এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড
দু’চাকার মোটরবাইক হোক বা চার চাকার গাড়ি, ইঞ্জিনের মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে যা তার চাকার থেকেও অত্যাধিক দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। গাড়িতে যখন ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন (ICE) চালু থাকে, তখন ভেতরে কয়েক হাজার বার বিস্ফোরণ ঘটে। আর তখনই বিশেষ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল পুড়িয়ে চলার শক্তি অর্জন করে সেই ইঞ্জিন, যার ফলে, ইঞ্জিনের সম্পূর্ণ অংশ প্রচন্ড হারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠতে থাকে। আর তাই ইঞ্জিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে হলে অবশ্যই এর কুলিং সিস্টেম থাকা প্রয়োজন।
ইঞ্জিনের ধরণ নির্ভর করে বাইকের উৎপাদক কোন ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে তার উপর। একটি বাইকের জন্য ব্যবহৃত ইঞ্জিনের ধরণ অনেকগুলো আছে, যেমন পেট্রল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ইত্যাদি।
বাইকের ইঞ্জিনের ধরণ বিবেচনায় আলোচনায় আসে এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড এই তিন ধরনের ইঞ্জিন। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিযোগিতা চলছে এই তিন কুলিং সিস্টেম-এর মধ্যে। বাইকারদের বিভিন্ন রিভিউ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাইকের মডেল, ইঞ্জিন অয়েল ইত্যাদি অনেক কিছুই বিবেচনা করে ইঞ্জিনের ধরণ–এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড কোনটি হবে নির্ধারণ করা হয়। বাতাস কি সেরা কুলিং সিস্টেম নাকি তেল নাকি লিকুইড? এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন দ্রুত ঠাণ্ডা করে যেখানে অয়েল কুল্ড ইঞ্জিন ভাল কাজ করে, লিকুইড ইঞ্জিন উষ্ণতাকে দ্রুত শুষে নেয় । তাহলে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক ও সীমাহীন যুক্তির পর আসলেই সেরা কোনটি? চলুন এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড-এর মধ্যে পার্থক্য কোথায় ও কোনটির পারফরম্যান্স সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও মার্কেটে ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে জানতে ব্রাউজ করুন Bikroy।
এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন
ইঞ্জিনের ধরণ বিবেচনায় এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনচালিত বাইকগুলো তৈরি করা হয় একটু ভিন্নভাবে, যেন চালানোর সময় উৎপন্ন তাপ সহজে বায়ুতে/বাতাসে চলে যেতে পারে । একটি গতিশীল গাড়ি কিংবা বাইককে সামনে থেকে তীব্র হওয়ার ধাক্কা সামলাতে হয়। এয়ার কুল্ড কুলিং সিস্টেম-এর ক্ষেত্রে, ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই বা তাপ শোষণ করার জন্য কোনো বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি যা তাপ শোষক হিসেবে কাজ করে সকল তাপ শোষণ করে নিতে পারবে। বরং এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনে কিছু পাখা ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো তীব্র ঘূর্ণন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রচুর বাতাস উৎপন্ন করে থাকে। আর ইঞ্জিন যখন বাতাসের তাপ বের করে দেয় তখনই বাইক খুব দ্রুত চলতে থাকে। ইঞ্জিনের ধরণ–এর মধ্যে এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন তৈরি যতো সহজ, রক্ষণাবেক্ষণ আরও সহজ ।
কোন ধরনের বাইকে এয়ার কুল্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়?
ইঞ্জিনের ধরণ বিবেচনায় এ ধরনের ইঞ্জিন বেশী ব্যবহার করা হয় কম ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বাইকগুলোতে, যেখানে ভালো পারফরম্যার্ন্সের চেয়ে দামের উপরই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়।
এ ধরনের ইঞ্জিনের সমস্যাঃ
- দীর্ঘ ভ্রমণের এই কুলিং সিস্টেম উপযুক্ত নয় এবং দীর্ঘ ভ্রমণে উচ্চ আর.পি.এম এ চালালে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়
- ইঞ্জিন যতই গরম হতে থাকে ধাতুগুলো ততই দুর্বল হতে থাকে, ফলে বাইকের স্থায়িত্ব কমে যায়
- ইঞ্জিন যদি দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ আর.পি.এম এ চলতে থাকে তবে এটি সহজেই গরম হয়ে যায়। গরম ইঞ্জিন চালানোর ফলাফল হিসেবে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
লিকুইড কুলড
কার, ট্রাক, মোটরসাইকেল, এটিভি এবং অন্যান্য সকল প্রকার মোটরগাড়িতে বিশ্বব্যাপী প্রায় সমস্ত যানবাহন নির্মাতারা তরল-ঠান্ডা কুলিং সিস্টেম ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। ইঞ্জিনের ধরণ–এর মধ্যে এক্ষেত্রে একটি তরল কুল্যান্ট ব্যবহার করে যা একটি বাহ্যিক রেডিয়েটর দ্বারা ঠান্ডা হয় এবং ইঞ্জিন থেকে দূরে তাপ কার্যকরভাবে শোষণ করতে বিশেষ চেম্বার বা প্যাসেজের ব্যবহার করা হয়।
সেটআপে একটি রেডিয়েটর, একটি ফ্যান (সব সময়ে নয়) এবং কুল্যান্টের জন্য একটি জলাধার থাকে যা একটি পাম্পের সাহায্যে ক্রমাগত সঞ্চালিত হয়। এই সেটআপটি ইঞ্জিনকে সর্বোত্তম চলমান তাপমাত্রায় রেখে যানবাহন নির্মাতাদের আরও ভাল শক্তি আহরণ করতে সাহায্য করে, যা বাইক বা যানবাহনকে অনেক বেশি সময় ধরে চলতে দেয়।
কোন ধরনের বাইকে লিকুইড কুলড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়?
ইঞ্জিনের ধরণ বিবেচনায় এই জাতীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার সমগ্র পৃথিবী জুড়েই গাড়ি, ট্রাক, মোটরসাইকেল সহ সমস্ত ধরনের মোটরগাড়িতেই করা হয়।
এ ধরনের ইঞ্জিনের সমস্যাঃ
- এই কুলিং সিস্টেম-এ রেডিয়েটর-এ পানি লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করার কারণে লিকুইড জ্যাকেট গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- রেডিয়েটর-এও জং ধরিয়ে ছোট ছোট ফুটোর সৃষ্টি করে, যা আপনার রেডিয়েটর এ লিকুইড কমে যাওয়া, ইঞ্জিন ওভার হিট হওয়া এমন হাজার সমস্যা মূলকারণ।
অয়েল কুল্ড
ইঞ্জিনের ধরণ-এর মধ্যে অয়েল-কুলড ইঞ্জিনগুলি এয়ার-কুলড কুলিং সিস্টেম-এর মতোই, কারণ তারা এখনও বায়ু চলাচলের জন্য শীতল পাখনা ধরে রাখে, তবে, তারা একটি ছোট তেল-কুলার বাহ্যিকভাবে মাউন্ট করে যা ইঞ্জিন তেলকে বাতাসকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।ইঞ্জিনের ভেতরের গরম তাপমাত্রাকে এই অয়েল কুলিং সিস্টেম কমিয়ে দেয় এবং ইঞ্জিনকে ভালো পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।
এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড রিভিউ অনুযায়ী, অয়েল-কুলড ইঞ্জিনগুলির, এয়ার-কুলড মোটরগুলির তুলনায় একটি সুবিধা রয়েছে, এক্ষেত্রে দেখা যায়, শীতল তেল ইঞ্জিনের মধ্য দিয়ে যায়, কার্যকরভাবে ভিতরে চলমান উপাদানগুলিকে ঠান্ডা করে।
কোন ধরনের বাইকে অয়েল কুল্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়?
ইঞ্জিনের ধরণ বিবেচনায় এই জাতীয় ইঞ্জিন-এলাকা, আবহাওয়া, এবং বিভিন্ন বিষয়ের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতকারক কোম্পানীরা বিলাসবহুল বা হাই পারফরম্যান্স বাইকগুলোতে এই সিস্টেমটি ব্যবহার করছে।
- খুবই ব্যয়বহুল ও এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই বেশী
- আরামদায়ক বা মসৃণ ভ্রমণ বাইকের পারফর্মেন্স কমিয়ে দিতে পারে
গরম ও ঠান্ডা যে রকম আলাদা, ঠিক তেমনি ইঞ্জিনের ধরণও একটি অপরটি থেকে আলাদা
আলাদা । এয়ার কুলড, লিকুইড কুলড এবং অয়েল কুলড এদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল এদের ধরনে কিন্তু কাজ একই, ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখাই মূল উদ্দেশ্য।
কিছু কিছু বিষয় আসলে বাইকের ভক্তদের জন্যই উন্মুক্ত থাকা ভালো, কারণ সকলের পছন্দ এক রকম হবেনা এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি সহজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইঞ্জিন খুঁজে থাকেন তাহলে এয়ার কুলড পছন্দ করবেন, আবার আপনি যদি উন্নত ও অপেক্ষাকৃত দামি ইঞ্জিন খুঁজেন, তাহলে লিকুইড কুলড পারফেক্ট হবে, আবার ভালো পারফরম্যান্স বিচার করলে, ওয়েল কুলড ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারেন।