনে নিতে হবে কোন অংশের উপর টেস্টিং হয়েছে।
- CE Approved: এর মানে হলো গিয়ারটির একাধিক অংশে টেস্টিং হয়েছে এবং এটি অধিক নির্ভরযোগ্য।
এসকল দিকে খেয়াল রাখলে আমরা সহজেই মোটসাইকেল গিয়ারের CE রেটিং বুঝে নিতে পারবো। খেয়াল রাখতে হবে গিয়ারের ক্লাস, কোড এবং সার্টিফিকেশনের দিকে। যত অধিক রেটিং এর গিয়ার নিবেন, চালকের নিরাপত্তা সম্ভাবনাও ততো বেড়ে যাবে।