মোটরবাইক চালানোর সময় অনেক মোটরসাইকেল রাইডাররাই জানেন না যে, মোটরবাইক চালানোর সময় কি কি পরিধান করা উচিৎ। যেকোনো একটা বাইক এক্সিডেন্ট-এর কথা মনে করলে ভেবে দেখুন তো কোথায় কোথায় সবচেয়ে বেশী আঘাত লেগেছে? হয়তো হাত অথবা হাঁটু, তাইনা? আর খুব জোরে বাইক চালালে তো দুর্ঘটনার মাত্রা আরো ব্যাপক হয়ে দাঁড়ায়। লিখাগুলো পড়ে হয়তো ভয় পাচ্ছেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভয় দেখানো নয়, বরং সাবধান করা, আপনাকে আরো বেশি সতর্ক করা। তাই কিছু পরামর্শ মোটরসাইকেল রাইডার-দের জন্য যাতে সাবধান ও সতর্ক থেকে ভালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বাইকে মোটামুটি সবাই ক্রাশ করে, এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হন। কম বা বেশী, আজ নয়তো কাল। তবে যারা ধীর গতিতে বাইক চালান তাদের ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। আর যারা খুব জোরে বাইক চালান তাদের বড় এক্সিডেন্ট হলে হয়তো হাড় ভাঙ্গে নয়তো অন্য কোথাও ব্যথা পান। চিন্তা করে দেখুন, গাড়ি চালানোর চেয়ে মোটরবাইক চালানো কিন্তু বেশী বিপদজনক। কারণ গাড়িতে আপনার চারিদিকে অনেক বেশী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে আপনাকে রক্ষা করার জন্য, মোটরসাইকেলে থাকেনা।
প্রতিরক্ষা হিসেবে জ্যাকেট
মোটরবাইকে আপনার প্রতিরক্ষা আপনিই, আপনার পরিধানই আপনার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বাইকের গিয়ার কিন্তু আপনাকে প্রতিরক্ষা দেবে না। এজন্যই মোটরবাইক চালানোর সময় কি কি নির্ধারিত পোশাক যা আপনাকে প্রতিরক্ষা দেবে তা আপনার অবশ্যই জানা দরকার, আর এমনই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাইকারদের জ্যাকেট। আশা করি, Bikesguide-এর এই advise blog পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। প্রতিরক্ষা হিসেবে জ্যাকেট-এর গুরুত্বও বুঝতে পারবেন। এছাড়াও অটো পার্টস ও এক্সেসরিজ গুলো সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস bikroy.com-এ।
জ্যাকেটের গুরুত্ব
শুধুমাত্র দেখতে খুব সুন্দর বা ভালো লাগবে এজন্য নয় বরং রাস্তায় বাইক চালানোর সময় যখন আপনি প্রতি ঘন্টায় ৫০ কিঃমিঃ বেগে ছুটে চলছেন আপনার শরীর সেইফ রাখার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো বাইকারদের জ্যাকেট, যা বাইক রাইডিং-এর সময় খুবই জরুরী। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে স্বাভাবিকভাবে যেটা দেখা যায় তা হলো, দুর্ঘটনার সময় আপনার শরীর রোলিং করার সম্ভাবনা। আপনি কখনোই চাইবেন না, শরীরের চামড়া ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাক, বরং আপনি তো নিশ্চয় চাইবেন আপনার শরীরের চামড়া অক্ষত থাকুক, আপনার শরীরের হাড়গুলি অক্ষত থাকুক। তাই গরমের অজুহাত দেখিয়ে জ্যাকেট পড়া থেকে বিরত থাকবেন না, কারণ আরামে চলার চেয়ে শরীর ও জীবন বাঁচানো আরো বেশি জরুরি। রক্ত বের হওয়ার চেয়ে ঘাম বের হওয়া অনেক ভালো। এছাড়াও ঘাম বের হলে শরীরে ফ্যাটও বার্ন হবে, ভালো বুদ্ধি কিন্তু, কী বলেন? এছাড়াও প্রতিরক্ষা হিসেবে জ্যাকেট খুবই ভালো কাজ করে।
জ্যাকেটের ধরণ
জ্যাকেটের ধরণ বিবেচনায় বাজারে অনেক ধরণের জ্যাকেট পাওয়া যায়। জ্যাকেটের ধরণ-এর মধ্যে আছে লেদার, টেক্সটাইল, মেশ, বা মিশ্র টাইপ জ্যাকেট -সে যাইহোক মোটরবাইকের জ্যাকেট হলেই হলো, ভালো মানের বাইকারদের জ্যাকেট পাওয়া-ই জরুরি। কিন্তু নকল ‘বাইকারদের জ্যাকেট’ নিবেন না। কিছু বাইকারদের জ্যাকেট আছে, আসল চামড়ার তৈরি কিন্তু অনেক পাতলা যা মোটরবাইক চালানোর সময় পড়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ১.২ থেকে ১.৪ মিমি পুরুত্ত বিশিষ্ট বাইকারদের জ্যাকেট পড়ুন।
লেদার
ভাল চামড়ার জ্যাকেট অত্যন্ত ঘর্ষণ-প্রতিরোধী, যার অর্থ যদি আপনি রাস্তায় পিছলে যান এটি আপনাকে ভয়ঙ্কর রাস্তার ফুসকুড়ি থেকে রক্ষা করবে। প্রতিরক্ষা হিসেবে জ্যাকেট-এর মধ্যে লেদারের জ্যাকেট সেরা।
টেক্সটাইল
হালকা এবং আরামদায়ক মোটরসাইকেল জ্যাকেট, ঘর্ষণ প্রতিরোধী এবং তবে ওয়াটার রেসিসটেন্ট। ঋতুভেদে এবং বিভিন্ন ভূখণ্ড জুড়ে আপনি এই জ্যাকেট পড়ে খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করবেন।
মেশ
লেদারের চেয়ে কম ঘর্ষণ প্রতিরোধী, হালকা, আরো শ্বাস-প্রশ্বাসযোগ্য অর্থাৎ জ্যাকেট পড়লেও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়না।
বাইক রাইডিং-এর ক্ষেত্রে রাইডারের ড্রেসিংটাও অন্যান্য সব বিষয়ের মতোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা আমাদের সবারই মাথায় রাখা উচিৎ। তাই, এই ড্রেসিং-এর বিষয়টা ভালোভাবে জানা প্রত্যেক রাইডারের জন্য বাধ্যতামূলক বলে মনে করি। এই ড্রেসিং আবার বিভিন্ন কন্ডিশনে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
আপনি যে একই ড্রেসআপ নিয়ে সবসময় রাইডিং করবেন সেটাও না। জ্যাকেটের ধরণ বিবেচনায় আপনি একেক সময় একেক ধরণের বাইকারদের জ্যাকেট পরিধান করতে পারেন। সেই সাথে এখানে ফ্যাশনের বিষয়টাও মাথায় রাখা জরুরি।
বাইক চালানোর সময় কোন কোন ধরনের পোশাক এবং আনুষঙ্গিক পরিধেয় পরলে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায় এবং নিজেকে ফ্যাশনেবল দেখায়, এগুলো আমরা বিবেচনা করে থাকি, তাইনা?
বাইকাররা বাইক চালানোর সময় পোশাকের উপর বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, আপনাকে জানতে হবে আপনি যে বাইকটা চালাচ্ছেন তার ডিজাইনের সাথে আপনার পোশাক ম্যাচ করছে কি না? শুধু সৌন্দরজ যথেষ্ট নয়, আপনার পোশাক আপনাকে কি মাত্রায় প্রোটেকশন করবে সেসব বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
জ্যাকেটের ধরণ অনুযায়ী সাজেশন
জ্যাকেটের ক্ষেত্রে বুল্কি(স্কিন টাইপ) জ্যাকেট গুলো ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলো দুর্ঘটনার সময় শরীরকে তেমন একটা প্রোটেকশন দিতে পারে না এবং বাইক চালানোর সময় বেশী বাতাস বেধে যায়। বাইকারদের জ্যাকেট ফেব্রিক অথবা লেদারের হলে ভালো হয়। লেদার জ্যাকেট দুর্ঘটনা থেকে ভালো প্রোটেকশন করে আর ফেব্রিক জ্যাকেট সকল মৌসুমে ব্যবহার করা যায়।
একটি মোটরসাইকেল চালানোর সময় একটি চামড়ার মোটরসাইকেল জ্যাকেট পরা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
সুরক্ষা:
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, একটি জ্যাকেট আপনার ত্বককে রাস্তার ফুসকুড়ি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে, যা ফুটপাথের উপর পিছলে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট এক ধরনের আঘাত। জ্যাকেটের ধরণ অনুযায়ী একটি প্রতিরক্ষামূলক জ্যাকেট প্রভাব শোষণ করতে এবং আপনার বাহু, বুকে এবং পিঠে আঘাতের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
আবহাওয়া সুরক্ষা:
একটি জ্যাকেট আপনাকে বাতাস, বৃষ্টি এবং ঠাণ্ডা তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে পারে, যা আপনাকে আরামদায়ক এবং রাইডিংয়ের সময় মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
দৃশ্যমানতা:
একটি উজ্জ্বল রঙের বা প্রতিফলিত জ্যাকেট পরলে আপনি অন্য চালকদের কাছে আরও দৃশ্যমান করতে পারেন, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে পারেন।
শৈলী:
মোটরসাইকেল জ্যাকেটগুলি বিভিন্ন স্টাইল এবং ডিজাইনে আসে, যা আপনাকে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি আপনার ব্যক্তিগত শৈলী প্রকাশ করতে দেয়।
জ্যাকেটের ধরণ বিবেচনায় এমন মোটরসাইকেল বাইকারদের জ্যাকেট বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ যা ভালোভাবে মানানসই এবং চামড়া বা ঘর্ষণ-প্রতিরোধী টেক্সটাইলের মতো উচ্চ-মানের উপকরণ দিয়ে তৈরি।
একটি মোটরসাইকেল জ্যাকেট সাধারণত ঘর্ষণ প্রতিরোধী উপাদান যেমন চামড়া, কর্ডুরা বা সিন্থেটিক্স দিয়ে তৈরি। যেহেতু রাইডার বিস্তৃত জলবায়ু পরিস্থিতির সংস্পর্শে আসে জ্যাকেট রাইডারদের রোদ, ঠান্ডা বা ভেজা অবস্থায় রাইড করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ বাইকারদের জ্যাকেট-গুলো কনুই, কাঁধ, বুক এবং মেরুদণ্ডের মতো প্রভাব প্রবণ জায়গাগুলোকে রক্ষা করার জন্য বানানো হয়।
তাই বাইক চালানোর সময় সঠিক মোটরসাইকেল জ্যাকেট পড়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে একই সাথে আপনাকে ফ্যাশানেবল দেখাবে এবং তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ থাকবেন। বাইক চালানোর সময় নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন এবং ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার চেষ্টা করবেন।