মোটরবাইক পছন্দ করার সময় চাকার ধরণ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কারণ চাকার পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে আপনার গোটা বাইকের পারফরম্যান্স। মোটরবাইকের চাকা সম্পর্কে জানতে গেলে আপনার একই সাথে জানতে হবে রিম, হাব এবং স্পোকের ব্যবহার নিয়ে। আজকের লেখায় আমরা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
১। বাইকের চাকা নির্বাচন
মোটরসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা অনেকটাই নির্ভর করে বাইকের চাকা এর উপর। টায়ার শুধু মোটরসাইকেলকে গতি দেয় না, বরং নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক যাত্রার এক অপরিহার্য অংশ। বাইক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে বাইকের চাকা এর ধরণও বিভিন্নরকম হতে পারে। যেমন- স্পোর্ট টায়ার, ট্যুরিং টায়ার, ডুয়াল স্পোর্ট টায়ার, টিউবলেস টায়ার ইত্যাদি। তাই বাইকের চাকা নির্বাচনের সময় মাথায় রাখতে হবে-
- চাকার আকার: মোটরসাইকেলের মডেল এবং স্টাইলের উপর ভিত্তি করে চাকার আকার বেছে নিন। বড় চাকাগুলো বেশি স্ট্যাবিলিটি দেয় এবং ছোট বা অপেক্ষাকৃত চিকন চাকাগুলো সাধারণত দ্রুত গতি ও দক্ষতা প্রদান করে থাকে।
- চাকার ধরণ: সড়কে চালানোর জন্য মসৃণ টায়ার ব্যবহার করুন এবং অফ-রোড জন্য খাঁজযুক্ত টায়ার নির্বাচন করুন।
- চাকার গঠন: আপনি স্পোক চাকা নিচ্ছেন নাকি অ্যালয় চাকা নিচ্ছেন তা নির্ভর করে আপনার রাইডিং স্টাইল এবং বাইকের ধরণের উপর। আপনি যদি অফ-রোডে বেশি রাইড করেন এবং ধীরগতির রাইডার হন, তাহলে আপনি স্পোক যুক্ত চাকা নিবেন। আর আপনি যদি ফাস্ট রাইডার হন এবং হাইওয়ে তে রাইড করেন, তাহলে আপনার অ্যালয় চাকা নিতে হবে।
- নির্ভরতা: একটি ভালো মানের চাকা আপনার মোটরসাইকেলকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো সেবা প্রদান করবে।
- দীর্ঘস্থায়িতা: নির্ভরযোগ্য ভালো ব্র্যান্ডের চাকা বেছে নিন, দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত করবে বাইকের সঠিক পারফরম্যান্স এবং আপনার নিরাপত্তা।
২। বাইকের রিম নির্বাচন
মোটরসাইকেলের রিম হল একটি প্রধান এবং অপরিহার্য যান্ত্রিক অংশ যা চাকার টায়ারকে ধরে রাখে এবং মোটরসাইকেলের চাকার স্থায়িত্ব এবং ভারসাম্য নিশ্চিত করে। রিমের গঠন, নকশা, এবং মান মোটরসাইকেলের পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা, এবং দীর্ঘায়ুতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি শুধুমাত্র একটি কাঠামোগত অংশ নয় যা টায়ারকে ধরে রাখে, বরং এটি বাইকের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা, পরিচালনা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। রিম নানা প্রকারের হয়ে থাকে যেমন- স্পোকড রিম, অ্যালয় রিম, ম্যাগনেসিয়াম রিম। আর তাই বাইকের রিম নির্বাচন এর সময় বেশ কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিৎ। আপনার মোটরসাইকেলের জন্য কোন ধরণের রিম বেছে নিবেন, তা নির্ভর করছে আপনার বাইকের ধরণ, পারফরম্যান্স এবং আপনি কেমন মেইনটেনেন্স করতে পারবেন তার উপর। রিম নির্বাচনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করুন:
- রিমের উপাদান: রিম প্রধানত অ্যালুমিনিয়াম ও কার্বন ফাইবার ব্যবহার হয়। অ্যালুমিনিয়াম দামে কম,, টেকসই এবং বেশিরভাগ রাইডারের জন্য ভালো। কার্বন ফাইবা্রের রিম হালকা ও শক্তিশালী, তবে দাম বেশি।
- রিমের আকার এবং প্রস্থ: রিমের আকার বাইকের টায়ারের আকারের সাথে সামাঞ্জ্য থেকে উচিত। প্রশস্ত রিম বেশি স্ট্যাবিলিটি এবং ট্রাকশন প্রদান করে।
- ব্রেকিং সারফেস: যদি আপনার বাইকে রিম ব্রেক থাকে, তাহলে নিশ্চিত করুন যে রিমে উপযুক্ত ব্রেকিং সারফেস আছে কিনা। তবে, ডিস্ক ব্রেকের জন্য বিশেষ রিম সারফেসের প্রয়োজন হয় না।
যদি আপনি স্পোর্টস বাইক চালাতে পছন্দ করেন এবং উচ্চগতিতে বাইক রাইড করে থাকেন, তাহলে আপনার অবশ্যই অ্যালয় রিম বেছে নেয়া উচিৎ। কারণ এই রিম আপনাকে দিবে দ্রুত রাইডিং এর সাপোর্ট আর শক্তিশালী গঠন যা উচ্চগতি সম্পন্ন মোটরবাইকের জন্য খুবই জরুরি। আপনি যদি অফরোড বা মাটির রাস্তায় বেশি বাইক রাইড করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি স্পোকস রিম বেছে নিবেন। আর আপনি যদি পেশাদার রেইসার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বাইকের জন্য অবশ্যই ম্যাগনেসিয়াম রিম। এটি যেমন হালকা, তেমনই শক্তিশালী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ম্যাগনেসিয়াম রিম অন্যান্য রিমের তুলনায় অনেক দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। তাই এর রক্ষনাবেক্ষণের খরচও তুলনামূলক অনেক বেশি।
৩। বাইকের হাব নির্বাচন
মোটরবাইকের চাকার কেন্দ্রের অংশ হলো এর হাব, যেটি চাকার রোটেশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং চাকা ও ব্রেকিং সিস্টেমের মাঝে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করে। একটি হাবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থাকে যার উপর ভিত্তি করে সঠিক হাব নির্বাচন করা উচিৎ।
- হাবের গঠন উপাদান: হাব সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিল দিয়ে তৈরি হয়। আপনি যদি হালকা ওজনের বাইক চালান এবং লাইট ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তাহলে আপনার নেয়া উচিৎ অ্যালুমিনিয়ামের হাব। আর আপনি যদি শক্তিশালী বাইক চালান এবং বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিক শক্তির প্রয়োজন হয়, তবে আপনার জন্য স্টিল হাব।
- বেয়ারিং সিস্টেম: হাবের বেয়ারিং মূলত চাকার সঠিক রোটেশন নিশ্চিত করে। আপনি যদি হালকা ওজনের বাইক চালান, তাহলে বল বেয়ারিং এবং ভারী ওজনের বাইক চালালে বা বাইকে অধিক লোড উঠালে, রোলার বেয়ারিং ব্যবহার করা উচিৎ।
- হাব ডিজাইন: স্পোর্টস বাইকের জন্য বর্তমানে সিঙ্গেল-সাইডেড হাব ব্যবহার করা হয়, যেখানে ট্র্যাডিশনাল বাইকগুলোতে ব্যবহার হয় ডাবল-সাইডেড হাব।
এগুলোর পাশাপাশি হাবের ব্রেক ইন্টিগ্রেশন সিস্টেম, চাকার সাপোর্ট, মেইন্টেনেন্সের মতো বিষয়গুলো হাব নির্বাচন এর সময় বিবেচনায় রাখা উচিৎ।
৪। বাইকের স্পোক নির্বাচন
সাধারণত পুরাতন ধরনার বাইকগুলোতে দেখা যায় এই স্পোক হুইল। বাইকের স্পোক এর গঠন কাঠামোর মাঝে থাকে একটি হাব, যার ভিতর থেকে স্পোকগুলো এসে হুইলের রিমের সাথে যুক্ত হয়। এই স্পোকগুলোর কারণেই গোটা হুইলে শক্ত সাপোর্ট তৈরি হয়। সাধারণত হুইলের রিম স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয় এবং স্পোকগুলো তৈরি হয় স্টিল থেকে।
অনেকগুলো স্পোক থাকায় স্পোক হুইল সহজেই ভারী কোন ধাক্কা বা ঝাঁকি গ্রহণ করতে পারে এবং রাইডার তেমন একটা ঝাঁকি অনুভব করে না। সাধারণত অফরোড বাইক বা অ্যাডভেঞ্চার বাইকগুলোতে এই স্পোক হুইল ব্যবহার করা হয়। স্পোক হুইলের অন্যতম একটি সুবিধা হলো এটি সহজেই মেরামত করা যায়, যা অফরোড বা লং ড্রাইভের বাইকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে স্পোক হুইল বাইকের লুকে একটি ক্লাসিক ভাইব যুক্ত করে, যা এক কথায় বাইকটিকে অনন্য করে তুলে।
মোটরবাইকের প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে চোখ রাখুন বাইকস গাইড– এ। এছাড়া ২০২৩ সালের মোটরবাইকের বাজার জানতে ভিজিট করুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।