বাইক রাইড করার সময় প্রতিটি সেকেন্ড নিজের ইন্দ্রীয় খোলা রাখতে হয়। আপনি শখের বশে মাঝে মাঝে বাইক রাইড করেন অথবা প্রতিদিন বাইকে করে নিজের কর্মস্থলে যান, তা ম্যাটার করে না। যেটি ম্যাটার করে তা হচ্ছে আপনি বাইক রাইড করার সময় আপনার নিজের এবং আপনার আশেপাশের রাইডারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন কি না। আর এই কাজটি করার জন্য আপনাকে বাইক রাইডের খুটিনাটি সবকিছু সম্পর্কেই জানতে হবে। বাইক রাইডারদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হচ্ছে ইঞ্জিন ব্রেক। তাই আজকের লেখায় আমরা ইঞ্জিন ব্রেকের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
ইঞ্জিন ব্রেক কী?
ইঞ্জিন ব্রেক হচ্ছে বাইকের একটি যা ফিচার যা ট্রেডিশনাল কোনো ব্রেক ব্যবহার না করেই বাইকের গতি কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, এটি বাইকের কোনো পার্টস নয়, শুধু একটি ফিচার। ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে বাইকের থ্রোটল ছেড়ে দিতে হবে। তখন সিলিন্ডারে বাতাস ও জ্বালানী পৌছাবে না এবং একটি ভ্যাক্যুম তৈরি হবে। এর পেছনে পিস্টনে ঘর্ষণ তৈরি হবে এবং আপনার ইঞ্জিন তার গতি কমিয়ে ফেলবে। অর্থাৎ, ইঞ্জিন ব্রেককে আপনি ইঞ্জিনের একটি বিল্ট-ইন ব্রেকিং সিস্টেম বলতে পারেন। বিশেষ করে উচু স্থান থেকে নিচে নামার সময় এই সিস্টেম বাইকের গতি কমিয়ে রাখা যায়। এই সিস্টেমে রাইডাররা আরো ভালোভাবে বাইক কন্ট্রোল করতে পারেন এবং ট্রেডিশনাল ব্রেকিং সিস্টেমের উপর নির্ভরতা কমান।
ইঞ্জিন ব্রেকের বৈশিষ্ট্য
নিচে ইঞ্জিন ব্রেক-এর কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো –
১। কমপ্রেশন রিলিজ মেকানিজম
ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার জন্য সাধারণত থ্রোটল ছেড়ে দিতে হয়, যা একধরণের কমপ্রেশন রিলিজ মেকানিজম হিসেবে কাজ করে।
২। ফুয়েল ইঞ্জেকশন বন্ধ
ইঞ্জিন ব্রেকিং-এর সময় সাধারণত ইঞ্জিনের ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়া হয়। ইঞ্জিনে ফুয়েল সাপ্লাই কমে যাওয়া এবং পিস্টনের ঘর্ষনের কারণে ইঞ্জিন তার গতি কমিয়ে দেয়।
৩। পাওয়ার কাট
ইঞ্জিনে ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়ার কারণে ইঞ্জিন আর তার পূর্বের ন্যায় পাওয়ার জেনারেট করতে পারে না। যার ফলে বাইকের গতি কমে যায়।
৪। এক্সহস্ট সাউন্ড
ইঞ্জিন ব্রেকিং ব্যবহার করার সময় এক্সহস্ট থেকে বিকট শব্দ হতে পারে। ফলে অনেকেই মনে করেন যে বাইকের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এতে আসলে বাইকের কোনো সমস্যা হয় না।
৫। রাইডারের ইচ্ছা
সকল ধরণের রাইডার ইঞ্জিন ব্রেকিং পছন্দ করেন না। অনেকেই এই সিস্টেমকে অহেতুক মনে করেন আবার অনেকে ট্রেডিশনাল ব্রেকিং সিস্টেমের পরিবর্তে ইঞ্জিন ব্রেকিং বেশি প্রিফার করেন।
ইঞ্জিন ব্রেকের উদ্দেশ্য
মোটরবাইকে ইঞ্জিন ব্রেক অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে দেয়া হয়। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো –
১। ট্রেডিশনাল ব্রেকের ব্যবহার কমানো
সামনের ও পেছনের ব্রেক অতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণে সেগুলো খুব দ্রুত ক্ষয় হতে পারে। তাই ট্রেডিশনাল ব্রেকের উপর নির্ভরতা কমাতে ইঞ্জিন ব্রেক দেয়া হয়।
২। নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি
ইঞ্জিন ব্রেকের সুবিধা হচ্ছে এই যে, ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার মাধ্যমে রাইডাররা বাইকের গতির উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন, বিশেষ করে যখন খুব দ্রুত বাইকের গতি কমিয়ে আনার প্রয়োজন হয়।
৩। নিরাপত্তা
ট্রেডিশনাল ব্রেক ব্যবহার করার পাশাপাশি ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করলে রাইডাররা খুব দ্রুত বাইকের গতি কমিয়ে আনতে পারেন। এতে করে রাইডার ও তার পরিবেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
৪। হিট ম্যানেজমেন্ট
সামনের ও পেছনের ব্রেক অতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণে ব্রেকিং সিস্টেম অনেক গরম হয়ে যেতে পারে। তাই ইঞ্জিন ব্রেক বাইকের হিট ম্যানজমেন্টে সহায়তা করে।
৫। জ্বালানী সাশ্রয়
ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার সময় ইঞ্জিনে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ থাকে। ফলে ফুয়েল এফিশিয়েন্সি বৃদ্ধি পায়।
পরিসংহার
সকল রাইডারের উচিত ইঞ্জিন ব্রেক-এর গুরুত্ব বুঝে এই সম্পর্কে যথার্থ ধারণা রাখা। এতে করে তারা নিজের ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। আশা করি আজকের লেখায় আমরা ইঞ্জিন ব্রেক-এর বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনাকে ভালো একটি ধারণা দিতে পেরেছি। তাই এখন থেকে মাঝে মাঝে ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করুন এবং ট্রেডিশনাল ব্রেকের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনুন। আপনার মোটরবাইক সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি করতে মোটরবাইকের এফআই ইঞ্জিন সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।