মোটরসাইকেলের রিম হল একটি প্রধান এবং অপরিহার্য যান্ত্রিক অংশ যা চাকার টায়ারকে ধরে রাখে এবং মোটরসাইকেলের চাকার স্থায়িত্ব এবং ভারসাম্য নিশ্চিত করে। রিমের গঠন, নকশা, এবং মান মোটরসাইকেলের পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা, এবং দীর্ঘায়ুতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এটি শুধুমাত্র একটি কাঠামোগত অংশ নয় যা টায়ারকে ধরে রাখে, বরং এটি বাইকের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা, পরিচালনা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। বিভিন্ন ধরণের রিম থেকে কোনটি আপনার মোটরসাইকেলের জন্য কার্যকর এবং কীভাবে রিমের যত্ন নেওয়া যায় তা জানলে আপনার রাইডিং অভিজ্ঞতা হবে অনন্য এবং আপনার মোটরসাইকেলের কার্যক্ষমতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ।
রিমের প্রকারভেদ
মোটরসাইকেলের রিম বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন:
১। স্পোকড রিম (Spoked Rims)
ট্র্যাডিশনাল এই প্রকারের রিমে ধাতুর তারের মতো স্পোকস থাকে যা হাব থেকে রিমের প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্পোকস রিম চাকার গঠনকে শক্তিশালী করে তুলে এবং মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত অফরোড বাইক বা অ্যাডভেঞ্চার বাইকগুলোতে এই স্পোক রিম ব্যবহার করা হয়। স্পোক রিমের অন্যতম একটি সুবিধা হলো এটি সহজেই মেরামত করা যায়, যা অফরোড বা লং ড্রাইভের বাইকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে স্পোক রিম বাইকের লুকে একটি ক্লাসিক ভাইব যুক্ত করে, যা এক কথায় বাইকটিকে অনন্য করে তুলে।
২। অ্যালয় রিম (Alloy Rims)
এই রিমগুলো হালকা এবং শক্তিশালী অ্যালুমিনিয়াম বা অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণ থেকে তৈরি হয়ে থাকে। অ্যালয় রিম সাধারণত স্টাইলিশ দেখতে এবং ভারী লোড বহনে সক্ষম। একটি আলাদা বডি হিসেবে আসায় চাহিদা মতো অ্যালয় রিমে বিভিন্ন ডিজাইন আনা সম্ভব। আধুনিক ফিচার সম্বলিত সকল বাইকের পাশাপাশি স্পোর্টস বাইকগুলোতে বর্তমানে অ্যালয় রিমের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
৩। ম্যাগনেসিয়াম রিম (Magnesium Rims)
এই রিমগুলো অত্যন্ত হালকা ওজনের হয়ে থাকে এবং রেসিং মোটরসাইকেলে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। ম্যাগনেসিয়াম রিম চমৎকার কর্মক্ষমতা প্রদান করে কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে কেননা এই ধরণের রিম অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ব্যবহারের সাথে সাথে দ্রুত ক্ষয় হয়।
মোটরসাইকেলের রিমের যত্ন
মোটরসাইকেলের রিমের যত্ন নিম্নলিখিত উপায়ে করা যেতে পারে:
- নিয়মিত পরিষ্কার করা: রিমকে নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত, যাতে ময়লা এবং ধূলিকণা জমা না হয়।
- মরিচা প্রতিরোধ: স্পোকড রিমের ক্ষেত্রে মরিচা প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত প্রলেপন ব্যবহার করা উচিত।
- নিয়মিত চেক করা: নিয়মিত রিম চেক করা উচিত এবং প্রয়োজনে মেরামত করা উচিত।
রিম নির্বাচন
রিম নির্বাচন এরসময় বেশ কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিৎ। আপনার মোটরসাইকেলের জন্য কোন ধরণের রিম বেছে নিবেন, তা নির্ভর করছে আপনার বাইকের ধরণ, পারফরম্যান্স এবং আপনি কেমন মেইনটেনেন্স করতে পারবেন তার উপর। যদি আপনি স্পোর্টস বাইক চালাতে পছন্দ করেন এবং উচ্চগতিতে বাইক রাইড করে থাকেন, তাহলে আপনার অবশ্যই অ্যালয় রিম বেঁছে নেয়া উচিৎ। কারণ এই রিম আপনাকে দিবে দ্রুত রাইডিং এর সাপোর্ট আর শক্তিশালী গঠন যা উচ্চগতি সম্পন্ন মোটরবাইকের জন্য খুবই জরুরি।
আপনি যদি অফরোড বা মাটির রাস্তায় বেশি বাইক রাইড করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনি স্পোকস রিম বেঁছে নিবেন। খেয়াল রাখতে হবে, স্পোক রিম মেইনটেনেন্স অ্যালয় রিমের থেকে তুলনামূলক বেশি সময় নিয়ে করতে হয়। আর খরচের দিক থেকে অ্যালয় রিমের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে অফরোড বাইকের জন্য অ্যালয় রিম বা ম্যাগনেসিয়াম রিম তেমন সাপোর্ট দিতে পারবে না যেমনটা আপনাকে স্পোকস রিম দিবে।
আর আপনি যদি পেশাদার রেসার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বাইকের জন্য অবশ্যই ম্যাগনেসিয়াম রিম। এটি যেমন হালকা, তেমনই শক্তিশালী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ম্যাগনেসিয়াম রিম অন্যান্য রিমের তুলনায় অনেক দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। তাই এর রক্ষনাবেক্ষণের খরচও তুলনামূলক অনেক বেশি।
মোটরবাইকের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে চোখ রাখুন বাইকস গাইড– এ। এছাড়া ২০২৩ সালের মোটরবাইকের বাজার জানতে ভিজিট করুন দেশের সেরা মোটরবাইক মার্কেটপ্লেস Bikroy-এ।