সাধারণ মানুষের কাছে মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপের নাম অপরিচিত হলেও যারা দৈনন্দিন বাইক চালিয়ে অভ্যস্ত তাদের কাছে এটি খুবই পরিচিত একটি নাম।
তবে পরিচিত হলেও যে ব্যাপারটি লক্ষণীয় তা হল অধিকাংশ বাইক রাইডারই মোটরসাইকেলে ব্র্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপের উপস্থিতির কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয় আর তাই আজকে আমরা আমাদের এই ব্লগে মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করব ।
বাংলাদেশের এমন বহু বাইক রাইডার রয়েছেন যারা হয়তো তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাইক রাইড করার সময় মোটরসাইকেল এর ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপের শিকার হয়েছেন অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা এই ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারেন না।
তাই চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক মোটরসাইকেল এর ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপ কি, এর কাজ কি এবং এর প্রভাব কি।
মোটরসাইকেলের ব্যাকফায়ারিং কি?
অনেক ক্ষেত্রে বাইক চালানোর সময় ইঞ্জিন এর ফুয়েলের একটি অংশ অব্যবহৃত থেকে যায় অব্যবহৃত এই অতিরিক্ত জ্বালানি এর সাথে যখন মোটরসাইকেলের এক্সস্টে থাকা অক্সিজেন মিলিত হয় তখন একত্রিত হয়ে বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়। শুধু বিকট শব্দ নয় কোন কোন ক্ষেত্রে সেখানে ফায়ারিং দেখা দিতে পারে, মূলত এধরণের ঘটনাকেই বলা হয়ে থাকে মোটরসাইকেলের ব্যাকফায়ারিং।
মোটরসাইকেল এর ব্যাকফায়ারিং শুধুমাত্র যে বিকট শব্দের সৃষ্টি করে তা নয় এটি থেকে যেকোনো বড় দুর্ঘটনার ঘটতে পারে। তাই আমাদের সকলের মোটরসাইকেলের ব্যাক ফায়ারিং সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং কেন হয়?
একটি ব্যাকফায়ার আপনার বাইকের মাইলেজকে প্রভাবিত করে না, ব্যাকফায়ারিং এর মানে হলো বাইক সঠিকভাবে জ্বালানি রূপান্তর করছে না। এই গ্যাস নিষ্কাশন পাইপে প্রবেশ করে এবং পপিং শব্দ তৈরি করে যা গ্যাসের মাইলেজের ক্ষতির কারণ হয়। তাই সরাসরি ক্ষতি না করলেও প্রভাব ঠিকই পড়ে।
সাধারণত চারটি কারণে মোটরসাইকেলে ব্যাকফাইয়ারিং হয়ে থাকে। নিয়ে এই সম্পর্কে আমরা জানবো।
ফুয়েলজনিত কারণে
আপনার বাইকে ফুয়েলের সঠিক পরিমাণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাইকের ইঞ্জিনে ফুয়েল এবং গ্যাসের রেশিও যদি সঠিক না থাকে তবে ব্যাকফায়ারিং এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুয়েল কম থাকলে এক্সট্রা গ্যাস ডাইরেক্টলি বাইকের এক্সস্টে প্রবাহিত হয় এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে এতে বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়।
আবার ফুয়েল বেশি থাকলেও ওমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফুয়েল এক্সস্টে প্রবেশ করে অক্সিজেনের সাথে মিশ্রিত হয়ে এমন ঘটনা ঘটায়। তাই বাইকে ফুয়েল নেওয়ার সময় অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে ফুয়েলের এবং গ্যাসের রেশিও যেনো সঠিক থাকে।
এক্সস্টজনিত কারণে
এক্সস্ট পাইপের সাইজ ব্যাকফায়ারিং এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পাইপের সাইজ প্রয়োজনের তুলনায় ছোট কিংবা বড় হওয়া ব্যাকফায়ারিং এর অন্যতম একটি কারণ। অনেক দেশেই এই এক্সস্ট পাইপের সাইজের উপরে আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
সাধারণত ১২ ইঞ্চি কিংবা এর চেয়ে ছোট সাইজের এক্সস্ট পাইপের কারণে ব্যাকফায়ারিং হয়ে থাকে। কারণ, ১২ ইঞ্চ কিংবা এর চেয়ে ছোট পাইপে কোনো বিল্ট-ইন ব্যাফল থাকে না। এটি অনেকটা ফুয়েল নিষ্কাশকের মত কাজ করে।
তাই বাইকের এক্সস্ট পাইপে যদি ১২ ইঞ্চের কম হয় তবে তা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
এয়ারবক্স লিক হলে
এয়ারবক্সে লিকেজ ব্যাকফায়ারের অন্যতম একটি কারণ। এয়ারবক্সে লিকেজ থাকলে এয়ারফ্লো এর পরিমাণ বেড়ে যায়। অপরদিকে এয়ারফ্লো বেশি কিন্তু ফুয়েল কম এমন হলে বিকট শব্দসহকারে ব্যাকফায়ারিং দেখা দেয়।
বাইকের এয়ারবক্সের রাবারটির কন্ডিশন ভালো আছে কিনা তা খেয়াল রাখুন, এয়ারবক্সের সাথে থাকা স্ক্রুগুলি শক্তভাবে লাগানো আছে কিনা তা চেক করে নিন।
অভ্যন্তরীণ কারণে
উপরে উল্লেখিত তিনটি কারণ ছাড়াও আরো অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং এর ঘটনা ঘটে থাকে। যেমন-
- বাইকের এক্সস্ট পাইপ লুজ থাকলে।
- অউটডেটেড এক্সস্ট ব্যবহার করলে।
- বিরতিহীন স্পার্কের কারণে অথবা স্পার্ক-প্লাগ সময়মতো পরিবর্ন না করলে।
- খারাপ ফুয়েল পাম্প এবং ফিল্টার ব্যবহার করলে।
- কমদামি এবং খারাপ মানের ফুয়েল ব্যবহার করলে।
আশা করি, বাইকে ব্যাকফায়ারের কারণগুলি বুঝতে পেরেছেন। এবার তাহলে মোটরসাইকেলে ডিসেল পপ – কি তা জেনে নেওয়া যাক।
মোটরসাইকেলে ডিসেল পপ -এর কাজ
ডিসেল পপ বলতে বোঝায় বার্বল, স্ন্যাপ এবং বিস্ফোরণের একটি সিরিজ যা মূলত যখন রাইডার রাইডার থ্রোটল বন্ধ করে বন্ধ করে দেয় এবং যখন ব্যাকফায়ারগুলি বন্দুকের গুলির মতো শোনায় তখন ঘটে। যদিও বর্তমানে বাইকগুলিতে ডিসেল পপ একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তবে ব্যাকফায়ারগুলি বিরল এবং কিছুক্ষেত্রে বিপজ্জনকও।
ব্যাকফায়ার এবং ডিসেল পপ উভয়ই সাধারণত বাইকের টিউনিংয়ে সমস্যার একটি চিহ্ন, যা ত্রুটিপূর্ণ ইনজেক্টর, আটকে থাকা কার্ব্যুরেটর জেট, বা ইগনিশন বা ক্যাম টাইমিংয়ের মতো সমস্যাগুলির কারণে হতে পারে।
যদি আপনার বাইক এই ঘটনার যেকোনো একটির সম্মুখীন হয়, তাহলে ক্ষতির কারণ এড়াতে সঠিক সমস্যাটি নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিসেল পপ ব্যাকফায়ারের মতো হিংস্র হয়ে ওঠে, তাহলে নিষ্কাশন লিক পরীক্ষা করা এবং বায়ু-জ্বালানির অনুপাত পরীক্ষা করা অপরিহার্য।
মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপ এর প্রভাব
মোটরসাইকেলে ব্যাকফায়ারিং এবং ডিসেল পপ দুটি বেশ সিমিলার বিষয় তাই এদের মাঝে কনফিউজড হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তাই আপনাদের সুবিধার্থে বলি, মোটরসাইকেলে ডিসেল পপ এবং ব্যাকফারার এই দুটিই হলো বাইকের আফটার ফায়ারের অংশ। অল্প মাত্রায় ফায়ারিং অর্থাৎ ডিজএল পপ বর্তমানের আপগ্রেটেড বাইকের জন্য স্বাভাবিক তবে বিকট শব্দসহকারে ব্যাকফায়ার স্বাভাবিক নয়। ব্যাকফায়ার ফলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা আমরা নিচে জানবো।
- বাইকের মাইলেজ আগের তুলনায় কমে যেতে পারে।
- এক্সস্ট থেকে প্রতিনিয়ত বিকট শব্দ আস্তে পারে।
- থ্রোটল বন্ধ করার সময় সমস্যা হতে পারে।
- স্মুথ ট্রান্সমিশন বাধা প্রাপ্ত হতে পারে।
- বেশিদিন এই সমস্যা উপেক্ষা করার ফলে বাইকে যেকোনো আগুন ধরতে পারে।
আশা করি, আমাদের আজকের ব্লগটি আপনাদের উপকারে আসবে ভবিষ্যতে বাইক সম্পর্কে এমন আরো ব্লগ পেতে এবং মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম ও অন্যান্য তথ্য পেতে আমাদের পেইজে চোখ রাখুন।