সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের কদর গত দুই দশকে বেড়েছে বহুগুণে। দ্রুত চলাচল এবং সহজ রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় বলে মোটরবাইক কমবেশি সকলেরই পছন্দ তালিকার শীর্ষে। তবে অতীতে শুধুমাত্র জাপান, ভারত বা চীনের উপর আমদানি নির্ভর হলেও গত কয়েক বছরে চাহিদা বেড়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের। আর দেশীয় ব্র্যান্ডের কথা বলতে গেলে শুরুতেই আসে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং নেতৃস্থানীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী কোম্পানি ওয়ালটনের নাম। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ডটি বাংলাদেশের বাইক বাজারে বেশ জনপ্রিয়। মূলত এই ব্র্যান্ডটি ৮০ সিসি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল তৈরি করে থাকে। তারা বেশ কয়েকটি সেরা মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করেছে এই পর্যন্ত। বাইক অনুযায়ী ওয়ালটন মোটরসাইকেলের দাম হাতের নাগালে থাকায় এবং মোটরসাইকেলের পার্টস সহজেই পাওয়া যাওয়ায় বাইকারদের পছন্দ তালিকায় থাকে Walton মোটরসাইকেল। চলুন আজকে জেনে নেই সেরা পাঁচটি Walton মোটরসাইকেল নিয়ে বিস্তারিত-
১। ওয়ালটন তাকিওন ১.০
লাল, নীল, এবং সিল্ভার রঙে এভেইলেভেল এই ইলেকট্রনিক বাইক সম্প্রতি বাজারে লঞ্চ করেছে ওয়ালটন। দুর্দান্ত শক্তিশালী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ১৫০ সিসির এই বাইক শহরের রাস্তায় এবং হাইওয়েতে চলাচলের জন্য একদম মানানসই। এই টু-হুইলারটিতে একটি ৭২ভি২৩এএইচ গ্রাফিন লিড অ্যাসিড পোর্টেবল ব্যাটারি এবং১.২ কে ডব্লিউ রেটেড পাওয়ার ডিসি ব্রাশলেস মোটর রয়েছে যা ১.২ কে ডব্লিউ সর্বোচ্চ শক্তি, ৮৮ এনএম টর্ক এবং ৫০ কেএমপিএইচ সর্বোচ্চ গতি প্রদান করে। অর্থাৎ ৭২ ভোল্টের ব্যাটারি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার বেগে পূর্ণ চার্জে পাড়ি দিতে পারবে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার রাস্তা। সাথে আছে ডিস্ক ব্রেক এবং টিউবলেস টায়ার, সম্পূর্ণ ডিজিটাল এলসিডি স্পিডোমিটার। ৭৬ কেজির এই বাইকের উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম এবং চমৎকার হ্যান্ডেলিং বাইকারদের দেয় আঁকাবাঁকা বা অসম পথেও নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা। এছাড়া ক্রয়ের ২ বছর পর্যন্ত Walton মোটরসাইকেল আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টস ওয়ারেন্টি অফার করে থাকে।
২। ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ এনএক্স
Walton মোটরসাইকেল সম্প্রতি দেশে কয়েকটি সেরা মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করেছে যেগুলোর মধ্যে ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ এনএক্স তাদের ফিউশন সিরিজের বাইক সেরা। এই বাইকটিতে উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এটি ওয়ালটনের অন্যান্য ১৫০ সিসির বাইকগুলোকেও হার মানায়। যেকোনো বয়সের রাইডাররা এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারে বিধায় অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ওয়ালটনের অন্যতম বেস্ট সেলার বাইক হয়ে উঠেছে। ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ এনএক্স বাইকে সর্বাধিক আপগ্রেড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা একক সিলিন্ডার, চার স্ট্রোক এবং এসওএইচসি নিয়ে গঠিত। এছাড়া আছে এয়ার কুলিং সিস্টেম। বাইকটি ৯ কিলোওয়াটে ৮০০০ আরপিএম সর্বোচ্চ শক্তি এবং ৯.৫ এনএম-এ ৬৫০০ সর্বোচ্চ টর্ক উৎপাদন করতে পারে। বাইকটি প্রায় ৫৫ কিমি গড় মাইলেজ দিতে পারে। বাইকটির টেলিস্কোপিক ও সুইং আর্ম সাসপেনশন এবং ব্রেকিং সিস্টেম দীর্ঘ ভ্রমণকে করে তোলে আরামদায়ক ও নিরাপদ। এই মোটরসাইকেলের ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল সম্পূর্ণ ডিজিটাল। ডিজিটাল গিয়ার ডিসপ্লের সাথে স্পিডোমিটারটিও ডিজিটাল। এছাড়া আপগ্রেড ট্যাকোমিটারও রয়েছে। এছাড়াও কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হয়েছে যা হলো ইলেকট্রিক এবং কিক স্টার্টিং সিস্টেম, শক্তিশালী অ্যালয় হুইল, আকর্ষণীয় গ্রাফিক্স, পরিষ্কার রাত ও দিনের দৃশ্যমানতা সহ ডিজিটাল মিটার, হক পার্কিং লাইট সহ হ্যালোজেন হেড ল্যাম্প ইত্যাদি।
৩। ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ ইএক্স
Walton মোটরসাইকেল এর বিভিন্ন মডেলের মধ্যে ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ এখনও সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া বাইকগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করে এই সিরিজটিকে ফিউশন ১২৫ ইএক্স-এ আপগ্রেড করা হয়েছে। এসেছে বাইকটির আউটলুকে পরিবর্তন। শক্তিশালী ইউরো থ্রি ইঞ্জিন, জ্বালানি সাশ্রয়ী সিস্টেম, মোবাইল ফোন ইন্ডিকেটর, রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা ইত্যাদি যুক্ত করা হয়েছে বাইকটিতে। ৪ স্ট্রোক এয়ার কুলড সিঙ্গেল সিলিন্ডার ইউরো থ্রি স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে ১২২ কেজি ওজনের ১২৫ সিসির এই বাইকে। ভালো নিয়ন্ত্রণ এবং আরামদায়ক রাইডিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে টেলিস্কোপিক হাইড্রোলিক শক এবসোর্বার সাসপেনশন। বাইকটি গিড়ে ৪৫ কিমি মাইলেজ দিতে পারে। ওয়ালটন ফিউশন ১২৫ ইএক্স এর ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল প্রায় ফিউশন ১২৫এর মতই স্পিডোমিটার এবং টেকোমিটার নিয়ে গঠিত। তবে নতুন যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোন ইন্ডিকেটর, ডিজিটাল গিয়ার ডিসপ্লে, রিমোট কন্ট্রোল সুবিধা সহ অ্যান্টি থেফট লক।
৪। ওয়ালটন প্রিজম ১১০
১১৭ কেজি কার্বের ওয়ালটন প্রিজম ১১০ একটি আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন মোটরবাইকটি এর অসাধারণ ডিজাইন এবং উচ্চমানের কারিগরির জন্য বেশ পরিচিত। এই মডেলে ১১০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে যা উচ্চ গতি এবং দক্ষতার নিশ্চয়তা দেয়। প্রিজম ১১০ তার স্লিক ডিজাইনের জন্যও জনপ্রিয়। বাইকটিতে রয়েছে উন্নত সাসপেনশন সিস্টেম, শক্তিশালী ব্রেকিং সিস্টেম, এবং আরামদায়ক সিটিং যা দীর্ঘ যাত্রায় আরাম এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। প্রিজম ১১০ এর ইঞ্জিন দক্ষতা এবং জ্বালানি দক্ষতা এটিকে অন্যান্য মডেলের তুলনায় আলাদা করে তোলে। এছাড়া, বাইকটির ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল আধুনিক এবং সহজে পড়া যায়, যা রাইডাররা রাইডিং এ প্রয়োজনীয় তথ্য স্ক্রিনেই পেয়ে যান।
৫। ওয়ালটন ক্রুজ ১০০
দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি কমিউটার বাইকের বাজারে সাড়া ফেলে দেয়া অন্যতম বাইক হচ্ছে Walton Cruize 100। মূলত ডেইলি কমিউটিং এবং দীর্ঘ দূরত্বের রাইডিং এর জন্য তৈরি করা হয়েছে এই বাইকটি। ওয়ালটন ক্রুজ ১০০ পারফরম্যান্স অনুযায়ী বাইকটিতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি, রাইডিং কমফোর্টনেস এবং নির্ভরযোগ্য হ্যান্ডেলিং। ওয়ালটন ক্রুজ ১০০ রিভিউ অনুযায়ী ডেইলি কমিউটিং এর পাশাপাশি যারা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস দিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ভরসার জায়গা হতে পারে ওয়ালটন ক্রুজ ১০০। বাইকটির অনন্য ডিজাইনে রয়েছে আধুনিক গ্রাফিক্স এবং শক্তিশালী হেডলাইট যা রাতের যাত্রায় উজ্জ্বল আলো প্রদান করে। এছাড়াও, এই বাইকটিতে রয়েছে আরামদায়ক সিটিং এবং দীর্ঘ সময় চালানোর জন্য উপযুক্ত সাসপেনশন। ক্রুজ ১০০ দামের দিক থেকেও বেশ প্রশংসনীয়, কারণ এটি ভালো মাইলেজ দেয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম।বাইকটির ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে অ্যানালগ ফিচারের ব্যবহারই অধিক লক্ষ্য করা যায়। বাইকটির সকল ফিচারের মধ্যে রয়েছে অ্যানালগ স্পিডোমিটার, ওডোমিটার এবং লো ফুয়েল ইন্ডিকেটর। নিয়মিত ব্যবহারের জন্য কমিউটার বাইক হওয়ায় এর দামের সাথে মিল রেখে বাড়তি কোনো ফিচার যোগ করা হয় নি।
Walton বাইকসহ যেকোনো বাইক বা স্কুটার সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ভিজিট করুন বাইকস গাইড। এখানে আপনি নানান বাইকের রিভিউ, স্পেসিফিকেশন, ফিচারস এবং আরো বিভিন্ন তথ্য পাবেন। বাংলাদেশে ওয়ালটন বাইকের দাম সহ অন্যান্য বাইক বা স্কুটার এবং নতুন বা পুরোনো যেকোনো মোটরসাইকেলের দাম জানতে হলে চোখ রাখুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।